নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও :

মহেশ্বর ঠাকুর সবসময় অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলন করেন। অষ্টাঙ্গযোগ পালনের মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা অর্জনের পাশাপাশি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করা যায়।

মহেশ্বর ঠাকুরের অষ্টাঙ্গযোগের অনুশীলনের কারণ কী?

Created: 11 months ago | Updated: 11 months ago
Updated: 11 months ago

ষষ্ঠ অধ্যায় যোগসাধনা

হিন্দুধর্মশাস্ত্রে ‘যোগ’ মানে মিলন। সংযমপূর্বক সাধনার মাধ্যমে আত্মাকে পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত করে সমাধি লাভকে যোগ বলা হয় । যোগ অভ্যাস করার জন্য যেভাবে রাখলে শরীর স্থির থাকে অথচ কোনো কষ্টের কারণ ঘটে না তাকে যোগাসন বলে । আর যোগের মাধ্যমে ঈশ্বর আরাধনার প্রক্রিয়াকে যোগসাধনা বলে । ঈশ্বর আরাধনার ক্ষেত্রে দেহ ও মন উভয়েরই গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং দেহকে সুস্থ রাখা, মনকে শান্ত রাখা এবং ধর্ম সাধনার জন্য যোগের গুরুত্ব অপরিসীম। এ অধ্যায়ে যোগসাধনা, অষ্টাঙ্গ যোগ ও যোগাসন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী যোগসাধনার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
  • মানসিক স্বাস্থ্য ও ধর্মানুষ্ঠানে যোগসাধনার গুরুত্ব বর্ণনা করতে পারব
  • অষ্টাঙ্গ যোগের ধারণা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব
  • বৃক্ষাসনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
  • বৃক্ষাসন অনুশীলন করতে পারব এবং প্রভাব বর্ণনা করতে পারব
  • অর্ধকূর্মাসনের অনুশীলন করতে পারব এবং প্রভাব বর্ণনা করতে পারব
  • গরুড়াসনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
  • গরুড়াসন অনুশীলন করতে পারব এবং প্রভাব বর্ণনা করতে পারব
  • হলাসনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
  • হলাসন অনুশীলন করতে পারব এবং প্রভাব বর্ণনা করতে পারব ।

 

 

 

 

পাঠ ১ : যোগসাধনার ধারণা ও গুরুত্ব

যোগসাধনার ধারণা

‘যোগ' শব্দটি সাধারণভাবে মিলনের অর্থই ব্যক্ত করে । একের সঙ্গে অপরের মিলন বা একত্রিত হওয়া বা তাদের একত্রিত করাকে যোগ বলা হয়। কিন্তু সাধন ক্ষেত্রে এর অর্থ আরো গভীরে নিহিত। জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সংযোগই যোগসাধনা ।

ব্রহ্ম এক হয়েও বহু, নির্গুণ হয়েও সগুণ, অরূপ হয়েও রূপময়, নৈর্ব্যক্তিক হয়েও ব্যক্তিস্বরূপ, অব্যক্ত হয়েও চরাচরে ব্যক্ত । ব্রহ্মের সঙ্গে সংযোগের প্রচেষ্টার নাম যোগসাধনা । তাঁর অস্তিত্বও অনন্ত, চেতনাও অনন্ত, আনন্দও অনন্ত । তিনি বিশ্বময়, আবার তিনি বিশ্বাতীত- সচ্চিদানন্দ । এ ব্রহ্মের সঙ্গে চাই যোগ । সুতরাং যোগের মাধ্যমে ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের আরাধনার প্রক্রিয়াকে যোগসাধনা বলে ।

যোগসাধনা মুক্তি লাভের একটি বিশেষ উপায়। মুক্তি লাভের জন্য প্রথমে প্রয়োজন আত্মোপলব্ধির । আর এই আত্মোপলব্ধির জন্য প্রয়োজন শুদ্ধ, স্থির ও প্রশান্ত মন। এজন্য শরীর ও মনকে উপযোগী করতে হয় । তাই শরীর সুগঠিত, সুস্থ ও মনকে নিরুদ্বেগ রাখার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তার নামও যোগ । বিশেষভাবে একে হঠযোগ বলে। হঠযোগ হচ্ছে পরমাত্মার সঙ্গে সংযোগের প্রথম সোপান ।

যোগসাধনার গুরুত্ব

দেহকে সুস্থ ও মনকে শান্ত রাখতে এবং ধর্মসাধনার ক্ষেত্রে যোগের গুরুত্ব অপরিসীম । যোগের মাধ্যমে পাচনতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ওঠে, যার ফলে শরীর সুস্থ, হালকা এবং স্ফূর্তিদায়ক হয়ে ওঠে। যোগ সাধনা দ্বারা হৃদরোগ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, এ্যালার্জি ইত্যাদির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । যৌগিক ক্রিয়ার দ্বারা মেদের পাচন হয়ে শরীরের ওজন কমে এবং শরীর সুস্থ ও সুন্দর হয়। স্থূলকায় মানুষের শরীর ও মন সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য যোগের বিকল্প নেই । যোগ দ্বারা ইন্দ্রিয় এবং মনের নিগ্রহ হয়, যম-নিয়মাদি অষ্টাঙ্গ যোগের অভ্যাসের দ্বারা সাধক পরমাত্মা পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়ে ওঠেন। ব্যাসদেব বলেছেন,- ‘যোগই হলো এক অর্থে সমাধি ।' পুরাকালে মুনিঋষিগণ যোগসাধনার বলেই শরীরকে সুস্থ সবল রাখতেন । যোগাসনের মাধ্যমে তাঁরা নীরোগ থাকতেন ও ধ্যানে, তপ-জপে এবং প্রাণায়ামে নিজেদের দেহ সুস্থ-সবল রাখতেন ও দুশ্চিন্তাহীন মনের অধিকারী হতেন ।

