জাতির জীবনধারা গঙ্গা-যমুনার মতো দুই ধারায় প্রবাহিত। এক ধারার নাম আত্মরক্ষা বা স্বার্থপ্রসার, আরেক ধারার নাম আত্মপ্রকাশ বা পরমার্ধ বৃদ্ধি। একদিকে যুদ্ধবিগ্রহ, মামলা- ফ্যাসাদ প্রভৃতি কন্দর্য দিক, অপরদিকে সাহিত্যশিল্প, ধর্ম প্রভৃতি কল্যাণপ্রদ দিক। একদিকে শুধু কাজের জন্য কাজ, অপরদিকে আনন্দের জন্য কাজ। একদিকে সংগ্রহ, আরেকদিকে সৃষ্টি। যে জাতি দ্বিতীয় দিকটির প্রতি উদাসীন থেকে শুধু প্রথম দিকটির সাধনা করে, সে জাতি কখনও উঁচু জীবনের অধিকারী হতে পারে না। জীবনে শ্রী ফোটাতে হলে দ্বিতীয় দিকটির সাধনা প্রয়োজন।
সুদীপ্ত ও তনয়ার একমাত্র সন্তান মৌনতা । নিটোল চোখের শান্ত মৌনতা কথা বলতে পারে না। তার প্রতি মাঝে মাঝে মায়ের বিরূপ আচরণ মনে খুব দুঃখ দেয়, কিন্তু বাবার আদর ও ভালোবাসায় সে সব দুঃখ ভুলে যায়। সুদীপ্ত কখনোই মেয়েকে বোঝা মনে করেন না বরং তার কাছে মৌনতা সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ উদাহরণস্বরূপ। তাই, যৌনতার সব না বলা ভাষার চাহনি তার কাছে এক গল্পগাথা।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরশি সাহিত্য পড়তেই বেশি আগ্রহী। মামার সাথে একুশের বইমেলায় গিয়ে সে বাংলা সাহিত্যের বইগুলোই কেনে। তার এই সাহিত্যপ্রীতিকে আরও শানিত করার জন্য তার মামা তাকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারে ভর্তি করে দেন। তিনি সাহিত্য পড়ার ব্যাপারে আরশিকে অনুপ্রাণিত করে বলেন, জ্ঞান-রাজ্যের এক সমৃদ্ধ অঙ্গ হলো সাহিত্য। সাহিত্য ছাড়া কোনো জাতিই বিকশিত হতে পারে না। তবে এর জন্য প্রয়োজন সাহিত্যের বাতিঘর প্রতিষ্ঠা করা।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বাংলা সন কে কবে প্রচলন করেছিলেন এ নিয়ে মতান্তর থাকলেও ধরে নেয়া হয় সম্রাট আকবরের সময় এ সনের গণনা আরম্ভ হয়। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড়, বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করে সাধারণ মানুষ এ উৎসবকে প্রাণে ধারণ করেছে। আজকের বাংলাদেশ যে স্বাধীন হতে পেরেছে, তার পেছনেও নববর্ষের সক্রিয় প্রেরণা কাজ করে। কারণ, পাকিস্তানিরা বাঙালির এই প্রাণের উৎসবকে নস্যাৎ করার জন্য তীব্র ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালিরা।
শুভ বাবু প্রায় এক যুগ আগে সরকারি বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় যান। পড়াশোনা শেষে সেখানেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি প্রচুর বিত্ত- বৈভবের মালিক হয়েছেন। কিন্তু, তারপরও তিনি সুখী নন। বিদেশে থেকেও সেখানকার প্রকৃতি- পরিবেশ, লোকালয় কোনো কিছুই তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। কাজের অবসরে মনটা শুধু পড়ে থাকে বাংলার সবুজ শ্যামল প্রান্তরে। যেখানে রয়েছে আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ, নদীতীরের সূর্যাস্তের দৃশ্য, সবুজ-বনানী— কেটেছে তার শৈশব থেকে যৌবনের অফুরান সোনালি দিন ।
ফারুক সাহেব একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তিনি বিদ্যালয়ে যথাসময়ের আগে আসেন এবং ছুটির পর পরবর্তী দিনের কিছু কাজ গুছিয়ে বাড়ি ফেরেন । একদিন ভোরে আকস্মিকভাবে বাড়ি থেকে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তিনি বাড়ি যান। ভাইয়ের দাফন-কাফন সম্পন্ন করে পরদিনই কর্মস্থলে পুনরায় ফিরে আসেন। বিদ্যালয়ে কর্মরত অন্যরা বিবিধ অসুবিধার সম্মুখীন না হন, এই ব্যাপারে তিনি খুবই দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব।