প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর ধারণা

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - NCTB BOOK

জনাব হাসিবুল হক ভার্চু ফুডস লি.-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO)। প্রতিষ্ঠানটি তাদের উৎপাদনের পরিধি বাড়াতে চায়। এজন্য “ভার্চু ড্রিংস” নামে বোতলজাত পানীয় উৎপাদন ও বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে একটি স্থাপনা (Plant) প্রস্তুত করে। উপমহাব্যবস্থাপক আহসানুল কবিরকে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে উক্ত প্ল্যান্টের সার্বিক দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হয়। আহসানুল কবির প্ল্যান্টটির উৎপাদন কাজ পরিচালনার জন্য ৫ জন উৎপাদন ব্যবস্থাপক, ১৫ জন সহকারী উৎপাদন ব্যবস্থাপক, ৪৫ জন সুপারভাইজার/কর্মনায়ক, বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৫০ জন উৎপাদন কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। তিনি দক্ষতার ভিত্তিতে ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপক, সুপারভাইজার ও কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। কোন ব্যবস্থাপকের অধীনে কোন কোন সহকারী ব্যবস্থাপক, কোন সহকারী ব্যবস্থাপকের অধীনে কোন কোন সুপারভাইজার/কর্মনায়ক এবং সুপারভাইজারগণ কোন কোন কর্মীদেরকে তদারকি করবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। প্রত্যেকেই তার সমস্যা, প্রয়োজন ও অগ্রগতি সম্পর্কিত প্রতিবেদন তার উপরস্থ নির্বাহীকে জানায়। আর জনাব আহসানুল কবির বিষয়টি প্রয়োজনে সিইও জনাব হাসিবুল হককে জানান। তিনি কোনো পরামর্শ দিলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আহসানুল কবির করে থাকেন। উপরিউক্ত ঘটনায় সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর ধারণা পাওয়া যায়। এতে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালাও ফুটে ওঠেছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেদন দাখিলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। এই উপ-অধ্যায় থেকে আমরা এ সম্পর্কিত বিষয় বিস্তারিতভাবে জানতে পারবো।

Content added By

সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর ধারণা

ইংরেজি Organization শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Organon' থেকে উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন। একাধিক ব্যক্তির নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংঘবদ্ধ হওয়াকে সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন বলা হয়। অর্থাৎ, হিউম্যান রিসোর্সের প্রাতিষ্ঠানিক বা কাঠামোগত অবস্থাকে সংস্থা, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান বলে। এটি ঊর্ধ্বতন ও অধীনস্থদের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করে। এটি এমন একটি নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়।

চিত্র : সাংগঠনিক কাঠামো

যিনি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উপায়-উপকরণকে একত্র করে সংঘবদ্ধ ও এভাবে এই কাঠামো পুরো প্রতিষ্ঠান সম্পর্ক নির্ধারকের কাজ করেন তাকে সংগঠক বলা হয়। বিক্ষিপ্তভাবে সম্পর্কে ধারণা দেয় । পড়ে থাকা উপকরণ দ্বারা লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এগুলোকে চিহ্নিত করে কাজের ধরন বা কাজ অনুযায়ী আলাদা করে ভাগ করতে হয়। প্রতিটি কাজে নিয়োজিত কর্মীদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবে লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের রূপ লাভ করে। এ ধরনের কর্মীই হলো সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি।

▪️জেনে রাখো

সংস্থা বা সংগঠন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন—

যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যারল্ড কুঞ্জ এবং সিরিল জে. ও'ডোনেল (Prof. Harold Koontz and Cyril J. O'Donnell) এর ভাষায়, 'Organization is a structural relationship by which an enterprise is bound together and the framework in which individual efforts is coordinated.' অর্থাৎ, 'সংস্থা বা সংগঠন হলো সম্পর্কের এমন এক কাঠামো, যার সাহায্যে একটি প্রতিষ্ঠানের শক্তিগুলো একত্র হয় এবং যে কাঠামোর মধ্যে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা সমন্বিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিকি ডব্লিউ. গ্রিফিন ( Ricky W. Griffin) এর মতে, 'Organization is a group of people working together in structured and coordinated fashion to achieve a set of goals.' অর্থাৎ, 'সংগঠন বলতে একগুচ্ছ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ লোক একসাথে কাঠামোগত ও সমন্বিত উপায়ে কাজ করাকে বোঝায়।"

অতএব, নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে একাধিক ব্যক্তির সংঘবদ্ধতা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করার কাঠামোবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপকে সংগঠন বলে।

Content added || updated By

প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুষ্ঠুভাবে প্রতিষ্ঠান গঠন বা সংগঠিতকরণ ও সঠিক সংগঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে উপকরণ ও সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়, অপচয় কমে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ে। নিচে প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাপনা সংগঠিতকরণ ও সংগঠনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো-

→ দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণ (Specifying responsibility) : সঠিকভাবে কোনো কাজ করার বাধ্যবাধকতাকে দায়িত্ব বলে। সংগঠনের মাধ্যমে কাজকে প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এরপর প্রতিটি বিভাগের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব একেকজন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। এতে যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন ও লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।

→ জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা (Establishing accountability and order) : সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিটি কাজ ও দায়িত্বকে সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ফলে কেউ তার কাজ বা দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে পারে না। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ, কর্মী ও কাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। আনুষ্ঠানিক সংগঠন শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, সঠিকভাবে সংগঠিতকরণের ফলে সর্বত্র জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত হয়।

→লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা (Assistance to achieve goals and objectives) : লক্ষ্য অর্জনের ধাপ বা মাইলফলককে উদ্দেশ্য বলে। ব্যবস্থাপনার সংগঠিতকরণ প্রক্রিয়ায় যাবতীয় কার্যাবলি প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগে ভাগ করা হয়। এরপর বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর উক্ত বিভাগ ও উপবিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবে প্রত্যেকের দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকায় উদ্দেশ্য অর্জন সহজ হয়।

→ উপকরণ ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার (Proper use of elements and resources) : সংগঠিতকরণের মাধ্যমে উপকরণ ও সম্পদসমূহের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। অর্থনৈতিক মূল্যসমৃদ্ধ জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রতিভাসম্পন্ন কর্মীকে মানবসম্পদ বলা হয়। আদর্শ সংগঠনে কাজের ধরন অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিকে কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়। এর সাথে প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব দিয়ে তার জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা হয়। ফলে কর্মীদের সামর্থ্য পুরোপুরি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জিত হয়।

→ সুষ্ঠু সমন্বয় (Proper coordination) : প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলোকে একই ধারায় লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করাকে সমন্বয়সাধন বলে। সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগ, কাজ ও কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এজন্য সংগঠনে নিয়োজিত প্রত্যেক কর্মী কার্যক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকেন। এছাড়া প্রত্যেকে তার ঊর্ধ্বতন অধস্তন সম্পর্কে এবং বিভিন্ন বিভাগ ও তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন ।

→ সৃজনশীলতার বিকাশ (Development of creativity) : নতুনত্ব আনতে পারার যোগ্যতাকে সৃজনশীলতা বলা হয়। সংগঠনে কর্মীদের প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে নতুন উপায়, পদ্ধতি, নিয়ম উন্নয়ন ও প্রয়োগের যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়। যেমন : শ্রম বিভাগের কারণে কর্মীরা সবসময় একই কাজ করার ফলে ঐ কাজ আরও সহজে করার উপায় নিজেরাই উদ্ভাবন করতে পারে। এতে তাদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ হতে থাকে।

→ কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা (Establishing effective control) : পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করাকে নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। সংগঠন কাঠামোতে প্রতিটি বিভাগ ও কর্মীর কাজ, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকায় তাদের কাজ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া কে, কাকে, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তার নির্দেশনা সংগঠন কাঠামো থেকে পাওয়া যায়। 

তাই সংগঠন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ কাজকে সহজ করে তোলে। তাই বলা যায়, ব্যবসায়িক বা অব্যবসায়িক যেকোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান তথা সংগঠিতকরণ ও সংগঠন অবশ্যই প্রয়োজন। আর ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় সংগঠন মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। এর ওপর ভিত্তি করেই সাফল্য অর্জিত হয়। তাই সুষ্ঠু সংগঠন তৈরিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হয়।

Content added By

প্রতিষ্ঠান/ব্যবস্থাপনার নীতি

নীতি বলতে কোনো কাজ সম্পাদনের দিকনির্দেশনাকে বোঝায়। এটি মূলত চিন্তা বা কাজ করার দিকনির্দেশনা। নীতি অনুযায়ী কাজ করা আইনত বাধ্যতামূলক নয়। তবে এর অনুসরণ সাফল্য অর্জনকে সহজ করে তোলে । তাই একটি শক্তিশালী ও সফল সংগঠন এবং এর গতিশীলতা সুনির্দিষ্ট কিছু নীতির ওপর নির্ভরশীল। এগুলোর অনুসরণে সংগঠন বেশি কার্যকর হতে পারে। সংগঠন কাঠামো সঠিকরূপে তৈরি ও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য নিচের নীতিমালা বা আদর্শ বিবেচনা করা উচিত—

▪️ লক্ষ্যের নীতি (Principle of goal) : প্রতিষ্ঠানের মূল ইচ্ছা বা কাঙ্ক্ষিত ফলকে লক্ষ্য বলে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অনুযায়ী সংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা উচিত। একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংগঠন যেভাবে তৈরি করা হয়, একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠনকে সেভাবে গঠন করা হয় না। তাই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যের আলোকে সংগঠন প্রণীত হতে হবে।

▪️কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের সমতার নীতি (Principle of authority and responsibility) : আদেশ দেওয়ার বৈধ ক্ষমতাকে কর্তৃত্ব ( Authority) বলে। আর কোনো কাজ সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা বা দায়বদ্ধতাকে (Responsibility) দায়িত্ব বলে। একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাপনা সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নির্বাহীদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের মধ্যে সমতা বা ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। কর্তৃত্ব বেশি অথচ দায়-দায়িত্ব কম থাকলে নির্বাহীরা সাধারণত স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। আবার দায়িত্ব বেশি কিন্তু কর্তৃত্ব কম হলে নির্বাহীদের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হয় না।

চিত্র: কর্তৃত্ব অনুযায়ী দায়িত্ব পালন

▪️জোড়া ম‍ই শিকলের নীতি (Principle of scalar chain) : এ নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থাপনার শীর্ষ স্তর থেকে নিম্ন স্তর পর্যন্ত কর্তৃত্ব একই সরলরেখায় ধাপে ধাপে প্রবাহিত হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগ, উপবিভাগ এবং ব্যক্তিকে একে অন্যের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হয়। কেউ যাতে কর্তৃত্ব রেখার বাইরে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। ফলে পর্যায়ক্রমিক নেতৃত্ব নিশ্চিত এবং একই ধারায় সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

▪️ শ্রম বিভাজনের নীতি (Principle of division of labour) : প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন অনুযায়ী কাজগুলোকে সঠিকভাবে চিহ্নিত ও বিভক্ত করার নীতি হলো শ্রম বিভাজনের নীতি। এরপর যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে একেক বিভাগে একেকজন বিশেষজ্ঞ কর্মী নিয়োগ করা হয়। এ বিভাজনের আলোকে প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগ-উপবিভাগ তৈরি এবং দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্ধারণ করা হয়। তাই কাজগুলোকে এমনভাবে বিভাজন করা উচিত যাতে প্রত্যেক ব্যক্তিই বিশেষ জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগের সুযোগ পায় ।

▪️ বিশেষায়ণের নীতি (Principle of specialization) : নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করাকে বিশেষায়ণ বলা হয়। কর্মীদের দক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়াকে বিশেষায়ণের নীতি বলে। সংগঠনে একই কাজ নিয়মিতভাবে করার ফলে একেকজন কর্মী বিশেষজ্ঞ কর্মীতে পরিণত হয়।

▪️তত্ত্বাবধান পরিসরের নীতি (Principle of span of supervision) : প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত ব্যবস্থাপকরা সরাসরি কতজন অধস্তনের কাজ তত্ত্বাবধান করবেন তা সংগঠন কাঠামোতে নির্দিষ্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে একজন ব্যবস্থাপকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কর্মরত অধীনস্থের সংখ্যা কাম্য সংখ্যায় স্থির রাখা উচিত। এতে তিনি তার অধীনস্থের কাজ সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করতে পারেন ।

▪️ভারসাম্যের নীতি (Principle of balance) : প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগ-উপবিভাগ এবং ব্যক্তির কাজের মধ্যে সমতা রক্ষা করাকে ভারসাম্যের নীতি বলে। কারো কাজের চাপ বেশি আর কেউ কাজের অভাবে বসে আছে, এমন যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কেন্দ্রীকরণ এবং বিকেন্দ্রীকরণ নীতির মধ্যেও ভারসাম্য রাখতে হবে। অন্যথায় প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা বিধান করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

চিত্র : কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভারসাম্য

 

▪️ নমনীয়তার নীতি (Principle of flexibility) : পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সমন্বয়, সংশোধন বা পরিবর্তন আনার সুযোগকে নমনীয়তার নীতি বলে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে সর্বদা রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন, উৎপাদন ও বণ্টন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটে। এক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংগঠন তৈরির শুরুতেই বিবেচনা করতে হবে।

▪️সরলতা ও স্পষ্টতার নীতি (Principle of simplicity and clarity) : সংগঠন কাঠামো এমন হওয়া উচিত যাতে তা সহজ ও সরল এবং সবার কাছে সহজে বোধগম্য হয়। অর্থাৎ, একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এমনভাবে তৈরি করা উচিত যাতে এর অন্তর্গত প্রত্যেক কর্মী তার ঊর্ধ্বতন ও অধীনস্থদের সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়া এ থেকে তাদের প্রত্যেকের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে।

▪️ব্যতিক্রমের নীতি (Principle of exception) : ব্যবস্থাপনার কাজে কোনো ভুল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ সরাসরি সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ করলে তাকে ব্যতিক্রমের নীতি বলে। এজন্য কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব অধস্তনদের হাতে দেওয়া উচিত। আর ব্যতিক্রমধর্মী এবং জটিল বিষয়াদি শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

 ▪️মিতব্যয়িতার নীতি (Principle of economy) : প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সম্পাদনে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করা এবং যৌক্তিক পর্যায়ে রাখাকে মিতব্যয়িতার নীতি বলে। সংগঠন কাঠামো তৈরি ও এর বাস্তবায়নের সবস্তরে মিতব্যয়িতা বা ব্যয় কমানোর দিকটি বিবেচনায় আনতে হবে। অন্যথায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও সাফল্য অর্জন অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হবে না।

▪️ সহযোগিতার নীতি (Principle of cooperation) : প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা অর্জন অনেকাংশেই কর্মীদের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের ওপর নির্ভর করে। তাই প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন কাঠামো এমন হওয়া প্রয়োজন যেখানে কর্মীরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে। এতে দলীয় সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতা বাড়ায় । এতে একযোগে লক্ষ্য অর্জনের পথ সুগম হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন সহজ হবে। 

তাই বলা যায়, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন হলো ব্যবস্থাপনার মূল চালিকাশক্তি। একটি কার্যকর সংগঠনের ওপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানের সংগঠন সুষ্ঠুরূপে প্রণয়নের জন্য উল্লিখিত নীতিমালা বা আদর্শ মেনে চলা উচিত। এতে সংগঠনের মান কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে।

Content added By

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রকারভেদ

প্রতিষ্ঠানের আকার, আয়তন, কর্মপদ্ধতি প্রভৃতির ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কাঠামো দেখা যায়। নিচে এসব কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হলো-

চিত্র : সংগঠন কাঠামোর প্রকারভেদ

ক. আনুষ্ঠানিক কাঠামো (Formal Organization Structure ) : প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতি ও বিধি বিধানের আওতায় যে সংগঠন কাঠামো গড়ে ওঠে, তাকে আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলে। এ ধরনের সংগঠন কর্তৃপক্ষ তৈরি করে দেয়। বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি বাস্তবায়নের জন্য এ সংগঠন কাঠামো তৈরি করা হয়। এতে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এছাড়া, প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দায়িত্ব-কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। তাই কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে সচেতন থাকেন। আনুষ্ঠানিক সংগঠন নিচের পাঁচ প্রকার হয়ে থাকে-

১. সরলরৈখিক সংগঠন (Line organization) : যেখানে কর্তৃত্ব রেখা ঊর্ধ্বতন নির্বাহী থেকে ক্রমান্বয়ে অধীনস্থ কর্মীদের কাছে সরলরেখার আকারে নেমে আসে, তাকে সরলরৈখিক সংগঠন বলে। এটি সবচেয়ে প্রাচীন এবং সহজ প্রকৃতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। এখানে প্রত্যেক কর্মীর দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সুস্পষ্ট থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গ অপেক্ষাকৃত নিচু পদের লোকজনের ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করে থাকেন। তাই একে সামরিক সংগঠনও বলা হয়ে থাকে।

চিত্র : সরলরৈখিক সংগঠন

২. সরলরৈখিক ও পদস্থ কর্মী সংগঠন (Line and staff organization) : এ ধরনের সংগঠন কাঠামোতে একই সাথে নির্বাহী এবং বিশেষজ্ঞ পদস্থ কর্মী পাশাপাশি অবস্থান করেন। অর্থাৎ সরলরেখায় অবস্থিত নির্বাহীকে সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ কর্মীকে পাশাপাশি রাখা হয়। ফলে নির্বাহী প্রয়োজনে পদস্থ কর্মীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ সম্পাদন করতে পারেন। কিন্তু এ সংগঠনে বিশেষজ্ঞ কর্মীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। এ সংগঠনকে উপদেষ্টা সংগঠনও বলা হয়।

চিত্র: সরলরৈখিক ও পদস্থ কর্মী সংগঠন

৩. কার্যভিত্তিক সংগঠন (Functional organization) : প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রকৃতি, গুরুত্ব, বিশেষজ্ঞতা এবং শ্রম বিভাগের নীতি অনুসরণ করে যে সংগঠন প্রণীত হয়, তাকে কার্যভিত্তিক সংগঠন বলা হয়। এ ব্যবস্থায় বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজকে শ্রেণিবিভাগ করে প্রতিটি কার্যবিভাগের দায়িত্ব এক একজন নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বিশেষজ্ঞ কয়েকজন অধস্তন কর্মীকে নিয়ে বিভাগের কাজ সম্পাদন করেন। এতে বিশেষজ্ঞ কর্মী সার্বিক দায়িত্বে থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক কাজ দক্ষতার সাথে দ্রুত সম্পন্ন হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক এফ. ডব্লিউ. টেলর (F. W. Taylor) এ ধরনের সংগঠন কাঠামোর উদ্ভাবক।

