মানুষ পৃথিবীতে আর্বিভাবের পর থেকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে নিজেদের প্রয়োজনে। মানুষ একে অপরের সাথে শব্দ বা বাক্যের বিষিয়ে ইশারায়, আকারে ইঙ্গিতে বা সাংকেতিক ভাষায় যোগাযোগ রক্ষা করে। বর্ণমালা আবিষ্কারের পর মানুষ লিখিত যোগাযোগের প্রচলন ঘটায়। পরবর্তীতে যোগাযোগ প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে যোগাযোগ মাধ্যমের বিপ্লব ঘটে। বর্তমানে, রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা যোগাযোগ মাধ্যমকে করেছে অধিক গতিশীল। পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা অনুশীলনের মাধ্যমেই রোগীকে নিরাপদ সেবা দিতে পারে। এর সাথে আছে রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণা দেওয়া ও কাউন্সেলিং করা। এই অধ্যায়ে আমরা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশয়ানদের জন্য প্রযোজ্য কার্যকর যোগাযোগ ও কাউন্সেলিং-এর মৌলিক কিছু বিষয় আলোচনা ও অনুশীলন করবো।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
যোগাযোগ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Communication. এই Communication শব্দটি ল্যাটিন Communicare থেকে এসেছে। যোগাযোগ বলতে আমরা একে অপরের সাথে ভাবের এবং তথ্যের আদান প্রদানকে বুঝে থাকি। Oxford Dictionary তে বলা হয়েছে, যোগাযোগ বলতে বুঝায় কোনো কিছু জ্ঞাত করা, প্রদান করা এবং অংশ গ্রহণ করা। যোগাযোগের কয়েকটি সংজ্ঞা নিচে উল্লেখ করা হলো:
যোগাযোগের প্রাথমিক ধারণা সকল ব্যক্তি, শ্রেণি বা পেশাজীবিদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। একজন শুসুসাকারীকে যোগাযোগের দক্ষতাগুলো খুব ভালোভাবে আয়ত্ব করতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সর্বাত্বক চেষ্টা করতে হবে। সেবামূলক পেশায় কার্যকর যোগাযোগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অধ্যায়ে আমরা যোগাযোগের প্রাথমিক ধারণা লাভের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট, তার পরিবার ও হ্যাল্থ কেয়ার টীমের সাথে কার্যকর যোগাযোগ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং এর বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো।
যোগাযোগ কেন করা হয়?
যোগাযোগ করা হয় অনেক কারণেই। মোট কথা বলতে গেলে নিচের পয়েন্টগুলো উল্লেখযোগ্য :
কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম হওয়া সম্ভব দক্ষতা বা লাইফ স্কীল (Life Skill) - মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটিই আমাদের অন্যান্য ব্যক্তির কাছে তথ্য প্রেরণে এবং আমাদেরকে কী বলা হয়েছে, তা বুঝতে সক্ষম করে। তোমার যোগাযোগের দক্ষতা বিকাশ করা তোমার পেশাগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক সমাবেশ এবং এর মধ্যের সবকিছুতে তোমার জীবনের সমস্ত দিককে সহায়তা করতে পারে। ভালো যোগাযোগ দক্ষতা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে উন্নতি সাধনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগতভাবে, তুমি যদি চাকরীর জন্য আবেদন কর বা নিয়োগকর্তার সাথে পদোন্নতির বিষয়ে বলতে চাও এক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো যোগাযোগ দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে। তোমার ব্যক্তিগত জীবনে ভালো যোগাযোগের দক্ষতা তোমাকে অন্যে বোঝার জন্য এবং জানার জন্য সহায়তা করে তোমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের উন্নতি করতে পারে।
যোগাযোগ প্রক্রিয়া বলতে সফলভাবে তথ্য আদান-প্রদানের উদ্দেশ্যে গৃহীত কতগুলো ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড বা পদক্ষেপের সমষ্টিকে বুঝানো হয়। এই পদক্ষেপ বা কর্মকাণ্ডগুলোকে সহজ ভাষায় যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান বলা হয় যেগুলোর মধ্যে প্রেরক, বার্তা, বার্তার এনকোডিং (Encoding), বার্তা গ্রহণকারী এবং বার্তাটির ডিকোডিং (Decoding)-এর মতো কতগুলো বিষয় জড়িত। নিচে যোগাযোগের এই সকল অত্যাবশ্যকীয় উপাদান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল:
১। সূত্র: যোগাযোগ সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে পূর্বের কোনো সূত্র থাকলে তা উল্লেখ করা অত্যাবশ্যক। কেননা পূর্ব সূত্র কার্যকর বিষয়টির গতিশীলতা প্রদান করে। এই সূত্র হতে পারে শারীরিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যক্তি কেন্দ্রিক কিংবা চিঠিপত্র বা দলিল পত্র।
২। প্রেরক (এনকোডার বা সেভার): লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রেরক একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট। প্রেরকের সামাজিক পরিচিতি, ব্যক্তিগত পরিচিতি অনেক সময় তথ্য পেতে ভূমিকা রাখা এবং তথ্য দাতাকে প্রভাবিত করে।
৩। বার্তা বা ম্যাসেজ: যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাৰ্তা বা ম্যাসেজ হলো মূল অনুসঙ্গ। বার্তা হতে হবে ৰোধগম্য, সরলীকরণ এবং সু-স্পষ্ট। কোনো কিছু লোকানো বা কুটকৌশল অবলম্বন করা যাবে না। বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগের প্রাসঙ্গিতা উল্লেখ করতে হবে। এবং কেন প্রয়োজন এবং কিকি কাজের যোগাযোগ করা হচ্ছে তা উল্লেখ থাকবে।
৪। মাধ্যম: কমিউনিকেশন ব্যবস্থার তৃতীয় কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা করা হয়। অনেক সময় হাতে হাতে কিংবা নিজে স্ব-শরীলেও যোগাযোগ স্থাপিত হতে পারে। বর্তমানে ইলেকট্রিক মাধ্যম জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এছাড়া পূর্বের ন্যায় ডাক ব্যবস্থা প্রচলন আছে।
৫। প্রাপক বা ডিকোডার : যার কাছ থেকে তুমি তথ্য পাৰে কিংবা যারকাছে বার্তা পাঠিয়েছ তাকে প্ৰাপক বা ডিকোডার বলে অর্থাৎ যিনি বা যে বা যন্ত্র তথ্য গ্রহণ করে তাকে প্রাপক বলা হয়। প্রাপকের কাছে তোমার প্রশ্ন পৌঁছা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রাপকের কাছে প্রশ্ন না পৌঁছালে তুমি তার থেকে প্রতিক্রিয়া পাবে না।
৬। ফিডব্যাক: ফিডব্যাক হলো তোমার ক্ষিশাসিত তলের উত্তরে প্রাপক যা বলেছে (রিপ্লাই প্রদান) করেছে তা। অর্থাৎ ফিডব্যাক হলো প্রশ্ন কর্তার উত্তরে প্রশ্নদাতা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ফিডব্যাক গুরুত্বপূণ। ফিডব্যাক না আসলে উপরের সবগুলো কর্ম ব্যর্থতার পর্যীবাসিত হবে।
যোগাযোগের 4R
যোগাযোগ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোনো থেকে এটিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যোগাযোগের একটি সহজতম প্রকারভেদ হচ্ছে নিম্নরূপ:
১ | Formal (ফরমাল) বা আনুষ্ঠানিক: আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ মূলত কোনো পেশাগত বা দাপ্তরিক ক্ষেত্রে তথ্য আদান প্রদানকে বোঝায়। এক্ষত্রে যোগাযোগের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হয় খুব সতর্কতার সাথে। অফিসিয়াল মিটিং, দাপ্তরিক আদেশ বা পরিপত্র, রিপোর্ট প্রভৃতি এই ধরনের যোগাযোগের উদাহরণ। এ ধরনের ক্ষেত্রে কথা ৰলা বা সার্বিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষাগত, আচরণগত, পরিবেশগত বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলতে হয়।
২। Informal (ইনফরমাল) বা অনানুষ্ঠানিক: এটি একটি নিম্ন নৈমত্ত্বিক ও স্বাভাবিক যোগাযোগের প্রকারভেদ যেখানে আমাদেরকে খুব বেশি পেশাগত আচরণ অনুসরণ করতে হয়না। সুনির্দিষ্ট অফিসিয়াল রাখবাদকতা না থাকায় এ ধরনের যোগাযোগ সাধারণত খুবই সতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক।
৩। Verbal (ভারবাল) বা মৌখিক: আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সবচেয়ে বেশি যে ধরনের যোগাযোগ করে থাকি, সেটি হচ্ছে ভাবীল বা মৌখিক যোগাযোগ। মৌখিক যোগাযোগ যেভাবে স্থাপিত হয়ে থাকে সেগুলো হলো-
(ক) সামনা-সামনি সংলাপ বা আলাপ আলোচনা।
(খ) সভা সমাবেশ।
এটি আবার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক এই দুই ভাবে বিভক্ত হতে পারে।
৪। নন ভারবাল (Non-verbal) বা অ-মৌখিক যোগাযোগ: অ-মৌখিক যোগাযোগগুলো হলো-
(ক) একাধিক ব্যক্তির মধ্যে অঙ্গভঙ্গি বা শারীরিক ভাষা (সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ)
(খ) অভিব্যক্তি প্রকাশ।
(গ) হাত নাড়াচাড়া।
(ঘ) মাথা নাড়ানো।
(ঙ) বিশেষ পতাকা উত্তোলন।
(চ) সাংকেতিক চিহ্ন দেখানো।
৫। Written (রিটেন) বা লিখিত: লিখিত যোগাযোগও মৌখিক যোগাযোগের মত প্রয়োজনভেদে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক এই দুই রকমের হতে পারে। লিখিত যোগাযোগগুলো হলো: প্রতিবেদন, বুলেটিন ও সাময়িকী বা ম্যাগাজিন, পরিপত্র জারি, নিউজ বা বার্তা, চিঠি-পত্র প্রভৃতি।
৬| Visual (ভিজ্যুয়াল) বা দৃষ্টি সংক্রান্তঃ সংজ্ঞানুযায়ী, ভিজ্যুয়াল যোগাযোগ হ'ল দক্ষতার সাথে কার্যকরভাবে অর্থ তৈরি করার জন্য অন্যকে চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা। ইনফোগ্রাফিক্স, ইন্টারেক্টিভ কন্টেন্ট, সোশন গ্রাফিক্স এরকম কয়েকটি নাম ভিজ্যুয়াল যোগাযোগের উচ্ছারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। আবার এর সাথে, শব্দ বা অডিও সংযোজন করে যে ধরনের যোগাযোগ স্থাপন করা হয়, তাকে বলা হয় অডিও ভিজ্যুয়াল ( Audio Visual ) কমিউনিকেশন।
যোগাযোগের আরো কিছু ধরন: যোগাযোগের উপরোক্ত প্রকারভেদ ছাড়াও আরো কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন:
নিচে এগুলো সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
আন্তব্যক্তিক যোগাযোগ: আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ হচ্ছে মুখোমুখি, বাচনিক এবং অবাচনিক উপায়ে দুই বা দুইয়ের অধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য, ধারণা ও অনুভূতি বিনিময় প্রক্রিয়া:
আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের বৈশিষ্ট্য:
দুইজনের মধ্যে যোগাযোগ: দুইজনের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে এমন ধরনের যোগাযোগ যেখানে একজন সরাসরি আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করেন।
দলীয় যোগাযোগঃ ব্যক্তি বা একটি দলের সাথে অপর একটি ব্যক্তি বা দলের যোগাযোগই হচ্ছে দলীয় যোগাযোগ। দলীয় যোগাযোগ পদ্ধতি হতে পারে :
গণযোগাযোগ কি?
সমাজের সবার জন্য যোগাযোগ কার্যক্রমকে পণযোগাযোগ বলা যায়। গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে বার্তা পৌঁছানো এবং তথ্য প্রচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম ব্যবহার করা হয়। যেমন- রেডিও, টিভি, পত্রিকা ইত্যাদি। গণযোগাযোগে সাধারণত শ্রোতার সাথে বক্তার প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটে না এবং তাৎক্ষণিক ফিডব্যাক পাওয়া যায় না।
আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিবেচ্য বিষয়:
মিডিয়া হ'ল যোগাযোগ চ্যানেল বা সরঞ্জাম যা তথ্য বা ডেটা সঞ্চয় এবং সরবরাহ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। আধুনিক যুগে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘মিডিয়া’ ও ‘চ্যানেল' শব্দটি প্রায়শই সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সহজে বলা চলে যে, যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সকল চ্যানেল বা সিস্টেমের একটি সম্মিলিত নাম যার মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে মোবাইল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে গণমাধ্যম যোগাযোগ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এ ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সংবাদ পত্র, রেডিও-টেলিভিশন ও ইলেকট্রিক মিডিয়া। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে একটি আলোচিত যোগাযোগ মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, ইনষ্টাগ্রাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আর বার্তা আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে- ইমো, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াট্স অ্যাপ, ভাইভার, স্কাইপি ইত্যাদি অ্যাপগুলো ভালো অবস্থানে আছে। বর্তমান লিখিত যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইলেকট্রিক মেইল বা ই-মেইল গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ফ্যাক্স, টেলিফোনও ব্যবহার করা হচ্ছে আগের মত। যোগাযোগ ব্যবস্থায় মোবাইল কমিউনিকেশন এনেছে বিপ্লব। প্রতিটি ঘরে ঘরে মোবাইল ডিভাইসের আধিক্য চোখে পড়ার মত। মোবাইল কমিউনিকেশন ব্যবস্থা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। নিচে প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত কয়েকটি অতি পরিচিত যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল :
১। লেটার: লেটার বা চিঠিপত্র যোগাযোগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম। নানা প্রয়োজনে আমাদেরকের চিঠিপত্র লিখতে হয়। বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে একে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে যথা: ব্যক্তিগত, সাময়িক ও ব্যবহারিক। ব্যক্তিগত পত্র সাধারণত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে লেখা হয়। আবার ব্যবহারিক পত্রাদি সাধারণত আবেদন-নিবেদন, অভাব-অভিযোগ, চাকরি-বাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে লেখা হয়।
২। রিপোর্ট: এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো প্রতিবেদন। রিপোর্ট হলো একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে একদল সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে লিখিত বা মৌখিক আকারে কোনো কিছু দাখিল করা। প্রতিবেদনের সারমর্ম মৌখিক আকারে প্রকাশ করা যেতে পারে, কিন্তু পূর্নাজ্ঞ বিবরন সাধারণত লিখিত আকারেই হয়ে থাকে ।
৩। ই-মেইল: ই-মেইল তথা ইলেক্ট্রনিক মেইল হল ডিজিটাল বার্তা যা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। এই ব্যবস্থায় একজন প্রেরক ও প্রাপক বিভিন্ন প্রয়োজনে লিখিত বার্তা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট টেকনোলোজির মাধ্যমে নিমিশেই আদান-প্রাদন করতে পারেন। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ছাড়াও এই সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন হয় একটি ই-মেইল আইডি বা ঠিকানার। ইমেইল ঠিকানা দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশটি হল ব্যবহারকারীর নাম। এর ঠিক পরপরই থাকে @ চিহ্নটি। তার পরে থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর প্রতিষ্ঠানের নাম। যেমন: abc@cde.com এই ঠিকানাটিতে abc হল ব্যবহারকারী নাম, cde.com হল ব্যবহারকারীর মেইল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম। জনপ্রিয় ই-মেইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুগল, ইয়াহু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৪। টেলিফোন বা মোবাইল: বর্তমান যুগের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল কিংবা টেলিফোন। তবে আনুষঙ্গিক অনেক সুবিধাদির জন্য মোবাইল ব্যবস্থাটিই বেশি জনপ্রিয়। টেলিফোন বা মোবাইল মানুষের মুখের কথা যুগপৎ প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যার মাধ্যমে একে অপরের থেকে বহু দুরে অবস্থিত একাধিক ব্যক্তি মৌখিক যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। এগুলো সস্তা, সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপন করা যায়; এই সমস্ত সুবিধা অন্য কোনোও মাধ্যমে সম্ভব নয় ।
৫। সোশ্যাল মিডিয়া: এটিকে এক কথায় বলা যায় যে এটি এমন ইন্টারনেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশান যার মাধ্যমে ইউজার কনটেন্ট (টেক্সট,ইমেজ,অডিও, ভিডিও, ইনফর্মেশন ইত্যাদি) বানাতে ও শেয়ার করতে পারে এবং সে তার মতামত জানাতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া গণযোগাযোগের একটি বৃহৎ অংশ দখল করে আছে। কয়েকটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৬। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মঃ এছাড়াও কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট ও রিসোর্স আছে, যা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে যোগাযোগ করা যায়। এর মধ্যে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম উল্লেখযোগ্য।
নানা কারণে আমাদের যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। নিচে তিনটি প্রধান দিক তুলে ধরা হলো:
যোগাযোগকারী | উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী | পরিবেশগত |
|
|
|
নির্দিষ্ট বাধা বিবেচনা করে কার্যকর যোগাযোগ পদ্ধতি অনুশীলন করার মাধ্যমে যোগাযোগের এইসকল ব্যারিয়ার পরিহার করা সম্ভব। ক্রমাগত যোগাযোগ দক্ষতার উন্নতি সাধন ও অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে অনেক সহায়তা প্রদান করতে পারে। একজন ভালো যোগাযোগকারীর জন্য যোগাযোগের বাধাসমূহ এবং কিভাবে তা অতিক্রম করা যায় তা চর্চা করা খুবই দরকার।
ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিম্নের বিষয়গুলোর উপর খেয়াল রাখতে হয়:
কেয়ারগিভারদের জন্য কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা এবং কৌশল জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্যকর যোগাযোগের অর্থ একজন কেয়ারগিভার তার রোগী, পরিবারের সদস্য এবং সহকর্মীদের মধ্যে তথ্য কার্যকরভাবে পৌঁছে দিতে পেরেছেন। মূলত একজন কেয়ারগিভার যে কিনা হাসপাতাল, ক্লিনিক, হোম কেয়ার কিংবা অন্য কোনো কমিউনিটি সেটিংস-এ অসুস্থ ব্যক্তিকে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করে থাকেন, তিনিই জানেন ঐ ব্যক্তির সাধারণ সমস্যার সব রকম খবরাখবর।
রোগী বা ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ: সেবার এই মহৎ পেশায় ক্লায়েন্ট, ব্যক্তি, রোগী অথবা সেবাগ্রহিতা সামগ্রিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। মূলত এই পেশায় সামগ্রিক যোগাযোগ সংঘটিত হয়ে থাকে ক্লায়েন্টকে ঘিরেই।
ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ কেন দরকার?
ক্লায়েন্ট বা সেবাগ্রহীতা কেয়ারগিভিং পেশার একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানকারী হিসেবে একজন কেয়ারগিভারই হচ্ছেন ‘First Point of Contact' (ফাৰ্ষ্ট পয়েন্ট অফ কনটাক্ট) বা ‘যাবতীয় যোগাযোগের প্রথম ব্যক্তি'। প্রথমত, সুচারুভাবে সেবা প্রদান করার উদ্দেশ্যে কেয়ারগিভারকে তার সেবা গ্রহীতার সাথে একটি সুন্দর সহযোগীতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখার লক্ষ্যে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করে যেতে হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তির সামর্থ্য ও সুযোগের উপর বিবেচনা রেখে যোগাযোগের মাধ্যম ও পন্থা নির্বাচন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ক্লায়েন্টের যেকোনো প্রয়োজনে পরিবারের লোকজন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দলের সাথে প্রয়োজনীয় কার্যাবলি সম্পাদনের লক্ষ্যে যোগাযোগ অপরিহার্য। একটি কার্যকর যোগাযোগ ক্লায়েন্ট সম্পর্কিত সকল বিষয়ে কেয়ারগিভারকে জানতে সহায়তা করবে। আর তখনই সম্ভব হবে একটি পরিপূর্ণ কেয়ারগিভিং সার্ভিস নিশ্চিত করা।
বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক, সামাজিক অবস্থাসম্পন্ন ভিন্ন ভিন্ন ক্লায়েন্ট গ্রুপের সাথে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার জন্য কিছু অতি পরিচিত উপকরণ ও উপায়ের প্রয়োজন হয়। যেমন:
উপকরণ:
| উপায়:
|
কেয়ারগিভারের সেবাগ্রহিতার তালিকা বস্তুত ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। তবুও আলোচনার সুবিধার জন্য আমরা সামগ্রিকভাবে কয়েকটি ক্লায়েন্ট গ্রুপে বিভক্ত করতে পারি। যেমন:
একজন কেয়ারগিভার যখন তার ক্লায়েন্টদেরকে সেবা দিতে যান, তখন তিনি তাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে থাকেন। যোগাযোগ দক্ষতার পরিপূর্ণ আত্তীকরণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে এই সংযোগগুলোকে আরও শক্তিশালী করা যায় যাতে করে রোগী ও তার পরিবারকে কার্যকরভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নির্দেশনা প্রদান করা যায়। কার্যকর যোগাযোগের জন্য তোমাকে তোমার ক্লায়েন্টের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে হবে, যাতে আপনি প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশলটি তৈরি ও প্রয়োগ করতে পার। তুমি বিভিন্ন ধরনের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সময় অনুসরণ করার জন্য এখানে Client Communication বা রোগীর সাথে যোগাযোগের নানাদিক নিয়ে আলোচনা করা হলো।
একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব মার্জিত ও ভদ্রভাবে আচরণ করতে হয়। একই সাথে খুবই ধৈর্য্য ও সহনশীলও হতে হবে। নিচে এ সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ দেওয়া হল:
১। সময় নিন: হাতে সময় নিয়ে কথা বলতে হবে। সাধারণ বিবেচনার চেয়ে এক্ষেত্রে প্রায়ঃশই সময় বেশি লেগে থাকে। একজন বয়স্ক ব্যক্তি সাধারণত খুবই মনোযোগ ও সম্মান প্রত্যাশা করেন। অনেক সময় কথা শুনা ও বলার ক্ষেত্রে তাদের মনোযোগ হারিয়ে যেতে পারে অথবা তারা অন্যমনস্ক হয়ে যেতে পারেন। তাই, খুবই আস্তে স্পষ্ট ও মার্জিতভাবে কথা বলতে হবে। প্রয়োজনে কথা পুনরাবৃত্তি করতে হবে এবং তারা কথা বুঝতে পেরেছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
২। বিশেষ চাহিদা পুরণ করতে হবেঃ যদি সেবাগ্রহীতা কোনো শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন যেমন: দৃষ্টি বা শ্রবনের সমস্যা তাহলে তার কাছাকাছি ও মুখোমুখি বসতে হবে। এটি ক্লায়েন্টকে তুমি যা বলছো তার দিকে ফোকাস করতে এবং ব্যাঘাত কমাতে সহায়তা করে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে কন্ঠস্বর বড় করে কথা বলতে হতে পারে যাতে করে ক্লায়েন্ট তোমার কথা শুনতে পান; তথাপি মনে রাখতে হবে যে একটু জোরে কথা বলা ও চিৎকার করে কথা বলার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
৩। কথাগুলো সহজবোধ্য রাখতে হবেঃ সহজ শব্দ ও ছোট বাক্য ব্যবহার কর। তুমি যদি খুব বেশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা ব্যবহার কর, তাহলে ক্লায়েন্ট কথাগুলো নাও বুঝতে পারেন। ক্লায়েন্টের বুঝার সুবিধার জন্য প্রয়োজনে সহজ বাংলায় কথা বলতে হবে।
সেবা প্রদান করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-কালচার থেকে আসা ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও চিন্তা-ভাবনার অধিকারী ক্লায়েন্টের যোগাযোগের পছন্দ ও ধরন ভিন্ন ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এসকল ক্ষেত্রে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারেঃ
১। ভাষার জটিলতা মেনে নিতে হবেঃ ভাষা খুব একটা সহজ বিষয় নয়; হোক সেটা ইংরেজী, বাংলা কিংবা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা। তাই জটিল ও কঠিন ভাষার প্রয়োগ কিংবা চিকিৎসা পরিভাষা ব্যক্তির নিকট দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই সহজ-সরল ভাষায় যোগাযোগের চর্চা করতে হবে।
২। নিরবতা কাজে লাগাওঃ অনেক ব্যক্তির কাছেই কথা বলার মাঝখানে নিরবতা একটু অস্বস্তিকর লাগতে পারে। আপনার কথা শুনার সময় কিংবা নিজে কথা বলার মাঝেও ব্যক্তি খানিকটা বিরতি নিতে পারে।সেই সময় ধৈর্য্য ধরতে হবে। কথা বলার মাঝখানে বিরতির সময় রোগীর মুখ ও শরীরের অঙ্গভঙ্গি থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফুটে উঠতে পারে। ব্যক্তি কথা বুঝতে পেরেছে কিনা তা জানার জন্য তিনি কি বুঝেছেন সেটি জিজ্ঞেস করা যেতে পারে।
৩। শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ ও এক্সপ্রেশন বা অভিব্যক্তি পরিহার করতে হবে। যেমন, 'এখন সময় 10 am.'- এই কথাটিও ব্যক্তি সহজে না বুঝতে পারেন। তাই বলা যেতে পারে ‘এখন সকাল ১০টা বাজে'। অপরিচিত উপমা বা বাঘধারা মূলক শব্দ বা বাক্যও পরিহার করা শ্রেয়।
একজন মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তির ক্ষেত্রে চাপ বা স্ট্রেস ও আবেগ খুব বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হওয়াটা স্বাভাবিক, যেটা কার্যকর যোগাযোগকে প্রভাবিত করতে পারে। এক্ষেত্রে নিচের পদক্ষেপ অনুসরণ করা যেতে পারেঃ
১। খারাপ সংবাদ এড়ানোর চেষ্টা করবে না। তোমাকে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠভাবে আবেগতাড়িত না হয়ে ব্যক্তি ও তার পরিবারকে খারাপ সংবাদ বলতে হবে। পুনশ্চ তাদের কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে সেটির উত্তর দেওয়ার প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হবে। যেমন; ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি জিজ্ঞেস করতেই পারেন যে আমি কি সত্যিই মারা যাব? এক্ষেত্রে এধরনের প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা থাকলে তা কখনোই এড়িয়ে যাওয়া যাবেন না। বরং, সঠিক তথ্য দিয়ে ব্যক্তিকে তার অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে সহায়তা প্ৰদান করতে হবে।
২। তথ্য প্রদানে পরিষ্কার থাকতে হবে। সেবাগ্রহীতার অসুস্থতা ও গৃহীত চিকিৎসার সুদুরপ্রসারী ফলাফল আগেভাগেই বলে রাখা ভালো।
৩। সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, জীবনের শেষ পর্যায়ের সেবা ও অন্যান্য প্রস্তুতি বিভিন্ন সংস্কৃতি, পরিবার কিংবা ধর্ম ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দেখে থাকতে পারে। এক্ষত্রে পরিবার বা ব্যক্তির বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডকে বিচার-বিশ্লেষণ না করে সহমর্মীতা প্রদর্শন করতে হবে।
৪। সর্বোপরী এ ধরনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ধৈর্য্য ধরতে হবে। একজন ব্যক্তি যখন তার দুরারোগ্য ব্যাধীর কথা জানতে পারেন তখন তার আবেগ, চিন্তা অনেক বেশী সংবেদনশীল হতে পারে। তখন ব্যক্তি দুঃখ, হতাশা, অধিক উত্তেজনাপূর্ণ আচরণ দেখাতে পারে। এক্ষেত্রে হাল ছেড়ে না দিয়ে ধৈর্য্য সহকারে কাজ করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটি প্রতীয়মান যে, ক্লায়েন্ট গ্রুপের বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আরো কিছু ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতা অনেক কাজে আসতে পারে। যেমন:
১। Open-ended (ওপেন এন্ডেড) বা উন্মুক্ত ধরনের প্রশ্ন করতে হবে। এমন ধরনের প্রশ্ন করা থেকে সাধারণত বিরত থাকতে হবে যেটার উত্তর ব্যক্তি কিংবা শুধু মাথা নাড়িয়ে দিতে পারেন। 'না' বা 'হ্যা' আপনি এখন, যেভাবে বুঝার সুযোগ থাকে। যেমনপূর্ণা অনুভূতি, ওপেন এন্ডেড প্রশ্ন করলে ব্যক্তির আবেগ আপনি সরাসরি কিভাবে চিন্তা করছেন বিষয়টিকে ওজন কমানোর ব্যাপারে কি কি পরিকল্পনার কথা ভাবছেন। এগুলো কয়েকটি ওপেন এন্ডেড প্রশ্নের উদাহরণ হতে পারে।
২। ব্যক্তির কথা paraphrase (প্যারাফ্রেজ) বা শব্দান্তরিত করে বলার চেষ্টা করা যাতে করে আপনি তার কথা ঠিকমত বুঝতে পেরেছেন কিনা সেটি নিশ্চিত হতে পারেন। একইভাবে, আপনার কোনো গুরুবপূর্ণ নির্দেশনা ব্যক্তি ঠিকমত বুঝেছেন কিনা সেটি যাচাই করার জন্য তিনি কি বুঝেছেন তা নিজের ভাষায় বলতে বলুন।
৩। গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা লিখে রাখা যেতে পারে। যেমন, খাবারের সময়, কিংবা গোসল করার ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ নির্দেশনা সহজ ভাষায় বুলেট পয়েন্ট বা চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে ব্যক্তির দৃষ্টির সামনে রাখা যেতে পারে।
৪। ব্যক্তিকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে। তার যেকোনো জিজ্ঞাসা তার মত করে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞেস করতে পারলে ব্যক্তি কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন।
কার্যকর যোগাযোগের জন্য আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়ের উপর খুব নির্ভর করে থাকি। আমাদের সেবাগ্রহীতা অনেক ব্যক্তির মাঝে এই ধরনের ইন্দ্রিয় অনুভুতির সমস্যা থাকতে পারে যেমন, আংশিক ও সম্পূর্নরূপে দেখতে ও শুনতে না পারা। এই ধরনের সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সেবাদান করার সময় সাধারণ উপায়ে যোগাযোগের কৌশল অবলম্বন করলে তা সাধারণত ফলপ্রসু হয়না। বিশেষ কিছু পন্থা অবলম্বন করলে এক্ষেত্রে সফল্ভাবে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা যেতে পারে।
দৃষ্টি সংক্রান্ত বৈকল্যঃ
নানান কারণে এই ধরনের সমস্যার সৃস্টি হতে পারে যেমন, চোখের ছানি পড়া (ক্যাটারেক্ট) যেটা বয়োঃবৃদ্ধি, পক্ষাঘাত বা অন্য কোনো অসুস্থস্থার জন্য ঘটতে পারে। দৃষ্টি প্রতিবন্দি ব্যক্তির যত্ন নেওয়ার সময় ব্যক্তিকে পারিপার্শ্বিকতা এবং ঘটনাক্রম বুঝতে সহায়তা করার জন্য যোগাযোগ দক্ষতা প্রয়োগ করতে হবে।
শ্রবন সংক্রান্ত বৈকল্যঃ শ্রবণ-প্রতিবন্ধী কিছু লোক হতে পারেন একেবারে বধির, আবার অন্যদের ক্ষেত্রে কেবল নির্দিষ্ট শব্দ শুনতে সমস্যা হতে পারে। এটা জানা অত্যন্ত জরুরি যে, এই ধরনের ব্যক্তি কি শুনতে পারেন এবং কি পারেন না। হেয়ারিং এইড এক্ষেত্রে শ্রবনের কিছুটা উন্নতি ঘটাতে পারে, কিন্তু এককভাবে তা সবক্ষেত্রে বা সবসময় কার্যকরী হয়ে উঠেনা। যদি কেউ হেয়ারিং এইড ব্যবহার করে থাকেন, তাকে নির্দেশনা প্রদান কর যাতে করে তিনি জেলে থাকা অবস্থায় সার্বক্ষণিকভাবে তা ব্যবহার করেন এবং পরীক্ষা করে দেখেন যে সেটি ঠিকমত কাজ করছে কিনা। তাকে প্রবন সহায়ক যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার ও যত্ন সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এছাড়াও, এই ধরনের পরিস্থিতিতে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য আরো কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে যেমন,
এই উপায়ে কোনো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা নির্দেশনা থাকলে কেয়ারপিভারকে অবশ্যই সেবাগ্রহিতাকে পাল্টা প্রশ্ন করানোর মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে সেটি তিনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন কিনা। অনেক সময় শুনতে অসুবিধা হয় এমন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন, যা প্রায়শই জটিল আবেগের সাথে জড়িত। ক্লায়েন্ট বা তাদের পরিবারের সদস্যর এই আবেগ এবং চিন্তা প্রকাশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যিনি সবেমাত্র নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছেন তিনি বলতে পারেন, "আমার পরিবার আমার আর কোনো খোজ খবর রাখেনা” " বা হোম কেয়ারের ক্ষেত্রে পরিবারের কোনো ও সদস্য, যার মা টার্মিনাল অসুস্থতার শেষ পর্যায়ে আছেন, তিনি বলতে পারেন, "আমি আশা করি আমার মা কেবল মারা যাক" অথবা, “আর ভালো লাগছেনা এই বৃদ্ধ পিতার পিছনে টাকা ও সময় নষ্ট করতে, মনে হয় আত্মহত্যা করি”। এ ধরনের মন্তব্য তোমাকে অস্বস্তি, ভয়, নার্ভাসনেস বা অনিশ্চিত অবস্থায় ফেলে দিতে পারে এবং তখন ঠিক কিভাবে রেসপন্স করতে হবে সে ব্যাপারে দ্বিধায় পড়তে হয়। প্রথম প্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন যে তুমি এই ধরনের কথোপকথন দ্রুত এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ওই স্থান ত্যাগ করছো অথবা খুব দ্রুত কথার প্রসঙ্গ বদলাচ্ছো। অথবা এমন কিছু বলতে পারো যাতে করে মনে হতে পারে যে এই ধরনের ধারণা বা বক্তব্য থেকে উনারা চট করে সরে আসবেন। যেমন অনেকে বলে থাকে যে, “বোকার মত কথা বলবেননা” কিংবা, “এটা কোনো কথা হলো” অথবা “আপনি আসলে যা বলছেন সত্যি কি তাই বুঝাতে চাচ্ছেন?” প্রভৃত। কিন্তু বস্তুত, এই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্তির সাথে কার্যত কেয়ায়রগিভারের যোগাযোগ এবং বিশ্বাসের জায়গাটাকে বিনষ্ট করে দেয়। কেয়ারগিভারের কাজের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তি, সেবা গ্রহীতা ও তার পরিবারের লোকদের সাথে যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখা। তাই, উক্ত উপায়ে রেসপন্ড করলে সেবার মূল কর্মকাণ্ড একেবারে ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের জটিল বিষয়ে যোগাযোগ বা কথা বলার দরকার হলে নিম্নলিখিত বিবেচনাগুলো সহায়তা প্রদান করতে পারে :
পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ: কেয়ারগিভার হিসাবে কাজ করতে গেলে তোমাকে অবশ্যই সেবাগ্রহীতার পরিবারের সদস্যদের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম হতে হবে। যেহেতু কেয়ারগিভার সেবাগ্রহিতা ব্যক্তির সাথে প্রচুর সময় অবস্থান করে থাকে এবং রুটিন/প্রাত্যহিক কাজে সর্বাধিক সহায়তা প্রদান করে থাকবে, সেহেতু প্রায়শই তুমিই হবেন হ্যাল্ল্থ কেয়ার টীমের প্রথম সদস্য যার কাছ থেকে পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্য ও সক্ষমতা তথা সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইবেন। পরিবারের কোনোও সদস্য যদি এমন কোনো কিছু জানতে চায় যে বিষয়ে তোমার উপস্থিত জ্ঞান বা বিষয়বস্তু অজানা থাকে তাহলে তাদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নাও এবং আপনার টীমের অন্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা; বিশেষ করে অভিজ্ঞ নার্স বা ডাক্তার অথবা আপনার কেয়ার সুপারভাইজারের সাথে কথা বলা। পরবর্তীতে অবশ্যই উক্ত বিষয় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে ফলো-আপ রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, তুমি কিভাবে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলছো বা যোগাযোগ রক্ষা করছো সেটি তোমার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাদের ভালোবাসার মানুষটি কি ধরনের সেবা পাচ্ছে তার সম্পূর্ন চিত্রটি ফুটিয়ে তুলছে। যত্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তোমার ভূমিকা এবং কার্যধারা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে তুমি পরিবারের সদস্যদের আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে সহায়তা করতে পারো।
পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচিত হয়ে, তাদের ফ্যামিলি হিষ্টরি জেনে, তাদের সাথে কথা বলে এবং তাদের কথা শুনে সমগ্র পরিবারের সাথে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারাটা একজন কেয়ারগিভারের একটি চমৎকার কর্মদক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। পরিবারের সদস্যরা প্রায়শই মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করতে পারেন, উদাহরণস্বরূপ, কী কী কৌশল অবলম্বন করলে তাদের প্রিয়জনের যত্ন নেয়াটা কার্যকরী হবে ইত্যাদি। পরিবারের সদস্যদের দ্বারা প্রদত্ত তথ্যগুলো তোমার কাজকে আরও সহজ করে তুলতে পারে এবং তোমার করা যত্নের মান শুরু থেকেই অনেকগুন বাড়িয়ে তুলতে পারে। কখনও কখনও, পরিবারের সদস্যরা তাদের পরিবারের সদস্যদের যত্ন সম্পর্কে পূর্বের বা বর্তমানের কোনোও অভিযোগ বা উদ্বেগের কথা বলতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতে পেশাদারিত্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আত্মপক্ষ সমর্থন বা রাগান্বিত স্বরে তর্ক করা পরিহার করতে হবে। বরং, কার্যকরীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করার মাধ্যমে পরিবারের উদ্বেগের বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং তাদেরকে আস্বস্ত করতে হবে যে আপনি তাদের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন এবং আপনি উক্ত বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সমন্বিত, উচ্চ-মানের যত্ন বা সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা দলের সদস্যদের অবশ্যই একে অপরের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে হবে। কেয়ারগিভার হিসেবে তুমি তোমার প্রাত্যহিক সেবা দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করার মতো অবস্থানে রয়েছো। এই সকল তথ্য ঠিক কিভাবে রেকর্ড ও প্রতিবেদন করবে সে বিষয়ে অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে যাতে করে হ্যাল্ল্থকেয়ার টীমের অন্যান্য সদস্যরা প্রয়োজন মত সেই তথ্য গুলো সংগ্রহ করতে পারে। পাশাপাশি, কোনো কঠিন বা জটিল পরিস্থিতিতে রোগীর অবস্থা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন হতে পারে। হ্যাল্ল্থ কেয়ার টীমের সাথে যোগাযোগ বলতে মূলত এই বিষয়গুলোকেই বুঝানো হয়। প্রথম অধ্যায় থেকে আমরা ইতোমধ্যেই হেল্থ কেয়ার টীম বা স্বাস্থ্য সেবা দল সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করেছি। এক্ষেত্রে যোগাযোগটা মূলত পেশাগত যোগাযোগ। তাই এপ্রোচটাই হতে হয় পেশাগত ও আনুষ্ঠানিক। সাধারণত নির্দিষ্ট কতগুলো উপায়ে এই যোগাযোগটি সংঘটিত হয়ে থাকে। যেমন; ডেইলি রেকর্ড ও রিপোর্ট, গুরুত্বপূর্ণ ফর্মস, কেয়ারপ্ল্যান, ফ্লো শীট, কেয়ার নোট্স, পেশেন্ট ফাইল ইত্যদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর তাই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে একজনে কেয়ারগিভারের অবশ্যই ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। নিচে হ্যাল্ল্থ কেয়ার টিমের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কেয়ারগিভারের জন্য প্রযোজ্য অত্যাবশ্যকীয় যোগাযোগের মৌলিক কিছু নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করা হল।
১। চিকিৎসা শাস্ত্রের পরিচিত শব্দ ও সংক্ষিপ্ত রুপঃ স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কাজ করতে গেলে কেয়ারগিভারকে অবশ্যই কিছু সুপরিচিত মেডিক্যাল শব্দ ও পরিভাষা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য নতুন মেডিক্যাল পরিভাষা মনে রাখা কঠিন লাগাটা খুবই স্বাভাবিক। কেননা, মেডিক্যাল পরিভাষার কিছু কিছু শব্দ অনেক দীর্ঘ, কিছু কিছু আছে উচ্চারন ও বানান করাই অনেক কষ্টসাধ্য আবার অনেক গুলো আছে যেগুলো সচরাচর কথাবার্তায় একদমই ব্যবহৃত হয়না। মেডিক্যাল পরিভাষা সম্পর্কে ২য় অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
২। রিপোর্টিং: রিপোর্টিং হচ্ছে হ্যাল্থ কেয়ার টিমের সদস্যদের মধ্যে লিখিত বা মৌখিকভাবে তথ্যের আদান- প্রদান। সাধারণত কেয়ারগিভার শিফটের শুরুতে ও শেষে তার কেয়ার সুপারভাইজর বা ইনচার্জের কাছে রিপোর্ট করে থাকে। যেহেতু কেয়ারগিভার সবচেয়ে বেশি সময় অসুস্থ ব্যক্তির সাথে অতিবাহত করেন, তাই কেয়ারগিভারই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো বুঝতে পারেন। রোগীর পরিবর্তন গুলো জানার পরে সেই সম্পর্কিত তথ্যাদি স্বাস্থ্য সেবা কাজে নিয়োজিত দলের অন্যান্য সদস্যদের কাছে যোগাযোগ করার জন্য মূলত দুইটি উপায়ে।
৩। অবজেকটিভ অবজার্ভেশন বা উদ্দেশ্যমূলক পর্যবেক্ষনঃ একজন ব্যক্তি যদি তার যেকোনো একটি সেন্সরি অরগান ব্যবহার করে কোনো তথ্য নিজে সরাসরি উদ্ঘাটন করে তখন তাকে উদ্দেশ্যমূলক পর্যবেক্ষণ বলে। যেমন: রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কম, বেশী নাকি স্বাভাবিক; অথবা চামড়া অতিরিক্ত শুকনো কিনা অথবা শরীরের রক্তচাপের পরিমাপ কত। এইসকল পর্যবেক্ষণ যদি কেয়ারগিভার নিজে নির্নয় করে থাকে, তখন তাকে উদ্দেশ্যমূলক বা অবজেক্টিভ অবসার্ভেশন সংঘটিত হয়।
৪। বিষয়গত পর্যবেক্ষণ বা সাবজেক্টিভ অবজার্ভেশনঃ যে সমস্ত তথ্য ও উপাত্ত নিজের সেন্সরি অরগানের সাহায্যে সরাসরি পরিমাপ করা যায়না বা কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্যে মাপা যায়না সেগুলো হল সাবজেক্টিভ অবসার্ভেশন। যেমন, একজন ব্যক্তি তার মাথা ব্যথা বা যন্ত্রনার কথা আপনাকে বলতে পারেন অথবা বলতে পারেন তার সারারাত অনিদ্রা থাকার বিষয়ে। যেহেতু এই তথ্যাদি মেপে দেখার কোনো সুযোগ নাই, রোগী বা ক্লায়েন্টের কথার উপরই নির্ভর করতে হয়, তাই এগুলো হলো সাবজেক্টিভ তথ্যাদি।
এ সমস্ত ক্ষেত্রে গৃহীত তথ্য ও উপাত্তের মধ্যে কোনো কোনো বষয়গুলো রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সেটি নির্দেশনা অনুযায়ী করতে হবে। তবে সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।
দৃশ্যকল্পঃ
মিসেস রহিমা ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত। আজ সকালে কেয়ারগিভার যখন তার সকালের কাজে কর্মে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন, তখন তিনি একটি ব্রাশ তুলে তার দিকে ছুঁড়ে মেরে চিৎকার করে বললেন, "বেরিয়ে যাও!" সাধারণত ঐ কেয়ারগিভারকে মিসেস রহিমা তার সেবাদানের ক্ষেত্রে সহযোগীতা করে থাকে।
এখন এক্ষেত্রে রোগীর আচরণের এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন কেয়ার সুপারভাইজার বা সংশ্লিষ্ট অন্য কারো কাছে জানানোর জন্য কেয়ারগিভারকে কার্যকর যোগাযোগের দক্ষতা প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন, ইতিবাচক ভাবে লিখিত বা মৌখিক রিপোর্টিং-এর ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, “আজ সকালে আমি যখন মিসেস রহিমাকে পোশাক পরিধানে সাহায্য করার চেষ্টা করছিলাম তখন তিনি তার চুল আচড়ানোর ব্রাশটি তুলে আমার দিকে ছুঁড়ে মারলেন এবং আমাকে বাইরে যেতে বললেন। তবে তিনি সাধারণত এই ধরনের আচরণ করেননা।“ আবার, কম কার্যকরীভাবে বলা যায় “মিসেস রহিমা আমাকে আজ সকালে চুল আচড়ানোর ব্রাশ দিয়ে আঘাত করেছেন বা করার চেষ্টা করেছেন।
৫। রেকর্ডিং বা ডকুমেনটেশন বা নথীকরনঃ এটি হ্যাল্থকেয়ার টীমের সাথে যোগাযোগ করার একটি প্রধানতম উপায়। রুটিন বা প্রাত্যহিক সেবা দানের কার্যাবলি থেকে শুরু করে বিশেষ কোনো ঘটনা বা অবস্থা সবই আসতে পারে এর ভিতর। এক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ফর্ম বা তথ্য লিপিবদ্ধকরণের নির্দিষ্ট নথি হতে পারে নিম্নরুপঃ
৬। মোবাইল ফোনে কথা বলাঃ
আধুনিক যুগে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ খুবই নৈমত্তিক একটি বিষয়। নানবিধ উপযোগীতার কারণে এটি এখন সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু, মোবাইল ফোনে কথা বলার কিছু নিয়ম-কানুন ও শিষ্ঠাচার রয়েছে। এগুলো রোগী বা ক্লায়েন্ট, তার পরিবার, সহকর্মী তথা যে কারো সাথে মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।
ক্লায়েন্টের অনুরোধে কার্যকরভাবে সাড়া দেওয়া বলতে যোগাযোগ ও কর্মদক্ষতার এমন একটি তৎপরতাকে বুঝানো হয় যেখানে রোগীর বিভিন্ন রকম তাতক্ষিক ও মানবিক চাহিদায় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির সেবা দিতে গিয়ে কেয়ারগিভারকে প্রায়শই অনেক ধরনের অনুরোধের কথা শুনতে হয়। এসব অনুরোধের সবগুলো আবার তৎক্ষণাৎ পালনযোগ্য নয়। কিছু আছে অপ্রতিকর বা অস্বস্তিকর।
এক্ষেত্রে কেয়ারগিভারকে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিচের সাধারণ বক্তব্যটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।
১। অনুরোধটি কি? বিভিন্ন ধরনের অনুরোধ সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিৎ। যেমন: কেউ অনুরোধ করতে পারে তার বাজার করে দেওয়ার জন্য, কিংবা খাবারটা রান্না করে দেওয়ার জন্য। আবার কেউ অনুরোধ করতে পারে তার পরিবারকে না জানিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে যাতে করে বয়স্ক ব্যক্তিটি নিজের পছন্দমত চিকিৎসা নিতে পারে। আবার কিছু কিছু অনুরোধ হতে পারে যেটা খুবই বিব্রতকর। এ ধরনের অসংখ্য অবস্থার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।
২। রাখা যাবে কিনা? অনুরোধটি শুনার পর নিরুপন করতে হবে সেটি রাখা যাবে কিনা? যদি পালন করার মত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সহায়তা প্রদান করা অবশ্য কর্তব্য। আর যদি কেয়ারগিভার নিশ্চিত না হয়, তাহলে অত্যন্ত মার্জিতভাবে সময় চেয়ে নিতে হবে যাতে করে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে ভালো কোনো দিক নির্দেশনা নিতে পারেন। পরে অবশ্যই ফলো আপ রাখতে হবে রোগীর সাথে। আর যদি কোনো বিব্রতকর অনুরোধ হয়, তাহলে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে ঐ সময়টাতে কার্যকর যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্নভাবে বজায় রাখার চেষ্ঠা করতে হবে। নিজের কোনো ঝুকির সম্ভাবনা থাকলে অবশ্যই তাতক্ষনিকভাবে কেয়ার সুপারভাইজারকে রিপোর্ট করতে হবে।
৩। উপযুক্ত জায়গার সুপারিশ করা: কোনো অনুরোধ রাখা না গেলে কার কাছে বা কোথায় গেলে সঠিক সেবা পাওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে সুপারিশ করা যেতে পারে। তবে নিশ্চিত হতে হবে যে প্ৰদায়িত তথ্য সঠিক।
কাউন্সেলিং শব্দটি এসেছে ইংরেজি Counsel থেকে যার আভিধানিক অর্থ হলো পরামর্শ দান করা। মূল শব্দটি ল্যাটিন Consilium থেকে এসেছে যার অর্থ পরামর্শ (Consultation) বা উপদেশ (Advice). কাউন্সেলিং স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাবহৃত একটি বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার সময় সেবাগ্রহণকারী ও সেবাদানকারী ব্যক্তিদ্বয় এমন একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সাক্ষাত করেন, কথা বলেন ও আলোচনা করেন যে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিটি নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্যের উপর আত্মবিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে সমস্যাটি সমধানের উপায় খুঁজে পান। কাউন্সেলিং পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন ও ভালো আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ দক্ষতার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। মূলত কাউন্সেলিং-এর সামগ্রিক সফলতাই নির্ভর করে এই দুটি বিষয়ের উপর। ব্যক্তি ও পরিবারের সাথে কাজ করার সময় কাউন্সেলিং-এর সুযোগ আমাদের প্রায়শই তৈরি হয়ে থাকে সেটা রোগীর বাসায় বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যেখানেই হউক না কেন। কাউন্সেলিং-কে একজন অসুস্থ বা রুগ্ন ব্যক্তির চিকিৎসা সেবা ও যত্ন প্রদানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং এটিকে কেয়ারপ্ল্যানের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যের উন্নতি নিশ্চিত করার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা এর ফলে একজন রুগ্ন বা অসুস্থ বা বয়স্ক ব্যক্তি নিজের প্রচেষ্টা দ্বারা অসুস্থতা এড়াতে এবং জীবনমান উন্নীত করতে কী করা প্রয়োজন তা বুঝতে সহায়তা পেয়ে থাকেন। মনোবিজ্ঞানীদের প্রদত্ত কাউন্সেলিং-এর সংজ্ঞা: J. F. Perez (১৯৬৫) কাউন্সেলিং সমন্ধে একটি জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদান করেন। তার মতে, “কাউন্সেলিং একটি মিথষ্ক্রিয়ামূলক প্রক্রিয়া যেখানে থাকেন একজন ক্লায়েন্ট যার সাহায্যের প্রয়োজন ও আরেকজন কাউন্সেলর যিনি সেই সাহায্য প্রদান করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও শিক্ষিত।” G. E. Smith (১৯৫৫) মনে করেন “কাউন্সেলিং এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কাউন্সেলর ক্লায়েন্টের পছন্দ, পরিকল্পনা ও উপযোজনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো বিশ্লেষনের মাধ্যমে প্রয়োজনমত সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করে।”
কাউন্সেলিং-এর মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তিকে তার অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায়টি খুঁজে বের করতে সাহায্য করা। কাউন্সিলিং হচ্ছে এমন একটি ধারণা যেখানে একটি পদ্ধতিগত ও পেশাগত পরিবেশে ব্যক্তিকে তার সমস্যা ও মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি নিরাপদ ও গোপনীয় পরিবেশে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন মতবাদ ও ব্যক্তিভেদে কাউন্সিলিং-এর লক্ষ্যে ভিন্নতা থাকলেও কাউন্সিলিং-এর প্রধান প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো হলো ( Krumboltz, 1966):
১. আচরণের পরিবর্তনে সহায়ক কাউন্সিলিং: ব্যক্তির সমস্যা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই আচরণগত অসামঞ্জস্যতার কারণে ব্যক্তি কর্মজীবনে ও সমাজে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। কাউন্সিলিং-এর লক্ষ্য হলো ব্যক্তিকে তার কাঙ্খিত আচরণ করতে সাহায্য করা।
২. খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা বৃদ্ধি: শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত মানুষ সমাজে বহুবিদ ঘটনা, সমস্যার সম্মুখীন এবং উত্তরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে। এই প্রক্রিয়ায় যখন কোনো ব্যক্তি সমস্যার উত্তরণের পথটি হারিয়ে ফেলে অথবা উত্তরণের পথটি সহজে গ্রহণ করতে পারে না তখনই সে সমস্যাগ্রস্থ হয়। এক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতাকে সমাজ বা পরিবেশের সাথে সর্বোচ্চ খাপ খাওয়ানোর জন্য সহায়তা করা হয়।
৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধি: ব্যক্তি জীবন প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতা স্বাভাবিক জীবনকে রুদ্ধ করে।কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে ব্যক্তিকে বা সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করা হয় এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সঠিক সিদ্ধান্তটি বেছে নিতে সেবা গ্রহীতাকে সাহায্য করা হয়।
৪. সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করা: মানুষের অনেক সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যক্তির সম্পর্ক তৈরি এবং বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়া। প্রতিটি মানুষ ভন্নি ভন্নি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ার কারণে সম্পর্ক তৈরি এবং বজায় রাখা অনেক সময় একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ সমাজ নিয়ে চলে বলে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি এবং বজায় রাখা স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এক্ষেত্রে কাউন্সিলিং সম্পর্কটি সঠিকভাবে অনুধাবন করে সম্পর্ক তৈরি এবং বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৫. ব্যক্তির স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা: প্রত্যেক ব্যক্তিই কোনো না কোনো সক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু ব্যক্তি পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে উক্ত ক্ষমতা, দক্ষতা, বা পারদর্শীতার বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকে না অথবা জানা থাকলেও যথাযথ প্রয়োগের সুযোগ ব্যবহার করতে পারে না। কাউন্সিলিং-এর লক্ষ্য হলো ব্যক্তির স্বকীয় ক্ষমতাকে চিহ্নিত ও বৃদ্ধি করতে সহায়তা করা।
কাউন্সিলিং একটি পেশাগত প্রক্রিয়া। দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা বিষয়ে যে সাধারণ উপদেশ, নির্দেশ বা পরামর্শ দিয়ে থাকি তা থেকে এটি সম্পূর্ণ ভন্নি । কাউন্সিলিং সেবায় গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতার আলোকে সেবা গ্রহীতাকে একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সহায়তা প্রদান করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সে জন্য কতকগুলো পেশাগত নীতি রয়েছে-
কাউন্সেলিং এপ্রোচ বা প্রসেস: কাউন্সেলিং এপ্রোচ বা প্রসেস বলতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাউন্সেলিং-এর ধারাবাহিক পদ্ধতিটিকে বুঝানো হয়। কাউন্সেলিং-এর দুটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া খুবই কার্যকরিঃ REDI ও GATHER. মূলত প্ৰজনন স্বাস্থ্য সেবায় এই এপ্রোচ দুটি ব্যাবহৃত হলেও আমাদের বয়স্ক সেবাদানের ক্ষেত্রেও মূল বৈশিষ্টটি একইরকম। প্রায় সকল ধরনের কাউন্সেলিং-এর ক্ষেত্রেই এই দুটি মৌলিক উপায় অবলম্বন করা হয়। নিচে REDI সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করা হল:
R: Rapport Building (সুসম্পর্ক স্থাপন): এটি হচ্ছে দুজন বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক তৈরির প্রক্রিয়া। যিনি কাউন্সেলিং করবেন তার সাথে কাউন্সেলিং প্রাপ্ত ব্যক্তির একটি বন্ধুসুলভ সুসম্পর্ক তৈরি হওয়া খুবই বাঞ্চনীয় এবং এটি কাউন্সেলিং এর পূর্বশর্ত। সমস্যাগ্রস্ত একজন ব্যক্তি তার সমস্যার কথা তখনই বলতে চাইবেন যখন তিনি আস্থা পাবেন যে তার সমস্যাটি নিয়ে কেউ ঠাট্টা-মশকরা করবেনা কিংবা হেও প্রতিপন্ন করবেনা। বরং তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবে, মনের কথাগুলো গোপন রাখবে ও সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করবে। এই সম্পর্কের ভিত্তি হলো শর্তহীন ইতিবাচক সম্মান, নিখুঁত সমানুভূতি ও অকৃত্রিমতা। সম্পর্কটি আগেভাগেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে কেননা এই সম্পর্কের মাধ্যমেই জানা যাবে ক্লায়েন্ট কাউন্সেলিং প্রক্রিয়াটিতে আদৌ যোগ দেবে কিনা এতে যুক্ত হলেও চালিয়ে যাবে কিনা। প্রাথমিক পর্যায়ের সাক্ষাৎকারগুলোর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য নিম্নরুপঃ
ক. ক্লায়েন্টের সঙ্গে সুসময় ও ইন্তিবাচক সম্পর্ক স্থাপন
খ. ক্লায়েন্টকে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া ও তাতে পারস্পরিক দায়-দায়িত্ব কী তা পরিষ্কার করে বোঝান
গ. কথোপকোথন যাতে নির্বিঘ্নে ঘটে তাতে ক্লায়েন্টকে সহায়তা করা।
ঘ. ক্লায়েন্ট বিশেষ কোনো চাদিহা সম্পন্ন হলে সেটি বিবেচনায় আনা।
E: Exploration (চাহিদা নিরুপন): সম্পর্ক স্থাপনের পর দ্বিতীয় স্তরে ক্লায়েন্টকে তার সমস্যাটি ঠিক কী তা গভীরভাবে চিন্তা করে কাউন্সিলরের নিকট উপস্থাপন অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। এই স্তরে ক্লায়েন্টের দ্বায়িত্ব অনেক বেশি। সমস্যার স্বরূপটি যতটা সহজ ও সুন্দরভাবে সে তুলে ধরতে পারবে কাউন্সেলরের পক্ষেও তাকে সাহায্য করা ততটা সহজ ও সুবিধাজনক হবে। অনুসন্ধানের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিতকরণে নিম্নলিখিত স্তরগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যঃ
ক) সমস্যার সংজ্ঞা প্রদানঃ ক্লায়েন্টের সাথে সহমর্মী ও সমমনস্ক হয়ে সমস্যাটি বস্তুনিষ্ঠভাবে এবংবিশেষায়িত করে বর্ণনা ও চিহ্নিত করা হয়। এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ক্লায়েন্ট ও কাউন্সিলর যেন সমস্যাটি বস্তুনিষ্ঠভাবে একই দৃষ্টিকোণ থেকে নিরীক্ষন করে।
খ) সমস্যাটির বিভিন্ন দিক খুঁটিয়ে দেখাঃ সমস্যাটি ভালোভাবে বুঝার জন্য যে সব তথ্য সংগ্রহ করা দরকার সেগুলো এই স্তরে সংগ্রহের উপায় ভাবা হয়। কে, কীভাবে ও কত সময়ের মধ্যে এই তথ্যসমূহ সংগ্ৰহ করতে পারবে ইত্যাদিরও চিন্তা ভাবনা করা হয় এই স্তরে।
গ) তথ্যের সমন্বয়সাধনঃ এই স্তরে গৃহীত সমস্ত তথ্য সুবিন্যস্ত করে সাজিয়ে ক্লায়েন্টের সমস্যার স্বরূপট উদঘাটিত করা হয়।
D: Decision making (স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ): ক্লায়েন্ট কেন কাউন্সেলিং-এর জন্য এলেন সে বিষয়ে যখন কাউন্সলর সমস্ত তথ্য সংগ্রহে সমর্থ হলেন এবং ক্লায়েন্টও সমস্যার রূপরেখা বুঝতে পেরে তা সমাধানে তৎপর হলেন, তখন কাউন্সিলর ও ক্লায়েন্টের যৌথ উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা তৈরি হবে। সমস্যা সমাধানের স্তরসমূহ নিম্নরুপঃ
ক) সম্ভাব্য সকল সমাধানসমূহ চিহ্নিতকরণ ও নথিভুক্তকরনঃ ক্লায়েন্ট ও কাউন্সিলর ব্রেইনউর্সিং-এর মাধ্যমে যতরকম সমাধান সূত্র বের করা যায় তার চেষ্টা করবেন। অবশ্য ক্লায়েন্টকে এ ব্যাপারে বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। সমস্যা সমাধানের সুত্রসমূহ নথিভুক্তকরণের সময় এমন কোনো সমাধানসূত্র বাদ দেওয়া চলবেনা যা প্রথনদৃষ্টিতে মনে হবে যেন তা বাস্তবে প্রয়োহ করা সম্ভব নয় ।
খ) এ স্তরে কাউন্সিলরের পরামর্শ অনুযায়ী ক্লায়েন্ট প্রতিটি সমাধানের পথ কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে তা খতিয়ে দেখবেন। এ সময় ক্লায়েন্টের কাছে কিছু কিছু পথ জটিল মনে হতে পারে আবার কিছু কিছু উপায় বাস্তবে প্রয়োগ করা একেবারেই অসম্ভব বলে মনে হবে। তারপরেও সবগুলো সম্ভাবনা খুব যত্নসহকারে যাচাই করে দেখতে হবে।
গ) ক্লায়েন্ট কাউন্সিলরের পরামর্শ অনুযায়ী এবার সমাধানের উপায় গুলোকে সহজতম থেকে কঠিনতম ক্রম পর্যায়ে সাজাবেন। এরপর সবচেয়ে সুবিধাজনক একটি সমাধানের পথ স্থির করা গেলে সেটি কতটা কার্যকরী হতে পারে সেটি পর্যালোচনা করে দেখবেন। সুবিধাজনক সমাধানের প্রয়োগ ও কাউন্সেলিং-এর সমাপ্তি ঘোষনা- উভয়ের দায়িত্ব খুবই পরিষ্কার। ক্লায়েন্টের দায়িত্ব হলো গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা এবং কাউন্সিলরের কাজ হলো কাউন্সেলিং এর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষনা করা। পরবর্তীতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ক্লায়েন্ট কাউন্সিলরের দ্বারও পুনরায় হতে পারেন।
I: Implementing the Decision ( স্বিদ্ধান্ত বাস্তবায়): কাউন্সেলিং-এর এই এপ্রোচের সর্বশেষ ধাপটি হচ্ছে গৃহীত সিদ্ধান্তের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই সেটি অনযায়ী কাজ করতে হবে, নিজেকে ট্র্যাকে রাখতে হবে এবং কতটা ভালো করেছেন তা নিয়মিত নির্ধারণ করতে হবে। এই স্তরগুলোকে আমরা অ্যাকশন, নিশ্চিতকরণ ও মুল্যায়ন বলি। স্বিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হলে ব্যক্তিকে কাউন্সিলরের সহযোগীতা আবার নিতে হবে। কাউন্সিলর তখন সম্পুর্ন পদ্ধতিটি আবার পরীক্ষা করে দেখে সঠিক পথ খুঁজে পেতে ব্যক্তিকে সহযোগীতা করবেন। কাউন্সেলিং-এর অপর আরেকটি এপ্রোচ হলো GATHER. কাউন্সেলিং-এর মূলনীতি এক্ষেত্রেও মুলত একই।
১। ফ্যামিলি বা পরিবার থেরাপি (Family Therapy) : পারিবারিক থেরাপি হল এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ (সাইকোথেরাপি) যা পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ উন্নত করতে এবং দ্বন্দ্ব সমাধান করতে সহায়তা করতে পারে।
২। হিউম্যানিষ্টিক বা মানবতামূলক (Humanistic Therapy): হিউম্যানিস্টিক থেরাপি একটি মানসিক স্বাস্থ্য পদ্ধতি যা সর্বাধিক পরিপূরক জীবন যাপনের জন্য ব্যক্তির প্রকৃত নিজ সত্ত্বার গুরুত্বকে জোর দেয়। ‘প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব একটা ধরন আছে পৃথিবীকে দেখার ও বুঝার’-এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে এই ধরনের থেরাপি পরিচালিত হয়।
৩। মাইন্ডফুলনেস (Mindfulness): মাইন্ডফুলনেস মানে হ'ল মৃদু, লালনশীল দৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, শারীরিক সংবেদন এবং পার্শ্ববর্তী পরিবেশের সচেতনতা প্রতিটি মূহুর্তে বজায় রাখা। যখন আমরা মননশীলতা অনুশীলন করি, আমাদের ধারণাগুলো তখন অতীতের পুনর্বিবেচনা বা ভবিষ্যতের কল্পনা করার পরিবর্তে বর্তমান মুহুর্তে আমরা কী নিয়ে সংবেদনশীল সেই বিষয়ে মনোনিবেশ করে।
৪। পারসন সেনটার্ড বা ব্যক্তি কেন্দ্রিক থেরাপি (Person Centered Therapy): এক্ষেত্রে কাউন্সেলিং-এর মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগিয়ে কাউন্সেলর এর দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তাভাবনাকে প্রধান্য না দিয়ে ব্যক্তি বা সেবাগ্রহীতা কিভাবে নিজেকে সচেতনভাবে উপলব্ধি করে সেই বিষয়ে গুরুত্ত্ব দেওয়া হয়। ব্যক্তি কেন্দ্রিক থেরাপি বা কাউন্সেলিং এমন একটি কৌশল যেখানে ব্যক্তিকে একজন এক্সপার্ট হিসেবে দেখা হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ইনফরমশন শিট ২ এ।
৫। প্রাইমাল বা প্রাথমিক/আদিম থেরাপি (Primal Therapy): সাইকোথেরাপির একটি ফর্ম যা রোগীর জীবনের শুরুর দিকের আবেগগত অভিজ্ঞতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং শৈশবকালীন দুর্ভোগের মৌখিক প্রকাশকে উত্সাহ দেয়। সাধারণত খালি চেয়ার ব্যবহার করে বা অন্য কোনোওভাবে যেই অভিভাবকরে প্রতি তার ক্রোধ বিদ্যমান আছে সেই অভিভাবককে কাল্পনিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করানোর মাধ্যমে এটি করা হয়।
কাউন্সেলিং-এর প্রাথমিক ধারণা নেয়ার পরে এখন আমাদেরকে এর কিছু ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে একজন কেয়ারগিভারকে অনেকের সাথে কাজ করতে হয়। কেয়ারগিভার সহকর্মী, ডাক্তার, নার্স, কেয়ার সুপারভাইজার বা ইনচার্জ- এই লিষ্টটি হতে পারে অনেক লম্বা। কেয়ারগিভারের প্রাথমিক জ্ঞান থাকলে প্রয়োজন ও সুযোগ পাওয়া গেলে কাউন্সেলিং করার প্রয়োজন হতে পারে যেকোনো সময়ে। মূলত কেয়ারগিভারের কাজের বা সেবা প্রদানের সামগ্রিক কাজের একটি অন্তর্নিহিত অংশ হচ্ছে কার্যকর যোগাযোগ, রোগীকে অনুপ্রেরনা যোগানো ও কাউন্সেলিং করা। বয়স্ক ব্যক্তিটি পরিবার বা নার্সিং হোম যেখানেই সেবা নিয়ে থাকুক না কেনো, এই কয়েকটি বিষয় প্রায় প্রতিনিয়তই করতে হয়। প্রাত্যহিক জীবনের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করা থেকে শুরু করে বড় ধরনের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা; যেকোনো প্রয়োজনে কাউন্সেলিং একটি অতি প্রয়োজনীয় লাইফ স্কিল। এই ইনফরমেশন শীটে ক্লায়েন্ট বা ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের কাউন্সেলিং-এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আমরা ইতোমধ্যেই জেনে গেছি যে ক্লায়েন্ট বলতে মূলত কি বুঝায়। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট কাউন্সেলিং বলতে আমাদের সেবাগ্রহীতা ব্যক্তিকে তার প্রাত্যহিক বা দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং সেবাকে বুঝিয়ে থাকে।
১। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাউন্সেলিং
ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাউন্সেলিং আমাদের ক্ষেত্রে মূলত বয়স্ক ব্যক্তিকে নিয়ে পরিচালিত হয় যেটা বস্তুত একধরনে টক বা কথা বলা থেরাপী। এই পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ গুনগত বিষয়ের উপর দন্ডায়মান আর সেটি হচ্ছে, নিঃশর্ত ইতিবাচক মনোভাব। কোনোভাবেই রোগীকে বিচার বা বিশ্লেষণ করা যাবে না অর্থাৎ, ব্যক্তিকে ঠিক তার মত করেই গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কেয়ারগিভারের একটি গুরুদায়িত্ব হচ্ছে রোগীর কাছে নিজেকে একটি পরিপূর্ণ আস্থা ও সহযোগীতার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা। রোগীর বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পারলে সেবা প্রদান করার কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। এর কয়েকটি প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরুপঃ
ব্যক্তি কেন্দ্রিক থেরাপি বা কাউন্সেলিং এমন একটি কৌশল যেখানে ব্যক্তিকে একজন এক্সপার্ট হিসেবে দেখা হয় ।
ব্যক্তি কেন্দ্রিক কাউন্সেলিং-এর মূল শর্ত তিনটিঃ
একজন ক্লায়েন্টের "পুরোপুরি কার্যক্ষম ব্যক্তি" হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা একজন থেরাপিস্টের কাজ। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এই ধারণাকে যে, একজন ব্যক্তি নিজের বাস্তবতা অর্জনে সর্বদা সচেষ্ট যেখান থেকে তাকে আত্ম সচেতনতার একটি জায়গায় পৌছানো সম্ভব। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাউন্সেলিং এর ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কৌশলগুলো খুবই কার্যকরীঃ
সমস্যা সমাধানের জন্য বয়স্ক ব্যক্তিটির তার পরিবারের সহায়তা জাগাটা খুবই স্বাভাবিক। কেয়ারপিতার একজন ব্যক্তি অথবা পুরো পরিবার, যেই সেটিংসেই কাজ করুক না কেনো, কাউন্সেলিং দক্ষতা খুবই কার্যকরী। ফ্যামিলি কাউন্সেলিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একজন কেয়ারগিভার একটি পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যদকে একজন ব্যক্তির নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
ফ্যামিলি কাউন্সেলিং-এর ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে মাথায় রাখতে হয়ঃ
ফ্যামিলি কাউন্সেলিং-এর প্রকারভেদঃ
ফ্যামিলি কাউন্সেলিংকে নিম্নোক্ত কয়েকটি প্রকারে আলোচনা করা যেতে পারেঃ
ক। সম্মিলিত ফ্যামিলি কাউন্সেলিং: এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের লক্ষে কেয়ারগিভার পরিবারের সকল সদস্যদেরকে নিয়ে একসাথে সেশন পরিচালনা করেন, যার মূল লক্ষ হচ্ছে বয়স্ক ব্যক্তির বিষয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উৎকণ্ঠা চিহ্নিত করা ও তা সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।
খ। কনকারেন্ট বা সমসাময়িক ফ্যামিলি কাউন্সেলিং: এক্ষেত্রে কেয়ারগিভারকে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যদের সাথে আলাদা আলাদা ভাবে বসতে হয়।
গ। সহযোগিতামূলক কাউন্সেলিং: এক্ষেত্রে পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন সদস্য ভিন্ন ভিন্ন কেয়ারগিভারের সাথে কথা বলেন ও কেয়ারগিভাররা পরবর্তীতে একসাথে আলোচনা করেন। এ পদ্ধতিটি ছোট বা মাঝারী আকারের পরিবারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ফ্যামিলি কাউন্সেলিং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
বয়স্ক ব্যক্তি ও তার পরিবারকে কাউন্সেলিংয়ের নিয়মঃ
নিচে একটি সিনারিও উল্লেখ করা হলো যেখানে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় রোগীকে এবং তার পরিবারকে উপদেশ এবং বল প্রয়োগ করার ফলে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর প্রতি আলোকপাত করা হয়েছেঃ
সকালের শিফটে হোম ভিজিটের সময় কেয়ারগিভার রাহেলা দেখলো যে, তার রোগী জনাব জলিল সাহেব রাতের ঔষুধ সেবন করেন নি এবং উনি মাঝে মাঝেই এমনটি করে থাকেন। যে কারণে রাহেলা একটু রুক্ষভাবে রোগীকে তার ছেলের বউয়ের সামনেই গজ গজ করে বলতে লাগলো, “আপনি রাতের ঔষুধ খান নি কেনো? বাসার লোকেরাও কি একটু খেয়াল করতে পারলোনা বিষয়টা?” ছেলের বউ ‘আসলে খেয়াল করিনি' এই কথা বলাতে রাহেলা বলেই ফেললো যে, “এই জন্যেই আপনাদেরকে বলেছি উনাকে আমাদের নার্সিং হোমে রাখতে। আমাদের ওখানে রাখলে এই সমস্যা আর হতোনা। প্রায়ই উনার রাতের ঔষধ খাওয়া হয়না”। রাহেলা এই ভাবে ব্যাখ্যা করাতে রোগীর ছেলের বউ একটু বিব্রত বোধ করলো। তিনি অনেকটা বিরক্ত হয়েই বললেন যে, “দেখুন উনাকে নার্সিং হোমে না দেওয়ার পিছনে আমাদের অনেক পারিবারিক কারণ আছে। আর আমরা চেষ্টা করি উনাকে বাসাতেই দেখভাল করতে”।
উপরের সিনারিও থেকে এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, আমাদের উল্লেখিত কেয়ারগিভার কাউন্সেলিং-এর কৌশলগুলো সম্পর্কে মূলত কিছুই জানেনা। যদি জানতো তাহলে সে অবশ্যই নিচের সহজ নিয়মগুলো অনুসরণ করতোঃ
কাউন্সেলিং-এর সময় যে সব বিষয় মনে রাখতে হবে (বিবেচ্য বিষয়)
অনুশীলনঃ
এখন যেহেতু কাউন্সেলিং-এর বেসিক বা মৌলিক নিয়ম বা উপায়গুলোকে সম্পর্কে তুমি জেনেছো, জলিল সাহেবের চিত্রটা আরেকবার কল্পনা কর এবং নিচের প্রশ্নগুলো আলোকপাত কর:
হোম ভিজিটে কাউন্সেলিং: কাউন্সেলিং স্বাস্থ্য সেবা দানের উপযোগী যে কোনো পরিবেশেই করা যায়। তবে হোম ভিসিটে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কেয়ারগিভারের জন্য এই ধরনের সেটিংসেই মূলত বিভিন্ন ধরনের কাউন্সেলিং এর সুযোগ তৈরি হয়। হোম কেয়ারে নিয়োজিত কেয়ারগিভাররা সাধারণত একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে সেবা দান করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট একটি বাসায় নির্দিষ্টভাবে নিয়মিত যাতায়ত করেন। কান্সেলিং এপ্রোচ এক্ষেত্রে পুরো হোম কেয়ার সার্ভিসটাকেই সাফল্যমন্ডিত করতে পারে কেননা এক্ষেত্রে এর ফলে নিম্নোক্ত সুযোগ বা উপকারিতাগুলো তৈরি হয়ঃ
হোম ভিসিটে নিয়োজিত কেয়ারগিভার হয়ে উঠতে পারে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্মাতিক এবং সমগ্র পারিবারিক তথ্যের আধার। যেখান থেকে স্বাস্থ্য সেবা টীমের অন্যান্য সদস্যারা অনেক কিছুই জানতে পারেন। এছাড়াও আমরা খুব প্রত্যক্ষভাবে বুঝতে পারি পারিবারিক পরিবেশ কিভাবে একজন বয়স্ক ব্যক্তির আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবারের কি ধরনের সুযোগ বা সামর্থ্য আছে? পরিবারে কারা কারা বসবাস করছেন? তারা কি ব্যক্তির সেবায় কোনোরূপ সহায়তা করছেন নাকি উল্টো সমস্যার কারণ হয়ে উঠছেন প্রভৃতি।
একজন বয়স্ক ব্যক্তি যখন নিজের বাড়িতে বসবাস করে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে থাকেন তখন তিনি সাধারণত অনেক বেশি ভালো ও নিরাপদ বোধ করেন। কেয়ারগিভার দেখতে পারবে যে ব্যক্তি তার নিজের বাড়িতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামনে কথা বলতে হাসপাতাল বা নার্সিং হোমে থাকাকালীন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। হাসপাতাল বা নার্সিং হোমে তারা পরিবেশগত নানাবিধ কারণে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতে পারেন অথবা তাদের গোপন কথা অন্যের কানে চলে যাওয়ার আশংকা বোধ করতে পারেন। মানুষটি তার নিজের বাড়িতে কথা বলতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন কেননা তিনি নিরাপদ বোধ করছেন। একজন বয়স্ক ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় অনেক বেশি ভয় পেয়ে থাকতে পারেন। তাই, সেবা প্রদান ও কাইন্সেলিং করার পূর্বে একজন কেয়ারগিভারের উচিৎ হবে অবশ্যই তার আস্থা অর্জন করা এবং তাকে সর্বাত্মনভাবে নিরাপদ বোধ করতে সহায়তা করা।
কিছু কিছু পদ্ধতি বা কাজের পূর্নাজ্ঞ প্রদর্শন হোম সেটিংসেই ভালোভাবে দেখানো সম্ভব। যেমন পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়। আপনি হাসপাতালে বা নার্সিং হোমে হয়তোবা ব্যালেন্সড ডায়েট হিসেবে রোগীকে কাপে করে নিয়মিত গরুর দুধ পান করার জন্য বলতে পারেন, কিন্তু সব পরিবেশে সেটি অর্জন বা সম্পাদন করা সম্ভবপর নাও হতে পারে। কিন্তু, নিজের বাসায় এধরনের প্রাত্যহিক কিংবা বিশেষ প্রয়োজন সহজেই সম্পাদন করা যায়।
একটি নমুনা কাউন্সেলিং সেশন বা অধিবেশনঃ এখানে কাউন্সেলিং সেবার প্রয়োজন এমন একটি সমস্যার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
“একজন কেয়ারগিভারকে তার নিয়োগকর্তা হোম কেয়ারের একজন ক্লায়েন্টের ছেলের সাথে কথা বলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। নিয়োগকর্তা কেয়ারগিভারকে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো সরবরাহ করেনঃ ছেলেটির বয়স ২৩ বছর এবং সে এই সালে তার ভার্সিটির শেষ বর্ষে। ছেলেটি যদিও মেধাবী ছাত্র, ইদানীং সেই প্রায়সই তার ভার্সিটিতে যায়না বা দেরি করে যায় এবং লেখাপড়ার অমনোযোগীতার কারণে তার কোর্স কো-অর্ডিনেটর তার মায়ের কাছে তার উদ্বিগ্নতার কথা জানান। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কাজে কেয়ারগিভারের সহায়তা নেয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ মা বিষয়টি জানতে পেরে খুবই দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং আশঙ্কা করলেন যে তার ছেলে হয়তোবা ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষায় পাস করবেনা। এমতাবস্থায় তিনি চাচ্ছেন তার ছেলেকে কাউন্সেলিং সেবার মাধ্যমে পুর্বের অবস্থায় নিয়ে যেতে কেয়ারগিভারের সহায়তা।“ এরপরে আলোচনায় দেখা যাবে যে এই পরিস্থিতিতে আমাদের কেয়ারগিভার ঠিক কি করতে পারেন।
নির্দেশনাঃ তিনি যা বলেন তার প্রতি মনোযোগ দাও। খেয়াল কর যে ছেলেটিকে নির্দ্বিধায় খোলা মনে কথা বলা শুরু করতে উৎসাহ দিতে গিয়ে আমাদের কেয়ারগিভার কি কি সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে। তিনি প্রথমেই ছেলেটিকে শুভেচ্ছা জানান এবং একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ছেলেটি যা বলে সেটি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। যতক্ষণ না এই কেয়ারগিভার ছেলেটির সমস্যার পিছনের পুরো কাহিনীটি শোনেন ততক্ষণ কোনোও পরামর্শ দেওয়া হয়নি। এছাড়াও কেয়ারগিভার ছেলেটিকে সমস্যাটি সম্পর্কে সাবধানতার সাথে চিন্তা করতে উত্সাহিত করে যাতে সে কারণটি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং নিজের জন্য কিছু সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আসতে পারে। মনে রাখবেন যে সমস্যা সমাধান বিকাশে অংশ নিলে ব্যক্তি তার সমস্যা সমাধানে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।
চাইলে ক্লাসের অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থীর সাথে এই কাউন্সেলিং সেশনটি একটি ছোট নাটক হিসাবে অনুশীলন করা যেতে পারে। সবাই একবারে আলোচনাটি পড়ে নিয়ে দু'জন স্বেচ্ছাসেবক খুঁজে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে একজন কেয়ারগিভারের অংশটি জোরে জোরে পড়বে, অন্যজন ছেলেটি কী বলবে তা জোরে জোরে পড়বে কাউন্সেলিং অনুশীলনের জন্য এটি একটি ভালো উপায় হতে পারে।
কেয়ারগিভার: | সুপ্রভাত। আমি আশা করি আপনার এবং আপনার মায়ের সবকিছু ভালো চলছে। |
ছেলেঃ | ধন্যবাদ। মায়ের কিছুটা কোমরের ব্যথা আছে, তা বাদে সবাই ভালো আছি। |
কেয়ারগিভার: | ভালো। আপনার মায়ের কোমরের ব্যথা আগের চেয়ে কমছে। নতুন শিডিওলে ফিজিওথেরাপীটা অনেক ভালো কাজ করছে। |
ছেলেঃ | জ্বি। আমারও তাই মনে হচ্ছে। ভালো। |
কেয়ারগিভার: | মনে হচ্ছে গ্র্যাজুয়েশনে এটি আপনার শেষ বছর। আপনার পড়াশোনা কেমন চলছে? |
ছেলেঃ | জ্বি। আমি সাধারণত ভার্সিটিতে ভালোই করছি, তবে আপনি জানেন তো শেষ বছরটি সবসময়ই কঠিন! |
কেয়ারগিভার: | ইদানীং আপনার শরীর-স্বাস্থ্য কেমন যাচ্ছে? |
ছেলেঃ | আসলে, আমি কিছুটা দুর্বল বোধ করছি এবং ইদানীং খুব মাথাব্যথা করছে। আমি ধারণা করছিলাম এটি সম্ভবত কোভিড১৯, তবে আমি নিশ্চিত নই। |
কেয়ারগিভার: | এ বছর তো করোনার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আপনি করোনার পরীক্ষা করিয়েছেন? |
ছেলেঃ | আসলে এখনো করা হয়নি। |
কেয়ারগিভার: | আপনার কি আর কোনো লক্ষণবা উপসর্গ আছে বলে অনুভব করছেন? |
ছেলেঃ | না, আসলে আর কোনো সমস্যা অনুভব করছিনা। |
কেয়ারগিভার: | ভালো। করোনা আসলে সাধারণ ফ্লুয়ের মতই যদি না বড় ধরনের কোনো উপসর্গ না থাকে। তবুও সতর্ক থাকা ভালো। আপনি কোনো ওষুধ খাচ্ছেন? |
ছেলেঃ | আমি এখন পর্যন্ত প্রায় তিনবার পেইনকিলার ট্যাবলেট নিয়েছি, তবে আমি কখনই পুরোপুরি ভালো হয়ে উঠছি বলে মনে হচ্ছেনা। |
কেয়ারগিভার: | এসব ক্ষেত্রে ওষধ প্রয়োজনীয়, তবে একমাত্র ওষুধই আমাদের সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে পারে না। আপনি ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করছেন তো? |
ছেলেঃ | মনে তো হচ্ছে করছি। |
কেয়ারগিভার: | দয়া করে বলুন, গত কয়েকদিন ধরে আপনি কী খাচ্ছেন? |
ছেলেঃ | আমার মা সবসময় আমাদের একটি ভালো প্রাতঃরাশ করতে বলেন, তাই আমি নিজের এবং ভাইদের জন্য রুটি ও সকালের নাস্তা তৈরি করি। তারপরেও আমি সবসময় ফলমূল কেনার চেষ্টা করি। |
কেয়ারগিভার: | আপনি বলছেন যে আপনি কিছুটা রান্না এবং শপিং করেন? |
ছেলেঃ | এই কাজগুলো করা খুবই দরকার। আপনি তো জানেন যে কয়েক বছর আগে আমার মা তার পিঠে আঘাত পায় যা এখন তাকে অনেক ঝামেলা দিচ্ছে। ডাক্তার বলছেন যে তিনি বয়স্ক হয়ে যাচ্ছেন এবং আরও অনেক কিছু এ অবস্থায় চাইলেও করা যায় না। তারা তার ব্যথা-উপশম করার জন্য চিকিৎসা দেয়, তবে চিকিত্সক আমাদের সকল ভাইদেরকে বলেছিলেন যে কোনোওভাবে মাকে সাহায্য করা ও ঘরের টুকিটাকি কাজ করা। যেহেতু আমি সবার বড়, বেশিরভাগ দায় আমার উপরই পড়ে। |
কেয়ারগিভার: | আপনি আর কি কি কাজ করছেন সংসারে? |
ছেলেঃ | আমি সন্ধ্যার খাবার প্রস্তুত করি। আমার ছোট ভাইকে ঘরদোর পরিষ্কার করার জন্য পেয়েছি, তবে সে এটি ভালোভাবে করতে পারছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হয় ও তাকে সহায়তা করতে হয়। |
কেয়ারগিভার: | এই সমস্ত কাজের ফাকে আপনি কখন, কিভাবে পড়া-লেখার জন্য সময় বের করেন? |
ছেলেঃ | এটি একটি সমস্যা। কাজকর্ম না হওয়া এবং ছোট ভাই দুটি রাতে ঘুমাতে না যাওয়া পর্যন্ত আমি সত্যিকার অর্থে ভালোভাবে সুযোগ করে উঠতে আসলে পারিনা। তারপরেও আমি যত ঘণ্টা সম্ভব পড়ি, বা টেবিলে ঘুমিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত পড়া শুনা করি । |
কেয়ারগিভার: | আপনি আসলে কোথায় পড়াশোনা করেন? |
ছেলেঃ | আপনি তো জানেন যে, আমাদের বাসায় থাকার জন্য কেবল দুটি ঘর রয়েছে। একটিতে মা থাকেন। অন্যটি খাওয়ার জন্য এবং বাচ্চাদের শোবার ঘর হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সেই কারণেই ছোটদের ঘুম না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার পড়াশোনায় মন দিতে পারি না। আমি এমনকি বাতিটি খুব বেশি উজ্জ্বল না করার চেষ্টা করি যাতে তারা জেগে না উঠে। |
