ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

ফুলকপির চাষ

ফুলকপির জাত-উৎপাদনের সময় অনুসারে ফুলকপিকে ৩ ভাগ করা যেতে পারে যথা- আগাম, মধ্য ও নাবী। আগাম ফুলকপির জন্য সেপ্টেম্বর মাসেই চারা তৈরি করতে হয়। আগাম জাতের গাছ আকারে ছোট হয়। ফুলকপির দেশি জাতের মধ্যে অগ্রহায়ণী এবং বিদেশীজাতের মধ্যে সুপার গ্লোবল, স্নোবল, শ্লোক্যাপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে দেশি অন্যান্য জাতের মধ্যে পৌষালি, চিনকা মোতি, কানোয়ারি এবং বিদেশি জাতের মধ্যে সঙ্গোড্রিফট, হোয়াইট মাউন্টেন, গ্লোবল-এক্স উচ্চ ফলনশীল। ক্রিস্টমাস জাত হচ্ছে নাবী। 

বাংলাদশের ফুলকপির উন্নত জাত, যেমন- বারিসহ ফুলকপি-১ (রূপা) ও অন্যান্য জাত যথা-

জাতের নাম

উৎস

কার্তিকাদেশি, ভারত
অগ্রহায়ণীদেশি, ভারত
পৌষালিদেশি ভারত
পাটনাইদেশি
রাক্ষুসি লেটভারত
ট্রপিক্যাল ইউনিক গ্লোবলজাপান
সুপ্রিম উইনতাইওয়ান
হোয়াইট এক্সপ্রেসতাইওয়ান

ফুলকপি উৎপাদন পদ্ধতি- বীজতলায় বীজ বপনঃ আগস্টের শেষ হতে নভেম্বরে শেষ পর্যন্ত বীজ বপনের সময় । আগাম ফুলকপির জন্য বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই চারা উৎপাদন করতে হয়। ঐ সময়ে ঘরের বারান্দায়, টবে বা গামলায় বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে। পরবর্তী ফুলকপির জন্য বীজ বাইরে বীজতলায় ফেলা হয়। সাধারণত এক হেক্টরে রোপণের প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা উৎপন্ন করতে ১২৫-১৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। প্রমাণ আকারের ৩ × ১ মিটার বীজতলার জন্য ৫-৭ গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজ বপন করার তিন চার দিনের মধ্যে চারা অঙ্কুরিত হয়। এর প্রায় এক সপ্তাহ পরে চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তরিত করে ৪-৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করা হয়। এক মাসের বয়সের চারা নির্দিষ্ট স্থানে রোপণের উপযুক্ত হয়। ফুলকপি চাষের জন্য ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা লাগানো যায়। রোপণ দূরত্ব ৬০-৪৫ সেন্টিমিটার দিতে হয় আগাম জাতের জন্য ৬০ × 0 সেমি. দিতে হয় মধ্যম জাতের জন্য এবং ৭৫ × ৬০ সেমি. দিতে হয় নাবি জাতের জন্য।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগঃ মূল জমি পুন: পুন: চাষ দিয়ে বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। গোবর সার, কম্পোষ্ট, খৈল, ছাই ইত্যাদি সারের অর্ধেক পরিমাণ ভূমি কর্ষণকালে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়।

সার প্রয়োগঃ গোবর সার চারা রোপণের জন্য তৈরি নির্দিষ্ট গর্তে (২৫ × ২৫ সেন্টিমিটার সাইজের) প্রয়োগ করে মাটির সাথে মেশালে ভালো হয়। ইউরিয়া ও মিউরেট অব পটাশ সারের মিশ্রণ চারা রোপণের পরে টপ-ড্রেসিং' অর্থাৎ উপরি প্রয়োগ পদ্ধতিতে দিতে হয়।

ফুলকপিতে সার প্রয়োগ

সারের নাম

সারের পরিমান/ হেক্টর

সুষম কমপোস্ট গুড়া৪০০-৬০০ কেজি
গোবর সার৪-৬ টন
ইউরিয়া৩০০-৩৫০ কেজি
টিএসপি ১৫০-২০০ কেজি
এমওপি১৫০-২০০ কেজি
জিপসাম৬০-৮০ কেজি 
চুন৩০০-৬০০ কেজি 
বোরিক এসিড৮-১০ কেজি 
এমোনিয়াম মলিবটেড৫০০ - ৮০০ কেজি 
দস্তা সার৪-৭ কেজি

আগাম  ফসলের জন্য দো- আঁশ এবং নাবি ফসলের জন্য ভারি মাটি উত্তম। এঁটেল দো- আঁশ  প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করে ভালো ফসল জন্মানো যায় ।

৫-৭ টন গোবর সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এছাড়া অম্ল মাটিতে ৪০০-৭০০ কেজি তলচুন এবং যথারিতি অনুসার ঘাটতি মাটিতে প্রয়োগ করতে হয়। জমি চাষের সময় অর্ধেক এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। 

ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপনের এক সপ্তাহ পুর্বে মাদার দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হয়।  ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। চারা লাগানোর ৮-১০ দিন পর প্রথম কিস্তি এবং লাগানোর ৩০ ও ৪০ দিন পর অবসিষ্ট সার যথাক্রমে উপরি  প্রয়োগ করতে হয়।

চারা রোপণ ও অতবর্তী পরিচর্যা- ৬-৭টি পাতাবিশিষ্ট চারা রোপণ করতে হয়। আগাম ফসলের জন্য ৬০ সেন্টিমিটার পর পর সারিতে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে, মধ্যম ফসলের জন্য ৬০ সেন্টিমিটার পর পর সারিতে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করা যেতে পারে এবং নাবি ফসলের জন্য ৭৫ সেমি. পর পর সারিতে ৬০ সেমি. পর পর চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বিকাল।

রোপণের পর চারার গোড়ায় ঝাঁঝরি দিয়ে নিচু থেকে পানি সেচ দেয়া দরকার। পরদিন সকালে কলার খোল, কচুরিপানা প্রভৃতি দ্বারা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এ ছাড়া বিকালে তা সরিয়ে চারায় রাতে শিশির পড়ার সুযোগ দিতে হয়। তিন-চার দিন পর্যন্ত এ ব্যবস্থা এবং সকাল-বিকাল পানি সেচ দিতে হয়। তারপর ছায়া সরিয়ে ফেলা হয় এবং পানিসেচ কেবল বিকালে দিলেই চলে। মাটিতে জো' আসলে গাছের সারির মধ্যবর্তী স্থানে গাছের গোড়ায় মাটি উঠিয়ে, ভেলি করে দেয়া দরকার। চারা রোপণের প্রায় দু'মাসের মধ্যে গাছে ফুল দেখা দেয়। ফুল দেখা দেওয়ার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফুলকপি খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফসলের নিবিড় চাষে যেমন আগাছা দমন, সার প্রয়োগ, পানি সেচ- নিষ্কাশন এবং চটা ভেঙ্গে দেওয়া মাটি ঝুরঝুরে ও বায়ুর চলাচলের উপযোগী রাখা আবশ্যক। ফুলকপির রঙ সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থা থেকে চারদিকের পাতা বেঁধে ঢেকে দিতে হয়। ফুল ঢেকে দেওয়ার এ পদ্ধতিকে র্যানচিং বলে।

পোকা দমন- ফুলকপির বিভিন্ন পোকার মধ্যে জাবপোকা পাতা ও ফুলের রস শোষণ করে। এফিডান, সেভিন ৫% প্রয়োগে পোকা দমন হয়। সেফস বা নেক্সিয়ন ও (০.৫%) বালাইনাশকও ছিটানো যায়। অন্যান্য পোকার মধ্যে মাছি পোকা ও মথ উল্লেখযোগ্য। এদের দমনের জন্য সাইপারমেথ্রিন, ক্লোরোপাইরিফিস প্রয়োগ করা যেতে পারে।

রোগ দমন- ফুলকপির রোগের মধ্যে ঢলে পড়া এবং মূলের গিট রোগ উল্লেখযোগ্য। এর আক্রমণে রোদের সময় গাছের পাতা ঢলে পড়ে। শিকড় ফুলে স্থানে স্থানে মোটা হয়। প্রতি ৫০ গ্যালন পানির সাথে ২৩০ গ্রাম পরিমাণে ক্যালোমেল মিশিয়ে গাছে ছিটানো ফলপ্রদ। মূল গিট রাগ এক প্রকারের নেমাটোড দ্বারা সৃষ্ট। এতে মূলে গিট দেখা দেয়। এর আক্রমণে ইথিলিন ডাই-ব্রোমাইড দ্বারা মাঠে ফিউমিগেশন করার প্রয়োজন হয়। মাটিতে চুন প্রয়োগেও উপকার পাওয়া যায় ।

