নিচের উদ্দীপকের আলোকে নিচের দুইটি প্রশ্নের উত্তর দাও

আরিফা বেগম ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে ঢুকলেন। আবদ্ধ রান্নাঘরে তিনি যখন চুলা ধরালেন তখন সেখানে আগুন ধরে গেল । 

আরিফা বেগমের রান্নাঘরে আগুন লাগার কারণ কী? 

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

খাদ্য রান্না করা “ভোজ্য দ্রব্য" তৈরির শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য পর্যায়। খাদ্য রান্নার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে— খাদ্যকে গ্রহণ উপযোগী, সুস্বাদু, সুগন্ধময় ও আকর্ষণীয় করে তোলা। রান্না খাদ্যকে সহজপাচ্য ও পরিপাক উপযোগী করে। এ ছাড়াও খাদ্য দ্রব্যের অনেক ক্ষতিকর রোগজীবাণু রান্নার মাধ্যমে ধ্বংস করা যায়।

পাঠ ১ - রান্না করার প্রয়োজনীয়তা

আদিম যুগের মানুষ কাঁচা অবস্থায় খাবার গ্রহণ করত। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ আগুন জ্বালাতে শেখার পাশাপাশি রান্নার কৌশলও আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। রান্নার প্রচলন বহু যুগ আগেই শুরু হয়েছে। রান্নার উদ্দেশ্যই হচ্ছে খাদ্য কর্তৃকে সহজপাচ্য করে দেহের কাজে লাগাবার উপযোগী করা এবং সেই সঙ্গে সুস্বাদু ও জীবাণুমুক্ত করা। রান্না বলতে খাদ্য বেছে, ধুয়ে, কেটে বা অন্য কৌশলে তৈরি করে চুলায় চাপানোকে বোঝায় । ভোজ্য দ্রব্য প্রস্তুতে রন্ধন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমেই খাদ্যের যাদ, বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদি উন্নত হয়। বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে খাদ্য রান্না করা হয়। খাবার রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পূর্বে রান্নার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানা আবশ্যক ।

রান্না করার প্রয়োজনীয়তাগুলো হচ্ছে-

অধিকাংশ খাবারই মানুষের পক্ষে গ্রহণ উপযোগী থাকে না। রান্না করা খাবার নরম হওয়ার কারণে সহজে চিবানো ও গলাধঃকরণ করা যায়। এতে হজম দ্রুত হয়। রান্নার ফলে খাদ্যের যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তা পরোক্ষভাবে পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। মাংস সিদ্ধ করা হলে তাপ ও পানির সংস্পর্শে মাংসের সংযোজক কলার কোলাজেন জিলেটিনে

পরিনত হয়ে সহজপাচ্য হয়ে উঠে। মূলত রান্নার ফলে খাদ্যবস্তুতে উপস্থিত উপাদনসমূহ দেহের

কাজের উপযোগী হয়ে উঠে।

তেল, মশলা, পেঁয়াজ প্রভৃতি রান্নায় ব্যবহৃত উপকরণ - খাদ্যবস্তুর বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ বৃদ্ধি করে খাদ্যকে আকর্ষণীয় করে। শস্যদানা ও সবজির শ্বেতসার কণা পানি ও উত্তাপে ফেটে যায় এবং ডেক্সট্রিন মলটজে পরিণত হয় যার স্বাদ মিষ্টি। ভাজা, সেঁকা, ক্যারামেল করা প্রভৃতি রান্না পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যের যাদ বৃদ্ধি পায়।

ভোজ্যদ্রব্যের আকর্ষণ যেসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে অনুধ্যে বুনট (Texture) উল্লেখযোগ্য। বুনট দ্বারা রান্না করা খাদ্যের অবয়বিক অবস্থা বোঝানো হয়; অর্থাৎ এটি মোলায়েম, শক্ত বা খসখসে কিনা। যেমন- কেক, পুডিং, পিঠা ইত্যাদি। রান্নার মাধ্যমে খাদ্যে তাপ প্রয়োগ করা হয়। বলে খাদ্যস্থিত রোগ-জীবাণু ধ্বংস হয়। এর ফলে খাদ্য জীবাণুমুক্ত হয় এবং দেহকে খাদ্যের বিষক্রিয়া এবং ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে।