যোগীদের মধ্যে কেউ কেউ যোগসাধনায় কেবল যোগ ঐশ্বর্য লাভ করেই তৃপ্ত হন; আবার কেউ কেউ কঠোর তপস্যায় মায়াপাশ ছিন্ন করে পুনরায় যোগশক্তির মাধ্যমে বিশ্বজনের হিতে কল্যাণ সাধনে ব্রতী হন । তাঁরা আত্মসমাহিত হয়ে মোক্ষলাভ করেন । যোগসাধনাবলে এই আত্মসমাধি ও যোগধারণার সূক্ষ্ম নিদর্শন সম্বন্ধে মহাপ্রাজ্ঞ ভীষ্ম বলেছেন, ধনুর্ধারী যোদ্ধারা যেমন অপ্রমত্ত সমাহিত চিত্তে লক্ষ্যভেদ করে তেমনি যোগীরা অনন্যমনে একনিষ্ঠ সাধনায় মোক্ষলাভ করেন। যোগতত্ত্ববিদ মহাত্মারা একাগ্রচিত্তে সংসারের মায়াতরঙ্গ উত্তীর্ণ হয়ে জীবাত্মাকে পরমাত্মার সঙ্গে এক করে দুর্লভ ব্রহ্মপদ লাভ করেন । যে যোগী অহিংসাব্রত পরায়ণ হয়ে জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সংযোগ করতে পারেন তিনি যোগবলে মুক্তি লাভ করতে পারেন ।

 

 

 

 

মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন, যোগীরা ইন্দ্রিয়কে মনের মধ্যে সমাহিত করে মনকে অহংকারে, অহংকারকে মহত্ত্বে, মহত্ত্বকে প্রকৃতির রাজ্যে বিলীন করে পরমব্রহ্মের ধ্যানে তন্ময় হন । সেই পরমব্রহ্মের জ্যোতি তাঁর পাপমুক্ত নিত্য শুদ্ধ হৃদয়ে সর্বদা অনুভূত, সে জ্যোতি তাঁর চোখে-মুখে প্রতিভাত ও উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে । যোগী পুরুষ সতত প্রসন্নচিত্ত । তিনি প্রগাঢ় নিদ্রাসুখতৃপ্ত ব্যক্তির মতো প্রশান্তিসম্পন্ন হয়ে সর্বদা শান্তির রাজ্যে আনন্দের অমিয়সাগরে ভাসেন। তিনি নির্বাত নিষ্কম্প প্রদীপের মতো স্থির এবং তিনি জগতের কোনো আসক্তি, কোনো মমতাতেই বিচলিত হন না। দেহ অবসানে তিনি মোক্ষ লাভ করে পরমব্রহ্মে বিলীন হন ।

দলীয় কাজ : যোগসাধনার প্রভাব লিখে একটি তালিকা তৈরি কর ।

নতুন শব্দ : স্বতন্ত্রসত্তা, চরিতার্থতা, গতানুগতিক, চরাচর, পাচনতন্ত্র, সুডৌল, নিগ্রহ, জ্যোতির্ময়, আত্মসমাহিত, তন্ময়, অপ্রমত্ত, প্রসন্নচিত্ত, প্রগাঢ়, অমিয়, নির্বাত, নিষ্কম্প, বিলীন ।

পাঠ ২, ৩ ও ৪ : অষ্টাঙ্গযোগের ধারণা ও গুরুত্ব

অষ্টাঙ্গযোগের ধারণা

প্রতিটি মানুষই নিজ জীবনে সুখ চায় । যোগসাধনা এমন এক পথ যাতে প্রতিটি মানুষ নির্ভয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে চলতে পারবে এবং নিজেদের জীবন সম্পূর্ণ সুখ, শান্তি এবং আনন্দের মাধ্যমে কাটাতে পারবে । সেই পথ হচ্ছে মহর্ষি পতঞ্জলি প্রতিপাদিত অষ্টাঙ্গ যোগের পথ ।

মহর্ষি পতঞ্জলি মানুষের আত্মানুসন্ধানে যোগের আটটি ধাপ নির্দেশ করেছেন । তিনি বলেছেন, যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান, সমাধি এই আটটি যোগের অঙ্গ। এগুলো একত্র অষ্টাঙ্গ যোগ বলে পরিচিত । আমরা এখন অষ্টাঙ্গ যোগের প্রতিটি যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করছি :

১. যম

অষ্টাঙ্গ যোগের প্রথম ধাপ হচ্ছে যম । যম অর্থ সংযম, ইন্দ্রিয় এবং মনকে হিংসা অশুভভাব ইত্যাদি থেকে সরিয়ে আত্মকেন্দ্রিত করা । অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহ- এই পাঁচ প্রকার যম ।

