বিভো, দেহ হৃদে বল!
না জানি ভকতি, নাহি জানি স্তুতি,
কী দিয়া করিব, তোমার আরতি
আমি নিঃসম্বল!
তোমার দুয়ারে আজি রিক্ত করে
দাঁড়ায়েছি প্রভো, সঁপিতে তোমারে
শুধু আঁখি জল,
দেহ হৃদে বল!
বিভো, দেহ হৃদে বল!
দারিদ্র্য পেষণে, বিপদের ক্রোড়ে,
অথবা সম্পদে, সুখের সাগরে
ভুলি নি তোমারে এক পল,
জীবনে মরণে, শয়নে স্বপনে
তুমি মোর পথের সম্বল;
দেহ হৃদে বল!
বিভো, দেহ হৃদে বল!
কত জাতি পাখি, নিকুঞ্জ বিতানে
সদা আত্মহারা তব গুণগানে,
আনন্দে বিহ্বল!
ভুলিতে তোমারে, প্রাণে অবসাদ,
তরুলতা শিরে, তোমারি প্রসাদ
চারু ফুল ফল!
দেহ হৃদে বল!
বিভো, দেহ হৃদে বল!
তোমারি নিঃশ্বাস বসন্তের বায়ু,
তব স্নেহ কণা জগতের আয়ু,
তব নামে অশেষ মঙ্গল!
গভীর বিষাদে, বিপদের ক্রোড়ে,
একাগ্র হৃদয়ে স্মরিলে তোমারে
নিভে শোকানল।
দেহ হৃদে বল!
(সংক্ষেপিত)
বিধাতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যমে সব ব্যথা-বেদনা দূর হয়ে যায়। মানুষের উচিত তাঁর নির্দেশমতো জীবন চালনা করা। তাঁকে স্মরণ করলে সকল দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
আজমল সাহেব একজন সৎ ও ধার্মিক ব্যক্তি। বিপদে-আপদে তিনি সবসময় স্রষ্টাকেই অবলম্বন করেন।
ছেলে সন্তানের আশায় সোবহান মিয়া আজ ছয় সন্তানের পিতা। আরও একবার সন্তান গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বলে— “চিন্তার কিছু নাই; সবই ওপরওয়ালার ইচ্ছা। মুখ দিচ্ছেন যিনি, আহারও দেবেন তিনি। "
প্রার্থনা — মুনাজাত, আবেদন।
বিভো — বিভু, স্রষ্টা, এখানে ‘বিভো” বলে কবি স্রষ্টাকে সম্বোধন করেছেন।
রিক্ত করে — শূন্য হাতে৷
পেষণে — অত্যাচারে।
কোড় — কোল।
অশেষ — যার শেষ নেই, অন্তহীন।
বিষাদ — বিষণ্ণতা, দুঃখবোধ।
স্মরিলে — স্মরণ করলে, মনে করলে।
প্রসাদ — অনুগ্রহ।
হৃদে — হৃদয়ে, মনে।
বল — শক্তি, জোর।
স্তুতি — প্রশংসা।
আরতি — প্রার্থনা।
চারু — সুন্দর।
নিকুঞ্জ — বাগান।
শোকানল — শোকরূপ অনল, যে শোক হৃদয়কে দগ্ধ করে।
কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা স্রষ্টার মহিমা সম্পর্কে জানবে এবং সমগ্র সৃষ্টি যে স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত তা উপলব্ধি করবে। তারা স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং সৎ ও সুন্দর জীবন গঠনে তৎপর হবে।
‘প্রার্থনা' কবিতাটি কবির ‘অশ্রুমালা' কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। কবি এ কবিতায় স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানিয়েছেন। কবি ভক্তি বা প্রশংসা করতে না জেনেও কেবল চোখের জলে নিজেকে নিবেদন করেন। বিপদে আপদে, সুখে, শান্তিতে সব সময় তিনি বিধাতার কাছ থেকে শক্তি কামনা করেন। গাছে গাছে পাখি, বনে বনে ফুল সবই বিধাতাকে স্মরণ করে। তাঁর অফুরন্ত দয়ায় জগতের সব কিছু চলছে। তাঁর কাছেই সকলে সাহায্য প্রার্থনা করে। তাঁর অপার করুণা লাভ করেই বিশ্ব সংসারের প্রতিটি জীব ও উদ্ভিদ প্রাণধারণ করে আছে। তাঁর দয়া ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। সুখে-দুখে, শয়নে স্বপনে তিনি আমাদের একমাত্র ভরসা। আমরা রিক্ত হস্তে পরম ভক্তি ভরে তাঁর কাছে প্রার্থনা জানাই : হে প্রভু, আমাদের দেহে ও হৃদয়ে শক্তি দাও। আমরা যেন তোমার আরাধনায় নিজেকে নিবেদন করতে পারি।
কায়কোবাদ ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম মুহম্মদ কাজেম আল কুরায়শী। প্রবেশিকা পর্যন্ত লেখাপড়া করে তিনি ডাক বিভাগে চাকরি নেন। অনেক দিন ধরে তিনি নিজগ্রাম আগলাতে পোস্টমাস্টারের দায়িত্ব পালন করেন। ছেলেবেলা থেকেই কবিতা লেখায় তাঁর হাতেখড়ি হয়। তারপর আপন স্বভাবে তিনি ক্রমাগত লিখে গেছেন। তাঁর রচিত ‘মহাশ্মশান’ বিখ্যাত মহাকাব্য। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অশ্রুমালা', ‘শিবমন্দির’, ‘অমিয়ধারা’, ‘মহররম শরীফ' ইত্যাদি। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে কবি কায়কোবাদ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
Read more