যেসব গ্রন্থির রস খাদ্য পরিপাকে অংশ নেয় তাদেরকে পরিপাকগ্রন্থি বা পৌষ্টিকগ্রন্থি বলে। মানবদেহে পৌষ্টিকগ্রন্থিগুলো হলো (a) লালাগ্রন্থি (Salivary glands)
মানুষের তিন জোড়া লালাগ্রন্থি আছে।দুই কানের সামনে ও নিচে এক জোড়া(প্যারোটিডগ্রন্থি), চোয়ালের নিচে এক জোড়া(সাব-ম্যাক্সিলারি) এবং চিবুকের নিচে এক জোড়া (সাব-লিঙ্গুয়ালগ্রন্থি)। এগুলো পৃথক পৃথক নালির মাধ্যমে মুখগহ্বরে উন্মুক্ত হয়। লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস, লালা (saliva) নামে পরিচিত। লালারসে টায়ালিন নামক এনজাইম এবং পানি থাকে। (b) যকৃৎ (Liver)
মধ্যচ্ছদার নিচে উদরগহ্বরের উপরে পাকস্থলীর ডান পাশে যকৃৎ অবস্থিত। এটি মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। এর রং লালচে খয়েরি। যকৃতের ডান খণ্ডটি বাম খন্ড থেকে আকারে কিছুটা বড়। প্রকৃতপক্ষে চারটি অসম্পূর্ণ খন্ড নিয়ে যকৃৎ গঠিত। প্রতিটি খন্ড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোবিউল দিয়ে তৈরি। প্রত্যেকটি লোবিউলে অসংখ্য কোষ থাকে। এ কোষ পিত্তরস (bile) তৈরি করে। পিত্তরস ক্ষারীয় পুণ সম্পন্ন। যকৃতে বিভিন্ন রকম জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তাই একে রসায়ন গবেষণাগার বলা হয়।
যকৃতের নিচের অংশ পিত্তথলি বা পিত্তাশয় সংলগ্ন থাকে। এখানে পিত্তরস জমা হয়। পিত্তরস পাঢ় সবুজ বর্ণের এবং তিন্তু স্বাদবিশিষ্ট। পিত্তথলি পিত্তনালির সাহায্যে অগ্ন্যাশয় নালির সাথে মিলিত হয়। এটি যকৃৎ-অগ্ন্যাশয় নালির মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করে।
একক কাজ
কাজ: পৌষ্টিকতন্ত্রের চিত্র অঙ্কন করে বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত কর এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
যকৃতের কাজ: যকৃৎ পিত্তরস তৈরি করে। পিত্তরসের মধ্যে পানি, পিত্ত-লবণ, কোলেস্টেরল ও খনিজ লবণ প্রধান। এই রস পিত্তথলিতে জমা থাকে। প্রয়োজনে ডিওডেনামে এসে পরোক্ষভাবে পরিপাকে অংশ নেয়। পিত্তরসে কোনো উৎসেচক বা এনজাইম থাকে না। যকৃৎ উদ্বৃত্ত গ্লুকোজ নিজদেহে গ্লাইকোজেনরূপে সঞ্চয় করে রাখে। পিত্তরস খাদ্যের অম্লভাব প্রশমিত করে এবং ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই পরিবেশ খাদ্য পরিপাকের অনুকূল। কেননা আম্লিক পরিবেশে খাদ্য পরিপাক হয় না। পিত্তরস চর্বিজাতীয় খাদ্যকে ক্ষুদ্র দানায় পরিণত করে, যা লাইপেজ সহযোগে পরিপাকে সহায়তা করে। অতিরিক্ত অ্যামাইনো এসিড যকৃতে আসার পর বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ও অ্যামোনিয়ারূপে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ তৈরি করে এবং স্নেহজাতীয় পদার্থ শোষণে সাহায্য করে।
রক্তে কখনো গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে যকৃতের সঞ্চিত গ্লাইকোজেনের কিছুটা অংশ গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তস্রোতে মিশে যায়। এভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
(c) অগ্ন্যাশয় (Pancreas)
অগ্ন্যাশয় পাকস্থলীর পিছনে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্রগ্রন্থি। এটি একাধারে পরিপাকে অংশগ্রহণকারী এনজাইম ও রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন নিঃসৃত করে। অর্থাৎ অগ্ন্যাশয় বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মতো কাজ করে। অগ্ন্যাশয়রস অগ্ন্যাশয় নালির মাধ্যমে যকৃৎ- অগ্ন্যাশয়নালি দিয়ে ডিওডেনামে প্রবেশ করে।
অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয়রস নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয়রসে ট্রিপসিন, লাইপেজ ও অ্যামাইলেজ নামক উৎসেচক থাকে। এসব এনজাইম শর্করা, আমিষ এবং স্নেহজাতীয় খাদ্যের পরিপাকে সহায়তা করে। তাছাড়াও অম্ল-ক্ষারের সাম্যতা, পানির সাম্যতা, দেহতাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে অগ্ন্যাশয়ের একটি অংশ অতি প্রয়োজনীয় কিছু হরমোন, যেমন: গ্লুকাগন ও ইনস্যুলিন নিঃসরণ করে। গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজে এ হরমোন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(d) গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি (Gastric glands)
গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি পাকস্থলীর প্রাচীরে থাকে। এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস (ট্রিপসিন, লাইপেজ, অ্যামাইলেজ) গ্যাস্ট্রিক রস বা পাচক রস নামে পরিচিত।
(e) আত্রিকগ্রন্থি (Intestinal glands)
ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরে ভিলাইয়ে আন্দ্রিকগ্রন্থি থাকে। এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসের নাম আন্দ্রিক রস।