ক. অহিংসা

অহিংসা শব্দটার অর্থ হচ্ছে কোনো প্রাণীকে মন, কথা এবং কর্ম দ্বারা কষ্ট না দেওয়া । মনে মনেও কারও অনিষ্ট না ভাবা, কাউকে কটু কথা ইত্যাদি দ্বারা কষ্ট না দেওয়া এবং কর্ম দ্বারা কোনো অবস্থাতে কোনো স্থানে, কোনো দিন কোনো প্রাণীর প্রতি হিংসা ভাব প্রদর্শন না করা। এক কথায় ভালোবাসা । শুধু জীবের প্রতি ভালোবাসা নয়, নিখিল বিশ্বের প্রতিটি বস্তুর প্রতি ভালোবাসা ।

 

 

 

খ. সত্য

যেমন দেখেছি, যেমন শুনেছি এবং যেমন জেনেছি, ঠিক তেমনটাই মনে, কথায় ও কাজে করাকে সত্য বলে । মন যদি সত্য চিন্তা করে, জিহ্বা যদি সত্য কথা বলে এবং সমগ্র জীবন যদি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় ।

গ. অস্তেয়

অস্তেয় অর্থ চুরি না করা । অপরের জিনিস না বলে অধিকার করাকে স্তেয় (চুরি) বলে । তাই যোগী তাঁর জাগতিক প্রয়োজন সর্বনিম্ন মাত্রায় আবদ্ধ রাখেন । যোগীর একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ঈশ্বর সান্নিধ্য ।

ঘ. ব্ৰহ্মচর্য

ব্রহ্মচর্য শব্দের আভিধানিক অর্থ বেদাদি শাস্ত্রানুশীলন এবং পবিত্র সংযত জীবনযাপন । জীবনে ব্রহ্মচর্য প্রতিষ্ঠা করলে দেহে শক্তি পাওয়া যায়, মনে সাহস পাওয়া যায়, বুদ্ধি বিকশিত হয় । ব্রহ্মচর্যে যোগীর জীবনে জ্ঞানের আলো জ্বলে ওঠে, তখন তাঁর ঈশ্বরদর্শন সহজ হয় ।

ঙ. অপরিগ্রহ

অপরিগ্রহ মানে গ্রহণ না করা। অপ্রয়োজনীয় বস্তু গ্রহণ না করা যেমন তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত বস্তুও গ্রহণ না করা । জীবনে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম ধন, বস্ত্র ইত্যাদি পদার্থ গ্রহণ করে এবং গৃহে সন্তুষ্ট থেকে জীবনের মুখ্য লক্ষ্য ঈশ্বর আরাধনা করাই হচ্ছে অপরিগ্রহ ।

২. নিয়ম

অষ্টাঙ্গযোগের দ্বিতীয় হচ্ছে নিয়ম । মহর্ষি পতঞ্জলি শৌচ, সন্তোষ, তপ, স্বাধ্যায় এবং ঈশ্বর প্রণিধান এই

পাঁচটি নিয়মের উল্লেখ করেছেন ।

ক. শৌচ

শৌচ বলে শুদ্ধিকে, পবিত্রতাকে । এই শৌচ দুই প্রকারের হয় : এক বাহ্য এবং দ্বিতীয় অভ্যন্তরীণ । সাধকের প্রতিদিন জল দ্বারা শরীরের শুদ্ধি, সত্যাচরণ দ্বারা মনের শুদ্ধি, বিদ্যা আর তপ দ্বারা আত্মার শুদ্ধি এবং জ্ঞান দ্বারা বুদ্ধির শুদ্ধি করা উচিত ।

খ. সন্তোষ

সন্তোষ অর্থ সম্যক তৃপ্তি । এই সন্তোষ হঠাৎ আসে না, একটু একটু করে তাকে মনের মধ্যে জাগাতে হয় । মনে সন্তোষ না থাকলে কোনো কিছুর প্রতি মনোনিবেশ করা যায় না। যোগীর অভাব বোধ থাকে না, তাই তাঁর মনে কোনো অসন্তোষও থাকে না । তাঁর মনে যে সন্তোষ থাকে তাতে তিনি স্বর্গসুখ অনুভব করেন ।

গ. তপ

তপ হচ্ছে কোনো সঙ্কল্পসিদ্ধির উদ্দেশ্যে কঠোর সাধনা । সেই সাধনায় প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি, আত্মশাসন ও আত্মসংযম । যোগে তপ বলতে বোঝায় ঈশ্বরের সঙ্গে অন্তিম মিলনের জন্য সচেতন চেষ্টা ।

 

 

 

 

ঘ. স্বাধ্যায়

স্বাধ্যায় মানে বেদ-অধ্যয়ন, শাস্ত্র অধ্যয়ন বা ভগবদ্‌বিষয়ক গ্রন্থ অধ্যয়নও বলা যেতে পারে । স্বাধ্যায় থেকে যেসব মহান চিন্তা উদ্ভূত হয় তা স্বাধ্যায়ীর রক্তস্রোতে মিশে যায় এবং তাঁর জীবনে ও সত্তায় অঙ্গীভূত হয়।

ঙ. ঈশ্বর-প্রণিধান

প্রণিধান অর্থ অর্পণ । সমস্ত কর্ম ও ইচ্ছা ঈশ্বরে অর্পণ করার নাম ঈশ্বর প্রণিধান । ঈশ্বরে সব অর্পণ করলে অহং বা অহংকার নাশ হয় । ঈশ্বরে যাঁর বিশ্বাস আছে তাঁর জীবনে কখনও হতাশা আসে না । তাঁর জীবন তেজে ভরে ওঠে । যোগী তাঁর সমস্ত কর্ম ঈশ্বরে অর্পণ করেন । তাই তাঁর সমস্ত কর্মে তাঁর ভিতরকার দেবত্ব ফুটে ওঠে ।