চিত্র : কার্যভিত্তিক সংগঠন

৪. কমিটি সংগঠন (Committee organization) : প্রাতিষ্ঠানিক কোনো বিশেষ কাজ সম্পাদনের জন্য বিশেষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সমষ্টি হলো কমিটি সংগঠন। অর্থাৎ, কমিটি হলো কিছু সংখ্যক লোকের একটি দল, যারা সিদ্ধান্ত নেন অথবা ব্যবস্থাপনাকে উপদেশ দেন। এ ধরনের সংগঠনে সদস্যরা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সাধারণত স্বল্পমেয়াদে কমিটি সংগঠন কাজ করে থাকে। যেমন: একটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হলো। উক্ত দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। এছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কমিটি, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কমিটি, পরীক্ষা কমিটি প্রভৃতি এরূপ সংগঠনের উদাহরণ। কমিটিকে পর্ষদ, বোর্ড, কমিশন, টাস্কফোর্স, কাউন্সিল প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়।

চিত্র: কমিটি সংগঠন

৫. ম্যাট্রিক্স সংগঠন (Matrix organization) : ম্যাট্রিক্স সংগঠন হলো এক ধরনের মিশ্র সংগঠন। প্রতিষ্ঠানে কার্যভিত্তিক এবং দ্রব্যভিত্তিক বিভাগীয়করণের সমন্বয়ে যে সংগঠন কাঠামো তৈরি হয়, তাকে ম্যাট্রিক্স সংগঠন বলে। অর্থাৎ, একই সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে কার্যভিত্তিক এবং প্রকল্প বা দ্রব্যভিত্তিক বিভাগীয়করণের স্বাভাবিক সমন্বিতকরণকে ম্যাট্রিক্স সংগঠন বলে। এরূপ সংগঠন বৃহদায়তন ও জটিল প্রকৃতির প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী।

খ. অনানুষ্ঠানিক কাঠামো (Informal Organization Structure) : এ ধরনের সংগঠনে প্রাতিষ্ঠানিক নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ও রীতিনীতি অনুসরণ না করে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। এ ব্যবস্থায় সংবাদ ও তথ্য বিনিময়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। অনানুষ্ঠানিক সংগঠন প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর অর্পিত ক্ষমতা ও দায়িত্ব রেখা বা সাংগঠনিক কাঠামো অনুসরণ করে চলে না। যেমন : প্রতিষ্ঠানে কোনো বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা প্রতিরোধে জ্যেষ্ঠ কর্মীরা এগিয়ে আসেন।

অতএব, বর্তমান সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী ওপরের সংগঠন কাঠামোগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে সব প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের সংগঠন কাঠামো ব্যবহার করা হয় না বা উপযোগীও নয়। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, প্রকৃতি, আয়তন, কাজের ধরন, কর্মীদের সংখ্যা, কর্মীদের যোগ্যতা, ব্যবহৃত প্রযুক্তি, পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে উপযুক্ত কাঠামো নির্বাচন করা হয়।

Content added || updated By

প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন দাখিলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ

ইংরেজি Report শব্দের বাংলা অর্থ হলো প্রতিবেদন। যিনি রিপোর্ট বা প্রতিবেদন তৈরি করেন তাকে রিপোর্টার বা প্রতিবেদক বলা হয়। সাধারণত কোনো বিষয়ের ওপর পরিচালিত অনুসন্ধানের ফলাফলের বিবরণকে প্রতিবেদন বলা হয়। অর্থাৎ, প্রেরক: কোনো বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধানের পর এ সম্পর্কিত ঘটনাবলির যে ধারাবাহিক বিবরণ তৈরি করা হয় তাকে প্রতিবেদন বলে। এ বিবরণ মৌখিক বা লিখিত যেকোনো ধরনের হতে পারে। প্রতিবেদন হলো প্রতিবেদকের স্বাধীনভাবে পরিচালিত অনুসন্ধানের ফলে এটি সুপারিশসহ বা সুপারিশ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা ব্যক্তির কাছে উপস্থাপন করা হয়। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাইয়ের পর নির্ধারিত বিষয়সহ নির্দিষ্ট নিয়মে তৈরি করতে হয়। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এজন্য এটি সঠিক এবং তথ্য নির্ভর হওয়া উচিত।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন সাধারণত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন বা দাখিল করতে হয়। যে সকল ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়ে থাকে, তারা হলো—

