হজমের কারখানা

সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান অনুশীলন বই - NCTB BOOK

—তোমরা প্রায় সকলেই হয়তো দোকান থেকে জুস কিনে খেয়েছ। কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছ, জুস কারখানায় তৈরি হয় কীভাবে? কার কার অবদান আছে জুস তৈরিতে? পাকা আমের জুস তৈরিতে গাছের আম থেকে শুরু করে বোতলে আসা পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে আসতে হয় তারপরেই না আমরা হাতে পাই ।

—জুস কারখানায় কীভাবে জুস তৈরি হয়, তার একটা প্রাথমিক ধারণা নেওয়া যাক-

    ⇒গাছ থেকে পাকা আম সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয় কারখানায়, সেখানে সেগুলোকে ধুয়ে বাছাই করা হয়।

    ⇒এই দুই কাজ শেষে সেগুলো পেষণ মেশিনে দিয়ে পাল্প তৈরি করা হয়।

    ⇒পাল্পের মধ্যে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় জুস।

    ⇒এরপর বোতলজাত করে, লেবেলিং করার পর প্যাকেজিং করে আরেকদল মানুষ।

    ⇒সবশেষে আরেকদল মানুষ প্যাকেজিং করে জুসগুলোকে কারখানা থেকে বের করে পাঠিয়ে দেয় দোকানে দোকানে। যেখান থেকে কিনে আমরা খাই।

—এবার একটু ভেবে দেখোতো, আমরা যে বিচিত্র রকমের খাবার খাই সেগুলো কীভাবে আমাদের শরীর ব্যবহার করে?

—খাবারগুলোকে কী আমাদের শরীরের কোষগুলো সরাসরি কাজে লাগাতে পারে? নাকি খাবারগুলোকে ভেঙে এমন কিছু উপাদান বের করে নেয়, যা শরীরের শক্তি ও পুষ্টি উপাদান প্রদান করে?

—তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেওয়া যাক অনুসন্ধানী পাঠের পরিপাকতন্ত্র অংশটুকু পড়ে।

—এখন ভালো করে চিন্তা করে দেখোতো মানুষের পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গগুলোর সঙ্গে জুস কারখানার কোনো মিল খুঁজে পাও কিনা?

—ভেবে দেখো তো কারখানায় ফল, গাড়িতে করে প্রবেশ করার মতো করেই, খাবার মুখ দিয়ে প্রবেশ করে, কনভেয়ার বেল্টের মতো গলবিল দিয়ে যাতায়ত করে আর পেষণ যন্ত্রের মতো পাকস্থলীতে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়, বিষয়টিকে এভাবে ভেবে দেখা যায় কিনা?

—অনুসন্ধানী পাঠ থেকে পরিপাক তন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও অঙ্গগুলোর নাম ও কাজ পড়ে জেনে নাও । বুঝতে অসুবিধা হলে শিক্ষককে প্রশ্ন করে ধারণা পরিষ্কার করে নাও।

—এবার মনের কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে পরিপাকতন্ত্রের অঙ্গ গুলোর ছবি ব্যবহার করে একটা কারখানার আদলে ছবি এঁকে ফেলো তো ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

—বাড়ি থেকে অনুসন্ধানী পাঠের পরিপাকতন্ত্র এবং পরিপাকগ্রন্থি অংশটুকু আরেকবার ভালোকরে পড়ে আসবে।

—বাড়ি থেকে তোমরা নিশ্চয়ই অনুসন্ধানী পাঠের পরিপাকতন্ত্র এবং পরিপাকগ্রন্থি অংশটুকু ভালো করে পড়ে এসেছ। এই সেশনে তোমরা পরিপাক অঙ্গ ও তন্ত্রগুলোর সমস্যা অভিনয়ের মাধ্যমে দেখানোর প্রস্তুতি নেবে।

—এবার শিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী দলে ভাগ হয়ে যাও। এক একটা দলে ৭ জন করে শিক্ষার্থী থাকবে। সবাই মিলে গোটা পরিপাকতন্ত্রের কাজটা অভিনয় করে দেখাবে। পরিপাকতন্ত্রের সাতটা অংশ বা অঙ্গের নাম কাগজে লিখে লটারি করে প্রত্যেকে বেছে নাও। কে কোন চরিত্রে অভিনয় করবে নিচের ছকে লিখে রাখো-

পরিপাকতন্ত্রের সাতটা অংশ বা অঙ্গের নামতোমার দলের যে অভিনয় করবে
মুখছিদ্র 
মুখগহ্বর 
গলবিল 
অন্ননালি 
পাকস্থলী 
ক্ষুদ্রান্ত্র 
বৃহদন্ত্র 

—আচ্ছা বলো তো, কোন অঙ্গটির নাম বাদ পড়ল? (এই অঙ্গটির চরিত্রে অভিনয়ের পরিবর্তে সেই জায়গায় একটা ডাস্টবিন ব্যবহার করলেই হবে।) নিচে অঙ্গটির নাম লিখে রাখো।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

—এইবার অভিনয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার পালা। কাগজে কিছু খাবার এঁকে নাও। পরিপাকতন্ত্রের কোন অঙ্গ বা অংশ খাবারকে কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করে পরের অংশে পৌঁছে দেয় তা দলগত অভিনয়ের মাধ্যমে দেখানোর প্রস্তুতি নাও। লটারির মাধ্যমে গোটা ক্লাস থেকে যেকোনো এক বা দুইজন পরিপাকগ্রন্থি ও এদের কাজ নিয়েও কথা বলবে, কাজেই তার জন্যেও প্রস্তুতি রেখো।

—আজকের সেশনে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছ নিশ্চয়ই ।

—এবার তোমার দলের সদস্যদের সাথে পরিপাকতন্ত্রের কোন অঙ্গ বা অংশ খাবারকে কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করে পরের অংশে পৌঁছে দেয় তা অভিনয়ের মাধ্যমে দেখাতে হবে। প্রতি দুইটি দল মুখোমুখি দাঁড়াও। দুইটি দলই একে একে পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়া অভিনয় করে দেখাবে। অপর দলটি অভিনয় দেখবে এবং খাবার হজমের ধাপগুলোর ক্রম দেখে অনুমান করার চেষ্টা করবে দলের কোন সদস্য কোন অঙ্গ বা অংশের ভূমিকায় রয়েছে।

—এবার শিক্ষক লটারির মাধ্যমে সবগুলো দল থেকে এই ৭টি অঙ্গ বা অংশের ভূমিকায় অভিনয় করেছে এমন একজন করে সদস্যকে ডেকে নেবেন। মুখ থেকে বৃহদান্ত্র এই ৭টি ভূমিকায় লটারিতে যাদের নাম এসেছে, তারা ক্রমান্বয়ে একে একে পরিপাকতন্ত্রে তাদের অবস্থান, গঠন ও কাজ নিয়ে বলবে। তাই ভালো করে পড়ে কী সংলাপ দেবে তা পাশের জনের সাথে আলোচনা করে আগেই ঠিক করে নিও। সবশেষে লটারির মাধ্যমে গোটা ক্লাস থেকে যেকোনো এক বা দুইজন পরিপাকগ্রন্থি ও এদের কাজ নিয়েও কথা বলবে।

—ভেবে দেখোতো, কারখানার নির্দিষ্ট কাজের একদল শ্রমিক অনুপস্থিত থাকলে বা সরিয়ে নিলে কারখানা কী ঠিকভাবে চলবে? পণ্য উৎপন্ন হবে কী? ঠিক তেমনিভাবে পরিপাকতন্ত্রের কোনো একটি অঙ্গ ঠিকভাবে কাজ না করলে কী সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে দলীয় আলোচনা করে তোমার মতামত দাও ।

—তোমাদের স্কুল ঘরটি তৈরির জন্য সবার আগে দরকার হয়েছে একটি কাঠামোর। পাকাঘর হলে লোহা বা ইস্পাতের শক্ত রড দিয়ে এই কাঠামো তৈরি করে হয়েছে। আর কাঁচা বা আধাপাকা ঘর হলে কখনো বাঁশ, কাঠ কিংবা লোহার খুটি দিয়ে তৈরি হয়েছে ঘরের কাঠামো।

—এই উদাহরণের সাথে মিল পাবে আমাদের শরীরের। স্কুলঘরের মতো আমাদের শরীরেরও একটা কাঠামো আছে। মানব শরীরের কাঠামো আছে। এই সেশনে আমরা আজ সেই কাঠামো সম্পর্কে জানব।

—তাই অনুসন্ধানী পাঠে কঙ্কাল অংশটুকু আগে পড়ে নাও।

—কোনো প্রশ্ন থাকলে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করে ধারণা পরিষ্কার করে নাও।

—এবার ৭/৮টি দলে ভাগ হয়ে পাশে দেখানো ছবির মতো খণ্ডিত টুকরোগুলো, প্রত্যেকটা দলে এক এক করে শক্ত বোর্ড বা কাগজে এঁকে ফেলো ।

—আঁকার পর অংশগুলোর কিনারা বরাবর কেটে জমা করো।

—এরপর প্রত্যেক দলের একজন প্রতিনিধি এসে এই পাজলটা মিলিয়ে পুরো কঙ্কাল তন্ত্রের একটি রূপ দিতে কত সময় নিচ্ছে তার ভিত্তিতে কোন দল কত তাড়াতাড়ি পাজল মিলাতে পারল তার হিসাব রাখো।

—বাড়িতে ম্যাচের কাঠি কিংবা পাঠকাঠি দিয়ে মানুষের কঙ্কালের একটা মডেল বানিয়ে ফেলো। বিভিন্ন অস্থি এবং ভিন্ন ভিন্ন সংযোগস্থলে বিভিন্ন রঙ দিয়ে এদের ধরনগুলোও আলাদা করতে পারো।

—তোমাদের এলাকায় কোন কারখানা দেখার অভিজ্ঞতা কি আছে? পরিপাকতন্ত্রের অঙ্গগুলোর সাথে এই কারখানার বিভিন্ন কাজের কোন মিল কি খুঁজে পাও? তোমার ভাবনা নিচে লিখে রাখো।

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

—কোন কোন অভ্যাসের কারণে, বা কোন অসচেতনতার জন্য পরিপাকতন্ত্রের কাজ ব্যাহত হতে পারে বলে তুমি মনে করো?

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion