শক্তি পাওয়া যায়, আমরা কি সেটি জানি? আবার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থেকে নির্গত শক্তির পরিমাণও কি এক? খাদ্যের ছয়টি পুষ্টি উপাদানের মধ্যে শুধু শর্করা, প্রোটিন এবং চর্বিজাতীয় উপাদান শক্তি দিতে পারে। বাকি উপাদান তিনটি শক্তি দিতে পারে না।
আমাদের দেহের মাংসপেশি আমাদের চলনে সাহায্য করে। মাংসপেশির কারণে আমরা চলতে, ফিরতে, হাঁটতে, দৌড়াতে, বসতে ইত্যাদি কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মাংসপেশির এ ধরনের কাজে সহায়তার জন্য কী পরিমাণ শক্তি খরচ হয়? পেশির সংকোচন প্রসারণে শক্তি দরকার হয়। সুতরাং, মাংসপেশি যত বেশি সংকুচিত ও প্রসারিত হবে, শক্তিও তত বেশি খরচ হবে। তাই কাজের উপর নির্ভর করে শক্তি ব্যয়ের পরিমাণ। তবে কি হাঁটা, চলা ও নড়াচড়া না করলে শক্তি খরচ হয় না?
আমরা যদি কোনো কাজ না করি, শুধু শুয়ে বসে থাকি, তবুও আমাদের খাদ্যের দরকার হয়, ক্ষুধা লাগে, বিশ্রামরত অবস্থায় শক্তি খরচ হয় বলে মনে হয়। কিন্তু কীভাবে?
বিশ্রামাবস্থায় আমাদের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হাত, পা কাজ করে না, কিন্তু আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃৎপিণ্ড ঠিকই চলতে থাকে। এদের সাথে সংশ্লিষ্ট পেশিগুলোর সংকোচন-প্রসারণে সার্বিক কাজ সাধিত হয়, কাজেই তখনও শক্তি ব্যয় হতে থাকে। এই শক্তিকে মৌলবিপাক শক্তি বলে। একজন লোকের দৈনিক কী পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তা প্রধানত নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর, মৌলবিপাক, দৈহিক পরিশ্রমের ধরন ও খাদ্যের প্রভাব। এছাড়া দেহের বৃদ্ধির শারীরিক অবস্থা ও আবহাওয়ার উপরও ক্যালরির চাহিদা নির্ভর করে।
তোমরা জান, শক্তির বিভিন্ন রূপ রয়েছে। পুষ্টি উপাদান থেকে নির্গত শক্তি হচ্ছে তাপশক্তি। তাপশক্তির একক হচ্ছে ক্যালরি। পদার্থবিজ্ঞানের হিসেবে এক কিলোগ্রাম (1000 গ্রাম) পানির উষ্ণতা 1 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি করতে 1000 ক্যালরি বা 1 কিলোক্যালরি তাপের প্রয়োজন হয়। পুষ্টিবিদেরা খাদ্যের শক্তি বোঝানোর জন্যেও "ক্যালরি" শব্দটি ব্যবহার করে থকেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খাদ্যের ক্যালরি আসলে কিলোক্যালরি। বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য এখানে খাদ্য শক্তি বোঝানোর জন্য খাদ্য ক্যালরি অথবা কিলোক্যালরি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, খাদ্যের শক্তিমূল্য প্রকাশের ক্ষেত্রে খাদ্য ক্যালরি কিংবা কিলোক্যালরির পরিবর্তে কিলোজুল একক ব্যবহার করা উচিত।
এক্ষেত্রে 1 খাদ্য ক্যালরি 1 কিলোক্যালরি 4.2 কিলোজুল (প্রায়)।
প্রতিদিন আমরা নানা রকম পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকি। ভাত, খিচুড়ি, পোলাও, মাংস থেকে শুরু করে ফলমূল, শাকসবজি, পানীয় ইত্যাদির কোনোটিই বাদ যায় না। তাই পুষ্টি উপাদানে শক্তি পরিমাপ করতে হলে এর প্রকৃতি জেনে নিতে হবে।
পুষ্টির প্রকৃতি, মিশ্রখাদ্য ও বিশুদ্ধ খাদ্য: খাদ্যের প্রকৃতি বলতে এটা কি মিশ্রখাদ্য, নাকি বিশুদ্ধ খাদ্য তাকে বোঝায়। মিশ্রখাদ্যে একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। যেমন: দুধ, ডিম, খিচুড়ি, পেয়ারা ইত্যাদি। অন্যদিকে বিশুদ্ধ খাদ্যে শুধু একটি উপাদান থাকে। যেমন: চিনি, গ্লুকোজ। এতে শর্করা ছাড়া অন্য কিছু থাকে না।
পুষ্টি উপাদান ও তার পরিমাণ নির্ণয়: পুষ্টি উপাদানের প্রকৃতি জানার পর ঐ খাদ্যে কী কী উপাদান কী পরিমাণে আছে তা জেনে নিতে হবে। তবে বিভিন্ন খাদ্যের পুষ্টি উপাদান ও তার পরিমাণ খাদ্য মূল্যতালিকা দেখে জেনে নিতে হয়।
ক্যালরি নির্ণয়: খাদ্যের পুষ্টি উপাদান ও তার পরিমাণ জানার পর শর্করা, প্রোটিন ও চর্বির ক্যালরি বের করতে হয়। এক্ষেত্রে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির ক্যালরি মূল্য শূন্য ধরে হিসাব করতে হবে।
উপাদান (1 গ্রাম) | খাদ্য ক্যালরি |
শর্করা | 4 |
আমিষ | 4 |
চর্বি | 9 |
উদাহরণ
প্রশ্ন: 20 গ্রাম চিড়ায় 15.4 গ্রাম শর্করা (77%), 1.32 গ্রাম প্রোটিন (6.6%) এবং 0.24 গ্রাম স্নেহ (1.2%) আছে, 1 কেজি চিড়াতে খাদ্যশক্তির পরিমাণ কত?
উত্তর: খাদ্য উপাদানে খাদ্য ক্যালরির হক ব্যবহার করে;
15.4 গ্রাম শর্করা থেকে 15.4 × 4 - 61.60 খাদ্য ক্যালরি
1.32 গ্রাম প্রোটিন থেকে 1.32 4 = 5.28 খাদ্য ক্যালরি
0.24 গ্রাম স্নেহ থেকে 0.24 × 9 - 2.16 খাদ্য ক্যালরি
অতএব, 20 গ্রাম চিড়ায় মোট
এ হিসাবে, 1 কেজি চিড়ার খাদ্য ক্যালরি
একক কাজ
কাজ: তোমার দৈনিক প্রয়োজন 2000 কিলোক্যালরি ধরে নিয়ে সুষম খাদ্য বিবেচনা করে সারা দিনের জন্য তোমার পছন্দের একটি খাবারের মেনু তৈরি কর।
Read more