প্রাসঙ্গিক তথ্য
পেঁপের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে থাকে । পেঁপে পরপরাগায়িত এবং বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে থাকে বলে অসংখ্য প্রকার পেঁপে দেখা যায়। বিশেষ কোন পেঁপের জাত আবাদ ও সংরক্ষণ করতে হলে নিয়ন্ত্রিত পরাগায়ণের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করা উচিত । ভালো জাতের চারা নির্বাচন-পেঁপের চারা তিন ভাবে উৎপাদন করা যায় । যথা- বেড়ে, পটে ও সরাসরি জমিতে। আদর্শ পেঁপে গাছের কতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার । যথা- গাছ বেটে জাতের হতে হবে । তাড়াতাড়ি ফল ধরতে হবে । একটি কক্ষে একটি করে ফল থাকবে । গাছে সমান ভাবে ফল হবে ।
বাংলাদেশে কয়েকটি অনুমোদিত বিদেশি পেঁপের জাত পাওয়া যায়। যেমন- (ক) বেঁটে-ওয়াশিংটন থাইডোয়ার্ফ হানিডিউ, রাচি, পুষা, শিমলা ইত্যাদি । (খ) লম্বা জাত- সেলো, বাংলাদেশে পেঁপের একটি মাত্র জাত আছে যার নাম শাহী পেঁপে ।
উপকরণ
(১) বীজ (২) সার (জৈব-রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) স্প্রে যন্ত্র (৬) পানি (৭) লাঙ্গল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) ছুরি (১৪) ঝুড়ি (১৫) কলার খোল (১৬) রশি (১৭) বেড়া (১৮) কাতে ।
পেঁপে চাষ করার জন্য নিম্নের কাজ /ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
১। পেঁপের উন্নত জাত নির্বাচন করুন । প্রয়োজনীয় বীজ (৭০-৮০ গ্রাম/ একরে) সংগ্রহ করুন ।
২। পেঁপে চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং সুনিষ্কাশিত দোঁআশ মাটি নির্বাচন করুন ।
৩। সংগৃহীত চারা থেকে বেছে নিরোগ এবং সুস্থ সবল চারা নির্বাচন করুন । চারা তৈরির জন্য প্রথমে বীজকে কাপড়ের পুটুলিতে বেঁধে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিন। ১৩ মি. মাপে (৩-৪ টি) বীজতলা তৈরি করুন। প্রতি বীজতলায় ২০-২৫ গ্রাম বীজ বুনে দিন। বীজ বপনের পূর্বে বীজকে শোধন করে নিন । বীজ বপনের পর বীজ তলা গুড়া মাটি বা জৈব সার ও খড়কুটা দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিন । বীজ গজালে খড়কুটা সরিয়ে ফেলুন ।
৪ । বীজ গজানোর পর মাঝে মাঝে সেচ (৩-৪ দিন পর পর বিকেলে) দিন । আগাছা হাতে তুলে ফেলুন । বীজতলায় মাটি নিডিয়ে ঝরঝরে ও নরম রাখুন। এভাবে ৬-৭ সপ্তাহ পর্যন্ত চারাকে যত্ন করে বড় (২০-২৫ সে.মি) করুন। এছাড়াও ভাল জাতের পুরানো গাছ থেকে মাউন্ড দাবা কলম করেও চারা সংগ্রহ করতে পারেন ।
৫। পেঁপে জমি লাঙ্গল দিয়ে ভালভাবে ৫/৬টি চাষ ও মই দিন । আগাছা বেছে ফেলুন। মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙে ফেলুন । জমি সমতল করুন ।
৬ । জমি তৈরির পর ২.৫ মি. দূরত্বে কোদাল দিয়ে ৯০ সে.মি চওড়া ও ৬০ সে.মি গভীর করে (৭৭৪টি) গর্ত তৈরি করুন । গর্ত সপ্তাহকাল খোলা অবস্থায় রেখে দিন। এরপর প্রতি গর্তে ২০ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম খৈল, ৪০০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমপি সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে মাদা তৈরি করে রাখুন । গর্ত ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে নিন । এর ১০-১৫ দিন পর গর্তে চারা রোপণ করুন ।
৭ । বীজতলা থেকে সুস্থ সবল ও বেশি পাতাযুক্ত চারাগুলো সাবধানে মাটি/শিকড়সহ তুলে আনুন । প্রতি মাদায় ২০ ২৫ সে.মি ব্যবধানে (ত্রিভুজাকারে) ৩টি চারা রোপণ করুন । চারা বীজতলায় যতটুকু মাটির নিচে ছিল ঠিক ততটুকুই পুঁতে দিন । চারার পাশের মাটি হাতে হালকাভাবে চেপে বসিয়ে দিন । প্রতিটি চারা ছোট কাঠি পুতে রশি দিয়ে (আলাদা ভাবে) বেঁধে দিন । ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিন । চারার গোড়ার দিকে কিছু পাতা ছেটে ফেলুন । ৩-৪ দিন পর্যনত কলার খালে দিয়ে ছায়া ও সকাল বিকাল ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিন। এরপর ৭ দিন বিকেলে সেচ দিন।
