মানব চক্ষু

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - আলো | | NCTB BOOK
14

চোখ আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অন্যতম। চোখ দিয়ে আমরা দেখি। মানব চক্ষুর কার্যপ্রণালি ছবি তোলার ক্যামেরার মতো। চিত্রে মানব চক্ষুর বিশেষ বিশেষ অংশ দেখানো হয়েছে। প্রধান অংশগুলোর বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো (চিত্র ১১.৯)।

(ক) অক্ষিগোলক (Eye ball) : চোখের কোটরে অবস্থিত এর গোলাকার অংশকে অক্ষিগোলক বলে। একে চক্ষু কোটরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সীমার চারদিকে ঘুরানো যায়৷

চিত্র ১১.৯ : চোখের অভ্যন্তরীণ গঠন

(খ) শ্বেতমণ্ডল (Sclera) : এটা অক্ষিগোলকের বাহিরের সাদা, শক্ত ও ঘন আঁশযুক্ত অস্বচ্ছ আবরণবিশেষ। এটি চক্ষুকে বাহিরের বিভিন্ন প্রকার অনিষ্ট হতে রক্ষা করে এবং চোখের আকৃতি ঠিক রাখে।

(গ) কর্নিয়া (Cornea) : শ্বেতমণ্ডলের সামনের অংশকে কর্নিয়া বলে। শ্বেতমণ্ডলের এই অংশ স্বচ্ছ এবং অন্যান্য অংশ অপেক্ষা বাহিরের দিকে অধিকতর উত্তল।

(ঘ) কোরয়েড বা কৃষ্ণমণ্ডল (Choroid) : এটি কালো রঙের একটি ঝিল্লি হিউমার দ্বারা গঠিত শ্বেতমণ্ডলের ভিতরের গাত্রের আচ্ছাদনবিশেষ। এই কালো রঙের জন্য চোখের ভিতরে প্রবিষ্ট আলোকের প্রতিফলন হয় না।

(ঙ) আইরিস (Iris) : এটি কর্নিয়ার ঠিক পিছনে অবস্থিত একটি অস্বচ্ছ পর্দা। পর্দাটি স্থান ও লোকবিশেষে বিভিন্ন রঙের নীল, গাঢ়, বাদামি, কালো ইত্যাদি হয়ে থাকে।

(চ) মণি বা তারারা (Pupil) : এটি কর্নিয়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মাংসপেশিযুক্ত একটি গোলাকার ছিদ্রপথ। মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণে তারারস্ত্রের আকার পরিবর্তিত হয়।

(ছ) স্ফটিক উত্তল লেন্স (Crystalline Convex lens) : এটি কর্নিয়ার পিছনে অবস্থিত জেলির মতো নরম স্বচ্ছ পদার্থে তৈরি একটি উত্তল লেন্স।

(জ) অক্ষিপট বা রেটিনা (Retina) : এটি গোলকের পিছনে অবস্থিত একটি ঈষদচ্ছ গোলাপি আলোকগ্রাহী পর্দা। রেটিনার উপর আলো পড়লে ঐ স্নায়ুতন্ত্রতে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভূতি জাগায়।

(ঝ) অ্যাকুয়াস হিউমার ও ভিট্রিয়াস হিউমার (Aqueous humour and vitreous humour : লেন্স ও কর্নিয়ার মধ্যবর্তী স্থান এক প্রকার স্বচ্ছ জলীয় পদার্থে ভর্তি থাকে। একে বলা হয় অ্যাকুয়াস হিউমার। লেন্স ও রেটিনার মধ্যবর্তী অংশে এক প্রকার জেলি জাতীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে। একে বলা হয় ভিট্রিয়াস হিউমার।

আলোকচিত্রগ্রাহী ক্যামেরা (Photographie Camera )

তিন ১১.১০ - আলোকচিত্রগ্রাহী ক্যামেরার পঠন

এই যন্ত্রে আলোকিত কস্তুর চিত্র লেন্সের সাহায্যে আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটের উপর গ্রহণ করা হয়। এই কারণে যন্ত্রটি আলোক-চিত্রগ্রাহী ক্যামেরা সংক্ষেপে ক্যামেরা নামে পরিচিত। ক্যামেরার বিভিন্ন অংশ হলো : (১) ক্যামেরা বাক্স (২) ক্যামেরা দেন (৩) রন্ধ্র বা ডায়াফ্রাম (৪) সাটার Q (৫) পর্দা (৬) আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেট এবং (৭) স্লাইজ

ক্রিয়া (Action) : কোনো বস্তুর ছবি তোলার পূর্বে ক্যামেরায় ঘষা কাচের পর্দাটি বসিয়ে যন্ত্রটিকে লক্ষবস্তু PQ এর দিকে ধরে সাটার খুলে দেওয়া হয়। অতঃপর ক্যামেরা বাক্সের দৈর্ঘ্য কমিয়ে বাড়িয়ে এমন অবস্থায় রাখা হয় যাতে লক্ষবস্তুর উল্টা প্রতিবিঘ্ন pq পর্দার উপর গঠিত হয়। ডারাফ্রামের সাহায্যে প্রতিবিম্বটি প্রয়োজন মতো উচ্ছ্বল করা হয়। এরপর খা কাচের পর্দা সরিয়ে সাটার কম করা হয় এবং ঐ স্থানে আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটসহ স্লাইড বসানো হয়। এখন স্লাইডের ঢাকনা সরিয়ে নিয়ে সাটার ও ভারাক্রামের মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটের উপর আলোক আপতিত হতে দিয়ে পুনরায় ডায়াফ্রাম কদ্ধ করা হয়। এই প্রতিক্রিয়াকে এক্সপোজার বা আলোক সম্পাত (exposure) বলে। এই আপতিত আলোকে আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটের রৌপ্য প্রবশে রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটে। এইবার স্লাইডের মুখের ঢাকনা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটটিকে স্লাইড হতে বের করে ডেভেলপার (developer) নামক এক প্রকার রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হয়। সিলভার হ্যালাইড ডেভেলপার বারণ (reduction) প্রক্রিয়ায় রৌপ্য ধাতবে পরিণত করে। লক্ষবস্তুর যে অংশ যত উজ্জ্বল, প্লেটের সেই অংশে তত রূপা জমা হয় এবং তত বেশি কালো দেখায়। আলোর তীব্রতা ও উন্মোচনকালের উপর রূপার স্তরের পুরত্বের ভারতমা নির্ভর করে। এখন প্লেটটিকে পানিতে ধুরে হাইপো (Sodium thiosulphate) নামক দ্রবণে ডুবানো হয়। এতে প্লেটের যে যে অংশে আলো পড়ে না সেই সকল অংশের সিলভার হ্যালাইড গলে যায়। অতঃপর পরিষ্কার পানি দ্বারা প্লেটটি ধুয়ে ফেলা হয়। এভাবে প্লেটে লক্ষবস্তুর একটি নেগেটিভ চিত্র পাওয়া যায়।

নেগেটিভ হতে প্রকৃত চিত্র অর্থাৎ পজিটিভ মুদ্রিত করার জন্য নেগেটিভের নিচে সিলভার হ্যালাইড দ্রবণের প্রলেপ দেওয়া ফটোগ্রাফের কাগজ স্থাপন করে অল্প সময়ের জন্য নেগেটিভের উপর আলোক সম্পাত করতে হয়। এরপর পূর্বের মতো হাইপোর দ্রবণে ফটোগ্রাফের কাগজ ডুবিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে পজিটিভ পাওয়া যায়।

ক্যামেরার সাথে মানব চক্ষুর তুলনা

ক্যামেরাচক্ষু

১) এতে একটি রুদ্ধ আলোক প্রকোষ্ঠ থাকে যার ভিতর দিক কালো রঙে রঞ্জিত। কালো রঙের জন্য ক্যামেরার ভিতর প্রবিষ্ট আলোকের প্রতিফলন হয় না।

২) ক্যামেরার সাটারের সাহায্যে লেন্সের মুখ যেকোনো সময়ের জন্য খোলা রাখা যায়।

৩) ডায়াফ্রামের বৃত্তাকার ছিদ্র পথ ছোট বড় করে প্রতিবিম্ব গঠনের উপযোগী প্রয়োজনীয় আলো ক্যামেরায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

৪) লেন্সের একটি নির্দিষ্ট ফোকাস দূরত্ব থাকে।

৫) এটির অভিসারী লেন্সের সাহায্যে লক্ষবস্তুর প্রতিবিম্ব গ্রহণ করা যায় ৷

৬) আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটে লক্ষবস্তুর একটি বাস্তব, | উল্টা ও খাটো প্রতিবিম্ব ফেলা হয়।

১) চোখের অক্ষিগোলকের কৃষ্ণ প্রাচীর রুদ্ধ আলোক প্রকোষ্ঠের মতো ক্রিয়া করে। এই প্রাচীরের জন্য চোখের ভিতর আলোকের প্রতিফলন হয় না।

২) চোখের পাতার সাহায্যে চক্ষু লেন্সের মুখ যেকোনো সময়ের জন্য খোলা রাখা যায়।

৩) আপতিত আলোকের তীব্রতা ভেদে কর্নিয়ার ছিদ্র পথে আপনা আপনি সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে প্রতিবিম্ব গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আলোক প্রবেশ করতে দেয়৷

৪) লেন্সের ফোকাস দূরত্ব এর সাথে যুক্ত পেশি বন্ধনীর সাহায্যে পরিবর্তন করা যায়।

৫) কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমার, চক্ষু লেন্স, ভিট্রিয়াস হিউমার একত্রে একটি অভিসারী লেন্সের মতো ক্রিয়া করে লক্ষবস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করে থাকে।

৬) আলোক সুবেদী অক্ষিপটে লক্ষবস্তুর বাস্তব, উল্টা ও খাটো প্রতিবিম্ব গঠিত হয় ।

নতুন শব্দ : আলোর প্রতিসরণ, পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন, সংকট কোণ

 

এই অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম-

- একটি নির্দিষ্ট স্বচ্ছ মাধ্যমে আলো সরল রেখায় চলে কিন্তু অন্য মাধ্যমে প্রবেশের সাথে সাথেই মাধ্যমের ঘনত্ব অনুসারে এর দিক পরিবর্তন হয় ৷

লম্বভাবে আলো এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়ার সময় এর গতিপথের কোনো দিক পরিবর্তন হয় না। 

আলোক রশ্মি যখন হালকা মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন এটি অভিলম্বের দিকে সরে আসে। আলোক রশ্মি যখন ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন এটি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়।

পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের সময় ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ অবশ্যই এর মাধ্যম দুটির সংকট কোণের
চেয়ে বড় হতে হবে।

মানব চক্ষুর কার্যপ্রণালি আলোক চিত্রগ্রাহী ক্যামেরার মতো।

Content added || updated By
Promotion