পরিবারের সকল সদস্যের সাথে আমাদের মিল হয় না, আবার অনেকের সাথে কী অদ্ভুত মিল! এই যে আমাদের কারো চেহারার কোনো বৈশিষ্ট্য, কিংবা হাঁটা চলা, বাবা-মা-নানা কারো না কারো সাথে মিলে যায়; এর রহস্য কী? তা উদ্ঘাটনই এবারের কাজ।
প্রথম সেশন
তোমার পরিবারে সদস্য কতজন? কে কে আছে তোমাদের পরিবারে?
এই শিখন অভিজ্ঞতার শুরুতেই একটা মজার কাজ করা যাক, সেটা হলো সবাই শুরুতে নিজ নিজ ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করবে। ফ্যামিলি ট্রি বা বংশলতিকা কী তা কি তোমরা জানো? না জেনে থাকলে শিক্ষক বা অন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জেনে নাও।
এবার নিজের বংশলতিকা ফ্যামিলি ট্রি আকারে বানাও। ফ্যামিলি ট্রিতে তোমার নানা-নানি, দাদা- দাদি থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী পর্যন্ত অন্তত তিন প্রজন্মের বর্ণনা থাকলে ভালো।
এবার একটু ভেবে দেখ, এই তিন প্রজন্মের পরিবারের সদস্যদের চেহারার বৈশিষ্ট্য কার কেমন? নিচের ছকের মতো করে দাদা-দাদি, নানা-নানি থেকে শুরু করে তোমার নিজের এবং তোমার ভাই-বোন পর্যন্ত পরিবারের সকল সদস্যদের বিভিন্ন অঙ্গের বৈশিষ্ট্যের একটি চার্ট তৈরি কর। ছকে পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে পারো; উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: চোখের আকৃতি, চোখের বর্ণ, নাকের গড়ন, গলার স্বর, পায়ের আকার, চুলের আকার ও ধরন, চুলের বর্ণ, ইত্যাদি। নিচের চার্টটি নমুনা মাত্র, তোমরা চাইলে অন্য কোনোভাবেও চার্টটি তৈরি করতে পার।
সদস্যের নাম
তোমার সাথে সম্পর্ক
চোখের আকৃতি (হরিণা চোখ, বিড়াল চোখ, ইত্যাদি)
চোখের বর্ণ (কালো, সাদা, বাদামি, ইত্যাদি)
আঙ্গুলের আকৃতি (লম্বা, খাটো)
গলার স্বর (মোটা, চিকন, ইত্যাদি)
পায়ের আকার (লম্বা, খাটো, চিকন, চ্যাপ্টা ইত্যাদি)
চুলের আকার (সোজা, কোঁকড়ানো ইত্যাদি)
শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে যেসব তথ্য পেয়েছে, সেগুলো পাশের সহপাঠীর সঙ্গে আলাপ করতে বলুন। শিক্ষার্থী নিজের কোন কোন অঙ্গের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের একই অঙ্গের বৈশিষ্ট্যের মিল খুঁজে পেয়েছে, তা পাশের সহপাঠীকে জানাতে বলুন।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেশন
তোমার পরিবারের যেসকল সদস্যের একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের বৈশিষ্ট্য একইরকম, প্রথম সেশনে তৈরি করা বিভিন্ন অঙ্গের বৈশিষ্ট্যের চার্ট থেকে তাদের পৃথক করে আলাদা একটি চার্ট তৈরি কর। একটি নমুনা নিচে দেয়া হল।
১। কোঁকড়ানো চুল
এরকম বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য একটি করে পৃথক চার্ট তৈরি করা যেতে পারে। চার্ট হয়ে গেলে ক্লাসের বাকিদের দেখাও। অন্যদের চার্ট দেখে তোমার মতামত দাও।
এবার একটু ভেবে দেখো, পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের কোনো একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের বৈশিষ্ট্য একইরকম কেন হয়? আবার কেন আমরা কেউই আমাদের বাবা বা মা-একেবারে হুবহু কারো মতই হই না?
ছোট দলে বসে জীবের বৈশিষ্ট্য কীভাবে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে প্রবাহিত হয় তা জানার জন্য অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের জিনতত্ত্ব ও বংশগতিবিদ্যা অধ্যায় থেকে মেন্ডেলের গবেষণা ও জীবের বৈশিষ্ট্য নির্বাচন অংশ পড়ে নাও। পড়ার পর দলের বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা কর। শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সাথেও আলোচনা কর।
পরিবারের একাধিক সদস্যদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের বৈশিষ্ট্য একইরকম হয় কিন্তু আরও অনেক অঙ্গ আছে যেগুলোর বৈশিষ্ট্য একইরকম হয় না কেন? এটা বোঝার জন্য অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের জিনতত্ত্ব ও বংশগতিবিদ্যা অধ্যায় থেকে জীবে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ এবং মেন্ডেল-এর মতবাদ (মেন্ডেল-এর দুটি সূত্র) অংশ পড়ে নাও। পড়ার পর দলের বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা কর।
মেন্ডেলের সূত্র দুইটি কি তুমি কি ছবির সাহায্যে তোমার বন্ধুদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারবে?
তোমাদের দলের পক্ষ থেকে একটা বড় কাগজ বা পোস্টারে ধারাবাহিক ছবির মাধ্যমে পুরো বিষয়টি তুলে ধরো। শর্ত হল, যে ছবিটি দেখবে সে যেন কোনো মৌখিক ব্যাখ্যা ছাড়াই বিষয়টি বুঝতে পারে।
সব দল তাদের করা কাজ ক্লাসরুমের বিভিন্ন দেয়ালে ঝুলিয়ে দাও। ঘুরে ঘুরে দেখো এবং মতামত দাও, অন্য দলের পোস্টার দেখে বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কিনা।
মেন্ডেল মটরশুঁটির ওপর তার পরীক্ষাটি করেছিলেন। মটরশুঁটি বেছে নেয়ার কারণ তোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছ। এখন ভেবে দেখো, বাংলাদেশে কোনো বিজ্ঞানী যদি একই পরীক্ষা করতে চাইতেন, মটরশুঁটি ছাড়া আর কোন উদ্ভিদ দিয়ে পরীক্ষণটি করতে সুবিধা হতো?
'চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেশন
আগের সেশনগুলোতে তোমরা জিনতত্ত্ব ও বংশগতিবিদ্যা সম্পর্কে জেনেছ। এখন বল দেখি, তোমার শারীরিক যে বৈশিষ্ট্যসমূহ তোমার দাদা, মা, বা নানির কাছ থেকে এসেছে, সেই বৈশিষ্ট্যসমূহ কীভাবে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে আসে? জীবের এই বৈশিষ্ট্যগুলো কোন ধরনের পদার্থের মধ্য দিয়ে বাহিত হয়? কোন কোন জৈব রাসায়নিক পদার্থ জীবের মধ্যে জীবনের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলে, আবার বংশপরম্পরায় এসব বৈশিষ্ট্য বহন করে?
অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের জৈব অণু অধ্যায়টির বিভিন্ন অংশ একে একে পড়ে নাও। পড়ার পর দলে আলোচনা করো। কোনো জায়গায় বুঝতে অসুবিধা হলে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
বিভিন্ন ধরনের জৈব অণু, এদের গঠন ও ভূমিকা, প্রোটিন সংশ্লেষ প্রক্রিয়া, জৈব অণুসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি সম্পর্কে তো জানলে। ইতোমধ্যে তোমরা উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষ সম্পর্কেও জেনেছ। নিচের ফাঁকা জায়গায় উদ্ভিদ অথবা প্রাণী কোষের চিত্র অঙ্কন করে জৈব অণুসমূহের সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করো। কোষের ছবি আঁকার জন্য চাইলে তোমাদের ছোট ভাইবোনের বিজ্ঞান বই দেখে নিতে পারো।
উদ্ভিদ কোষ
প্রাণিকোষ
এই বিভিন্ন জৈব অণু সম্পর্কে জানতে গিয়ে তোমরা কি এদের গঠনে কার্বনের ভূমিকা খেয়াল করেছ? কার্বন যে পৃথিবীতে জীবনের ভিত্তি তা কি বুঝতে পেরেছ?
এবার একটু ভেবে দেখো তো, কার্বন নেই এমন কোনো গ্রহে জীবনের উৎপত্তি হলে অন্য কোন মৌল জীবনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারত? তোমার দলের অন্য সদস্যদের সাথে এই প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা করে দেখো। এখানে মাথায় রেখো, কার্বন কোন ধরনের রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়। প্রয়োজনে পর্যায় সারণি ও রাসায়নিক বন্ধনের অধ্যায় আরেকবার দেখে নাও।
তোমাদের উত্তর নিচে লিখে রাখো।
তোমরা বিভিন্ন ধরনের জৈব অণু সম্পর্কে জেনেছ। এই সবগুলোই জীবের বিভিন্ন ধরনের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে অংশ নেয় ও শরীরকে টিকিয়ে রাখে। কিন্তু আমাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ সুনির্দিষ্টভাবে যে জৈব অণুর মাধ্যমে বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হয় সেটি হলো নিউক্লিয়িক অ্যাসিড, আরো নির্দিষ্ট করে বললে ডিএনএ বা ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিয়িক অ্যাসিড। ডিএনএ বা ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিয়িক অ্যাসিড কোষের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য স্থায়ী রাসায়নিক অণু। এটি কোষের বা সামগ্রিকভাবে জীবের সমস্ত জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। কয়েক ধরনের ভাইরাস ছাড়া সব রকমের সজীব কোষেই ডিএনএ থাকে।
দলে বসে ডিএনএর গঠন সম্পর্কে আরেকটু ভালভাবে জেনে নাও।
তোমরা ভাবতে পারো, সত্যিকারের ডিএনএ দেখতে চাইলে বা পরীক্ষা করতে চাইলে অনেক উঁচুমানের গবেষণাগার দরকার। সত্যি বলতে কি, তোমরা যারা বড় হয়ে জীববিজ্ঞানের বড় বড় গবেষণা করবে তাদের ক্ষেত্রে কথাটা সত্যি। তবে তুমি জানো কি, একেবারে হাতের কাছে পাওয়া যায়, এমন উপকরণ দিয়েই তুমি সত্যি সত্যি ডিএনএ সংশ্লেষণ করে দেখতে পারো, এমনকি অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়াই!
নিচে তার একটা বর্ণনা দেয়া হলো
কাজ: DNA-সংশ্লেষণ
এই পরীক্ষায় আমরা একটা কলার ডিএনএ বের করে দেখার চেষ্টা করব। (মানুষ বা বড় বড় জীবজন্তুর বদলে কলার ডিএনএ দেখবে শুনে আবার হতাশ হয়ে যেওনা! তুমি কি জানো, কলার ডিএনএর প্রায় ৬০% হুবহু মানুষের মতই?)
যা যা লাগবে:
✓ দুইটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাস
✓ মুখ আটকানো প্লাস্টিকের ব্যাগ বা বড় কোনো পাত্র
✓ কলা
✓ ছুরি ও চামচ
✓ ছাঁকনি, পাতলা সুতি কাপড়
✓ প্রচলিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা যেকোনো অ্যালকোহল
✓ ৪ চা চামচ লবণ
✓ ২ চা চামচ তরল ডিশওয়াশিং সাবান
✓ কুসুম গরম পানি
✓ কাঠি
কাজের বর্ণনা:
✔ প্রথমেই কলা পিষে একেবারে মিহি করে পেস্ট করে নাও।
✔প্লাস্টিক ব্যাগ বা বড় পাত্রে কলার পেস্টের সাথে এই পানির মিশ্রণ ভালভাবে মিশিয়ে নাও।
✔পাতলা সুতি কাপড়ে এই মিশ্রণ ভালভাবে ছেঁকে নাও। ভারী মিশ্রণ হওয়ায় এখান থেকে তরল অংশটা ফিল্টার হয়ে বের হতে সময় লাগবে, সেজন্য এটা একভাবে কিছুক্ষণ রেখে দাও।
✔ছেঁকে নেয়া তরল একটা গ্লাসে ঢেলে নাও। ভালো হয় যদি কালো কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে (যেমন- চকবোর্ড) গ্লাসটাকে রেখে দিতে পারো, তাহলে পর্যবেক্ষণ করতে সুবিধা হবে।
✔গ্লাসের এক কিনার দিয়ে ধীরে ধীরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ঢেলে দাও। গ্লাসের ভেতরে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করছ? সাদা সুতার মত কিছু কি চোখে পড়ছে? একটা কাঠি দিয়ে খুব সাবধানে ডিএনএ টা তুলে আনার চেষ্টা করো তো।
✔হ্যাঁ, এই সুতার মত বস্তুটিই কলার ডিএনএ! আর এই সুক্ষ্ণ বস্তুটির মধ্যেই কলাটার বৈশিষ্ট্য কেমন হবে তার সকল সূত্র লুকিয়ে আছে!
ডিএনএ সংশ্লেষণ তো হল। এবার ডিএনএর একটা মডেল তৈরি করলে কেমন হয়?
নিচে একটা সরল ডিএনএর মডেল বানানোর বর্ণনা দেয়া হলো। তবে এটা নমুনা মাত্র, তোমরা চাইলে অন্য উপকরণ ব্যবহার করে অন্যভাবে পরিকল্পনাও করতে পারো।
কাজ: DNA-এর মডেল নির্মাণ
প্রয়োজনীয় উপকরণ: 1m সাধারণ লোহার তার, 2টি পুরোনো বল পয়েন্ট কলম, 40টি 1.5 cm ব্যাসের পুঁতি, ৪/7টি প্লাস্টিকের (তরল পান করার) ড্রিংকিং স্ট্র, লাল, নীল, হলুদ এবং সবুজ রংয়ের কাগজ, আঠা, কাঁচি এবং একটি খালি জুতার বাক্স।
পুরো প্রক্রিয়া:
✓ এই মডেলের জন্য 40টি 1.5 cm ব্যাসের পুঁতির দরকার হবে। যদি জোগাড় করা কঠিন হয় তাহলে এক কাপ ময়দার মাঝে আধা কাপ লবণ মিশিয়ে একটু পানি দিয়ে মাখিয়ে 1.5-1 cm ব্যাসের 40 থেকে 50টি গোল বল তৈরি করে টুথ পিক দিয়ে মাঝখানে ফুটো করে নাও। এগুলো শুকিয়ে নিলেই পুঁতির কাজ চলে যাবে। ডিএনএ মডেলে এই পুঁতিগুলো হবে ফসফেট।
✓ প্রতিটি ড্রিংকিং স্ট্রকে সমান তিন ভাগে কেটে 20 থেকে 25 টুকোরা করে নাও। প্রতিটি টুকরা ৪ থেকে 9 cm লম্বা হওয়ার কথা। এগুলো হবে ডিএনএ মডেলে নিউক্লিওটাইড।
✓মোটা সেফটি-পিন দিয়ে স্ট্রয়ের টুকরাগুলোর দুই পাশে সমান্তরালভাবে ফুটো কর।
✓রঙিন কাগজগুলো 2 cm চওড়া করে ফিতার মতো কেটে নাও।
✓এবারে ফিতার মতো কেটে রাখা রঙিন কাগজগুলো থেকে প্রথমে সবুজ কাগজ 3 cm করে কেটে নিয়ে আঠা দিয়ে স্ট্রয়ের উপর এমনভাবে প্যাঁচিয়ে লাগাও যেন স্ট্রয়ের ঠিক মাঝখান থেকে একপাশে 2 cm সবুজ রংয়ের কাগজে ঢেকে যায়। এবারে মাঝখান থেকে অন্য পাশে হলুদ রংয়ের কাগজ একইভাবে আঠা দিয়ে প্যাঁচিয়ে দাও। এভাবে স্ট্রয়ের টুকরার অর্ধেকগুলোর (12/10 টি) মাঝখানে সবুজ ও হলুদ রংয়ের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দাও। সবুজ অংশটুকু A এবং হলুদ অংশটুকু T নিউক্লিওটাইড ধরে নিলে স্ট্রয়ের একেকটি টুকরা হবে একেকটি বেস পেয়ার।
✓একইভাবে বাকি অর্ধেক (12/10 টি) স্ট্রয়ের টুকরার মাঝখানের অংশটুকু নীল এবং লাল কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে নাও। এখানে নীল অংশটুকু C এবং লাল অংশটুকু G নিউক্লিওটাইড ধরে নিলে স্ট্রয়ের একেকটি টুকরা হবে একেকটি CG বেস পেয়ার। মনে রাখতে হবে অবশ্যই সবুজ রংয়ের সাথে শুধু হলুদ কাগজ এবং নীল রংয়ের সঙ্গে শুধু লাল কাগজ লাগাতে হবে, এর ব্যতিক্রম হতে পারবে না।
✓1 m তারকে দুই টুকরা করে একটি পুরোনো বলপয়েন্ট কলমের দুই পাশে 8-7 cm জায়গা রেখে বেঁধে নাও।
✓৪. এবারে বলপয়েন্ট কলমের সাথে বেঁধে রাখা দুটি তার একটি স্ট্রয়ের টুকরার দুই পাশের ফুটো দিয়ে ঢুকিয়ে নাও।
✓স্ট্রটি বলপয়েন্ট কলমের কাছাকাছি টেনে নিয়ে তার দুটি দিয়ে দুটি পুঁতি (কিংবা তোমার তৈরি গোলক) ঢুকিয়ে নামিয়ে আনো।
✓এভাবে একবার একটি স্ট্রয়ের টুকরা এবং তারপর দুই পাশে দুইটি পুঁতি ঢুকাতে থাকো। ঢোকানোর সময় বিভিন্ন রংয়ের বেস পেয়ারের একটি সুন্দর সমন্বয় করার চেষ্টা কর।
✓এভাবে একবার একটি স্ট্রয়ের টুকরা এবং তারপর দুই পাশে দুইটি পুঁতি ঢুকাতে থাকো। ঢোকানোর সময় বিভিন্ন রংয়ের বেস পেয়ারের একটি সুন্দর সমন্বয় করার চেষ্টা কর।
✓প্রকৃত ডি.এন.এতে প্রতি দশটি বেস পেয়ারে একবার ঘূর্ণন হয়। এখানে যেহেতু 20টির মতো বেস পেয়ার আছে, তাই দুইবার ঘূর্ণন হতে হবে। কাজেই দুই পাশের দুটি বল পয়েন্ট কলম দুই হাতে ধরে দুটি পূর্ণ পাক দাও। দেখবে এটি ডি.এন.এর চমৎকার একটি মডেল হয়েছে।
✓কল্পনা করে নাও স্ট্রয়ের হলুদ অংশ A, কাজেই সবুজ হচ্ছে T। একইভাব নীল অংশ C এবং লাল অংশ ও নিউক্লিওটাইড। পুঁতি কিংবা তোমার তৈরি গোলকগুলো হচ্ছে ফসফেট। দুটি গোলকের মাঝখানে স্ট্রয়ের বাকি অংশটুকু হচ্ছে শর্করা!মডেলটিকে পাকাপাকিভাবে রক্ষা করার জন্য খালি জুতোর বাক্সের ভিতরে বলপয়েন্ট কলম দুটি উপরে এবং নিচে (দুইটি পূর্ণ ঘূর্ণনসহ) বেঁধে নাও।
মন্তব্য
✓DNA-এর এই মডেলে প্রায় 20/22টি বেস পেয়ার রয়েছে। বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেটি লক্ষ কর। বিভিন্ন কোণে মডেলটির উপর আলো ফেললে কেমন ছায়া পড়ে তা দেখো। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন (1920-1958) বিভিন্ন কোণে DNA অণুর উপর এক্স-রে ফেলে তার ছায়ার ছবি তুলেছিলেন এবং তাঁর তোলা সেই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে DNA-এর গঠন আবিষ্কার করেন জেমস ওয়াটসন (1928-বর্তমান) এবং ফ্রান্সিস ক্রিক (1916-2004)। এজন্য এই দুইজন 1962 সালে নোবেল পুরস্কার পান।
মনে রেখো:
এই মডেলটি আসল DNA-এর মতো হলেও বিভিন্ন পরমাণু ও রাসায়নিক গ্রুপের আকারগত অনুপাত এখানে রক্ষিত হয়নি।
উপরের মডেলের বর্ণনা দেখে নিজেদের দল থেকে কী ধরনের মডেল বানাবে তা পরিকল্পনা করো এবং উপকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নাও। পরের সেশনে আসার আগে উপকরণ জোগাড় করে আনা চাই।
সপ্তম সেশন
এই সেশনে তোমরা দলে বসে পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিএনএর মডেল তৈরি করবে। মডেল হয়ে গেলে তোমাদের বানানো মডেল অন্য দলগুলোকে দেখাও, অন্যদের মডেল দেখেও তোমাদের মতামত দাও।
এবার একটা অনুমানের খেলার আয়োজন করতে পারো। মানুষসহ বিভিন্ন জীবের নাম যা যা মাথায় আসে তা নোট করো। এবার এদের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে মিল আছে কিনা তা খেয়াল করে দেখো। একই ধরনের বৈশিষ্ট্য কোন সব জীবের মধ্যে আছে, অর্থাৎ কোন কোন জীবের জিনের প্যাটার্নে মিল বেশি তা অনুমান কর এবং নিচের ছকে লিখে রাখো।
নিচে সময়ের সাথে ঘোড়ার বৈশিষ্ট্য কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তার একটা উদাহরণ দেয়া আছে।
অনুমান কর তো, আরো অনেক প্রজন্ম পরে ঘোড়ার আর কী কী পরিবর্তন ঘটতে পারে?