অপুষ্টিজনিত রোগ- মলিবডেনামের অভাবে হুইপটেইল রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত অম্লীয় মাটিতে এরূপ ঘটতে পারে। হেক্টরপ্রতি ১.২ কেজি পরিমাণে সোডিয়াম কিংবা এমোনিয়াম মলিবডেট প্রয়োগে এ সমস্যা দূর হয়। বোরণের অভাবে কাণ্ডের ভিতরে বাদামি বর্ণের দাগ হয়। কখনও কখনও বিক্ষিপ্ত ফাঁপা কাণ্ডের সৃষ্টি হয়। অম্লীয় মাটিতে হেক্টর প্রতি ১২-১৫ কেজি পরিমাণে সাধারণ বোরাক্স সোডিয়াম টেট্রাবোরেট প্রয়োগে এ রোগ দমন করা যায়।

বোতামায়ন- বোতামায়ন ( Buttoning) রোগে ছোট আকারের গাছে অতি ছোট আকারের ফুল হয়। নাইট্রোজেনের অভাবে কিংবা খাদ্য উপাদানের ঘাটতিতে এরূপ ঘটতে পারে। অনেক সময় ফুলকপি ক্ষুদ্র আকারের প্রাকমঞ্জুরি উৎপাদন করে। এগুলো বিক্রির উপযুক্ত নয় এবং বাজারে চাহিদা কম । 

বোতামায়নের কারণ ও প্রতিকার 

(১) অকালে ফুলকপি গাছে প্রাকমঞ্জরি উৎপাদিত হওয়াই বোতামায়নের কারণ। 

(২) আগাম জাত নয় এমন জাত আগাম হিসাবে চাষ করলে বোতামায়ন বেশি হয়। 

(৩) আগাম জাতেই বোতামায়ন বেশি হয়। 

(৪) ফুলকপির প্রাকমঞ্চুরি উৎপাদন তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। 

(৫) আগাম জাতের গাছ নিম্ন তাপমাত্রায় উন্মাচিত হলে বোতামায়ন হয়। 

(৬) বীজতলায় অনধিক ১০ সেন্টিমিটার উঁচু ও মাত্র কয়েকটি পাতাধারী গাছেও বোতামায়ন হতে দেখা যায় । 

(৭) চারা রোপণ করতে দেরি হলে কিংবা রোপণের পর কোনো কারণে চারার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হলে। বোতামায়নের আশংকা বৃদ্ধি পায় ।

প্রতিকার- বোতামায়নের সমস্যা দূর করতে হলে বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই বা আগামজাত আগাম মৌসুমে লাগাতে হয়। গাছ যাতে দ্রুত বাড়ে তার নিশ্চয়তা বিধান করতে জমির উর্বরতা বাড়াতে হয়।

মখমলায়নঃ ফুলকপির প্রাকমঞ্জুরি ঢিলে ঢালা হয়ে মখমলের মতো রূপ ধারণের নাম মখমলায়ন। এ অবস্থার প্রাকমঞ্জরি কিছুটা ফেঁটে যায়, উপরিভাগ ঠাসা, দৃঢ় ও মসৃণ না হয়ে কিঞ্চিত নমনীয় ও উঁচু-নিচু হয়ে যায়। প্রাকমঞ্জুরি থেকে সাদা ফুলকুঁড়ি উঠানামা বেশি হলে ফেঁটে যাওয়া অবস্থা সৃষ্টি হতে দেখা যায় ।

