প্রাসঙ্গিক তথ্য: প্রুনিং বলতে গাছের যে কোন অপ্রয়োজনীয় অংশ ছেটে ফেলা বা কেটে বাদ দেয়া বোঝায় । ছাটাই এর উদ্দেশ্য হলো গাছকে সুন্দর রূপ দেয়া, গাছের ডালপালা বেশি দৃঢ় করা, বেশি পরিমাণে ভাল গুণাগুণ সম্পন্ন ফল ধরানো ফলন বেশি করা। গাছ ছাটাই-এর সাথে ফল উৎপাদনের সরাসরি সংযোগ আছে । ছাটাই করে গাছের ডালপালার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। সঠিকভাবে ও সময়মত ছাঁটাই করতে না পারলে ফলবতী গাছে ফলন কমে যায় এবং বেশি সময় ধরে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় । এমনকি ছাটাই বেশি হলে গাছ মারাও যেতে পারে । সঠিকভাবে ছাটাইয়ের ফলে গাছের পূর্ণ বিকাশ হয়, ফলের রঙ সঠিক হয়, ফলের আকার ভাল হয়, ফল বেশি হয় । এমনকি ফলের গুণগত মানান্নোয়ন হয় এবং গাছের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে যায় । ছাঁটাইকৃত গাছের ফল সংগ্রহ করা সহজ হয় এবং অন্যান্য পরিচর্যা করাও সুবিধাজনক হয় ।
এ কাজ করার জন্য একটি গাছের নিচে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। লেবু, পেয়ারা, ডালিম, কুল, গালাপজাম ইত্যাদি গাছের গোড়া থেকে লম্বা তেউগ উৎপন্ন হয় । এগুলো অন্যান্য ডালপালার নিচে থাকে এবং কলম করার উপযোগী নয়। এরা নিজেরা তেমন খাদ্য প্রভুত করতে পারে না । তাই এসব ডাল ছাটাই করা উচিত।
উপকরণ
১। ছুরি
২। সিকেচার
৩। ছাটাই ছুরি বা ডাল কাটার দা
৪ । গাছ ছাটাই করাত
৫ । ডাল কাটার কঁচি
৬। বড় গাছের ডাল কাটা কাঁচ বা পালে প্রনার
৭। ডেটল পানি
৮। খন্তা বা শাবল
৯ । কাতে বা কাঁচি
ছাটাই-এর প্রকারভেদ গাছ নির্বাচন
ক) ডালপালা ছাঁটাই এর উপযযাপী গাছ (কুল, কাঁঠাল, আম, লিচু, কামরাঙা, পেয়ারা ইত্যাদি)
খ) শিকড় ছাঁটাই এর উপযাগী গাছ (কাঁঠাল, লিচু, লেবু, কথবেল, জামরুল ইত্যাদি)
গ) ফল পাতলাকরণের উপযোগ গাছ পেঁপে, আমড়া, তরমুজ, জামরুল ইত্যাদি)
ঘ) পাতা ছাঁটাই এর উপযোগী (কলা, নারিকেল, খেজুর, তাল ইত্যাদি)
কাজের ধাপ
১ । ডাল ছাঁটাই এর যন্ত্রপাতি ধারাল, পরিষ্কার পরিছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে ।
২। ছোট, কম বয়স্ক এবং ফল উৎপাদন শুরু করেছে এমন গাছে শুধু ছোট ডালপালা কাটতে হবে । যা গাছের নিচের দিকে প্রধান কাণ্ড হতে বের হয়ে ছোট অবস্থায় থাকে। এছাড়া প্রধান প্রধান ডালা হতে ছোট ছোট ডালপালা বের হয়ে যেগুলো গাছের ভিতরমুখী হয়ে থাকে। সেগুলো কেটে ফেলতে হবে ।
৩। পুরাতন ও বড় গাছে ভারী আকারে ও বেশি পরিমাণে ছাঁটাই করতে হবে।
৪ । যে কোন গাছের বেলায় মৃত, রাগাক্রান্ত বা ঝড়ে ভাঙ্গা ডালপালা কেটে দিতে হবে ।
৫ । প্রচণ্ড খরা বা তীব্র শীতের সময় গাছের ডালপালা ছাটাই করা যাবে না ।
৬। যে সব গাছের পাতা ঝরে যায় সে সমস্ত গাছের পাতা ঝরার ১ মাস পরে অপ্রয়োজনীয় ডালা কেটে দিতে হবে।
৭। চিরসবুজ গাছের ফল পাড়ার পর পরই অপ্রয়োজনীয় ডালা কেটে দিতে হবে।
৮ । যে কোন গাছের প্রধান কাণ্ড হতে একই উচ্চতায় উভয় দিকে সামনাসামনি গজানো শাখার একদিকের সুস্থ ও সবল একটি ডালা রেখে প্রথমে অন্যটি কেটে দিতে হবে ।
৯ । পরবর্তীতে ঠিক উপরের দিকে প্রধান কাণ্ড হতে অনুরূপভাবে সাজানো শাখায় প্রথমে যেদিকে রাখা হয়েছে তার বিপরীত দিকেরটা রেখে অন্যটি কেটে দিতে হবে। এভাবে উভয়দিকে পর পর একান্তর ক্রমিকভাবে ডালা রেখে অন্যটি কেটে দিতে হবে। এতে গাছের ভারসাম্য রক্ষা হয় ।
১০ । ডালার যে স্থানে কাটা হবে তা প্রধান কাণ্ডের বা শাখা প্রশাখার পূর্ব সৃণি হতে ৫-০ সেমি. উপরে হতে হবে।
১১ । ডালা কাটার সময় প্রথমে ডালার নিচের দিকে ডালার ব্যাসের তিনভাগের একভাগ বা তার চেয়ে কম পরিমাণ কাটতে হবে । তারপর উপরের দিকে তিনভাগের দুই ভাগ কাটতে হবে । সম্পূর্ন ডালা কাটার পর কাটা স্থান সমান করে দিতে হবে।
১২ । কাটা স্থানে ছত্রাকনাশক বা আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে ।
১৩ । ছাঁটাই এর কাজ বৃষ্টিপাত বা মেঘলা আবহাওয়ার সময় করা উচিত না ।
১৪ । গভীর মূল বিশিষ্ট গাছের গোড়া হতে ১০০ থেকে ৩০০ সেমি. দূর দিয়ে নালা খনন করতে হবে । এতে নালার ভেতরের যে মূল কাটা পড়বে তাতেই মুল ছাটাই হবে । এই নালাটি গাছের চারিপাশ দিয়ে সম্পূর্ণ বৃত্তাকার, অর্ধবৃত্তাকার বা এক চতুর্থাংশ বৃত্তাকার হিসেবে করা যেতে পারে। তবে চওড়ায় বিভিন্ন মাপের হতে পারে।
১৫ । গাছের গোড়া হতে কিছু দুর দিয়ে মাঝে মাঝে গর্ত খনন করা হলে মমূল ছাটাই হবে । আবার সারা বাগান জুড়ে লাঙ্গলের সাহায্যে জমি চাষ করা হলেও অনেক মূল ছাটাই হবে ।
১৬ । ফল বেশি ঘন হলে বা একই বোটায় বেশি ফল ধরলে ছোট, দুর্বল এবং প্রধান বোটার পাশ দিয়ে বা বোটা হতে সরাসরি বের না হওয়া ফলগুলো কেটে দিতে হবে। তাতে অন্যান্য ফলগুলো বড় হবে ও আকার ভাল হবে।
১৭। পাতা ছাটায়ের জন্য সাধারণত ডালপালাহীন গাছের নিচের দিকে ঝুলে থাকা বয়স্ক পাতাগুলো গোড়াসমেত পরিষ্কার করে দিতে হবে । তবে পাতার গোড়া তাজা ও শক্ত থাকলে পুত্র ফলকের কিছু অংশ রেখে কাটতে হবে । এছাড়া ছোট চারা স্থানান্তরের সময় কিছু কিছু পাতাও কেটে দিতে হয় ।
আরও দেখুন...