কেয়ারগিভার: | আমি দেখতে পাচ্ছি যে জিনিসগুলো এখন আপনার পক্ষে সত্যিই কঠিন। আপনি যা বলেছেন তা থেকে এটা স্পষ্ট যে আপনি অনেক চাপের মধ্যে রয়েছেন। আমি বুঝতে পারছি যে আপনার পরিবারের জন্য অবশ্যই আপনার দাযিত্ব পালন করা উচিত। তবে আমার মনে হচ্ছে যে এই অতিরিক্ত কাজ এবং গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশুনা আপনার দুর্বলতা এবং মাথা ব্যথার অনুভূতিতে ভূমিকা রেখেছে। আপনার কি মনে হচ্ছে? |
ছেলেঃ | আমার ধারণা আমি এর আগে এটা নিয়ে কখনই ভাবিনি, তবে মনে হচ্ছে আপনার কথাই ঠিক। বোঝা যায়। তবে আমি চিন্তিত, যেমনটি আপনি বলেছিলেন। আমাকে আমার বাড়িতে কাজ করতে হবে। আমি কীভাবে এই সমস্যাটি মোকাবেলা করতে পারি? |
কেয়ারগিভার: | প্রথমত, আপনি আসলে কী অর্জন করতে চান? |
ছেলেঃ | আমি এই বছর আমার পরীক্ষায় পাস করতে চাই, তাই আমার সম্ভবত আরও বেশী পড়াশোনা করা প্রয়োজন। |
কেয়ারগিভার: | এবং আরও অধ্যয়ন করতে সক্ষম হতে আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে। |
ছেলেঃ | এটি সত্য, তাই আরও বিশ্রাম কীভাবে নিব সেটি আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। |
কেয়ারগিভার: | আপনি কখন অধ্যয়নের জন্য আরও সময় পেতে পারেন সে সম্পর্কে কি মনে করছেন? আপনি বলেছেন আপনি সন্ধ্যায় খাবার প্রস্তুত করেন এবং বাজার ঘাট করেন। আপনি ভার্সিটি ছাড়ার সময় এবং খাবার প্রস্তুত করার সময়টির মধ্যে কী করেন? |
ছেলেঃ | সাধারণত ভার্সিটির পরে আমি সন্ধ্যার খাবারের প্রয়োজন হতে পারে এমন কিছু কেনাকাটা করতে বাজারে যাই। সেখানে আমি একটু বন্ধুদের সাথে দেখা করি এবং আমরা কিছুক্ষণ কথা বলি এবং একটু আড্ডা দেই। তারপর যখন দেখি সূর্য ডুবে যাচ্ছে তখন আমি বাড়িতে যাই। |
কেয়ারগিভার: | আপনার শরীর ও মন ভালো রাখতে এগুলো দরকার। তবে আপনি কি মনে করেন যে সপ্তাহে দুদিন একটু ভালোভাবে পড়ার জন্য ভার্সিটিতে কিছুটা সময় ব্যয় করা সম্ভব? রাতের বেলা হালকা আলোতে পড়ার চেয়ে দিনের আলোতে পড়া আপনার চোখের জন্যেও ভালো। |
ছেলেঃ | এটা বোধগম্য। যদিও আমি সন্ধায় বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দিতে পছন্দ করি । |
কেয়ারগিভার: | আমি বলছি না যে আপনার বন্ধুদের সাথে আড্ডা বন্ধ করা উচিত, কারণ এটি আপনার জন্য ভালো। তবে আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী তা আপনাকে ভাবতে হবে। আপনি আপনার ভার্সিটির কাজ নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে না। আপনার নিজের পড়াশুনার জন্য কি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে তা আপনার নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন যেমন আপনি আপনার স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন। |
ছেলেঃ | আমি কখনই সেভাবে ভাবিনি, তবে আপনি ঠিক বলেছেন, আমি আমার পড়াশুনাকে গুরুত্ব দিই এবং যদি আমার স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তবে আমি ভার্সিটিতে ভালো করতে পারি না। আমি নিশ্চিত যে আমি আরও কিছু ঘণ্টা ভার্সিটির ক্লাসের পরে থাকতে পারি এবং আমাদের লাইব্রেরিতে পড়তে পারি। তখন কেউ আমাকে বিরক্ত করবে না, বরং শিক্ষকরা ও ক্লাসমেটরা আমাকে পড়াশুনায় সাহায্য করতে পারে। আমার যে কোনোও প্রশ্নে তারা আমাকে সহায়তা করতে পারে। আমার বন্ধুরা আমাকে কেবল এক ঘণ্টার জন্য খুব বেশী মিস করবে না, তাই আমি পরে তাদের সাথে যোগ দিতে পারি। আমি আশা করি লাইব্রেরিতে থাকতে চাইলে তারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবেনা। |
কেয়ারগিভার: | আপনার বন্ধুরা কী আপনার বাড়ির সমস্যাগুলো বোঝে? |
ছেলেঃ | অবশ্যই, তারা সবসময় আমার মায়ের খোজ-খবর নেয় এবং তিনি কেমন আছেন জানতে মাঝে মাঝে বাড়িতেও আসে। আমার ধারণা তারা আমার সাথে ঠাট্টা করবে না এবং বুঝবে। |
কেয়ারগিভার: | এখন সপ্তাহান্ত সম্পর্কে। আপনি কি পড়াশোনার জন্য সময় বের করতে পারবেন? |
ছেলেঃ | শনিবার সকালে সাধারণত কাজকর্ম নিয়ে বাইরে যাওয়া হয়। এবং তার উপর ঘরটি কখনও শান্ত থাকে না। ছোট বাচ্চারা সবসময় বাইরে চলে আসে এবং তারপরে সেখানে লোকজনও থাকে। |
কেয়ারগিভার: | পড়াশোনার জন্য বাড়িতে থাকতে হবে? |
ছেলেঃ | হয়তো আমি লাইব্রেরি খোলা পাবো, আর নাইলে আমি ভার্সিটির মাঠে যেতে পারি। এটি সর্বদা শান্ত থাকে। আমি কিছু স্ন্যাকস নিয়ে গাছের নীচে ছায়ায় বসে পড়তে পারি। |
কেয়ারগিভার: | এটি ভালো যে আপনি এই সমস্যার এতগুলো সমাধান সম্পর্কে ভাবতে সক্ষম হয়েছেন। আপনার মা ঠিকই বলেছেন। আপনি একটি উজ্জ্বল ছেলে। এখন আমি আপনার ছোট ভাইদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তাদের বয়স কত? |
ছেলেঃ | আমার পরের জনের বয়স তের, এবং তারপরে দুই জন ৭ বছর, তারা জমজ। |
কেয়ারগিভার: | যিনি তের বছর করছেন ভালো তিনিও কি স্কুলে - ? |
ছেলেঃ | সে খুব চেষ্টা করে। তার গ্রেডগুলো আমার মতো প্রায় ভালো হয়েছে। সে সম্ভবত আরও ভালো করতে পারে। |
কেয়ারগিভার: | যখন আপনার মায়ের পিঠে সমস্যা শুরু হয়েছিল তখন আপনার বয়স কত ছিল? |
ছেলেঃ | প্ৰায় চৌদ্দ। |
কেয়ারগিভার: | আর আপনাকে সেই বয়স থেকেই সমস্ত কাজ শুরু করতে হয়েছিলো? |
ছেলেঃ | জ্বি। |
কেয়ারগিভার: | আমি কেবল ভাবছিলাম যে আপনার ভাইটিও যদি আপনার মত মেধাবী ছেলে হয় এবং যেহেতু সে প্রায় চৌদ্দ বছর বয়সী, সম্ভবত সে বাড়ির আরও বেশী দাযিত্ব নেয়া শুরু করতে পারে। আপনি এ ব্যপারে কী ভাবছেন? |
ছেলেঃ | আমি সবসময় তাকে খুব অল্প বয়সী বলেই ভেবেছি। তবে, আমি যদি তার বয়সে কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারি আমি নিশ্চিত যে সেও সামলে নিতে পারবে। সম্ভবত আমরা রান্না এবং অন্যান্য কাজ ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আমার পক্ষে আরও বিশ্রাম এবং অধ্যয়নের জন্য আরও সময় পাওয়ার এটি অন্য উপায়। |
কেয়ারগিভার: | উল্লিখিত সমস্ত বিকল্প সমাধান মাথায় রেখে আমি নিশ্চিত যে আপনার পড়াশোনা নিয়ে আর কোনোও সমস্যা হবে না তবে আপনি বা আপনার পরিবারের কোনোও সদস্যের সমস্যা থাকলে দয়া করে আমার কাছে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। এখন, আপনি চলে যাওয়ার আগে দয়া করে আপনার সমস্যাগুলো সমাধান করতে আপনি যা করতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে আমাকে মনে করিয়ে দিন। এটি আমাদের নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে যে আমরা কোনোও কিছুই ভুলে যাইনি এবং আমরা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাতে আমরা সন্তুষ্ট। |
ছেলেঃ | প্রথমে আমার আরও বিশ্রাম নেওয়া এবং পড়াশোনার জন্য আরও ভালো সময় বের করা দরকার। আমি প্রায় এক ঘণ্টা ক্লাসের পরে থাকব যাতে আমি দিনের আলোতে পড়তে পারি। তারপর সপ্তাহান্তে আমি ভার্সিটির লাইব্রেরী বা মাঠে পড়তে যাব। বাড়িতে আমি আমার ছোট ভাইকে আমার সাথে রান্না করা এবং অন্যান্য কাজকর্ম করার জন্য সময় ভাগ করে নিবো। |
কেয়ারগিভার: | ধন্যবাদ। সেটা খুব ভালো। আপনার মাকে আমার শুভেচ্ছা দিবেন। |
ছেলেঃ | জ্বি অবশ্যই। আপনার সাহায্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বিদায়। |
মন্তব্য: এই উদাহরণে কেয়ারগিভার কখনই ধরে নেননি যে তিনি পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত ছেলেটির সমস্যা বুঝতে পেরেছেন। তিনি কখনই ছেলেটিকে পরামর্শ নিতে বাধ্য করেননি। তিনি ছেলেটিকে সর্বদা তার সমস্যা সম্পর্কে ভাবতে এবং নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে উত্সাহিত করেছিলেন। তিনি এমন সব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যা সমস্যাটির কারণ সম্পর্কে ছেলেটিকে সাবধানে এবং গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করতে সহায়তা করেছিল।
আরো কিছু কাউন্সেলিং সেশনের চর্চাঃ যে কোনোও দক্ষতার মতো, অনুশীলনের মাধ্যমে কাউন্সেলিং দক্ষতা ও আরো ভালো করা সম্ভব। একেবারে কাউন্সেলিং পেশাজীবীদের মত না হলেও মোটামুটি স্বাভাবিক কিছু ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং সেবা দেওয়ার জ্ঞান ও দক্ষতা কেয়ারগিভারদের থাকাটা জরুরি। ক্লাসের আরো একজন সহপাঠী সাথে নিম্নের কেইস সিনারিওটিকে নিয়ে একটি ভূমিকাভিনয় খেলুন। আপনারা একজন কাউন্সিলর হবেন। অন্যজন হবেন সিনারিওতে উল্লেখিত একজন বয়স্ক ব্যক্তি। বাকি সহপাঠিরা শ্রোতা হবে। তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে: তাদের ভূমিকাভিনয়টি সাবধানতার সাথে দেখা এবং শেষে তারা অংশগ্রহণকারীদের কাউন্সেলিং দক্ষতার উন্নতির বিষয়ে পরামর্শ দিবেন এবং পরবর্তীতে নিজেরাও ভূমিকাভিনয়ে অংশগ্রহণ করবেন।
কেইস সিনারিওঃ
সমস্যাঃ একটি নার্সিং হোমে চাকুরিরত একজন অভিজ্ঞ কেয়ারগিভারকে তার কেয়ার সুপারভাইজর ঐ নার্সিং হোমে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিতে আসা একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাথে কথা বলতে বলেছিলেন। কেয়ার সুপারভাইজার ঐ কেয়ারগিভারকে প্রবীন ব্যক্তিটি সম্পর্কে কিছু সাধারণ তথ্য শেয়ার করলো যেটা এরকমঃ ব্যক্তির বয়স ৭০ বছর এবং গত ৫ বছর ধরে উনি আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথায় ভুগছেন। এছাড়াও তিনি তীব্র কোমর ব্যথা ও মেরুদন্ডের ডিজেনারেটিভ ডিজর্ডারে ভুগছেন ডাক্তার উনাকে বছরখানেক আগে সপ্তাহে তিন দিন নিয়মিতভাবে ফিজিওথেরাপি নেয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। এর পর থেকে উনি প্রায় নিয়মিতই নার্সিং হোমের জেরিয়াটিক সাপোর্ট প্রোগ্রামের আউটডোরে ফিজিওথেরাপি সেবা নিয়ে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি উনি আগের মত আর নিয়মিত আসতে চাচ্ছেন না। উপরন্তু, ব্যক্তির বড় ছেলের কাছ থেকে আপনি জানতে পারলেন যে ফিজিওথেরাপি নিতে তিনি আর একদমই আসতে চাচ্ছেন না এবং উনাকে অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে শুনিয়ে মাসে মাত্র দুই-একবার আনা সম্ভব হয় ।
যে ব্যক্তি বয়স্ক ব্যক্তির ভূমিকা পালন করে তার জন্য পরামর্শঃ আপনাকে একজন সাধারণ বয়স্ক ব্যক্তির মতো আচরণ করা উচিত। কাউন্সিলর বয়স্ক ব্যক্তির পরিবার, জীবনযাপন এবং পেশা সম্পর্কে আগ্রহী হতে পারেন। নিজের সম্পর্কে একটি গল্প তৈরি কর, যাতে আপনি কাউন্সিলরকে বাস্তবসম্মত উত্তর দিতে পারেন। আপনি বয়স্ক অনেক ব্যক্তিকেই নার্সিং হোমে আসতে দেখেছেন। কখনও কখনও তারা চিন্তিত এবং নিরস হয় আবার নির্লিপ্তও হতে পারে। আপনার দেখা বয়স্ক ব্যক্তির মতোই আচরণ কর। এটি ভূমিকাটি আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলবে।
কাউন্সেলিংয়ে তাড়াহুড়া করা যাবেনাঃ অধিবেশনটি প্রথমে ধীরে ধীরে যাওয়া স্বাভাবিক। প্রচুর অনুশীলন এবং আসল সেশন করার পরে, তোমার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। সমস্যাগুলো আরও দ্রুত বুঝতে সক্ষম হবে এবং আরও সহজে শিক্ষাগত পদ্ধতি নির্বাচন করতে পারবে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, মনে রাখবে কাউন্সেলিং নিম্নলিখিত চারটি পদক্ষেপকে বোঝায়:
এবার, এরকম আরো কিছু কেইস সিনারিও নিয়ে নিজেরা একইভাবে চর্চা করতে পারো। আবার বাস্তব কর্ম পরিবেশে শিক্ষক বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সহায়তায় কাউন্সেলিং-এর সেশন পরিচালনা করা যেতে পারে।
আরও দেখুন...