SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

Academy

সুষম খাদ্য পরিবেশন করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিত ও লিখিত খাদ্য তালিকাকে কী বলে? 

Created: 9 months ago | Updated: 9 months ago

পাঠ ১-খাদ্য পরিকল্পনা- মেনু পরিকল্পনার নীতি


কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হয়। আকর্ষণীয়ভাবে সুষম খাবার পরিবেশন
করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিত ও লিখিত খাদ্য তালিকাকেই মেনু বলে। পরিবারের সদস্যদের সুষম আহার
পরিবেশনের জন্য মেনু পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত। পরিবারে দৈনিক তিন বেলার খাদ্য ছাড়াও শিশুর
পরিপূরক খাদ্য, রোগীর পথ্য, বিয়ে, জন্মদিন, অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি উপলক্ষেও যেন পরিকল্পনা করেই খাদ্য
পরিবেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- ছাত্রাবাস, হাসপাতাল, বিমান রন্ধনশালা,
হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনায় খাদ্য তালিকা বা মেনু পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। মেনু
পছন্দমতো হলে খাওয়ার আগ্রহ জন্মে। খাদ্যের সঠিক রং ও আকৃতি, ভালো রান্না, সুন্দর পরিবেশন ইত্যাদি
খাদ্য গ্রহণে আকৃষ্ট করে। মেনু পরিকল্পনার মাধ্যমেই পুষ্টি সম্বলিত আকর্ষণীয় খাবার পরিবেশন করা যায়।
সুপরিকল্পিত মেনু পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশনের কাজ সুষ্ঠু ও সহজ করে। মেনু
পরিকল্পনার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো দুইটি যথা- (১) খাদ্য গ্রহণকারীর চাহিদা এবং (২) রান্নার সুবিধা ।

মেনু পরিকল্পনার সময় বয়স, লিঙ্গ ভেদ,
উপজীবিকা, আবহাওয়া, মৌসুম, পরিবেশনের ধরন,
আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু খাবার, বাজেট, অভিজ্ঞ খাদ্য
প্রস্তুতকারক, কাজ বণ্টন, উদ্বৃত্ত খাদ্যের ব্যবহার,
তৈজসপত্র ও সরঞ্জাম রেসিপির ব্যবহার ইত্যাদি
বিভিন্ন বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

মেনু পরিকল্পনার পুরুত্ব-

-সুষম খাদ্য পরিবেশন।

-আকর্ষণীয় ভাবে খাবার পরিবেশন।

-খাওয়ার আগ্রহ জন্মানো।

-খাদ্য গ্রহণে একঘেয়েমি দূর করা।

-অল্প খরচে বেশি পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা
করা।

 

 

মেনু পরিকল্পনার নীতি-

সুষম আহারের জন্য মেনু পরিকল্পনার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে-

• ৫টি মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠী থেকে প্রতিদিনের খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।

কমপক্ষে তিনটি খাদ্য গোষ্ঠী থেকে প্রতি বেলার খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়াও প্রোটিন শ্রেণির খাদ্য
থেকে যাতে প্রাণিজ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য কমপক্ষে এক বেলার খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে তা
নিশ্চিত করতে হবে।

খাদ্যের স্বাদ, গন্ধ, বিভিন্ন রং, আকার ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।

ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি নিষেধ বিবেচনা করে মেনু পরিকল্পনা করতে হবে।

ব্যক্তিগত ও শারীরিক সমস্যা যেমন- শিশুদের ঝালযুক্ত খাবার না দেওয়া, বৃদ্ধ বয়সে নরম খাবার দেওয়া, ব্যক্তি
বিশেষে অ্যালার্জিযুক্ত খাবার পরিবহার করা ইত্যাদি মেনু পরিকল্পনার সময় অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
• রান্নার জন্য কতটা সময় ও শক্তি খরচ হবে তা মেনু পরিকল্পনার সময় দেখতে হবে। এমন খাদ্য তালিকা

করা ঠিক হবে না যাতে করে অনেক বেশি সময় ও শক্তি খরচ হয়।

• খাদ্যের বাহ্যিক উপস্থাপনা এমন হবে যাতে খাবার দেখে খাওয়ার আগ্রহ নষ্ট না হয়ে যায়। মেনু
পরিকল্পনার সময় খাদ্য পরিবেশনের ধরন কী হবে তা বিবেচনা করে মেনু পরিকল্পনা করলে খাদ্যের
বাহ্যিক উপস্থাপনা আকর্ষণীয় হয়।

-খাদ্য খাতে খরচের বিষয় বিবেচনা করে মেনু পরিকল্পনা করতে হবে। খাদ্য খাতে খরচের ২৫% মাছ,
মাংস, ডিম ও ডাল কেনার জন্য, ২০% দুধ, ২০% ফল ও সবজি, ২০% চাল, আটা ও বিস্কুট এবং
১৫% তেল ও চিনি কেনার জন্য ব্যয় করলে সুষম আহারের মেনু পরিকল্পনা করা সহজ হবে।

-খাবার যাতে একঘেয়ে না হয়ে যায় সেজন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের সমাহার ঘটাতে হবে এবং একটা
খাবারের পরিবর্তে অন্য আর একটা খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

পাঠ ২- ১০০০ দিনের পুষ্টি (মাতৃগর্ভে অবস্থানকাল থেকে ২ বছর)


একটা শিশুর ১০০০ দিনের পুষ্টি বলতে মায়ের গর্ভে অবস্থানকালে পুষ্টি ও জন্মের পরবর্তী দুই বছরের
পুষ্টিকে বোঝায়। অর্থাৎ এই সময়কালের পুষ্টি চাহিদাকে প্রধানত ২টি পর্বের সমষ্টি রূপে প্রকাশ করা যায়-

১০০০ দিনের পুষ্টি - জন্ম পূর্ববর্তী সময়ের পুষ্টি (মাতৃগর্তে ২৭০ দিন) + জন্য পরবর্তী ২ বছর বয়সের পুষ্টি
(१৩০ দিন )

একটা শিশুর জীবনের সুস্থ ভবিষ্যতের ভিত রচনার অন্যতম সময় হচ্ছে এই ১০০০ দিন। ১০০০ দিন
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে এই সময়ের পুষ্টি চাহিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের সঠিক পুষ্টি
শিশুর যথাযথ শারীরিক বর্ধন, মেধা বিকাশ এবং ভবিষ্যতের জন্য মেধাবী ও দক্ষ জাতি গঠনের হাতিয়ার।
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শিশুর বর্ধন ও বিকাশ ব্যাহত হয়। এই সকল শিশু জন্মের পরও সহজেই
অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়। ফলে শারীরিক বর্ধনের পাশাপাশি মানসিক বিকাশও ব্যাহত হয় এবং এদের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত হয়। তাই শিশুর স্বাভাবিক ও সুস্থ বিকাশের জন্য ১০০০ দিনের পুষ্টি অত্যন্ত

জন্ম পূর্ববর্তী সময়ের পুষ্টি - ১০০০ দিনের মধ্যে প্রথম প্রায় ২৭০ দিন একটি শিশু মায়ের গর্ভে অবস্থান
করে। এই সময় শিশু তার সার্বিক বর্ধনের জন্য মায়ের পুষ্টির উপর সম্পূর্ণ রূপে নির্ভরশীল থাকে। মায়ের
শারীরিক অবস্থা শিশুর পুষ্টিগত অবস্থাকে সরাসরি প্রভাবিত করে থাকে। শিশু মায়ের গর্ভে অবস্থান কালে
মা খাদ্য গ্রহণের ফলে যে পুষ্টি অর্জন করেন সেই পুষ্টি শিশুর দেহে স্থানান্তরিত হয়। তাই গর্ভবতী মায়ের
যথাযথ পুষ্টি সাধনের ফলে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত হয়। যেহেতুে শিশু মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি লাভ করে তাই
গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টি চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই সময় মায়ের বর্ধিত পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণই
শিশুর পুষ্টি সরবরাহকে নিশ্চিত করতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শক্তি চাহিদা বাড়ে সেই সাথে অন্যান্য পুষ্টি
উপাদানের চাহিদাও বেড়ে যায় এবং এই সময় গর্ভবর্তী মাকে সব ধরনের খাবার একটু বেশি করে খেতে

২৭০ দিনের (গর্ভাবস্থায়) বর্ধিত পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য গর্ভবর্তী
মাকে

• প্রতিদিন তিন বেলা খাবারের সাথে নিয়মিত এক মুঠ করে বেশি
খাবার খেতে দিতে হবে।

• ডিম, মাছ, মাংস, কলিজা, শাকসবজি, ঘন ডাল, হলুদ বর্ণের
সবজি ও ফল এবং তেলেভাজা খাবার অথবা তেল একটু বেশি
দিতে হবে।

৩ বেলা খাবারের পাশাপাশি আরও ২-৩ বার পুষ্টিকর নাশতা
দিতে হবে।

মায়ের গর্ভে শিশু মায়ের
কাছ থেকে পুষ্টি পায়

খাবারের সাথে একটা করে ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, লৌহ
ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হয়।

জন্ম পরবর্তী ২ বছর বয়সের সৃষ্টি জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ পান করাতে
-
হবে। দুধ ছাড়া কোনো ধরনের খাবার এমনকি পানিও দেওয়া যাবে না। ৬ মাস পর পুষ্টি চাহিদা আগের চেয়ে
বেড়ে যাওয়ায় শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধে শিশুর চাহিদা মেটে না তাই ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি
ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে। জীবনের এই সময় অভি দ্রুত দেহের বৃদ্ধি ঘটে,
মস্তিষ্কের বর্ধন'ও এই বয়সেই সম্পন্ন হয় তাই এই সময় পুষ্টির চাহিদার প্রতি অবশ্যই যত্নবান হতে হবে।

সময়

জন্মের পর প্রথম
১৮০ দিন (জন্ম
থেকে ৬ মাস)

শিশুর জন্য ৭৩০ দিনের খাদ্যের ধরন

শিশুর জন্মের সাথে সাথে এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের
বুকের দুধ দিতে হবে।

মায়ের বুকের দুধ ছাড়া শিশুকে মধু, চিনির পানি, পানি,
তেল বা অন্য কোনো টিনের দুধ দেওয়া যাবে না।

২-৩ ঘণ্টা পর পর দৈনিক ৮-১২ বার মায়ের বুকের দুধ
দিতে হবে।

মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবার
চটকিয়ে নরম করে ২৫০ মি. লি. বাটির আধ বাটি
করে দিনে ২-৩ বার দিতে হবে।

প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা মুরগির কলিজা বা মাংস,
ডাল, শাক, হলুদ সবজি ও ফল, তেল দিয়ে রান্না করা
খাবার এবং গরুর দুধ নিয়ে তৈরি খাবার দিতে হবে।

২০১৮

১৮১ ২৪০ দিন
(৭-৮ মাস)

খাদ্য পরিকল্পনা

११.

২৪১-৩৩০ দিন
(১-১১ মাস )

৩৩১-৭৩০ দিন
(১২-২৪ মাস)

মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবার ২৫০
মি. লি. বাটির আধ বাটি করে দিনে ৩-৪ বার দিতে
হবে এবং ১-২ বার ফলের রস দিতে হবে।

প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা মুরগির কলিজা বা মাংস,
ডাল, শাক, হলুদ সবজি ও ফল, তেল দিয়ে রান্না করা
খাবার, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার ও অন্যান্য পুষ্টিকর
খাবার দিতে হবে।

মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা
মুরগির কলিজা বা মাংস, ঘন ডাল, শাক, হলুদ সবজি
ও ফল, তেল দিয়ে রান্না করা খাবার, দুধ দিয়ে তৈরি
খাবার ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।

মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ২৫০ মি. লি. বাটির
এক বাটি করে দিনে ৩ বাটি খাবার ৩-৪ বার দিতে
হবে। এই সময় শিশুকে নিজে নিজে খেতে উৎসাহ
দিতে হবে।

কাজ - দেড় বছরের শিশুর বিভিন্ন ধরনের খাদ্য এবং পরিমাণ কেমন হবে দেখাও।

পাঠ ৩-৪ থেকে ৬ বছর বয়সের শিশুর খাবার

৪-৬ বছর বয়সের শিশুদের প্রাক বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়। এই বয়সে শারীরিক বর্ধন দ্রুত হলেও শৈশব
কালের চাইতে কিছুটা মন্থর গতিতে ঘটে। এই বয়সের শিশুরা স্কুলে যাওয়া শুরু করে এবং খেলাধুলা করে
তাই এসময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন ঘটে বলে শক্তির খরচ বেশি হয়। প্রাক বিদ্যালয়গামী শিশুদের
পেশির গঠন, দাঁত, হাড়, রক্ত গঠন ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বড়দের তুলনায় বেশি হয়।

প্রাক বিদ্যালয়গামী (৪-৬ বছর বয়সের) শিশুদের পুষ্টির গুরুত্ব -
-

বয়স অনুযায়ী এই বয়সী শিশুর স্বাভাবিক বর্ধন বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালরি ও প্রোটিন
জাতীয় খাদ্য গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।

শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ও খেলাধুলার জন্য যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন হয়। এই জন্য
কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও ধাতব লবণ সমৃদ্ধ খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকা পালন করে।

• শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গুরুত্বপূর্ণ।

লোহা ও ফলিক এসিড রক্ত গঠনের জন্য প্রয়োজন হয়।

ত্বকের ও চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন- এ, বি ও সি সমৃদ্ধ খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অতএব আমরা দেখতে পাই যে, ৪-৬ বছর বয়সের শিশুদের স্বাভাবিক ওজন, উচ্চতা, সুস্থতা, পড়ালেখা ও
খেলাধুলার ক্ষমতা এবং দক্ষতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন শিশুর খাদ্যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানেরই পর্যাপ্ত
উপস্থিতি অত্যাবশ্যক। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পেতে হলে মৌলিক
খাদ্য গোষ্ঠির প্রতিটি গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রতিদিনই নির্ধারিত পরিমাণে শিশুকে গ্রহণ করতে হবে।
এ বয়সের শিশুদের খাদ্য তালিকা তৈরির সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন-

(ক) শিশুদেরকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন বেলা প্রধান খাবার ও দুই বার পুষ্টিকর নাশতা দিতে হবে। এই
পুষ্টিকর নাশতা শিশুর স্কুলে থাকাকালীন একবার এবং বাসায় থাকাকালীন একবার দিতে হবে।
তাহলে পুষ্টির অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

(খ) প্রতি বেলার প্রধান খাবারে অর্থাৎ সকাল, দুপুর ও রাতের বেলায় মৌলিক গোষ্ঠির বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন
ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যেমন- উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ উভয় উৎস থেকেই প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।
(গ) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি ও টক জাতীয় ফল এবং মৌসুমী ফল
অবশ্যই থাকতে হবে।

(ঘ) প্রতি বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরি সমৃদ্ধ ও তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

(ঙ) অতিরিক্ত তেলে ভাজা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। যারা পরিশ্রমের কাজ করে না
বা খেলাধুলা করে না তারা এই ধরনের ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ অবশ্যই পরিহার করবে। তা না হলে
শিশুকালেই শরীরের ওজন বেড়ে যাবে অর্থাৎ ওজনাধিক্যে আক্রান্ত হবে।

 

পাঠ ৪- ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুর খাবার

১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদের বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়। এই বয়সে শারীরিক বর্ধন দ্রুত হয়, ছেলেদের
চেয়ে মেয়েরা এই বয়সে দ্রুত লম্বা হয়। এই বয়সে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্ষেত্রে পুষ্টির চাহিদা বেশি
হয়। বর্ধনের গতি বৃদ্ধির কারণে শক্তির চাহিদা বাড়ে। এছাড়াও প্রোটিন, ভিটামিন ও ধাতব লবণের চাহিদাও
বাড়ে। এই বয়সের শিশুরা খেলাধুলা করে তাই তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্কোর সঞ্চালন ঘটে বলে বেশি
শক্তির খরচ হয়। বিদ্যালয়গামী শিশুদের পেশি, দাঁত, হাড়, রক্ত ইত্যাদির গঠনের জন্য বিভিন্ন পুষ্টি
উপাদানের চাহিদা বেশি হয়।

বিদ্যালয়গামী (১১-১৫ বছর বয়সের) শিশুদের পুষ্টির গুরুত্ব -

১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদের দ্রুত বর্ধন বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য
গুৰুত্বপূৰ্ণ।

বিদ্যালয়গামী শিশুদের শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা, পড়ালেখা এবং বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায়
অংশগ্রহণের জন্য যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শক্তি মেটানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট

জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন হয়।

ভিটামিন ও ধাতব লবণ সমৃদ্ধ খাদ্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিদ্যালয়গামী শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গুরুত্বপূর্ণ।

ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের লৌহ ও ফলিক এসিড বেশি প্রয়োজন হয় কারণ মেয়েদের মাসিকের
জন্য প্রতিমাসে যে রক্তের অপচয় ঘটে তা পরিপূরণের জন্য অর্থাৎ রক্ত গঠনের জন্য প্রয়োজন হয়।
ত্বকের ও চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন- এ, বি ও সি সমৃদ্ধ খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অতএব আমরা দেখতে পাই যে, ১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদের স্বাভাবিক ওজন, উচ্চতা, সুস্থতা, পড়ালেখা,
খেলাধুলার ক্ষমতা ও দক্ষতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন খাদ্যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানেরই পর্যাপ্ত উপস্থিতি
অত্যাবশ্যক। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পেতে হলে মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠির
প্রতিটি গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রতিদিনই নির্বাচন করতে হবে। এই বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা
তৈরির সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন-

(ক) ১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদেরকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন বেলা প্রধান খাবার ও দুই বার হালকা নাশতা
দিতে হবে। এই বয়সে শিশুরা বেশ দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকে। স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি তারা
খেলাধুলাও করে থাকে, ফলে প্রচুর শক্তির খরচ হয়। তাই স্কুলে থাকাকালীন একবার এবং বাসায়
আরও একবার পুষ্টিকর নাশতা দিতে হবে। তাহলে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার
সম্ভাবনা কমে যাবে।

(খ) প্রতি বেলার প্রধান খাবারে অর্থাৎ সকাল, দুপুর ও রাতের বেলায় মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠির বিভিন্ন শ্রেণির

বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

(গ) প্রতিদিনই উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ উভয় উৎস থেকেই প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। দিনে অন্তত একবার প্রাণিজ
প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

(ঘ) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ও রঙিন যেমন- হলুদ, সবুজ, লাল, বেগুনি ইত্যাদি।
বর্ণের টাটকা শাকসবজি ও তাজা টক জাতীয় ফল অবশ্যই থাকতে হবে।

(ঙ) পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল জাতীয় খাদ্য প্রতি বেলায় গ্রহণ করতে হবে।

(চ) মিষ্টি জাতীয় খাবার ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। যারা পরিশ্রমের কাজ
কম করে বা একেবারেই করে না বা খেলাধুলা করে না তারা এই খাদ্যগুলো গ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরক্ত
থাকবে। তা না হলে শরীরের ওজন বেশি বেড়ে যাবে অর্থাৎ ওজনাধিক্যে আক্রান্ত হবে এবং নানা ধরনের
জটিল রোগের সূচনা হবে।

পাঠ ৫ –ওজনাধিক্য শিশুর খাদ্য পরিকল্পনা

একবিংশ শতাব্দিতে শিশুদের ওজনাধিক্য একটা মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এই
সমস্যাটি বর্তমানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতেও দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের
শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা বাড়ছে।

ওজনাধিক্য কাকে বলে

এক কথায় ওজনাধিক্য হচ্ছে শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া। অর্থাৎ বলা যায় যে, কারও
শরীরের ওজন যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, তখন সেই অবস্থাকে ওজনাধিক্য বলে। প্রত্যেক বয়সের
জন্য স্বাভাবিক ওজনের নিম্ন সীমা ও উচ্চ সীমা আছে। দেহের ভজন যখন সেই বয়সের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ
সীমা অতিক্রম করে যায় তখনই ওজনাধিক্য দেখা দেয়।

ওজনাধিক্যের কারণ-

দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি
খাওয়া। আমরা প্রতিদিন যদি ক্যালরি বহুল খাদ্য দেহের প্রয়োজনের চেয়ে
বেশি গ্রহণ করি এবং পরিশ্রম কম করি ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করি তা
হলে এই অতিরিক্ত ক্যালরি আমাদের দেহে ফ্যাট আকারে জমা হবে এবং
ধীরে ধীরে দেহের ওজন বৃদ্ধি পাবে। এই ভাবে দেহের ওজন বৃদ্ধি
পাওয়ার ফলে ওজনাধিক্য দেখা দেবে।

প্রতিদিন প্রয়োজনের

দেহের

ওজন বৃদ্ধি

অসংক্রামক
রোগে আক্রান্ত
হওয়ার প্রবণতা

জীবনের
কি বুদ্ধি

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি
খাওয়ার ফলে ওজনাধিক্য

তুলনায়
বেশি ক্যালরিযুক্ত খাদ্য

গ্রহণ এবং কম পরিশ্রম করা

শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই সুস্থ থাকা যাবে না। সুস্থ থাকতে হলে সুষম খাদ্য গ্রহণ যেমন প্রয়োজন তেমনি
প্রয়োজন নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, খেলাধুলা ও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন।

ওজনাধিক্যের কুফল -
-

শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে
যায়। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, পিত্তথলির পাথর, রক্তে চর্বির আধিক্য, ক্যান্সার
ইত্যাদি। এছাড়া জীবনের আয়ু কমে আসে। এই কারণে শরীরের ওজন কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া ঠিক
নয়। শিশুকালে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া শরীরের জন্য একেবারেই ভালো লক্ষণ নয় কারণ এর ফলে অল্প বয়সেই
বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।

ওজনাধিক্য শিশুর খাদ্য ব্যবস্থা-
শরীরের ওজন বেশি হলে অবশ্যই খাদ্য সংক্রান্ত নিম্নলিখিত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।

শস্য ও শস্য জাতীয় খাদ্য যেমন- ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি নির্ধারিত পরিমাণে খেতে হবে। এই
খাবারগুলো বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাবে। মনে রাখতে হবে ভাত রুটির পরিবর্তে সমপরিমাণ পোলাও,

খিচুরি, পরটা ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। কারণ এই খাবারগুলোতে তেল বা ঘি থাকায় ভাত ও রুটির চেয়ে
প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই গোলাও, খিচুরি, পরটা ইত্যাদি খেতে হলে ভাত ও রুটির
অর্ধেক পরিমাণে গ্রহণ করছি বহনীয়।

নাধিকা শিশুরা কম চো

• প্রতিবেলার খাদ্য তালিকাতে যথেষ্ট পরিমাণ শাকসবজি, মৌসুমী ফল ও টক ফল থাকতে হবে। এই
খাবারগুলো বেশি খাওয়া যাবে।

• প্রতিদিন প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য ভাল, बानাম, মাছ, মাংস ও ডিম পরিমিত

পরিমাণে পাওয়া যাবে।

শিশুদের খাদ্য তালিকায় দুখ থাকা প্রয়োজন। তাই চিনি বা গুড় ছাড়া দুধ গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে
এবং সুখের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।

• নাশতা হিসাবে সব সময় কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য যেমন- শাকসবজি ও ফল বাছাই করতে হবে। যে
সকল খাদ্যে ক্যালরি বেশি থাকে সেই খাদ্য গ্রহণে শরীরের ওখান আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তাই ক্যালরি
বহুল খাদ্য যেমন- তেলে ভাজা ভুনা খান, বি, মাখন, চিনি ও গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি জাতীয় খানা,
বেকারির তৈরি খাদ্য, কেক, পেস্ট্রি, বিস্কুট, সব ধরনের সফট ড্রিংকস, চকলেট, ক্যান্ডি, আইসক্রিম,
ইত্যাদি বাদ দিতে হবে।

ওজন কমানোর জন্য শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম ও অন্যান্য খাবার রান্নার সময় অবশ্যই কম তেল দিয়ে
রান্না করে খেতে হবে। তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। অর্থাৎ রান্নার সময় খুব কম তেল দিয়ে রান্না করতে
হবে। ডুবো ফেলে ভাজা সব ধরনের খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

• ক্ষুধা লাগলে বিভিন্ন ভাজা, প্যাকেটজাত ও বেকারির খাবারের পরিবর্তে মৌসুমী ফল খাওয়ার অভ্যাস

করতে হবে।

• সফট ড্রিংকস বোতলজাত কেনা জুসের পরিবর্তে ডাবের পানি ও রসালো ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে
হবে। এতে করে যেমন- অর্থের সাশ্রয় হবে তেমনি বেশি পুষ্টি পাওয়া যাবে এবং শরীরের ওজন কমাতে
সাহায্য করবে।

মনে রাখতে হবে শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর জন্য অবশ্যই নিয়মিত প্রতিদিন ব্যায়াম বা পরিশ্রম
করতে হবে। পরিমিত আহারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম বা পরিশ্রম, নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন ও
পর্যাপ্ত ঘুম এবং সর্বোপরি সার্বিক সচেতনতা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

 

পাঠ ৬ – স্বপ্ন ওজনের শিশুর খাদ্য পরিকল্পনা

শিশুদের শরীরের ওজন বেশি থাকা যেমন সমস্যা তেমনি ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকাও সমস্যা। কারণ
এর ফলেও নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাটি বর্তমানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতেও দেখা
যায়। আমাদের দেশে সাধারণত নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয় ।

সপ্ন ওজন কাকে বলে ?

এক কথায় স্বপ্ন ওজন হচ্ছে শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়া। অর্থাৎ বলা যায় যে, কারও শরীরের
ওজন যখন সাভাবিক ওজনের চেয়ে কম হবে, তখন সেই অবস্থাকে স্বল্প ওজন বলা হবে। নির্দিষ্ট বয়সের
জন্য সাভাবিক ওজনের নিম্ন সীমার চাইতে যখন শিশুর ওজন কম হয় তখন তাকে স্বপ্ন গুঞ্জন বলা হয়।

স্বপ্ন ওজনের কারণ -

দেহের ওজন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো প্রয়োজনের চেয়ে কম খাওয়া ও পরিশ্রম বেশি করা। আমরা
প্রতিদিন যদি দেহের প্রয়োজনের চেয়ে কম খাদ্য গ্রহণ করি, পরিশ্রম বেশি করি এবং অনিয়মতান্ত্রিক
জীবনযাপন করি তাহলে ক্যালরি গ্রহণের চেয়ে ক্যালরি খরচ বেশি হবে। এর ফলে আমাদের দেহের সঞ্চিত
শক্তি ফ্যাট ভেঙে শক্তির চাহিদা পূরণ হবে। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ধীরে ধীরে দেহের ওজন কমে
যাবে। এই ভাবে দেহের ওজন কমে যাওয়ার ফলে যায় ওজন দেখা দেবে। দীর্ঘদিন জটিল কোনো রোগে
ভোগার পরও শরীরের ওজন কমে যেতে পারে।

• প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য
গ্রহণ

• পরিশ্রম বেশি করা

দীর্ঘদিন জটিল রোগে ভোগা

দেহের ওয়ান
কমে যাওয়া

বিভিন্ন রোগে
আক্রান্ত হওয়ার
প্রবণতা বৃদ্ধি

জীবনের ঝুঁকি

স্বপ্ন ওজনের কুফল -

শরীরের ওজন কম হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-

কর্মশক্তি কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সহজেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়,
রক্তচাপ কমে যায়, মেধাশক্তি কমে যায় ইত্যাদি।

স্বপ্ন ওজনের শিশুর খাদ্য ব্যবস্থা

শরীরের ওজন কম হলে অবশ্যই খাদ্য সংক্রান্ত নিম্নলিখিত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।

শস্য ও শস্য জাতীয় খাদ্য যেমন- ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি পর্যান্ত পরিমাণে খেতে হবে। ভাত
রুটির পরিবর্তে পোলাও, খিচুরি, পরটা ইত্যাদি খাওয়া যাবে। এই খাবারগুলোতে তেল বা ঘি থাকায়
ভাত ও রুটির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই ক্যালরি কম খাওয়ার কারণে যাদের
শরীরের ওজন কমে যায়, তারা শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য ক্যালরি বহুল এই খাদ্যগুলো গ্রহণ করলে
ক্যালরি অল্প খেলেও প্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহণ করতে পারবে।

প্রতিবেলার খাদ্য তালিকাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও মৌসুমী ফল থাকতে হবে।

প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য ডাল, বাদাম, মাছ, মাংস ও ডিম অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।

খাদ্য তালিকায় দুধ ও দুধের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করা ভালো। মিষ্টি জাতীয়
খাবারগুলো থেকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি যথেষ্ট ক্যালরিও পাওয়া যাবে। যা শিশুদের ওজন
দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করবে।

যে সকল খাদ্যে ক্যালরি বেশি থাকে সেই খাদ্য গ্রহণে শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তাই নাশতা

হিসাবে গ্রহণের জন্য সব সময় বেশি ক্যালরি যুক্ত খাদ্য বাছাই করতে হবে।

ওজন বাড়ানোর জন্য শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম ও অন্যান্য খাবার রান্নার সময় বেশি তেল দিয়ে রান্না
করতে হবে।

মনে রাখতে হবে শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য অবশ্যই নিয়মিত প্রতিদিন তিন বেলা খাদ্য গ্রহণের
পাশাপাশি আরও দুইবার পুষ্টিকর নাশতা শিশুকে খেতে দিতে হবে।

কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়া বা প্রয়োজনের তুলনায় কম খাওয়া যাবে না।
ওজন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত পর্যান্ত আহারের পাশাপাশি, পর্যান্ত ঘুম, বিশ্রাম ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন
যাপন অবশ্যই প্রয়োজন।

• শারীরিক পরিশ্রম বাড়ালে ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণও বাড়াতে হবে। তা না হলে শরীরের ওজন কমে যাবে।

• শিশুর কোনো রোগের কারণে ওজন কম হলে অবশ্যই সেই রোগের চিকিৎসা করতে হবে।

সর্বোপরি সার্বিক সচেতনতা শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।

 

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু নিচের কোন খাবারটি খাবে?

ক. চিনির পানি

খ. মায়ের দুধ

গ. টিনের দুধ

ঘ. খিচুরি

শরীরের ওজন বেশি হলে নিচের কোন খাদ্যটি বাদ দেওয়া উচিত ?

ক. শাক

খ. ভাত

গ. ডাল

ঘ. পরটা

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও

জোরিনের ছেলে এবার স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ছেলের সুসাস্থ্যের ব্যাপারে জেরিন বেশ সচেতন। তাই
ছেলেকে সে সবসময় সকল পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেতে দেয়।

৩. জেরিন তার ছেলেকে প্রতিদিন কতবার প্রধান খাবার খেতে দেবে?

ক. দুইবার

. তিনবার

গ. চারবার

ঘ. পাঁচবার

৪. জেরিনের ছেলেকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে দেওয়ার কারণ-

হাড়ের সুগঠন

ii. মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ

iii. পেশির সুগঠন

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. 13॥

গ. ii ও iii

খ. ও iii

ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. রাবেয়া খাতুনের পরিবারে প্রতিদিনের মেনুর পূর্ব পরিকল্পনার তেমন একটা রেওয়াজ নেই। বাড়তি
ঝামেলার কথা চিন্তা করে শাকসবজি তেমন একটা রান্না করা হয় না। প্রতিবেলাতেই শুধু মাছ, মাংস,
ডিম ইত্যাদি রান্না করা হয়। সম্প্রতি তার পরিবারে নতুন অতিথির আগমনের কথা শুনে পুত্রবধু নাঈমার
জন্য ডাক্তারের পরামর্শে বিশেষ একটি খাদ্য তালিকা করে দিলেন।

ক. কোন বয়সের শিশুদের প্রাক বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়।

খ. বিদ্যালয়গামী শিশুদের অধিক পুষ্টির প্রয়োজন কেন?

গ. নাঈমার জন্য আলাদা খাদ্য পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্যের জন্য রাবেয়া খাতুনের মেনু কতটুকু উপযোগী? মূল্যায়ন কর।

২. গার্মেন্টসকর্মী রেহানার ৯ বছর বয়সী ছেলেটির ওজন দিন দিন কমে যাচ্ছে। সে কোনো বেলাতেই পেট
ভরে খাবার খায় না। সারাদিন ঝালমুড়ি, চানাচুর, চিপস ইত্যাদি খেতে বেশি পছন্দ করে। স্কুল থেকে
ঘরে ফিরেই সে খেলতে চলে যায়। ইদানীং ক্লাসের পড়া শিক্ষক বুঝিয়ে দিলেও আগের মতো সে
ভালোভাবে বুঝতে পারে না। স্কুলের পরীক্ষাগুলোতেও ধীরে ধীরে ভালো ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ
হচ্ছে।

ক. ওজনাধিক্য কাকে বলে?

খ. মেনু বলতে কী বোঝায়?

গ. রেহানার ছেলেটির সমস্যার কারণ ব্যাখ্যা কর।

ঘ. কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস রেহানার ছেলের জন্য প্রয়োজন? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

 

 

Content added By

Related Question

View More
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.