আমরা কোন কাপড় পরব বা কী করব তা ঐ দিনের আবহাওয়া দেখে ঠিক করি। আবার জলবায়ুর ধারণা কাজে লাগিয়ে কখন কোন ফসল চাষ করব তা ঠিক করতে পারি।
প্রশ্ন : তুমি কীভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবহার করবে?
কাজ : আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবহার
কী করতে হবে :
১. নিচের আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে ঢাকায় কোন ধরনের আবহাওয়া আশা করতে পারি?
২. নিচের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বাংলাদেশের কোথায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ এবং কোথায় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ?
৩. নিচের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী রংপুরে ভ্রমণ করার সময় তুমি কি ছাতা ব্যবহার করবে ?
বছরের কোন সময়টি বনভোজনের জন্য উপযুক্ত ? কেন ?
১. ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের আবহাওয়া সাধারণত কেমন থাকে ?
২. আগামী বছরের এপ্রিল মাসের আবহাওয়া কেমন থাকতে পারে তা কীভাবে আগে থেকে অনুমান করা যায় ?
আবহাওয়া
আবহাওয়া হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা। এই জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া দিনের বিভিন্ন সময় ভিন্ন হয়। কোন দিন কোন কাপড় পরব এবং ছুটির দিন কী করব তা ঠিক করতে আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবহার করতে পারি ।
জলবায়ু
কোনো স্থানের আবহাওয়া পরিবর্তনের নির্দিষ্ট ধারাই জলবায়ু। জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা। তাই বছরের কোনো সময়ের আবহাওয়া কেমন হতে পারে তা আমরা পূর্ব অভিজ্ঞতা ও জলবায়ুর ধারণা থেকে অনুমান করতে পারি। যদিও আমাদের অনুমান সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। কারণ আবহাওয়া সবসময় পরিবর্তনশীল।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে আবহাওয়া ও জলবায়ু এক নয় ৷ আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা। আর জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার সামগ্রিক অবস্থা। বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী বর্ষা শুরু হয় জুনের মাঝামাঝি (আষাঢ়ের শুরু) এবং শেষ হয় আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসে। বর্ষায় বৃষ্টি শুরুর সময় প্রতি বছরই পরিবর্তিত হয়। তবে বর্ষা ঋতু শুরু হওয়ার সম্ভাব্য সময়টি আমরা জানি জলবায়ুর ধারণা থেকে।
বায়ুচাপ
বায়ু তার ওজনের কারণে ভূপৃষ্ঠের উপর যে চাপ প্রয়োগ করে তাই বায়ুচাপ। বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয় ।
প্রশ্ন : বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ কী?
কাজ : বালি ও পানি গরম করা
কী করতে হবে :
১. একটি ট্রে ১ সে.মি. পুরু বালি ও অন্য একটি ট্রে ১ সে.মি গভীর পানি দ্বারা পূর্ণ করি।
২. যদি সম্ভব হয়, বালি ও পানি পূর্ণ ট্রে দুইটিতে থার্মোমিটার রাখি ।
৩. বালি ও পানির তাপমাত্রা হাত দিয়ে যাচাই করি।
৪. ট্রে দুইটিকে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থানে রাখি।
৫. কোন ট্রে-টি দ্রুত গরম হবে অনুমান করি ?
৬. ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পুনরায় হাত দিয়ে পানি ও বালির তাপমাত্রা যাচাই করি এবং পূর্বের অনুমান সঠিক কিনা নিশ্চিত হই। সম্ভব হলে থার্মোমিটারের সাহায্যে বালি ও পানির তাপমাত্রা যাচাই করি।
৭. ট্রে দুইটিকে ঠাণ্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে ১ ঘণ্টার মতো রেখে দেই।
দ্রষ্টব্য: একই তাপমাত্রার জন্য পরীক্ষাটি শুরুর পূর্বে বালি ও পানি শ্রেণিকক্ষে অন্ততপক্ষে ১ দিন রেখে দিতে হবে। তাছাড়া বালি শুকনো হতে হবে।
সূর্যের আলোতে রাখার পর বালির ট্রে-টি পানির ট্রের চেয়ে দ্রুত গরম হয়েছে। আবার ছায়ায় বালির ট্রে-টি পানির ট্রে অপেক্ষা দ্রুত ঠান্ডা হয়েছে। এই পরীক্ষা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, বালি বা মাটি পানি অপেক্ষা দ্রুত গরম বা ঠান্ডা হয়।
উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ
দিনে স্থলভাগ জলভাগ থেকে উষ্ণ থাকে। উষ্ণ স্থলভাগ তার উপরে থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অপর দিকে সমুদ্রের উপরের বায়ু স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। এর ফলে সমুদ্রের উপর বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। নিম্নচাপ অঞ্চলের গরম বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সৃষ্ট ফাঁকা স্থান পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। রাতে স্থলভাগ সমুদ্রের তুলনায় ঠান্ডা থাকে। তাই তখন স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশে বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে আগস্ট মাসে বাংলাদেশের স্থলভাগ বঙ্গোপসাগরের চেয়ে উষ্ণ থাকে। শীতকালে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের স্থলভাগ বঙ্গোপসাগর থেকে শীতল থাকে। স্থলভাগ ও জলভাগের তাপমাত্রার এই বিপরীত অবস্থাই বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টি করে। ফলে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়।
আমরা আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন— তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বৃষ্টিপাত ও বায়ুচাপ সম্পর্কে জেনেছি। আবহাওয়ার এই উপাদানগুলো জলবায়ুরও উপাদান।
প্রশ্ন : আবহাওয়ার উপাদানগুলোর মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক আছে ?
কাজ : আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত
কী করতে হবে :
১. নিচের ছকে ঢাকার মাসিক গড় বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতা লক্ষ করি।
২. বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করি। বর্ষাকাল ও শীতকালের অবস্থা তুলনা করি।
৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
মাসিক গড় বৃষ্টিপাত (মিলিমিটার) | মাসিক গড় আর্দ্রতা (%) | |
---|---|---|
জানুয়ারি | ৮ | ৫৪ |
ফেব্রুয়ারি | ৩২ | ৪৯ |
মার্চ | ৬১ | ৪৫ |
এপ্রিল | ১৩৭ | ৫৫ |
মে | ২৪৫ | ৭২ |
জুন | ৩১৫ | ৭৯ |
জুলাই | ৩২৯ | ৭৯ |
আগস্ট | ৩৩৭ | ৭৮ |
সেপ্টেম্বর | ২৪৮ | ৭৮ |
অক্টোবর | ১৩৪ | ৭২ |
নভেম্বর | ২৪ | ৬৬ |
ডিসেম্বর | ৫ | ৬৩ |
আর্দ্রতা হলো বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ। বাতাসের জলীয়বাষ্পের পরিমাণ যত কমে, আর্দ্রতাও তত কমে। বর্ষাকালে মাসিক গড় আর্দ্রতার পরিমাণ ও মাসিক গড় বৃষ্টিপাত অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি। বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে। এই জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শীতকালে উত্তর দিক থেকে শুষ্ক শীতল বাতাস বয়ে আনে।
আবহাওয়ার প্রতিটি উপাদান প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। আবহাওয়ার কোনো উপাদান যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয় তখন আমরা বিরূপ আবহাওয়া দেখতে পাই। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হই। যেমন— মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হয়। কখনো কখনো মানুষ মারা যায়।
তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ
অতি গরম আবহাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাই হলো তাপদাহ। আমরা প্রতি বছরই তাপদাহ অনুভব করি। তবে অস্বাভাবিক ও অসহনীয় তাপদাহ শত বছরে একবার দেখতে পাওয়া যায় । অস্বাভাবিক তাপদাহের ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আবার এই তাপদাহের কারণে কখনো কখনো মানুষসহ হাজার হাজার জীবের মৃত্যু হয়।
উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই অবস্থাই হলো শৈত্যপ্রবাহ। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য অসহনীয় শৈত্যপ্রবাহ বাংলাদেশে খুব কমই দেখা যায়।
বন্যা ও খরা
বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। তবে ভয়াবহ বন্যার সময় বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। বাংলাদেশের জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতির কারণে এমনটি হয়ে থাকে।
অনেক লম্বা সময় শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে খরা দেখা দেয়। অস্বাভাবিক কম বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রাই হলো খরার কারণ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা সৃষ্টি হয়।
কালবৈশাখী
গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে যে বজ্রঝড় হয় তাই কালবৈশাখী নামে পরিচিত। স্থলভাগ অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলেই কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়। সাধারণত বিকেল বেলায় কালবৈশাখী ঝড় বেশি হয়। এ ঝড় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সঞ্চারণশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয়। পরবর্তীতে এই মেঘ ঘনীভূত হয়ে ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে। এটাই কালবৈশাখী।
টর্নেডো
টর্নেডো হলো সরু, ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশের বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়। টর্নেডোর ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমন— ঘরবাড়ির ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, দেয়াল ভেঙে যেতে পারে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। শক্তিশালী টর্নেডো বড় বড় স্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন
ঘূর্ণিঝড় হলো নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়। এটি ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়। অত্যধিক গরমের ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপক হারে বাষ্পে পরিণত হয়। এর ফলে ঐ সকল স্থানে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে। কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লোকালয় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাঝে মাঝে জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৷
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন :
১ ) বাংলাদেশের তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম লেখ ৷
২) আবহাওয়া কী ?
৩) আবহাওয়ার উপাদানগুলো কী কী ?
৪) সাধারণত কোন সময়ে সমুদ্র থেকে স্থলভাগে বায়ু প্রবাহিত হয় ?
৫) আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কীভাবে সাহায্য করে ?
বর্ণনামূলক প্রশ্ন :
১) বায়ুচাপ কী ?
২) কীভাবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় ?
৩) বাংলাদেশে কেন বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হয় ?
৪) কালবৈশাখী ঝড়ের কারণ ব্যাখ্যা কর।
৫) আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল কোথায় ?
৬) জানুয়ারি এবং জুলাই মাসের মধ্যে কোন মাসটি বনভোজনের জন্য উপযুক্ত? কেন ?
আরও দেখুন...