এই সূত্রানুসারে “শক্তি অবিনশ্বর । এর সৃষ্টি বা বিনাশ নেই। এটি কেবল একরূপ হতে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। রূপান্তরের আগে ও পরে মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়।” একে শক্তির অবিনাশিতাবাদও বলা হয়।
প্রমাণ (Proof) : নিম্নের দৃষ্টান্ত দ্বারা শক্তির নিত্যতা সূত্র প্রমাণিত হয়।
মনে করি 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকে পৃথিবী পৃষ্ঠের A বিন্দু হতে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে খাড়া । উচ্চতায় উঠিয়ে B বিন্দুতে স্থাপন করা হল। B বিন্দুতে থাকাকালীন বস্তুর সমস্ত শক্তিই স্থিতিশক্তি।
এখন B বিন্দুতে বস্তুর স্থিতিশক্তি, P. EB = mgh
B বিন্দুতে বস্তুর গতিশক্তি, K. EB = 0
B বিন্দুতে বস্তুর মোট যান্ত্রিক শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি
= P.EB + K.EB = mgh + 0 = mgh
বস্তুটিকে B বিন্দু হতে ছেড়ে দিলে তা অভিকর্ষ বলের প্রভাবে নিচে নামতে থাকবে। বস্তুটি যতই নিচে নামবে ততই তার বেগ বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে। বিনা বাধায় পড়লে বস্তু যে পরিমাণ স্থিতিশক্তি হারাবে ঠিক সমপরিমাণ গতিশক্তি লাভ করবে। ফলে সর্বত্র স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তির সমষ্টি সমান থাকবে।
ধরি t সময় পর বস্তুটি x দূরত্ব অতিক্রম করে C বিন্দুতে এল। C বিন্দুতে বস্তুর স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তি দুই-ই থাকবে। কারণ তা এখনও মাটি হতে উপরে আছে এবং তা কিছু বেগ প্রাপ্ত হয়েছে।
C বিন্দুতে স্থিতিশক্তি, P. Ec = ভর x অভিকর্ষীয় ত্বরণ x উচ্চতা = mg (h-x)
C বিন্দুতে গতিশক্তি, K. Ec= mv2 = m (v02 + 2gx)
= m × 2gx =mgx
C বিন্দুতে বস্তুর মোট যান্ত্রিক শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি = P. Ec + K.Ec
= mg (h-x)+mgx
=mgh-mgx+mgx = mgh
সমীকরণ (28) এবং (29) হতে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি যে,
P. EB+K. EB =P. Ec+K. Ec= mgh
অর্থাৎ অভিকর্ষ বলের প্রভাবে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর মোট শক্তির পরিমাণ একটি ধ্রুব রাশি। অতএব ান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা সূত্র প্রমাণিত হল।
বস্তু যতই নিচে নামবে ততই তার স্থিতিশক্তি হ্রাস পাবে এবং গতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তাদের যোগফল সর্বদা স্থির থাকবে। বস্তুটি যখন মাটি স্পর্শ করবে তখন স্থিতিশক্তি এবং গতিশক্তি উভয়েই লোপ পেয়ে তাপ শক্তি, শব্দ শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি প্রকৃতিতে রূপান্তরিত হবে।
বাধাহীন পথে এবং স্থিরাবস্থা হতে পড়ন্ত বস্তু প্রথম সেকেণ্ডে mg,2 দ্বিতীয় সেকেণ্ডে mg2, তৃতীয় সেকেন্ডে mg2……………. ..t-তম সেকেন্ডে mg2 (2t – 1) পরিমাণ স্থিতিশক্তি হারাবে এবং সমপরিমাণ গতিশক্তি লাভ করবে; কেননা St = এবং t- তম সেকেন্ডে হারানো স্থিতিশক্তি = mg x St = mg2 (2t - 1)।
ধরা যাক ভূমি AFE-এর সাথে কোণে আনত একটি মসৃণ তল AB-এর উপর B বিন্দুতে m ভরের একটি বস্তু রাখা আছে এবং AFE হতে বস্তুটির উচ্চতা BE=h চিত্র ৬.১৪ ]। তা হলে B বিন্দুতে বস্তুর স্থিতিশক্তি = mg x BE = mgh ও B বিন্দুতে বস্তুর গতিশক্তি = 0 ( V0 = 0 )
এখন ধরা যাক বস্তুটি ছেড়ে দেয়ায় তা B বিন্দু হতে তল বরাবর x দূরত্ব অতিক্রম করার পর C বিন্দুতে পৌঁছল এবং C বিন্দুতে বস্তুর বেগ V হল। ধরা যাক
CD || AFE এবং CF = y |
বর্ণনা অনুসারে আনত তল বরাবর বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল বল
= mg cos (90° - ) = mg sin
ত্বরণ a = g sin এবং সরণ = x
C বিন্দুতে বস্তুর স্থিতিশক্তি = mg x CF = mgy =mg (BE – BD) = mg (h - x sin )
C বিন্দুতে বস্তুর গতিশক্তি = mv2 = m x 2gx sin=mgx sin
সুতরাং C বিন্দুতে বস্তুর মোট শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি
= mg (h-x sin ) + mgx sin
= mgh
B বিন্দুতে বস্তুর মোট শক্তি = C বিন্দুতে বস্তুর মোট শক্তি। সুতরাং প্রমাণিত হল যে, আনত তল বরাবর গতিশীল বস্তুর মোট শক্তি সর্বদা একই থাকে।
তল বরাবর x পরিমাণ সরণে কৃত কাজ = mgx sin = 1ng × BD = ওজন × আদি ও অন্ত অবস্থানের মধ্যে (উল্লম্ব) উচ্চতা।
ধরা যাক একটি সরল দোলকের কার্যকর দৈর্ঘ্য = OA, দোলক পিণ্ডের ভর m, কৌণিক বিস্তার, দোলনের সর্বোচ্চ বিন্দু B বা D এবং সর্বনিম্ন বিন্দু A । চিত্র ৬:১৫ ]।
দোলক B অথবা D বিন্দুতে পৌঁছালে তা মুহূর্তের জন্য স্থির অবস্থায় থাকবে এবং যতই D অথবা B হতে A-এর দিকে যাবে তার বেগ ততই বৃদ্ধি পাবে। সর্বনিম্ন বিন্দু A অতিক্রম করার সময় দোলকের বেগ সর্বাধিক হবে। সুতরাং B অথবা D বিন্দুতে দোলকের সমস্ত শক্তি স্থিতিশক্তি এবং A বিন্দুতে দোলকের সমস্ত শক্তি গতিশক্তি। দোলক যত B অথবা D হতে A-এর দিকে যাবে তার স্থিতিশক্তি তত গতিশক্তিতে এবং দোলক A হতে যত B অথবা D-এর দিকে যাবে তার গতিশক্তি তত স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।
ধরা যাক দোলকটি OB অবস্থিতি হতে কোন এক মুহূর্তে OC অবস্থিতিতে পৌঁছল এবং OC অবস্থিতিতে দোলকটির বেগ হল। OA-এর উপর BP ও CQ লম্ব হলে বর্ণনা অনুসারে, A বিন্দুর সাপেক্ষে OB অবস্থিতিতে দোলকের স্থিতিশক্তি = mg x AP
OB অবস্থিতিতে দোলকের গতিশক্তি = 0
OB অবস্থিতিতে দোলকের মোট শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি
=mg x AP + 0 = mg x AP
আবার OC অবস্থিতিতে দোলকের স্থিতিশক্তি = mg x AQ OC অবস্থিতিতে দোলকের গতিশক্তি =mv2 = m ×2g × PQ = mg × PQ
= mg x (AP-AQ)
OC অবস্থিতিতে দোলকের মোট শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি
= mg x AQ+mg x(AP-AQ) =mg AP
OB অবস্থিতিতে দোলকের মোট শক্তি = OC অবস্থিতিতে দোলকের মোট শক্তি। সুতরাং প্রমাণিত হল আন্দোলিত দোলকের অনুসৃত পথের যে কোন অবস্থিতিতে তার মোট শক্তির পরিমা সর্বদা একই থাকে।
উল্লেখ্য : OA অবস্থিতিতে দোলকের বেগ Vm হলে, Vm ই সর্বোচ্চ বেগ।
OA অবস্থিতিতে তার মোট শক্তি = mv2m
শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুসারে, mv2m = mg × AP
কিন্তু, AP = OA – OP = OA - OB
কাজেই, mv2m = mg x 2l sin2 ( / 2 )
গতিশক্তি | বিভব বা স্থিতি শক্তি |
---|---|
১। কোন একটি গতিশীল বস্তু গতির জন্য যে শক্তি লাভ করে তাকে ঐ বস্তুর গতি শক্তি বলে । | ১। নির্দিষ্ট অবস্থানে বা স্থিতিশীল অবস্থায় কোন বস্তুর মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত থাকে, তাকে ঐ বস্তুর বিভব শক্তি বলে। |
২। বস্তু স্থিতিতে আসার পূর্ব মূহূর্ত যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তা দ্বারা গতিশক্তি পরিমাপ করা হয়। | ২। বস্তু এক অবস্থান হতে অন্য অবস্থানে আসতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তা দ্বারা বিভব গতিশক্তির পরিমাপ করা হয়। |
৩। গতিশক্তির সমীকরণ হল - mv2 | ৩। অভিকর্ষীয় বলের ক্ষেত্রে বিভব শক্তির সমীকরণ হল mgh। |
৪। বেগ বৃদ্ধিতে বস্তুর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় বেগ হ্রাসে বস্তুর গতিশক্তি হ্রাস পায়। | ৪।উচ্চতা বৃদ্ধিতে বস্তুর বিভব শক্তি বৃদ্ধি পায়। উচ্চতা হ্রাসে বস্তুর বিভব শক্তি হ্রাস পায় |
৫। গতি শক্তি একটি স্কেলার রাশি। | ৫। বিভব শক্তি একটি স্কেলার রাশি। |
আমরা জানি শক্তি অবিনশ্বর। শক্তি শুধু একরূপ হতে অন্য রূপে রূপান্তরিত হতে পারে ; রূপান্তরের পূর্বে ও পরে মোট শক্তির কোন পরিবর্তন হয় না। লর্ড কেলভিন ( Lord Kelvin) প্রথম উপলব্ধি করেন যে, শক্তি অবিনশ্বর হলেও প্রত্যেক রূপান্তরে কিছু শক্তি এমনভাবে আত্মপ্রকাশ করে যে, তা প্রয়োজনীয় কোন কাজে লাগে না। শক্তির এই অকার্যকর রূপান্তরের নাম শক্তির অপচয়। কোন যন্ত্র হতে কাজ পাবার জন্য ঐ যন্ত্রে শক্তি সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু প্রযুক্ত বা প্রদত্ত (input) শক্তি এবং প্রাপ্ত বা লব্ধ (output) শক্তি সমান হয় না। লব্ধ শক্তি কিছু কম হয়। যেমন রেলগাড়ির বাষ্পীয় ইঞ্জিনে তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু যান্ত্রিক শক্তির কিছু অংশ রেলের চাকার এবং বিয়ারিং-এর ঘর্ষণ বল অতিক্রম করতে তাপ শক্তিরূপে নষ্ট হয়।
মহাবিশ্বে নিয়ত একরূপ শক্তি অন্যরূপ শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রত্যেক রূপান্তরে কিছু না কিছু শক্তি অকার্যকর কাজে ব্যয় হচ্ছে।
সংজ্ঞানুসারে = কার্যকর শক্তি/ প্রদত্ত মোট শক্তি
যেমন কোন যন্ত্রের কর্মদক্ষতা 80% বলতে বুঝা যায় যে, 100 একক শক্তি সরবরাহ করলে তার মাত্র 80 একক শক্তি কাজে লাগবে এবং 20 একক শক্তির অপচয় হবে।
'মনে করি কোন যন্ত্রে E1, পরিমাণ শক্তি প্রদান করা হল এবং E2 পরিমাণ শক্তির অপচয় ঘটল।
: - কর্মদক্ষতা,
এদের নিম্নলিখিত সংজ্ঞা দেয়া যেতে পারে :
(১) যে বল কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করলে তাকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হয় তাকে সংরক্ষণশীল বল বলে। উদাহরণ – অভিকর্ষীয় বল, বৈদ্যুতিক বল, আদর্শ স্প্রিং-এর বিকৃতি প্রতিরোধী বল প্রভৃতি। আর যে বল কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করলে তাকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে ঐ বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হয় না তাকে অসংরক্ষণশীল বল বলে। উদাহরণ—ঘর্ষণ বল, সান্দ্র বল প্রভৃতি ।
(২) কোন বলের ক্রিয়া অভিমুখ যদি বস্তুর গতি অভিমুখের উপর নির্ভর না করে তবে ঐ বলই সংরক্ষণশীল বল, আর যদি নির্ভর করে তবে ঐ বল অসংরক্ষণশীল বল।
ধরি m ভরের একটি বস্তুকে A বিন্দু হতে উপরে উঠিয়ে B বিন্দুতে স্থাপন করা হল এবং এতে বস্তুটির উল্লম্ব সরণ । হল [চিত্র ৬.১৬]। এই স্থানাস্তর 1নং, 2নং বা 3নং পথে হলেও প্রত্যেক পথের সকল বিন্দুতে অভিকর্ষীয় বল mg খাড়া নিচের দিকে ক্রিয়া করে এবং প্রত্যেক পথে অভিকর্ষীয় বলের ক্রিয়া'রেখা বরাবর বস্তুর সরণ h । এই তিন পথের প্রত্যেক পথে কৃত কাজের পরিমাণ সমান এবং কৃত কাজ W = - mgh।
আবার বস্তুটিকে A বিন্দু হতে 1নং পথে B বিন্দুতে এনে পুনরায় তাকে B বিন্দু হতে A বিন্দুতে স্থানান্তর করলে, প্রথম স্থানান্তরে অভিকর্ষীয় বলের বিপরীত দিকে সরণ = h ও কৃত কাজ W1 = – mgh এবং দ্বিতীয় স্থানান্তরে অভিকর্ষীয় বলের অভিমুখে সরণ = h ও কৃত কাজ W2 =mgh.
মোট কৃত কাজ, W2+ W1 = mgh + (- mgh) = 0
কাজেই অভিকর্ষীয় বল সংরক্ষণশীল বল এবং এই বল কর্তৃক কৃত কাজ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। সংরক্ষণশীল বলের বৈশিষ্ট্য অনুসারে তার আর একটি সংজ্ঞা দেয়া যায়। যেমন-
আবার ধরি একটি বস্তুকে মসৃণ অনুভূমিক মেঝের উপর দিয়ে ঠেলে A বিন্দু হতে 1নং পথে B বিন্দুতে আনা হল। চিত্র ৬.১৭।। এই ক্ষেত্রে ঘর্ষণ বল বস্তুর গতি অভিমুখের বিপরীতে ক্রিয়া করবে। কাজেই এই স্থানান্তরে ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে; কারণ ঘর্ষণ বল সর্বদাই গতিপ্রতিরোধী বল। গতিপথে একটি ক্ষুদ্র সরণ dx এবং এই সরণ গড় F ঘর্ষণ বলের বিপরীতে সংঘটিত হলে, কৃত কাজ W=- Fdx।
1নং পথে A হতে B পর্যন্ত নিতে মোট কৃত কাজ এরূপ ছোট ছোট কৃত কাজের সমষ্টির সমান ও মোট কৃত কাজ, W1 = - <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><munderover accent='false' accentunder='false'><mo>∫</mo><mn>1</mn><mrow/></munderover></math> Fdx।
এখন যদি বস্তুটিকে B হতে 2নং পথে পুনরায় A বিন্দুতে নিয়ে যাওয়া হয় তবে এই ক্ষেত্রেও ঘর্ষণ বল বস্তুর গতিপথের বিপরীতে ক্রিয়া করবে।
কাজেই এই ক্ষেত্রেও কৃত কাজ, <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mi>W</mi><mn>2</mn></msub><mo>=</mo><mo>−</mo><msub><mo>∫</mo><mn>2</mn></msub><mi>F</mi><mi>d</mi><mi>x</mi></math>
উভয় ক্ষেত্রে কাজ ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে হওয়ায় উভয় কাজ ঋণাত্মক এবং তাদের যোগফল শূন্য হবে না।
কাজেই ঘর্ষণ বল কর্তৃক কৃত কাজ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। অতএব ঘর্ষণ বল অসংরক্ষণশীল বল। সংরক্ষণশীল ও অসংরক্ষণশীল বল ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দেখান যায় যে, কোন বস্তুকে অভিকর্ষ বল F-এর বিরুদ্ধে মাটি হতে h উপরে তুলতে কাজের পরিমাণ - Fh ।
এখন তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দিলে মাটিতে ফিরে আসতে অভিকর্ষ বল দ্বারা কাজের পরিমাণ হবে + Fh। ।সুতরাং বস্তুর মাটি হতে উপরে উঠার পর আবার মাটিতে ফিরে আসতে অভিকর্ষ বল দ্বারা কাজের পরিমাণ ( — Fh + Fh) শূন্য হবে। সুতরাং অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ রল সংরক্ষণশীল বল। তেমনি বিদ্যুৎ বল, চৌম্বক বল ইত্যাদি সংরক্ষণশীল বল।
অপর পক্ষে, ঘর্ষণের ক্ষেত্রে, ঘর্ষণ বল বস্তুকে চলতে বাধা দেয়। সেজন্যে এর দ্বারা বস্তুর উপর কাজ ঋণ হয়। অতএব ঘর্ষণ বল হল অসংরক্ষণশীল বল ।
সংরক্ষণশীল বল ও অসংরক্ষণশীল বলের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য করা যায় :
সংরক্ষণশীল বল | অসংরক্ষণশীল বল |
---|---|
১। সংরক্ষণশীল বল ক্ষেত্রে একটি বস্তুকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে ঐ বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হবে। | ১। অসংরক্ষণশীল বল ক্ষেত্রে একটি বস্তুকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে ঐ বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হবে না। |
২। সংরক্ষণশীল বলের ক্রিয়া অভিমুখ বস্তুর গতি অভিমুখের উপর নির্ভরশীল নয়। | ২। অসংরক্ষণশীল বলের ক্রিয়া অভিমুখ বস্তুর গতি অভিমুখের উপর নির্ভরশীল। |
৩। সংরক্ষণশীল বল কর্তৃক কৃত কাজ সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। | ৩। অসংরক্ষণশীল বল কর্তৃক কৃত কাজ সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। |
৪। বস্তুর উপর সংরক্ষণশীল বল কর্তৃক কৃত কাজ গতিপথের প্রাথমিক ও শেষ বিন্দুর উপর নির্ভরশীল। | ৪। বস্তুর উপর অসংরক্ষণশীল বল কর্তৃক কৃত কাজ শুধু গতিপথের প্রাথমিক ও শেষ অবস্থানের উপর নির্ভরশীল নয়। |
৫। সংরক্ষণশীল বলের চার যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতার সূত্র পালিত হয়। | ৫। অসংরক্ষণশীল বলের ক্রিয়ায় যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতার সূত্র পালিত হয়। নিত্যতার সূত্র সংরক্ষিত হয় না। |
কোন একটি উৎসের (agent) কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলে এবং একক সময়ের কৃত কাজ হারা ক্ষমতা পরিমাপ করা হয়। বলের ক্রিয়ায় বস্তুর সরণ দ্রুত না ধীরে কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে কাজের পরিমাণ দ্বারা তা বুঝা যায় না—বুঝা যায় ক্ষমতা দ্বারা।
মনে করি কোন ব্যক্তি বা উৎস সময়ে W পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে।
একক সময়ের কৃত কাজ বা ক্ষমতা,
P = কাজ/ সময় =
পরিমিত একটি ধ্রুব বল কোন কণার উপর dt সময় ক্রিয়া করে সরণ ঘটালে, ঐ ধ্রুব বল কর্তৃক উক্ত সময়ে কৃত কাজ,
কণাটির উপর ঐ মুহূর্তে প্রযুক্ত ক্ষমতা,
কাজেই ঐ মুহূর্তের বেগ, হলে ও ক্ষমতা স্কেলার রাশি।
ক্ষমতার সংজ্ঞা হতে এর একক বের করা যায়।
ক্ষমতা = কাজ/সময় =জুল/সেকেন্ড (J/S)
এস. আই. বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ক্ষমতার একক জুল/সে. বা ওয়াট ( watt)।
“কোন যন্ত্রের ক্ষমতা 50 জুল/সে.।”—উক্ত উক্তি দ্বারা বুঝি যন্ত্রটি প্রতি সেকেন্ডে 50 জুল কাজ করতে পারে।
ওয়াট অপেক্ষা বড় মানের আরও একটি একক ক্ষমতা প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর নাম কিলোওয়াট (K. W.)।
'ওয়াট' পরিমাপের আস্তর্জাতিক পদ্ধতিতেও ক্ষমতার একক।
= 1 জুল/সে: 1. ওয়াট
1 কিলোওয়াট = 1000 ওয়াট। অর্থাৎ কিলোওয়াট ওয়াট অপেক্ষা এক হাজার গুণ বড়। আধুনিক কালে কিলোওয়াট অপেক্ষা হাজার গুণ বড় অর্থাৎ ওয়াট অপেক্ষা দশ লক্ষ গুণ বড় ক্ষমতার আর একটি একক ব্যবহৃত হচ্ছে। এর নাম মেগাওয়াট (Mega watt)।
1 মেগাওয়াট (MW) = 1000 কিলোওয়াট
‘কোন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ক্ষমতা 2 মেগাওয়াট'। এর অর্থ—কেন্দ্রের সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ শক্তি দ্বারা প্রতি সেকেন্ডে 2 x 106 জুল বা 2 মেগা -জুল কাজ করা যায়।
আমরা জানি,
ক্ষমতা,
ক্ষমতার মাত্রা সমীকরণ, [P] = [বল][সরণ]/[সময় ]
কাজ ও ক্ষমতার মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য রয়েছে :
কাজ | ক্ষমতা |
---|---|
১। বল প্রয়োগে সরণ ঘটলে বল এবং বলের দিকে সরণের অংশকের গুণফলকে কাজ বলে। | ১। কোন একটি উৎসের কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলে। |
২। কাজের মাত্রা = | ২। ক্ষমতার মাত্রা = |
৩। কাজ ঋণাত্মক ও ধনাত্মক উভয় প্রকারের হতে পারে। | ৩। ক্ষমতার কোন রকমের নেই। |
৪। কাজ পরিমাপে সময়ের প্রয়োজন হয় না। | ৪। ক্ষমতার পরিমাপে সময়ের প্রয়োজন |
৫। কাজের একক জুল। | ৫। ক্ষমতার একক ওয়াট। |
আরও দেখুন...