সেচ ও নিষ্কাশন- বৃষ্টি বা সেচের কারণে মাটিতে চটা ধরলে তা ভেঙ্গে ঝুরঝুরে করে দিতে হয়। পানিবদ্ধতা নিরসনে ও সেচের জন্য ভেলি/মাদা করে রোপণ করতে হয়। এ মাদার ফাঁকের মধ্য দিয়ে মাটিতে রসের ঘাটতি হলে, সেচ দিতে হয়। ফুলকপির জমিতে কিছু সময় পানি বেঁধে থাকলে এবং সে সময় চারা ছোট থাকলে বেশি ক্ষতি হয়। তাই জমিতে যাতে পানি বাঁধতে না পারে সেজন্য ভাল নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হয়।

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ- ফুল ফোটা শুরু হবার পূর্বেই ফুলকপি বেশ দৃঢ় থাকা অবস্থায় তা সংগ্রহ করা উচিত। অন্যথায় কপি ফেটে যেতে পারে কিংবা রং খারাপ হয়ে যেতে পারে। ঠাণ্ডা গুদামে ৩২ ডিগ্রী ফাঃ তাপে একমাস পর্যন্ত রাখা যায়। জমি থেকে তালোর প্রায় সপ্তাহ খানেক পূর্বে নেপথলিন এসেটিক এসিড ছিটিয়ে পরে ঠাণ্ডা পরিবেশে দেড় মাস পর্যন্ত ফুলকপি অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায় ।

ফুল ফোটার পর সংগ্রহকালে বাহিরের চারপাশের পাতাগুলো এমনভাবে ছাঁটতে হয় যাতে পাতা দ্বারা ফুল বেশিরভাগ ঢাকা থাকে। তাতে পরিবহণকালে সূর্যের আলোতে বা পরিবহণজনিত কারণে নষ্ট হতে পারে না। বাঁশের ঝুড়িতে বাছাই করে গ্রেড অনুযায়ী নিচ হতে উপরে সাজায়ে নিলে ফুলকপির গুণাগুণ সহজে নষ্ট হয় না ।

বাঁধাকপির চাষ

বাঁধাকপির জাত

এ কপির দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আবার আগাম ও নাবী জাত রয়েছে। আগাম জাতের চারা অক্টোবর-নভেম্বর এবং নাবী জাতের চারা ডিসেম্বর মাসে রোপণ করা হয়। বিদেশি জাতের মধ্যে চার্লসটন, ওয়কফিল্ড, জার্সি ওয়কফিল্ড, কোপেনহেগেন মার্কেট, গোল্ডেন একর, আর্লি রাউন্ড ডাচ আলফা, অলহেড আর্লি গ্লোবগ্লোরি, একস্ট্রা আর্লি এক্সপ্রেস ইত্যাদি আগামজাত। নাবী জাতের মধ্যে গ্লোব, ম্যারিয়ন মার্কেট বোনাঞ্জ বাঞ্চউইক, কোহিনুর, ড্রামহেড, ডেনিশ বলহেড, ভলগা, রেড ডেনিশ, লার্জ রেড ইত্যাদি। কে কে ক্রস ও কে ওয়াইক্রস জাতের বাঁধাকপি গ্রীষ্মকালেও জন্মানো যায়।

বাংলাদেশে উদ্ভাবিত উন্নত বাঁধাকপির জাত- বাংলাদেশে উদ্ভাবিত বাঁধাকপির ২টি জাত রয়েছে। এসব জাত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত । 

(১) বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতী) ও (২) বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ- বাঁধাকপি আলোকিত স্থানে রোপণ করলে বেশি ফলন দেয়। এর বেশি পরিমাণ খাদ্যোপাদান লাগে। আবার জলাবদ্ধতা, খরা ও সরস কোনটিই সহ্য করতে পারে না। তাই বণ্যামুক্ত ও সুনিষ্কাশিত বেলে দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটিতে জো' অবস্থায় গভীরভাবে ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে ঢেলামুক্তভাবে জমি তৈরি করতে হয়। আগাম মৌসুমে বা গ্রীষ্ম মৌসুমের জন্য বেড় করে চাষ করতে হয়।

সার প্রয়োগ- গোবর সার ও ছাইয়ের সম্পূর্ণ অংশ ভূমি কর্ষণকালে সারা জমিতে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয় । আবার মাঠে অর্ধেক অংশ প্রয়োগ করে বাকি অর্ধেক চারা রোপণের গর্তে দেয়া যায়। তবে খৈল ও সুপার ফসফেট অর্ধেক জমিতে দিলে বাকী অর্ধেক চারার গর্তে চারা রোপণের ২ সপ্তাহ পূর্বে মাটির সাথে মিশাতে হয়। ইউরিয়া সার এবং মিউরেট অব পটাশ সার চারা রোপণের প্রায় দু'সপ্তাহ পরে উপরি প্রয়োগ করতে হয়।

সার প্রয়োগ মাত্রা- ইউরিয়া, ৩৫০-৩৭৫ কেজি টিএসপি, এমওপি এবং গোবর সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন । শেষ চাষের সময় সবটুকু কম্পোস্ট, ফসফেট, খৈল ও অর্ধেক পটাশ সার জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে ফুলকপি চাষ করা যায়। সম্পূর্ণ ইউরিয়া ও বাকি এমওপি সার তিনটি সমান কিস্তিতে ভাগ করে চারা রোপণের ১০ দিন ও ২৫ দিন পর এবং কপির মাথা বাঁধার সময় প্রয়োগ করতে হয় ।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

ক. ইউরিয়া ব্যতিত সব সার জমি প্রস্তুতের সময় প্রয়োগ করতে হয়।

খ. ইউরিয়া ২-৩ ভাগে জমি প্রস্তুত, চারা রোপণের ২০-৩০ দিন পর এবং ৫০-৬০ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়। যদি জমি প্রস্তুতের সময় দেয়া না হয় তাহলে ২ বারেও ইউরিয়া প্রয়োগ করা হয়।

চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা

চারা রোপণ- সাধারণত বীজ দিয়েই বাঁধাকপির বংশবিস্তার করা হয়। তবে প্রয়োজনবোধে অযৌন পদ্ধতিতেও বংশবিস্তার সরা সম্ভব। কপি সংগ্রহ করার সময় গাছের কাণ্ডের নিম্নাংশ মাটিতে থেকে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই সে অংশ থেকে অনেকগুলো করে গুঁড়িচারা (কাক্ষিক মুকুল) গজায়। মাটি দিয়ে ঢেকে রাখলে এগুলোর গোড়ার দিক থেকে শেকড় গজালে সেগুলোকে আলাদা করে লাগালে এসব চারা থেকে পূর্ণাঙ্গ গাছ উৎপন্ন হয়।

বাঁধাকপির জন্য হেক্টর প্রতি ১৫০-১৮০ গ্রাম বীজ লাগে। এক হেক্টরের জন্য ৩ × ১ বর্গমিটার আকারের ২০টি বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। বীজ বোনার ৪-৬ সপ্তাহ পর চারা রোপণের উপযোগী হয়। বাঁধাকপির জাত ও চাষ মৌসুমের ওপর রোপণের দূরত্ব নির্ভর করে। একই জাত আগাম না করে রবি মৌসুমে জন্মালে বড় মাথা উৎপাদন করবে।

আগাম জাতের গাছ সাধারণত নাবী জাতের গাছ অপেক্ষা ছোট হয়। তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী রোপণের দূরত্ব হয়। সারির মধ্যে ৫০-৭০ সেন্টিমিটার এবং চারার মধ্যে ৪০-৬০ সেন্টিমিটার।

গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিকে আগাছামুক্ত রাখতে হয়। রোপণের পর প্রথম দিকে মাটি ঝুরঝুরে রাখতে হয়। এজন্য মাঝে মাঝে বিশেষ করে সেচ দেয়ার পর জমিতে জো' আসলে কোদালের পাতলা কোপ দিয়ে জমির চটা ভেঙ্গে দিতে হয়।

সেচ প্রয়াগ- মাটিতে পানির মোট ধারণ ক্ষমতার ৫০-৬০% পানি রাখলে বৃদ্ধি দ্রুততর হয় এবং এর ফলন ভালো হয়।

পোকা দমনঃ জাবপোকা পাতার রস চুষে খায়। সরুই পোকা ও শুৱা পোকা পাতা খায়। কিন্তু ক্রিকেট, চোরা গোকা এবং কাটুই পোকার শুককীট চারার গোড়া কাটে। একিস্তান ডাটিং (৫%) লেফল ক্যা সাইহ্যালোথ্রিনের সাহায্যে জাব পোকা, সেভিন বা ম্যালাথিয়নের সাহায্যে চোরা ও সরুই পোকা দমন করা যায়। সাইহ্যালোট্রিন এবং কার্বোফুরান দ্বারা ক্রিকেট পোকা, চোরা পোকা, কাটুই পোকা দমন করা যেতে পারে।

রোগ দমন- বাঁধাকপি চলে পড়া এবং মূলের গিঁট বা দাগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। ম্যানকোজেব বা কপারঘটিত বালাইনাশক দ্বারা এ রোগ দমন করা যায়। বাঁধাকপির চারা তৈরির সময় বীজতলায় ঢলে পড়া রোগ হলে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে মাটির উপরে আসার পূর্বে অনেক সমর বীজ পচে বার। আবার চারা মাটির উপরে আসার পর অনেক সময় গোড়া দ্রুত পঁচে যায়।

সেচ ও নিকাশনঃ বাঁধাকপিতে প্রচুর পানি লাগে। কিন্তু জমিতে জলাবদ্ধতা হলে গাছ/চারা লাল হয়ে মারা যায় । তাই সেচের ফলে বা বৃষ্টিতে যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য এক বা দুই সারি পর পর পানি নিকাশের নালা তৈরি করতে হয়।

সল সংরক্ষণ  ও বাজারজাতকরণ- মোটামুটি মাথা বাঁধলেই সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যায়। এতে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। পরের দিকে এটি বেশ ভালোভাবে বেঁধে দৃঢ় হলে মূলত সংগ্রহ করা উচিত। বাঁধাকপি ঠাণ্ডা গুদামে বেশ কিছুদিনের জন্য রাখা যায়। সচরাচর হিমাগারে ৩২০ ফাঃ তাপমাত্রায় ৩ সপ্তাহ বাঁধাকপি সংরক্ষণ করা যায়। স্বাভাবিকভাবে হেক্টরপ্রতি ২০-২৫ টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে, তবে মিশ্র চাষে অতিরিক্ত ফসলসহ সাকুল্যে অন্তত ৩০ টন সবজি পাওয়া যেতে পারে।

Content added By

এক কথায় উত্তর 

১. ফুলকপির ১টি দেশী জাতের নাম লেখ। 

২.  ×  মিটার বীজতলায় কত গ্রাম ফুলকপির বীজ বপন করা হয় ? 

৩. ফুলকপির চারার কয়টি পাতা হলে রোপণ করতে হয় ? 

৪. ফুলকপির ১টি জাতের নাম লেখ ৷ 

৫. উৎপাদনের সময় অনুসারে ফুলকপি কয়ভগে বিভক্ত ? 

৬. রূপা কোন দেশের ফুলকপির জাত ? 

৭. ফুলকপি চাষের জন্য ১টি আদর্শ বীজতলায় কত গ্রাম বীজ বুনতে হয় ? 

৮. ফুলকপির চারা লাগানোর কতদিন পর প্রথম উপরি প্রয়োগের সার দিতে হয় ? 

৯. বাংলাদেশে উদ্ভাবিত বাঁধাকপির কয়টি জাত আছে? 

১০. অগ্রদূত বাঁধাকপি বারি উদ্ভাবিত কত নং জাত ? 

১১. বাঁধাকপির চারা কতদিনে রোপণ উপযোগী হয় ? 

সংক্ষিত প্রশ্ন 

১. বোতামায়ন বলতে কী বোঝায় ? 

২. ফুলকপি চাষে সারের পরিমাণ উল্লেখ কর। 

৩. ফুলকপির বোতামায়ন প্রতিকার সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর। 

৪. বাঁধাকপির জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে লেখ। 

৫. বাঁধাকপির রোগ ও পোকা দমন এবং সেচ ও নিষ্কাশন সম্পর্কে লেখ । 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. ফুলকপির জাত, রোপণ দূরত্ব, সার প্রয়োগ ও বালাই দমন সম্পর্কে বর্ণনা কর। 

২. বাঁধাকপির রোপণ দূরত্ব, সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি এবং অন্তবর্তী পরিচর্যা সম্পর্কে আলোচনা কর । 

টিকা লেখ 

১) বোতামায়ন 

২) মখমলায়ন

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion