জলজ আগাছা দমনের পরে পুকুর/গলদা খামার হতে অবশ্যই মৎস্যভূক ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করতে হবে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দমন করা হয়ে থাকে। আধুনিক চিংড়ি চাষ পদ্ধতিতে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণী মুক্ত খামারই উন্নত খামার ব্যবস্থাপনার পূর্বশর্ত। রাক্ষুসে মাছ এবং অবাঞ্ছিত মাছ ও প্রাণির ক্ষতিকর দিকসমূহ-
পুকুর শুকিয়ে অথবা নানা ধরনের জৈব ও অজৈব পেস্টিসাইড ব্যবহার করে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য অবাঞ্ছিত প্রাণী দমন করা যায়। অবাঞ্ছিত প্রাণী দমনের বিভিন্ন পদ্ধতি হলো-
বাংলাদেশে সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পুকুর শুকানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়। কারণ এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও খুব কম থাকে। সম্পূর্ণভাবে পানি নিষ্কাশন করার পর পুকুর ভালোমত শুকাতে ২-৫ সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন হয়। পুকুরের তলদেশ সূর্যালোকে এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে মাটিতে ৪-৫ সেমি ফাটল সৃষ্টি হয়। তবে মাটিতে অ্যাসিড বা কষ থাকলে ফাটল সৃষ্টি না করাই উত্তম। তাছাড়া পুকুরের তলদেশ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গেলে যদি ৩-৫ সেমি এর বেশি গর্ত না হয় তবে এতেও শুকানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।
যে সব পুকুরের পানি সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশন করা সম্ভব নয় সে সব পুকুরের পানি এমন পরিমাণে নিষ্কাশন করতে হবে যেন পুকুরের তলদেশ পর্যন্ত প্রচুর সূর্যরশ্মি পৌঁছতে পারে। যে সব পুকুরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবিরামভাবে চিংড়ি চাষ করা হয়েছে অথবা পুকুরের তলদেশে যদি কালো রঙের জৈব তলানি সৃষ্টি হতে দেখা যায় তবে পুকুরের তলদেশ কিছুদিন শুকানোর পর ৫-১৫ সেমি গভীর করে ভালোভাবে চাষ দিতে হবে এবং রৌদ্রে আবারও ভালোভাবে শুকাতে হবে। পুকুর শুকানোর উপকারিতা-
প্রাণী রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের জৈব ও অজৈব বা রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু পেস্টিসাইড আছে যেগুলো প্রয়োগের ফলে মৃত মাছ খাওয়ার অনুপযাগেী হয়ে পড়ে এবং পুকুরের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাছাড়া এসব পেস্টিসাইডের বিষক্রিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ থাকে। এতে চিংড়ি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য বারবার জাল টেনে মাছ ধরে ফেলা এবং পুকুর শুকানো সবচেয়ে ভাল। যদি পুকুর সম্পুর্ণরূপে শুকানো সম্ভব না হয় তবে সে ক্ষেত্রে জৈব পেস্টিসাইড হিসেবে রোটেনন, মহুয়ার খৈল, চা বীজ খৈল, তামাকের গুঁড়া প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়। জৈব পেস্টিসাইড ব্যবহারে সুবিধাসমূহ নিচে দেয়া হলো-
জৈব পেস্টিসাইড প্রয়োগ মাত্রা: পুকুরের পানির আয়তন ও গভীরতা জেনে সুবিধামতো পেস্টিসাইড নির্বাচন করে নিম্নবর্ণিত ছক অনুযায়ী পরিমাণ জেনে নির্দেশিত উপায়ে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। পানিতে জৈব পেস্টিসাইড ব্যবহারের মাত্রা-
পেস্টিসাইড | কেজি/হে/মি | কেজি/একর/মি | গ্রাম/শতক/মি | গ্রাম/ঘনমিটার | গ্রাম/ঘনফুট |
---|---|---|---|---|---|
১. রোটেনন | ২০-৩০ | ৮-১২ | ৮-১২ | ২-৩ | ০.০৭ |
২. চা বীজ খৈল | ৪০ | ১৬ | ১৬০ | ৪ | ০.১১ |
৩. তামাকের গুঁড়া | ২০০-৪০০ | ৮০-১৬০ | ৮০০-১৬০০ | ২০-৪০ | ০.৮৫ |
ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ মাত্রা: মাছ ও অন্যান্য প্রাণী দমনের জন্য ৫ নিযুতাংশ হারে ক্লোরিন প্রয়োগ করা যায়। ব্লিচিং পাউডারে ৩০-৬০% ক্লোরিন থাকে। নিচে বর্ণিত ছক অনুযায়ী ব্লিচিং পাউডার পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
পানির আয়তন (শতাংশ) | পানির গড় গভীরতা | পাউডারের পরিমাণ |
---|---|---|
১ | ৩০ সেমি (১ ফুট) | ৯০০ গ্রাম |
১০ | ৩০ সেমি (১ ফুট) | ৯ কেজি |
৩৩ | ১.৫ মিটার (৫ ফুট) | ১৫০ কেজি |
৫০ | ১.৫ মিটার (৫ ফুট) | ২৫০ কেজি |
আরও দেখুন...