রান্নার মাধ্যমে পচনশীল খাদ্যদ্রব্যে তাপ প্রয়োগ করা হয়। ৪৫°সে. ৬০° সে. তাপমাত্রায় বেশিরভাগ খাদ্যের জীবাণু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ফলে খাদ্যবস্তু রেখে খাওয়া যায় অর্থাৎ রন্ধন পদ্ধতি পরোক্ষভাবে খাদ্য সংরক্ষণেও সহায়তা করে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, রান্নায় খাদ্যের স্বাভাবিক রং, গন্ধ, সংরক্ষণ করা হলে পুষ্টিমূল্যেরও অপচয় কম হয়।

রান্নার মাধ্যমে একই ধরনের খাদ্য উপকরণ দিয়ে একাধিক ভোজ্যদ্রব্য তৈরি করা যায়। এর ফলে ভোজ্য দ্রব্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা যায়।

• প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে আবিষ্কৃত হয়েছে রন্ধনের নানা ধরনের পদ্ধতি। খাদ্যবস্তুটি কীভাবে খাওয়া হবে তার উপর নির্ভর করে রান্নার কোন পদ্ধতিটি অনুসরণ করা হবে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ যে কারণে রান্নার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল আজও মানুষ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ঠিক সেই কারণেই রান্না করে থাকে।

রান্নার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে রান্নার মাধ্যমে যাতে কোনোভাবেই খাদ্যের পুষ্টিমূল্যের অপচয় না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

পাঠ ২ - রন্ধন পদ্ধতি

সামাজিক ও ব্যবহারিক জীবনের সুদীর্ঘ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজ আমরা বেশিরভাগ খাদ্যই রান্না করে খেতে
অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। রান্না মূলত একটা রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে কাঁচা খাদ্যদ্রব্যে তাপ প্রয়োগ করে
খাদ্য দ্রব্যের ভৌত অবস্থার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটানো হয়।

প্রচলিত খাবারগুলো কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়। রান্নার উষ্ণতা, পানি, বাষ্প,
তেল ও সময়ের ব্যবহারের তারতম্যের কারণেই বিভিন্ন পদ্ধতির রান্না বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে।
কেবলমাত্র সিদ্ধ বা কেবলমাত্র ভাজা খাবার মানুষের তৃপ্তি মেটাতে পারে না মানুষ চায় বৈচিত্র্য। একারণেই
আদিম যুগে মানুষ কেবল পুড়িয়ে খাবার খেলেও বর্তমান সভ্যযুগে রান্নার অনেক কৌশলের উদ্ভব হয়েছে।
রান্না করাকে সহজ ও দ্রুত করার জন্য মানুষ নানারকম প্রক্রিয়া বা রখন কৌশল ব্যবহার করতে শিখেছে।

রান্নার প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-

ক) অধিক তাপে ফুটানো বা সিদ্ধ – এই পদ্ধতিতে ১০০° সে. বা ২১২° ফা, উত্তাপে বেশি পানিতে খাবার
সিদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে সিদ্ধ করা পানি ফেলে দিলে পুষ্টির অপচয় হয়। ভাত, ডাল, সুপ, মাংস
ইত্যাদি এ পদ্ধতিতে রান্না করা হয়।

মৃদু তাপে সিদ্ধ – এই পদ্ধতিতে অল্প পানিতে অল্প তাপে ধীরে ধীরে বেশিক্ষণ ধরে খাবার ঢেকে রান্না
করা হয়। ফলে খাবার সুসিদ্ধ হয়। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি, কাস্টার্ড, ফিরনি ইত্যাদি এ
পদ্ধতিতে রান্না করা হয়। এক্ষেত্রে তাপমাত্রার পরিমাণ ৮২° সে. থেকে ১০০° সে. পর্যন্ত হয়ে থাকে।
খাবারের পুষ্টিমান রক্ষায় এ পদ্ধতিটি অধিকতর কার্যকর।

গ) ভাপে সিদ্ধ করা এই পদ্ধতিতে খাদ্যবস্তুকে সরাসরি পানিতে না দিয়ে উত্তপ্ত পানির বাষ্পের সাহায্যে
সিদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে বড় পাত্রে পানি ফুটানোর সময় পাত্রের উপর একটা ছিদ্রযুক্ত কাঁঝড়ি বা তারজালি,
বাঁশের ঝাঁকা কিংবা কাপড় রেখে তার উপর খাবার ঢেকে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ১০০°সে. থেকে ১১২°সে.
পর্যন্ত তাপ ব্যবহার করা হলেও বাতাসের সংস্পর্শে না আসায় খাবারের পুষ্টির কোনো অপচয় হয় না।
পুডিং, ভাপা পিঠা, ভাপে ইলিশ, প্রেসার কুকারে মাংস সিদ্ধ ইত্যাদি এ পদ্ধতিতে রান্না করা হয় ।

ভাজা – ভাজা বলতে প্রায় ৩০০° সে. তাপে তেলে ডুবিয়ে খাবার রান্না করা বোঝায়। এ পদ্ধতিতে কম
তেলে বা বেশি তেলে খাবার ভেজে রান্না করা হয়। ডুবো তেলে ভাজলে খাবার বাতাসের সংস্পর্শে কম
আসে এবং দ্রুত ভাজা হয়। কোনো কোনো খাবার দীর্ঘসময় অল্প তাপে ডুবো তেলে ভেজে মচমচে করা
হয়। যেমন: চিপস, সিঙ্গারা, পেঁয়াজি, নিমকি ইত্যাদি। এতে খাবারের ক্যালরি মান বেড়ে যায়। সবজি
ভাজি, মাছ ভাজি, ডিমের ওমলেট ইত্যাদি আমরা অল্প তেলে ভাজি। এক্ষেত্রে খাবার ঢেকে ধীরে ধীরে
ভাজা হয়। এতে করে তেল বেশি পোড়ে না। খাবারের পুষ্টি কিছু রক্ষা হয়। ঢাকনা ছাড়া অল্প তেলে
খাবার ভাজি করলে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন তেলে দ্রবীভূত হয়ে বাষ্পাকারে উড়ে যায়। এতে
পুষ্টিমূল্যের অপচয় হয়।

 পোড়ানো বা বলসানো – এই পদ্ধতিতে আলু, বেগুন, মিষ্টি আলু, ভুট্টা ইত্যাদি খাবার সরাসরি আগুনে
পুড়িয়ে নেওয়া হয়। শিক কাবাব, বোটি কাবাব, তন্দুরী, মুরগির রোস্ট ইত্যাদি খাবারও এই পদ্ধতিতে
করা হয়। এভাবে খাবার রান্না করলে খাদ্যের পুষ্টিমূল্য বাতাসের সংস্পর্শে ও উত্তাপে অনেকটা নষ্ট
হয়।

চ) সেঁকা বা টালা খাবার সরাসরি গরম পাত্রে দিয়ে জলমুক্ত করা বা শুকিয়ে নেওয়ার পদ্ধতিই হলো সেঁকা
-
বা টালা। এই পদ্ধতিতে তেল বা পানি কোনো তরল পদার্থই ব্যবহার করা হয় না। খাদ্যস্থিত পানি
বাষ্পীভূত হয়ে যেটুকু উষ্ণতা ও সময় দরকার হয় তা দিয়েই রান্না সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে গরম
বালিতে থৈ, মুড়ি, বাদাম টালা হয়। চিংড়ি, ছোট মাছ শুকনা কড়াইতে টেলে ভর্তা করা হয়।
ধনে-জিরা, শুঁটকি গরম খোলায় টালা হয়। গরম তাওয়ায় রুটি সেঁকা হয়।

বেকিং – এই পদ্ধতিতে ওভেন এবং বড় চুলায় (তন্দুর) বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর উপরে, নিচে এবং
-
চারদিকে সমানভাবে তাপ প্রয়োগ করা হয়। পাউরুটি, নানরুটি, কেক, বিস্কুট, মাছ, মুরগি ওভেনে
সম্পূর্ণরূপে বেক করে রান্না করা যায়। ওভেনে খাদ্য সামগ্রী অনুযায়ী তাপমাত্রা ও সময় নিয়ন্ত্রণের
ব্যবস্থা আছে।

মনে রাখা আবশ্যক যে রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি কেবলমাত্র রুখন শৈলীর বৈচিত্র্য নয় বরং খাদ্যের পুষ্টিমূল্য

বজায় রাখার বিজ্ঞানসম্মত কৌশলও বটে।

পাঠ ৩- রান্নার সময় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও সাবধানতা

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার প্রস্তুতকরণ ও পরিবেশনের পূর্বশর্ত হচ্ছে রন্ধনকারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বলতে একান্তভাবে তার নিজস্ব পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নখ,
চুল, দাঁতের পরিচ্ছন্নতা থেকে পরিধেয় বস্ত্র, ব্যক্তিগত সুস্থতা, কাজ করার সময় পরিচ্ছন্নতার প্রতি
সচেতনতা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।

রন্ধনকারী রান্নার সময় পরিচ্ছন্নতা ও সাবধানতা রক্ষায় যেসব উপায় অবলম্বন করবেন সেগুলো নিম্নরূপ :

-রান্নার কাজ শুরুর পূর্বে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

-হাতের নখ বড় হলে তাতে ময়লা জমে। রান্নার সময় সেসব ময়লা খাবারের মাধ্যমে
খাদ্যগ্রহণকারীর শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই রুখনকারীর নথ যথাসম্ভব ছোট রাখতে হবে।
রান্নাঘরে নানা ধরনের কাজ করা হয়। কোনো ময়লা জিনিস ধরার পর অথবা হাত দিয়ে মাথা,

-শরীরের যে কোনো স্থান চুলকানোর পর কখনো সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে খাবার স্পর্শ করা ঠিক

নয়।

-হাতে যদি ঘা, চর্মরোগ থাকে তাহলে খুব সহজেই রোগজীবাণু খাদ্যে সংক্রমিত হয়। এ অবস্থায়
খাবার রান্না বা পরিবেশন করা উচিত নয়।

-রন্ধনকারীর চুল ভালোভাবে বেঁধে নিতে হয়। তা না হলে খাবারের উপর তা পড়তে পারে। আবার
চুল খোলা থাকলে কিংবা ফিতা ঝোলানো থাকলে আগুন লেগে যেতে পারে।

- রন্ধনকারীর পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। যে পোশাকই হোক না কেন তা
যেন জীবাণুমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন হয়।

-পরিধেয় পোশাক যেন ঢিলে-ঢালা না হয়। এতে ওড়নায় কিংবা আঁচলে আগুন লেগে যেতে পারে।

-রান্না করার সময় বারবার হাত ধোয়া হয়। এই ধোয়া হাত মোছার জন্য একটা নির্দিষ্ট গামছা বা
তোয়ালে থাকা প্রয়োজন। তা না হলে পরিধেয় পোশাকে মুছলে পোশাক নোংরা হবে কিংবা
পোশাকের ময়লা খাবারে যাবে।

-যতটুকু সম্ভব রান্নাঘরে কিচেন এপ্রোন পরার অভ্যাস করা উচিত। এতে পরিধেয় পোশাক ভালো
থাকে এবং রান্না ঘরের নিরাপত্তা বজায় থাকে।

-রুনকারীর হাতে গ্লাভস ব্যবহার করাই ভালো।

কাজ- রন্ধনকারীর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার উপায়গুলো লেখ।

পাঠ ৪- রান্না করার সময় সতর্কতা

রান্নাঘরে গৃহিনী বা রন্ধনকারীকে আগুন, কাটা বাছায় ধারালো যন্ত্রপাতি ও রান্নার বিভিন্ন ধাতব সাজসরঞ্জাম
নিয়ে কাজ করতে হয় । আমাদের দেশের রান্নাঘরগুলো তেমন প্রশস্ত হয় না। রান্নাঘরের অপরিসর আয়তনে
উত্তপ্ত পরিবেশে রান্নার ব্যস্ততায় অসতর্ক হওয়া মাত্র যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়। রান্নাঘরে সাধারণত
যেসব দুর্ঘটনা ঘটে সেগুলো হচ্ছে- পুড়ে যাওয়া, কেটে যাওয়া, পিছলে যাওয়া ইত্যাদি।

পুড়ে যাওয়া-

সরাসরি জ্বলন্ত চুলা থেকে দাহ্য বস্তুতে আগুন লেগে পুড়ে যেতে পারে। শাড়ির আঁচল, ওড়না, চুলের ফিতায়
অসাবধানতাবশত আগুন লেগে তা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে শরীর, হাত, মুখ পুড়ে যেতে পারে। রান্নার তেল:
ছিটকে হরহামেশাই পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এসব দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য যেসব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত -

-রান্না করার সময় চুল, শাড়ির আঁচল, ওড়না আঁটসাঁট করে পরিপাটি করে নেওয়া উচিত।

-রান্নার পর চুলা সম্পূর্ণরূপে নিভিয়ে ফেলতে হবে। দিয়াশলাইয়ের কাঠি কখনো জ্বলন্ত অবস্থায়
ফেলা উচিত নয়।

-রান্নাঘরের গ্যাসের লাইন, ইলেকট্রিক লাইন ত্রুটিমুক্ত কিনা মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে নেওয়া
প্রয়োজন।

-গ্যাসের চুলায় আগুন ধরানোর পূর্বে রান্নাঘরের জানালা খুলে নিতে হয়। - তা না হলে গ্যাস
লিকেজে আগুন প্রজ্বলিত হয়ে রান্নাঘরে আগুন লেগে যাওয়ার ভয় থাকে। চুলা থেকে হাড়ি
নামানো বা নাড়ানোর জন্য গরম প্রতিরোধক কাপড়ের তৈরি মোটা প্যাড বা লোহার বেড়ি
ব্যবহার করতে হয় ।

-কখনো তেলের কড়াইয়ে উচ্চতাপ প্রয়োগ করতে নাই এতে আগুন লেগে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আগুন
লাগলে পানি না ঢেলে ঢেকে দিলে আগুন নিভে যায়। এক্ষেত্রে কখনোই পানি দেওয়া উচিত নয় ।

কর্তনজনিত দুর্ঘটনা – কারণ ও সাবধানতা

রান্নাঘরে আরও একটি সাধারণ দুর্ঘটনা হলো কেটে যাওয়া। কাটার কাজ করার সময় ছুরি, বটি দিয়ে হাত
কেটে যেতে পারে। যথাস্থানে দা-বটি না রাখা হলে অসতর্ক মুহূর্তে কেটে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে।

অনেক সময় ভাঙা কাচের পাত্র, জং ধরা টিন, ভাঙা প্লাষ্টিকের ঢাকনা এলুমিনিয়াম বা অন্যান্য ভাঙা
হাঁড়ি-পাতিলের কোণা লেগে হাত কেটে যায়। যেখানে লাকড়ির চুলা ব্যবহার করা হয় সেখানে লাকড়ি কিংবা
তার কাঁটার খোঁচায় হাত কাটতে পারে।

এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের উপায় হচ্ছে-

কাটার সরঞ্জামগুলো কাজ শেষ করার পর নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখতে হবে। অবশ্যই ছোট
ছেলেমেয়েদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

কাটার সরঞ্জামগুলোর ধার এমন হওয়া উচিত যাতে কাটার কাজে বেগ পেতে না হয়। এক্ষেত্রে
ছোট-বড় ভিন্ন ভিন্ন ধারালো ছুরি-বটির ব্যবস্থা থাকা দরকার।

• ত্রুটিপূর্ণ, ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল ও কাটার সরঞ্জাম বাদ দিতে হবে।

কাচের জিনিস ভেঙে গেলে হাত দিয়ে নয় বরং ঝাড়ু দিয়ে ময়লার ট্রেতে তুলে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।

পিছলে পড়া

রান্নাঘরের মেঝেতে পানি, মাড়, তরকারির খোসা প্রভৃতি পড়ে থাকলে কাজের সময় অসাবধানতাবশত
পিছলিয়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে হাত, পা বা কোমরে চোট পাওয়া, মাথা ফাটা কিংবা
শরীরের যে কোনো অংশের হাড় ভাঙার মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এক্ষেত্রে সতর্কতামূলক বিষয়গুলো হচ্ছে-

রান্না ও কাটা বাছার কাজ শেষ করে অপ্রয়োজনীয়, উচ্ছিষ্ট অংশ সরিয়ে ফেলে স্থানটি পরিষ্কার
করে ফেলতে হবে।

ভাতের মাড়, তেল, ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত পানি মেঝেতে পড়ার সাথে সাথেই মুছে ফেলতে হবে।
রান্নাঘর সবসময় শুকনা রাখতে হবে।

রান্নায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি রান্নাঘরে ছড়িয়ে থাকলে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই
কাজ শেষে এগুলো গুছিয়ে ফেলতে হবে যাতে পায়ে বেঁধে না যায়।
রান্নঘর গুঁড়া সাবান, গরম পানি দিয়ে ঘষে নিলে রান্নাঘরের মেঝে পিচ্ছিল হয় না।

মনে রাখা উচিত গৃহিনী বা রন্ধনকারীর সতর্কতাই রান্নাঘরের দুর্ঘটনা প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। অধিক তাপে ফুটিয়ে রান্নার তাপমাত্রা কত?

(ক) ১০০° সে

(খ) ২০০° সে

(11) 300°

(N) 800° 0

২। নিচের কোন খাবারটি মৃদুতাপে সিদ্ধ করে রান্না করা হয়।

(ক) ডাল

(গ) পিঁয়াজি

(গ) পায়েস

(খ) সুপ

নিচের উদ্দীপকটি মনোযোগ দিয়ে পড় এবং ৩৩৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও

কান্তা পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রায়ই বিকেল বেলা বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে চপ, মাছের কাটলেট
ইত্যাদি তৈরি করে। খাবারগুলো মুখোরোচক বলে সবাই খুব পছন্দ করে।

৩। কান্তা বিকেলের নাস্তা তৈরিতে রান্নার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে।
(ক) মৃদুভাপে সিদ্ধ

(গ) বেকিং

(4) der

৪। কান্তার তৈরি খাবারগুলোতে আছে-

(i) ভিটামিন এ ও ডি

(II) ভিটামিন ই ও কে

(iii) ভিটামিন সি ও বি

নিচের কোনটি সঠিক?

(~) 1, iis iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। পুষ্টিবিদ ড. আনোয়ারা একদিন সকালে তার মেয়ে শুভেচ্ছাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে গেলেন।
শুভেচ্ছা লক্ষ করল দোকানী রুটি তাওয়ায় না ভেজে বিশেষ ধরনের মাটির চুলার ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে
এবং একটু পর ফোলানো রুটি বের করে আনছে। শুভেচ্ছাকে তার মা বললেন এটা রান্নার একটা
পদ্ধতি। তিনি আরও বললেন খাদ্যকে দেহের গ্রহণ উপযোগী করার জন্যই রান্নার প্রয়োজন ।

মৃদুতাপে রান্নার তাপমাত্রা কত ?

রান্নার সময় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বলতে কী বোঝায়?

(গ) রেস্টুরেন্টে যে পদ্ধতিতে রুটি তৈরি করা হলো তা ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) খাদ্য রান্না সম্পর্কে ড. আনোয়ারার মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

২। রান্না ঘরে চুলায় সমুচা ভাজার সময় তাড়াহুড়া করে তেলের কড়াই নামাতে গিয়ে গরম ভেল পড়ে রিমার
হাত পুড়ে যায়। মায়ের চিৎকার শুনে রিমার মেয়ে দৌড়ে রান্না ঘরে গেলে মেঝেতে রাখা বটি দিয়ে তার
পা কেটে যায়। রিমার স্বামী তাদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

(ক) রান্নার কাজ শুরু করার পূর্বে কী করতে হবে?

ক্যালরিবহুল খাদ্য রান্নার পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা কর।

(গ) কোন ধরনের সতর্কতার অভাবে রিমা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

(খ) রান্নার কাজে রিমার অসতর্কতা ভবিষ্যতে আরও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে- বিশ্লেষণ কর।

 

Content added By
Promotion