৩. আসন

আসন অর্থ স্থির হয়ে সুখে অধিষ্ঠিত থাকা - স্থিরসুখ আসনম্ । দেহমনকে সুস্থ ও স্থির রাখার উদ্দেশ্যে যে বিভিন্ন দেহভঙ্গি বা দেহাবস্থান তাকে আসন বলে। আসনে শরীরে দৃঢ়তা আসে, শরীর নীরোগ ও লঘুভার হয় । একটা স্থির ও সুখকর ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ অবস্থান করলে মানসিক ভারসাম্য সৃষ্টি হয় । আসনে শরীরে ও মনে সমন্বয় ঘটে । যোগী আসনে দেহকে জয় করে তাকে আত্মার বাহন হিসেবে গড়ে তোলেন। আসন নানা প্রকার । যেমন- পদ্মাসন, সুখাসন, গোমুখাসন, হলাসন ইত্যাদি । এই আসন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যোগীপুরুষ নিজ দেহ ও মনকে ঈশ্বর চিন্তায় নিবিষ্ট করার যোগ্যতা অর্জন করেন । যোগসাধনায় আসন অনুশীলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার । তবে কোনো গুরু বা যোগীর নিকট এই আসন প্রক্রিয়া শিক্ষা করা দরকার ।

৪. প্রাণায়াম

প্রাণায়াম অর্থ প্রাণের আয়াম । প্রাণ হলো শ্বাসরূপে গৃহীত বায়ু আর আয়াম হলো বিস্তার । সুতরাং প্রাণায়াম বলতে বোঝায় শ্বাস-প্রশ্বাসের বিস্তার। অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক গতিকে নিয়ন্ত্রণ এবং নিজ আয়ত্তে আনাই প্রাণায়াম । প্রাণায়ামে শ্বাস-প্রশ্বাস বিস্তারিত অর্থাৎ দীর্ঘতর করা হয়। কারণ, যোগীর আয়ু দিনগণনায় স্থির হয় না, স্থির হয় শ্বাস গণনায় । কতবার তিনি শ্বাস গ্রহণ করলেন তা দিয়েই তাঁর আয়ু পরিমাপ করা হয় । যত বেশি তিনি শ্বাস গ্রহণ করবেন তত বেশি তাঁর আয়ুক্ষয় হবে । সেই কারণে তিনি ধীরে ধীরে গভীরভাবে ও ছন্দোবদ্ধভাবে শ্বাস গ্রহণ করেন । এইরকম ছন্দোবদ্ধভাবে শ্বাস গ্রহণ করলে শ্বসনতন্ত্র বলিষ্ঠ হয়, স্নায়ুতন্ত্র শান্ত থাকে এবং কামনাবাসনা হ্রাস পায় । রেচক, পূরক ও কুম্ভক-এই তিন প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রাণায়াম সম্পন্ন হয় । শ্বাস গ্রহণকে বলে পূরক, শ্বাসত্যাগকে বলে রেচক এবং শ্বাস ধারণকে বলে কুম্ভক । প্রাণায়ামকে একধরনের বিজ্ঞান বলা যেতে পারে, শ্বাস-প্রশ্বাসের বিজ্ঞান। তবে সদ্‌গুরুর তত্ত্বাবধান ছাড়া কখনও পূরক-রেচক-কুম্ভক সমন্বিত প্রাণায়াম করা উচিত নয় ।

 

 

 

 

 

৫. প্রত্যাহার

প্রত্যাহার অর্থ ফিরিয়ে নেওয়া । বাহ্যিক বিষয়বস্তু থেকে ইন্দ্রিয়সমূহকে ভিতরের দিকে ফিরিয়ে নেওয়াকে যোগে প্রত্যাহার বলে । দৃঢ় সংকল্প ও অভ্যাসের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলোকে অন্তর্মুখী করা যায় । ইন্দ্রিয়গুলো অন্তর্মুখী হলে চিত্তে বিষয় আসক্তি নষ্ট হয় । এমতাবস্থায় চিত্ত আরাধ্য বস্তুতে নিবিষ্ট হতে পারে ।

৬. ধারণা

মনকে বিশেষ কোনো বিষয়ে স্থির করা বা আবদ্ধ রাখার নাম ধারণা । ধারণা অর্থ একাগ্রতা । একাগ্রতা ছাড়া জগতে কিছুই আয়ত্ত করা যায় না । কোনো বিষয় আয়ত্ত করতে হলে চিত্তবৃত্তিকে বিষয়ান্তর থেকে প্রত্যাহৃত করে ঐ বিষয়ে স্থাপন করতে হয় । ঈশ্বর লাভ করতে ঈশ্বরে একাগ্রচিত্ত হতে হয়। একাগ্রচিত্ত হতে হলে এক-তত্ত্ব অভ্যাস করতে হয় । নিজ দেহের অঙ্গবিশেষে যেমন- নাভি, নাকের অগ্রভাগ বা ভ্রূ- যুগলের মধ্যস্থানে অথবা কোনো দেবমূর্তি বা যে কোনো বস্তুতে মনকে নিবিষ্ট করা যেতে পারে । মনকে কোনো বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নিবিষ্ট রাখার অভ্যাসের দ্বারা যোগী অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর যোগ্যতা অর্জন করে । ধারণা হচ্ছে ধ্যানের ভিত্তিস্বরূপ ।

৭. ধ্যান

ধ্যান অর্থ নিরবচ্ছিন্ন গভীর চিন্তা । মন যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে ঈশ্বরের চিন্তা করে তাহলে দীর্ঘ চিন্তনের পর অন্তিমে ঈশ্বরোপম হতে পারে । ধ্যানে যোগীর দেহ শ্বাস-প্রশ্বাস ইন্দ্রিয় মন বিচারশক্তি অহংকার সবকিছু ঈশ্বরে লীন হয়ে যায় এবং তিনি এমন এক সচেতন অতিন্দ্রীয় অবস্থায় চলে যান যা ব্যাখ্যা করা যায় না। তখন পরম আনন্দ ছাড়া তাঁর আর কোনো অনুভূতি হয় না। তিনি তাঁর আপন অন্তরের আলোও দেখতে পান।

৮. সমাধি

সমাধি অর্থ সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরে চিত্তসমর্পণ । সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরে চিত্ত সমর্পণ করতে পারলে পরমাত্মার মধ্যে জীবাত্মার নিবেশ ঘটে, সাধকের অন্বেষণের শেষ হয় । ধ্যানের উত্যুঙ্গ শিখরে উঠে সাধক সমাধি লাভ করেন। তখন তিনি মনশূন্য, বুদ্ধিশূন্য, অহংশূন্য নিরাময় অবস্থা প্রাপ্ত হন । তখন পরমাত্মার সঙ্গে তাঁর মিলন ঘটে। তখন তাঁর ‘আমি' বা ‘আমার’ জ্ঞান থাকে না, কারণ তখন তাঁর দেহ, মন ও বুদ্ধি স্তব্ধ থাকে । সাধক তখন প্রকৃত যোগ লাভ করেন ।

পাঠ ৫ : অষ্টাঙ্গযোগের গুরুত্ব

অষ্টাঙ্গযোগ অনুসরণ ও অনুশীলনে মানুষের অশান্ত মন শান্ত হয় ও তার আত্মশক্তি বৃদ্ধি পায় ৷ প্ৰমত্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে, খাল খনন করে যখন তাকে সঠিকভাবে বশে আনা হয় তখন এক বিশাল জলাধার সৃষ্টি হয়, সেই জলাধারের জলে ফসল ফলে, বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, মানুষের জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে । ঠিক তেমনি অষ্টাঙ্গযোগ পালন করে অশান্ত মনকে বশে আনতে পারা যায় বিধায় শান্তির পারাবার সৃষ্টি হয়, আত্মোন্নয়নে অপরিমেয় শক্তি লাভ করা যায় ।

 

 

 

 

 

অষ্টাঙ্গযোগ পালন না করে কোনো ব্যক্তিই যোগী হতে পারে না । যম এবং নিয়ম হচ্ছে অষ্টাঙ্গযোগের আধার। যম আর নিয়মে সাধকের ভাব আর আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয়, জগতের অন্যসব মানুষের সঙ্গে তাঁর একটা ঐকতান সৃষ্টি হয়। আসনে দেহ ও মন সুস্থ সবল ও সতেজ হয়, তখন প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর একটা ঐকতান সৃষ্টি হয় । শেষে তাঁর দেহসচেতনতা লুপ্ত হয়ে যায় । দেহকে তিনি জয় করে আত্মার বাহন হিসেবে প্রস্তুত করেন। প্রাণায়াম ও প্রত্যাহার সাধকের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়মিত করে তাঁর মনকে বশে আনে । তাতে তাঁর ইন্দ্রিয়সমূহ বৈষয়িক আকাঙ্ক্ষার দাসত্ববন্ধন থেকে মুক্ত হয়। ধারণা, ধ্যান ও সমাধি সাধককে তাঁর আত্মার অন্তরতম প্রদেশে নিয়ে যায়। সাধক তখন ঈশ্বরানুসন্ধানে স্বর্গের দিকে তাকান না । তখন তাঁর উপলব্ধি হয় ঈশ্বর আছেন তাঁরই অন্তরে অন্তরাত্মা নামে ।

অষ্টাঙ্গযোগ ধর্ম, আধ্যাত্ম, মানবতা এবং বিজ্ঞানের প্রতি ক্ষেত্রেই নিজেকে প্রয়োজনীয় রূপে প্রমাণ করেছে । পৃথিবী থেকে খুন, সংঘর্ষ যদি কোনো উপায়ে বন্ধ করতে হয়, তাহলে সেটা অষ্টাঙ্গযোগের মাধ্যমেই সম্ভব । যদি পৃথিবীর সব লোক বাস্তবে এই ব্যাপারটা নিয়ে একমত হয় যে, বিশ্বে শান্তি স্থাপিত হওয়া উচিত, তাহলে তার একমাত্র সমাধানই হচ্ছে অষ্টাঙ্গযোগের চর্চা । অষ্টাঙ্গযোগে জীবনের সাধারণ ব্যবহার থেকে শুরু করে ধ্যান এবং সমাধি সহ আধ্যাত্মের উচ্চতম অবস্থাগুলোর অনুপম সমাবেশ রয়েছে । যদি কোনো ব্যক্তি নিজের অস্তিত্বের খোঁজ করে এবং জীবনের পূর্ণ সত্যের সঙ্গে পরিচিত হতে চায়, তাহলে তাঁর অষ্টাঙ্গযোগের পালন অবশ্যই করা উচিত ।

