তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - প্রাথমিক বিজ্ঞান - NCTB BOOK

সারসংক্ষেপ

খাদ্যে উপস্থিত প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো হলো শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। শর্করার প্রধান উৎস হলো ভাত, রুটি ইত্যাদি শস্যজাতীয় খাদ্য। মাছ, মাংস, ডাল, শিমের বিচি, ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদিতে আমিষ থাকে। বাদাম, দুধ, মাখন, ঘি, পনির, চর্বিযুক্ত মাছ ইত্যাদি খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে চর্বি বা তেল রয়েছে। তাছাড়া ফল ও শাকসবজি থেকে আমরা ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাই।

প্রতিটি পুষ্টি উপাদানের প্রধান উৎস হিসেবে আমরা খাবারের নাম জেনেছি। তবে একই খাবারের মধ্যে একাধিক পুষ্টি উপাদানও থাকতে পারে। যেমন: দুধ এমন একটি খাবার যাতে শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, লবণ ও পানি ইত্যাদি সব কটি উপাদান আছে। ডিমের সাদা অংশ আমিষ আর কুসুম চর্বিজাতীয় পদার্থ। মিষ্টি ফল যেমন: কলা বা পাকা আম বা কাঁঠালে ভিটামিন ও খনিজ লবণ ছাড়াও শর্করা থাকে। উল্লেখ্য যে, এখানে আমরা খাদ্যের প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে জেনেছি। এগুলোর বাইরেও আরো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান খাদ্যের মধ্যে থাকে। এগুলো সম্পর্কে আমরা পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে জানতে পারব।

তাজা শাকসবজি, ফল, ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর খাদ্য। ভাজাপোড়া খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। চিপস ও এ জাতীয় প্যাকেটজাত খাদ্যে অনেক সময় আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকে। তাই এসব খাবার অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়।

তাজা শাকসবজি, ফলমূল, ভাত, রুটি, দুধ, ডিম, ডাল, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবার থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাই। এগুলো নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য। অন্যদিকে ভাজাপোড়া, বিস্কুট, কেক, চিপস, নানা ধরনের জাঙ্ক খাবার বা ফাস্টফুড ইত্যাদিকে স্বাস্থ্যকর খাবার বলা যায় না। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা তাপের ফলে এসব খাবারের গুণগত মান কমে যায়। আবার কিছু ক্ষতিকর উপাদানও সৃষ্টি হয়, যেমন: চর্বি। স্বাদ বাড়ানো এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য এসব খাবারে সাধারণত অতিরিক্ত চিনি, লবন বা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়। এসব কৃত্রিম রাসায়নিক উপাদান দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। শরীরে নানারকম রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। ফাস্টফুড, চিপস, কোমল পানীয় ইত্যাদি অতিরিক্ত খেলে শরীর মোটা হয়ে যায়। তাই এসব খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।

স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের মতো পানীয় গ্রহণেও আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কিছু পানীয় আছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। ডাবের পানি একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পানীয়র উদাহরণ। এই পানীয় থেকে যেমন আমরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাই, তেমনি শরীরের পানির চাহিদাও পূরণ হয়। আবার কিছু পানীয় শরীরের ক্ষতি করে। যেমন: দূষিত পানি পান করার ফলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন: কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস ইত্যাদি হতে পারে।

 

ফলের রস, লেবুর শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি নিরাপদ পানীয়। নানা রকমের বোতলজাত পানীয়, রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ধরনের রস ও সরবত ইত্যাদি অনিরাপদ পানীয়।

সাধারণত বাসাবাড়িতে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে পানীয় তৈরি করা হয়। তাই এগুলো পান করা নিরাপদ। টিউবওয়েল বা ঝরনা থেকে আমরা বিশুদ্ধ পানি পাই। এছাড়া পুকুর বা নদীর পানি সেদ্ধ করেও পানি বিশুদ্ধ করা যায়। এসব পানিতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ মিশ্রিত থাকে। আবার ফলের রসে নানা রকম পুষ্টি উপাদান থাকে। যেমন: লেবুর রসে ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং উপকারী আরো উপাদান থাকে। তাই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে তৈরি করা লেবুর শরবত শরীরের জন্য উপকারী।

আমাদের স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পানীয় পান করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে বোতলজাত পানীয়গুলোতে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি ও নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এগুলো দীর্ঘদিন খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। তাই এধরনের পানীয় কম খাওয়া উত্তম।

Content added By
Promotion