৮ । চারার আশেপাশে আগাছা জন্মালে নিড়িয়ে তুলে ফেলুন। জমির মাটি নরম ও আলগা রাখুন। সেচের পর জো এলে চটা ভেঙে দিন । বয়স্ক গাছ নিড়িয়ে আগাছা মুক্ত রাখুন । প্রতি দুইটি সারির মাঝে কোদাল দিয়ে ৩০ সে.মি চওড়া ও ২০ সে.মি গভীর করে নালা তৈরি করে মাটি দুই দিকে তুলে দিন । গাছে ফুল দেখা দিলে প্রতি মাদায় একটি করে সতেজ উভয় লিঙ্গ/স্ত্রী গাছ রেখে বাকি দুটি চারা গাছ মাটি বরাবর কেটে ফেলুন । তবে প্রতি ২০-২৫ টি গাছের জন্য একটি করে পুরুষ গাছ রাখুন ।
৯ । সার উপরি প্রয়োগ দু'দফায় করুন । প্রথমবার চারা রোপণের ৪-৫ সপ্তাহ পর এবং দ্বিতীয়বার গাছে ফুল ধরা (৩ মাস) শুরু করলে প্রয়োগ করুন। প্রতিবারে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫০ গ্রাম এমপি প্রয়োগ করুন ।
১০ । সার প্রয়োগের জন্য চারার গোড়ার (৩০ সে.মি দূরে) চারদিকে দুপুরে যতদূর ছায়া পড়ে সে অংশের মাটি নিড়িয়ে আলগা করুন । সার ছিটিয়ে ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিন। রস কম থাকলে সেচ দিন। নালা ভরে পানি দিয়ে সেচের কাজ সমাধা করতে পারেন। বর্ষায় অতিরিক্ত পানি নিকাশের দিকে খেয়াল রাখুন ।
১১ । পেঁপে গাছে অনেক ফল ধরে । কিছু কিছু ফল ছিড়ে পাতলা করে দিন । বর্ষাকাল শুরুর সাথে সাথে গাছের গোড়ায় কোদাল দিয়ে মাটি তুলে দিন ।
১২ । ফলের মাছি দমনে- (১) আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম ডিপটেরেক্স -৮০ গুলে ৮-১০ দিন পরপর ফলে স্প্রে করুন ।
১৩। কাও/গোড়া পচা রোগ দমনে- (১) পানি নিকাশের ব্যবস্থা করুন, (২) উঁচু জমিতে চাষ করুন, (৩) আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করে ফেলুন, ৪) সুস্থ গাছে ও রোগের প্রাথমিক দিকে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩০-৩৫ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড-৫০ পাউডার গুলে পক্ষকাল পরপর গাছে স্প্রে করুন, (৫) বীজ শোধন করে বপন করুন।
১৪ । পাতা ও ফল পর্চা রোগ দমনে- (১) ফল ও কাণ্ড রোদ থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করুন । মরচে ধরা রোগ দমনে-(২) রোগাক্রান্ত ফল পাতা তুলে পুড়িয়ে ফেলুন ।
১৫ । পাতার দাগ পড়া দমনে কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করুন।
১৬ । পেঁপে মোজাইক (ভাইরাস) দমনে- (১) আক্রান্ত গাছ উপড়ে পুড়ে ফেলুন, (২) ভাইরাসমুক্ত বীজ সংগ্রহ করুন। দীর্ঘ শস্য পর্যায় অবলম্বন করুন ।
১৭ । গাছে থাকা অবস্থায় পেঁপে হলুদ রং ধরলে (বা আঠা ঘন ভাব ধরলে ফল পেড়ে নিন । রোপনের ১০-১২ মাস পর সংগ্রহ করতে পারেন। সংগ্রহের পর পঁচা, ভাল, খারাপ, ছোট-বড় বেছে নিন । ঝুড়িতে খড়/পাতা বিছিয়ে সাবধানে পেঁপে বাজারে পাঠান বা দূরে চালান দিন । হালুয়া, মোরব্বা, জ্যাম, জেলি তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারেন । চিত্র ফুল/ফল ও রোপণ পদ্ধতি দ্রষ্টব্য ।
সতর্কতা
১ । শীতের সময় বীজ গজাতে ৪/৫ সপ্তাহ লাগতে পারে । সদ্য সংগৃহীত বীজ থেকে গজানোর হার দ্রুততর ও গজানোর সংখ্যা বেশি হয় ।
২। উত্তম নিকাশের ব্যবস্থা উত্তম ফল দানে সহায়ক ।
৩। কলমের চারা/এফ-১ (হাইব্রিড) (উভয়লিঙ্গ) প্রতি গর্তে একটি চারা দেওয়া চলে ।
৪ । ইউরিয়া সার বেশি প্রয়োগ ভাল নয় । লাল মাটিতে ২৫০ গ্রাম/গর্তে চুন দেয়া ভাল ।
আরও দেখুন...