অষ্টাঙ্গযোগ দ্বারাই ব্যক্তিগত এবং সামাজিক একতা, শারীরিক সুস্থতা, বৌদ্ধিক জাগরণ, মানসিক শান্তি

এবং আত্মিক আনন্দের অনুভূতি হতে পারে ।

একক কাজ : অষ্টাঙ্গযোগ পালনের উপকারিতা লিখে একটি তালিকা তৈরি কর ।

নতুন শব্দঃ প্রতিপাদিত, আত্মকেন্দ্রিত, জাগতিক, সম্যক, শ্বসনতন্ত্র, প্রত্যাহৃত, ঈশ্বরোপম, লীন, অন্বেষণ,

উতুঙ্গ, নিরাময়, প্রমত্তা, পারাবার, ঐকতান, বৈষয়িক । পাঠ ৬ : বৃক্ষাসনের ধারণা, পদ্ধতি ও প্রভাব

বৃক্ষাসনের ধারণা ও পদ্ধতি

এই আসনে আসনকারীর দেহ বৃক্ষের ন্যায় হয় বলে, একে বৃক্ষাসন বলে ।

দুইপা জোড়া করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে, পায়ের পাতা মাটিতে সমানভাবে লেগে থাকবে । এবার ডান পা হাঁটুতে ভেঙ্গে গোড়ালি বাঁ ঊরুমূলে রাখতে হবে, পায়ের পাতা ঊরুর সঙ্গে লেগে থাকবে, পায়ের আঙ্গুলগুলো থাকবে নিচের দিকে ফেরানো । এখন কেবল বাঁ পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে । এবার নমস্কারের ভঙ্গিতে হাতের তালু দুইটি জোড়া করে বুকের কাছে আনতে হবে, তারপর তালু দুটি জোড়া রেখে হাত দুইটি সোজা মাথার উপর নিতে হবে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এইভাবে নিশ্চল হয়ে ১০ সেকেন্ড থাকতে হবে। পরে হাত নামিয়ে হাতের তালু দুইটি ছেড়ে দিয়ে ডান পা সোজা করে আবার আগের মতো দুপায়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে । এবার ঠিক একইভাবে ডান পায়ে দাঁড়িয়ে আসনটি করতে হবে । অর্থাৎ ডান পায়ে দাঁড়িয়ে বাঁ পা হাঁটুতে ভেঙ্গে গোড়ালি ডান ঊরুমূলে রাখতে হবে ।

 

 

 

এবারও শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এইভাবে নিশ্চল হয়ে ১০ সেকেন্ড থাকতে হবে । আবার আগের মতো দুইপায়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে । শেষে শবাসনে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিতে হবে । এই হলো একবার । এই রকম তিনবার করতে হবে। ১০ সেকেন্ডে অভ্যস্ত হয়ে গেলে আস্তে আস্তে বাড়িয়ে ৩০ সেকেন্ড করতে হবে । বাঁ পায়ে যতক্ষণ করা হবে ডান পায়েও ততক্ষণ করতে হবে এবং ততক্ষণই শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে ।

একক কাজ : বৃক্ষাসনটি অনুশীলন করে দেখাও ।

প্রভাব

বৃক্ষাসন নিয়মিত অনুশীলন করলে -

১. শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা বাড়ে ।

২. পায়ের পেশির দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় ।

৩. পায়ে জোর পাওয়া যায়, চলাফেরা করার ক্ষমতা বাড়ে । 

৪. উরুর সংযোগস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ।

৫. কোমরের ও মেরুদণ্ডের শক্তি বৃদ্ধি পায় ।

৬. হাতের ও পায়ের গঠন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয় ।

৭. হাঁটু, কনুই, বগল সমস্ত স্নায়ুতন্ত্রীতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় ও গ্রন্থি সবল,

নমনীয় হয় । 

৮. পায়ের ব্যথায় বিশেষ উপকার পাওয়া যায় এবং পায়ে কোনোদিন বাত হতে

পারে না ।

৯ । যাঁদের হাত-পা কাঁপে, পা দুর্বল তাঁদের খুব উপকার হয় ।

১০। রক্তে অত্যধিক কোলেস্টেরল থাকার দরুন বা অন্য কোনো কারণে পায়ের ধমনীতে যে শক্ত হলদে চর্বিজাতীয় পদার্থ জমে, যাকে অ্যাথেরোমা বলে, তা রোধ হয় । ফলে থ্রম্বোসিস হতে পারে না ।

একক কাজ : বৃক্ষাসন অনুশীলনের পাঁচটি উপকারিতা লেখ ।

নতুন শব্দ : বৃক্ষাসন, দৃঢ়তা, স্থিতিস্থাপকতা, স্নায়ুতন্ত্রী, গ্রন্থি, কোলেস্টেরল, ধমনী, অ্যাথেরোমা, থ্রম্বোসিস

 

 

 

 

 