→ সুপারভাইজার বা তত্ত্বাবধায়ক (Supervisor) : একজন কর্মী বা নির্বাহী যার অধীনে চাকরি করেন, যার কাছে সরাসরি জবাবদিহি করেন তার কাছেই তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। এরূপ প্রতিবেদন সাধারণত কাজের অগ্রগতি, কার্যক্ষেত্রের কোনো সমস্যা, কোনো উপকরণগত প্রয়োজন প্রভৃতি বিষয়ের ওপর করা হয়ে থাকে। এরূপ প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে বা যখন প্রয়োজন তখন কিংবা তত্ত্বাবধায়কের চাহিদা সাপেক্ষে প্রণয়ন ও দাখিল করতে হয়। এরূপ প্রতিবেদন অনেক সময় মৌখিকও হয়ে থাকে। কখনো কখনো কাঠামোবদ্ধ নিয়মের বাইরেও এ প্রতিবেদন তৈরি ও উপস্থাপন করা হয় ।

চিত্র: কাজের তত্ত্বাবধান

 

দায়িত্ব অর্পণকারী (Responsibility delegator) : প্রতিষ্ঠানে কিছু অনিয়মিত কাজ থাকে। অর্থাৎ, কিছু কাজ এমন থাকে যেগুলো সারাবছর থাকে না। এগুলো কখনো কখনো বা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়েই করতে হয়। এসব কাজ করার জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই ব্যক্তিবর্গকে কমিটি বলা হয়। আবার প্রতিষ্ঠানের কোথাও কোনো দুর্ঘটনা বা হঠাৎ কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। এরূপ দুর্ঘটনা বা ঝামেলা মোকাবেলা বা এ ব্যাপারে তদন্ত করার জন্যও কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও কোনো নীতিমালা তৈরি বা সুপারিশমালা তৈরির জন্যও কমিটি গঠন করা হয়। এরূপ কমিটি বিভিন্ন স্তরের কর্মী বা নির্বাহীদের দিয়ে গঠন করা হয়। কমিটিকে কর্তৃপক্ষের দেওয়া লক্ষ্য ও নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। এক্ষেত্রে যিনি বা যারা কমিটি গঠন করে দিয়েছেন প্রতিবেদন (Report) তার/তাদের কাছেই দাখিল করতে হয়।

নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (Controlling authority) : শিল্প বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকি বা দেখাশোনার জন্য বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। যেমন: উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, অর্থ সংক্রান্ত কাজ তদারকির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় প্রভৃতি। বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যবস্থা বা আয়-ব্যয়ের হিসাব এসব সংস্থার কাছে দাখিল করতে হয়।

সরকার (Government) : বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের তথ্য ও প্রতিবেদনের প্রয়োজন হতে পারে। সরকার জাতীয় বাজেট প্রণয়ন, আইন বা নীতিমালা তৈরি, দেশের অবস্থা জানা প্রভৃতি কারণে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর তথ্য ও প্রতিবেদন চাইতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তা বা নির্বাহীকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। উক্ত কর্মকর্তা/নির্বাহী সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন বা প্রতিবেদন দাখিল করেন।

   তাই বলা যায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে যথাযথ অনুসন্ধান, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে সঠিক তথ্য, অবস্থা, কার্যাবলি, ঘটনা, সিদ্ধান্ত বা ফলাফল সম্পর্কে যে বিবরণ বা সুপারিশ তৈরি করা হয় তাকে প্রতিবেদন বলে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন সাধারণত উপরিউক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের জন্যই তৈরি করা হয়ে থাকে ।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion