দেহের সকল অস্থিসন্ধি অনন্য গড়ন ও সঞ্চালন ক্ষমতা নিয়ে মানবদেহকে সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা দান করে। য পায়ের লম্বা অস্থিগুলো বেশি ব্যবহৃত হয় বলে ক্ষতির ঝুঁকির মুখেও থাকে বেশি। আঘাতের লক্ষণের প্রকাশ ঘটে যায় আ ব্যথা প্রকাশের মাধ্যমে । অস্থিসন্ধি আঘাতপ্রাপ্ত হলে অস্থি, লিগামেন্ট ও অস্থিসন্ধির অন্যান্য টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১. স্থানচ্যুতি (Dislocation )
একটি অস্থিসন্ধিতে অবস্থিত দুটি অস্থির মধ্যে একটি সরে গেলে স্থানচ্যুতি ঘটে।হাড়ের স্থানচ্যুতির প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হচ্ছে সেই হাড়টি ব্যবহার করা অসম্ভব। আঙ্গুল স্থানচ্যুত হলে পুরো হাতই। প্রায় অকোজো হয়ে পড়ে। কাধ ও নিতম্ব স্থানচ্যুতি ঘটলে হাত ও পায়ের সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। স্থানচ্যুতি প্রচন্ড ব্যথা। ৪ বিভিন্ন মাত্রার কালশিরার সৃষ্টি করে। স্থানচ্যুতির কারণে হাড় অস্থিসন্ধি থেকে সরে যায় বলে জায়গাটি উঁচু হয়ে থাকে[বন্ধফলক : ভাঙ্গা হাড় যথাস্থানে বসানোর জন্য এর সঙ্গে যে কাঠের খন্ড বেঁধে দেওয়া হয়। পা বা নিতম্বে স্থানচ্যুতি হলে আহত ব্যক্তি হাঁটতে পারবে না। এ অবস্থা মোকাবিলায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাহায্য নিতে হবে। যদি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে, চামড়া ফেটে যদি হাড় বেরিয়ে আসে তাহলে তাৎক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে আহত ব্যক্তিকে তুলে দিতে হবে।
২. মচকানো (Sprains)
(অস্থিসন্ধিতে আঘাতের ফলে সন্ধিকে অবলম্বন দানকারী লিগামেন্টে সৃষ্টি হয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা টান কিংবা লিগামেন্ট ছিঁড়েও যেতে পারে। এমন অবস্থাকে সাধার জামে মচকানো নামে অভিহিত করা হয়। লিগামেন্ট হচ্ছে টিস্যু- নির্মিত স্কুল ব্যান্ড যা সন্ধিকে নির্দিষ্ট দিকে সঞ্চালনে অনুমতি দেয়। কিছু সন্ধি বিভিন্ন দিকে সঞ্চালিত হতে পারে। এ কারণে লিগামেন্টের একাধিক গুচ্ছ অস্থিসন্ধিকে সঠিক বিন্যাসে ধরে রাখে। যখনই অস্থিসন্ধির একটি লিগামেন্টে অতিরিক্ত টান পড়ে বা ছিঁড়ে যায় তখনই মচকানো ঘটে। বলা যেতে পারে, মচকানোর প্রাথমিক ধাপে লিগামেন্ট তন্তু সটান হয়ে পড়ে; দ্বিতীয় ধাপে লিগামেন্টের কোনো অংশে চির ধরে; এবং শেষ ধাপে লিগামেন্ট সম্পূর্ণ ছিড়ে যায়।
মচকানোর স্থান
মচকানোর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে গোড়ালিতে।হাঁটুর সামনের দিকে অবস্থিত লিগামেন্ট (anterior cruciate ligament, ACL) সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিকর মচকানো ঘটে।মচকানোর প্রথম লক্ষণ হচ্ছে ব্যথা।মচকানোর জায়গায় ব্যথা ও ফুলে উঠার সঙ্গে সঙ্গে জায়গা ঘিরে পেশি - নিচের আক্ষেপের সৃষ্টি হয়, ফলে পেশি শক্ত হয়ে যায়। ব্যথা, ফোলা ও পেশি-আক্ষেপ মিলে হাঁটা-চলাই দায় হয়ে পড়ে।
প্রাথমিক চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে মচকানোর ধরণ ও ব্যাপকতার উপর। চিকিৎসকের পরামর্শে নন-স্টেরয়ডাল (non- steroidal) ওষুধ খাওয়া যেতে পারে ব্যথা কমানোর জন্যে। ভারী কিছু বহন করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। তবে প্রথমেই যা করতে হবে তা হচ্ছে মচকানো গুরুতর হলে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিতে হবে। গুরুতর মচকানোর ক্ষেত্রে বিশ্রাম নিতেই হবে এবং চারটি কাজ গুরুত্ব সহকারে করতে হবে।
৪টি কাজের ইংরেজী শব্দের প্রথম অক্ষর দিয়ে (RICE নাম দিয়ে প্রচলিত আছে; বিশ্রাম (Rest) + বরফ (lce) + ক্ষত পরিষ্কার, (Compression) + উচ্চতায় রাখা (Elevation ) = RICE )
বিশ্রাম : মচকানো রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে। কোনো অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবে না। গোড়ালি মচকানো খুব সাবধানে হাঁটতে হবে।
বরফ : মচকানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা ও ফোলা সীমিত রাখতে আক্রান্ত স্থানে বরফ দিতে হবে। এক নাগারে দিনে ৩-৪ বার ১০-১৫ মিনিট করে বরফ লাগাতে হবে; এর বেশি সময় দিলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে।
ক্ষত পরিষ্কার : ক্ষত পরিষ্কার করে নতুন ব্যান্ডেজ এমনভাবে লাগিয়ে দিতে হবে যেন সন্ধিটি অবলম্বনে থাকে। এ কাজটি অভিজ্ঞ নার্স দিয়ে করানো ভাল।
অনড় ও উচ্চতায় রাখা : মচকানো সন্ধিটি দেহের বাকি অংশের চেয়ে সামান্য উঁচুতে তুলে রাখতে হবে। এতে ফোলা কমে যাবে।
আরও দেখুন...