পাঠ ৭ : অর্ধকূর্মাসনের ধারণা, পদ্ধতি ও প্রভাব

অর্ধকূর্মাসনের ধারণা ও পদ্ধতি

‘কূর্ম' অর্থ কচ্ছপ। এই আসনে আসনকারীর দেহ দেখতে অনেকটা কচ্ছপের পিঠের ন্যায় হয় বলে একে অর্ধকূর্মাসন বলে । হাঁটু গেড়ে বসতে হবে । দুই হাঁটু আর দুই পায়ের পাতা জোড়া থাকবে, নিতম্ব থাকবে গোড়ালির উপর । পায়ের তলা উপর দিকে ফেরানো থাকবে । হাত হাঁটুর উপর আরাম করে পাতা থাকবে । হাঁটু থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত সমস্ত অংশ মাটিতে লেগে থাকবে । এবার হাত দুটো সোজা করে দুই কানের পাশ দিয়ে মাথার উপর তুলতে হবে ।

নমস্কার করার ভঙ্গিতে এক হাতের তালু আর এক হাতের তালুর সঙ্গে লাগিয়ে এক হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আর এক হাতের বুড়ো আঙ্গুল জড়িয়ে ধরতে হবে। হাত দুটো দুই কানের সঙ্গে লেগে থাকবে। মেরুদণ্ড সোজা থাকবে। তখন দেখাবে একটা মন্দিরের চূড়ার মতো । এবার হাত সোজা রেখে নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কোমর থেকে প্রণাম করার মতো ভঙ্গিতে কপাল মাটিতে ঠেকাতে হবে এবং হাতের সংযুক্ত তালু যতদূর সম্ভব দূরে মাটিতে রাখতে হবে । এ সময় যাতে নিতম্ব গোড়ালি থেকে উঠে না পড়ে এবং পেটে, বুকে, পাঁজরের দুইপাশে ও উরুতে হাল্কা চাপ পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এই অবস্থায় নিশ্চল হয়ে ৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে। এরপর নিঃশ্বাস নিতে নিতে আগের মতো বসতে হবে । তারপর হাত পা সোজা করে ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। এইভাবে তিনবার করতে হবে। উচ্চরক্তচাপ আছে এমন রোগীদের এই আসন করা নিষেধ ।

প্রভাব

অর্ধকূর্মাসন নিয়মিত অনুশীলন করলে-

১. শরীর অনেক শিথিল হয় ।

২. মেরুদণ্ড সতেজ হয় ।

৩. পেটের অভ্যন্তরীণ অংশগুলো সবল ও সক্রিয় হয় ।

৪. আসনকারী অনেক বেশি প্রাণশক্তি ও সুস্বাস্থ্য লাভ করে ।

৫. মস্তিষ্ক শান্ত হয় ।

৬. যকৃৎ ভালো থাকে ।

৭. অজীর্ণ, অম্বল, ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় ইত্যাদি দূর হয় ।

৮. হজম শক্তি বাড়ে ।

 

 

 

 

৯. পেটে বায়ু থাকলে তার প্রকোপ কমে । ১০. হাঁপানি আর ডায়াবেটিসে উপকার হয় ।

১১. পায়ের পেশির ব্যথা ও হাড়ের বাত সারে ।

১২. কাঁধের পেশির ব্যথা ভালো হয় ।

১৩. পেটের ও নিতম্বের চর্বি কমে ।

১৪. পেট ও ঊরুর পেশি সবল হয় ।

১৫. মন অনেক ধীর, স্থির ও শান্ত হয় এবং সুখ ও দুঃখ সমানভাবে নিতে পারে ।

১৬. ভাবাবেগ, ভয়-ভীতি আর ক্রোধ আলগা হয় ।

১৭. আসনকারীকে আস্তে আস্তে দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে, ভোগ-বিলাসের প্রতি উদাসীন করে।

১৮. যোগীকে তাঁর যোগ সাধনায় মনোনিবেশের জন্য প্রস্তুত করে ।

দলীয় কাজ : অর্ধকূর্মাসনের উপকারিতা লিখে পোস্টার তৈরি কর ।

নতুন শব্দ : কুর্ম, শিথিল, অজীর্ণ, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য, নিতম্ব, পাঁজর, প্রকোপ, যকৃৎ ।

পাঠ ৮ ও ৯ : গরুড়াসনের ধারণা, পদ্ধতি ও প্রভাব

গরুড়াসনের ধারণা ও পদ্ধতি

এই আসনে দেহভঙ্গী গরুড়-এর মতো হয়। তাই এর নাম গরুড়াসন ।

দুইপা জোড়া করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। ডান হাত কনুইয়ের কাছে ভেঙ্গে বাঁ কনুইয়ের নিচ দিয়ে নিয়ে গিয়ে ডান হাতের তালু বাঁ হাতের তালুতে নমস্কারের ভঙ্গিতে রাখতে হবে । এবার বাঁ পা মাটিতে রেখে ডান পা দিয়ে বাঁ পা পেঁচিয়ে ধরতে হবে। তারপর স্বাভাবিকভাবে দম নিতে ও ছাড়তে হবে। এ অবস্থানে ৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে। হাত পা বদল করে আসনটি ৪ বার অভ্যাস করতে হবে এবং শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে ।

একক কাজ : গরুড়াসন অনুশীলন করে দেখাও ।

প্রভাব

গরুড়াসন নিয়মিত অনুশীলন করলে-

১. পায়ের ও হাতের গঠন সুন্দর হওয়ার সাথে সাথে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায় ৷

২. পায়ে বাত হতে পারে না ।

৩. পায়ের পেশিতে খিল ধরতে পারে না ।

 

 

 

৪. উরু, নিতম্ব, পেট আর হাতের উপরের দিক মজবুত হয় ।

৫. নিতম্ব, হাঁটু আর গোড়ালির গাঁটের নমনীয়তা বাড়ে ।

৬. কাঁধ শক্ত হয়ে গিয়ে থাকলে তা ভালো হয় ।

৭. বাঁকা মেরুদণ্ড সোজা হয় ।

৮. ব্রহ্মচর্য রক্ষা করা সহজ হয়।

৯. দেহ লম্বা হয়।

১০. দেহের ভারসাম্য ঠিক থাকে ।

১১. কিডনি ভালো থাকে ।

দলীয় কাজ : গরুড়াসনের উপকারিতাগুলো লেখ ।

হলাসনের ধারণা, পদ্ধতি ও প্রভাব

হলাসনের ধারণা ও পদ্ধতি

'হল' শব্দের অর্থ লাঙ্গল । এই আসনে দেহভঙ্গি অনেকটা হলের অর্থাৎ লাঙ্গলের মতো দেখায় বলে একে হলাসন বলে ।

পা দুটো সোজা করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তে হবে । উরু, হাঁটু ও পায়ের পাতা জোড়া থাকবে। হাত দুটো সোজা করে শরীরের দু পাশে রাখতে হবে। এবার নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা দুটো জোড়া ও সোজা অবস্থায় আস্তে আস্তে উপরে তুলতে হবে এবং মাথার পেছনে যতদূর সম্ভব দূরে নিতে হবে যেন পায়ের আঙ্গুলগুলো মাটি স্পর্শ করতে পারে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে । এরপর আস্তে আস্তে পা নামিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে এবং শবাসনে ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম

 

 

 

 

নিতে হবে । এভাবে আসনটি তিনবার অনুশীলন করতে হবে। যাদের আমাশয়, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ

আছে এবং যাদের প্লীহা, যকৃৎ অস্বাভাবিক বড় তাদের আসনটি করা উচিত নয় ।

একক কাজ : হলাসনটি অনুশীলন করে দেখাও ।

প্রভাব

হলাসন নিয়মিত অনুশীলন করলে -

১. মেরুদণ্ডকে সুস্থ ও নমনীয় করে তোলে ।

২. মেরুদণ্ডের স্থিতি-স্থাপকতা বজায় থাকে ।

৩. মেরুদণ্ড সংলগ্ন স্নায়ুকেন্দ্র ও মেরুদণ্ডের দুপাশের পেশি সতেজ ও সক্রিয় হয় । ৪. কোষ্ঠবদ্ধতা, অজীর্ণ, পেট ফাঁপা প্রভৃতি পেটের যাবতীয় রোগ দূর হয় ।

৫. প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয় প্রভৃতির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।

৬. থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল প্রভৃতি গ্রন্থি সবল ও সক্রিয় হয় । ৭. পেট, কোমর ও নিতম্বের মেদ কমিয়ে দেহকে সুঠাম ও সুন্দর করে গড়ে তোলে ।

৮. ডায়াবেটিস, বাত বা সায়টিকা কোনো দিন হতে পারে না ।

৯. পিঠে ব্যথা থাকলে তা দূর হয় ।

১০. যাদের কাঁধ শক্ত হয়ে গেছে তাদের উপকার হয় ।

নতুন শব্দ : হল, প্লীহা, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, কোষ্ঠবদ্ধতা ।

 

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

১। ‘যোগই হলো আধ্যাত্মিক কামধেনু' – কে বলেছেন?

খ. ডক্টর সম্পূর্ণানন্দ

ক. ব্যাসদেব গ. মহর্ষি পতঞ্জলি ঘ. মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য

২। অস্তেয় অর্থ কী?

ক. সম্যক তৃপ্তি গ. একাগ্রতা

খ. নিজেকে জানা

৩। কোনটি ধ্যানের ভিত্তি স্বরূপ?

ঘ. চুরি না করা

ক. নিয়ম

খ. আসন

গ. ধারণা

ঘ. প্রত্যাহার

 

 

 

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৪ ও ৫ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

নবম শ্রেণির ছাত্র সৌরভ সহজ-সরল ও সদালাপী। সে কখনো কাউকে কটু কথা বলে না এবং অন্যের ক্ষতির চিন্তা করে না। এমনকি বিড়াল এসে টেবিলে রাখা তার গ্লাসের দুধটুকু পান করতে থাকলে সে রাগ করে না। বরং আদর করে বিড়ালটিকে বাকি দুধটুকু পান করায়।

৪। সৌরভের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে যমের কোনটি লক্ষণীয়?

ক. অস্তেয়

খ. ব্ৰহ্মচর্য

গ. অহিংসা ঘ. অপরিগ্রহ ৫। যমের উক্ত গুণটির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এর দ্বারা -

i. আত্মোন্নয়ন ঘটে

ii. সমাজের শান্তি বজায় থাকে iii. বিশ্বের প্রতিটি বস্তুর প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত হয়

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i

খ. i ও ii

ঘ. i, ii ও iii

গ. ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন :

ক. যোগের মাধ্যমে ঈশ্বর আরাধনার প্রক্রিয়াকে কী বলে?

খ. অষ্টাঙ্গযোগের একটি ধাপ ব্যাখ্যা কর ।

গ. যোগাসনটিতে কী ত্রুটি রয়েছে তা নিরূপণ কর।

ঘ. মানসিক শান্তি এবং শারীরিক সুস্থতা আনয়নে চিত্রের আসনটির সঠিক অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- বিশ্লেষণ

Content added || updated By
Promotion