ঈশ্বরের বিভিন্ন প্রতীক বা রূপ হচ্ছে দেব-দেবী। আমরা দেব-দেবীর কৃপা লাভ করার জন্য পূজা করি। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। দেব-দেবীর পূজা করলে ঈশ্বরেরই পূজা করা হয়। পূজা করলে তাঁরা সন্তুষ্ট হন। দেব-দেবীরা সন্তুষ্ট হলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। তখন আমাদের মঙ্গল হয়।
পূজা শব্দের অর্থ প্রশংসা করা বা শ্রদ্ধা করা। পূজা অর্থে আরাধনা এবং অর্চনা করাও বোঝায়। পূজা বলতে বোঝায় দেব-দেবীর স্তুতি করা। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা। নানা উপকরণ দিয়ে দেব-দেবীর পূজা করা হয়। উপকরণগুলো হলো: ফুল-ফল, দূর্বা, তুলসীপাতা, বেলপাতা, জল, চন্দন, আতপচাল, ধূপ-দীপ ইত্যাদি। দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করে পূজা করা হয়। মন্দিরে সাজসজ্জা করা হয়। সকলের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করা হয়। পূজার সময় পবিত্র মনে মন্ত্র পাঠ করতে হয়। তারপর পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, আরতি এবং ধ্যান করতে হয়। পূজা শেষে দেবতাকে প্রণাম করতে হয়।
পার্বণ শব্দের অর্থ হলো পর্ব বা উৎসব। উৎসব মানে আনন্দপূর্ণ অনুষ্ঠান। বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিভিন্ন ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়। যে উৎসবগুলো পূজাকে আনন্দময় করে তোলে তাকে পার্বণ বলে। আনন্দের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পার্বণ পালিত হয়। পালিত পার্বণগুলোর মধ্যে নববর্ষ, পৌষসংক্রান্তি, চৈত্রসংক্রান্তি, নবান্ন, দোলযাত্রা, বিজয়া দশমী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
পূজা-পার্বণের অঙ্গের মধ্যে রয়েছে- দেব-দেবীর প্রতিমা নির্মাণ। মন্দির বা ঘর সাজানো। বিভিন্ন ধরনের বাদ্যের আয়োজন করা। বিশেষ করে ঢাক, ঢোল, ঘণ্টা, করতাল, কাঁসি, শঙ্খ ইত্যাদি বাদ্য বাজানো। সকলের সাথে ভাববিনিময়। নানা ধরনের খাওয়া-দাওয়া। বিভিন্ন ধরনের আনন্দমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। পরিচ্ছন্ন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা।
হিন্দুধর্মে প্রায় সারা বছর নানা পূজার আয়োজন করা হয়। আমাদের প্রধান পূজাগুলো হচ্ছে দুর্গাপূজা, সরস্বতীপূজা ও লক্ষ্মীপূজা। সকলে মিলে মন্দিরে পূজা করে। পূজার সময় একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, নাড়ু ও ফল খেয়ে থাকে। শিশুরা নানা ধরনের খেলা ও আনন্দে মেতে ওঠে। সকলে মিলে যখন পূজা করা হয় তখন পূজা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। এই উপলক্ষে ধর্মীয় আলোচনা সভা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মেলা বসে। শোভাযাত্রা হয়। পুজাতে এরূপ নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়। সকলের অংশগ্রহণে এসব উৎসব সর্বজনীন হয়ে ওঠে।
আরও দেখুন...