বৈশালীবাসী মহামারি থেকে রক্ষা পেল- 
i. দূষণ সম্বন্ধে অবগত হয়ে
ii. বুদ্ধের ব্যবহার্য পাত্র হতে জল ছিটিয়ে
iii. বুদ্ধের প্রধান সেবকের সূত্র পাঠের মাধ্যমে
নিচের কোনটি সঠিক?

Created: 10 months ago | Updated: 10 months ago
Updated: 10 months ago

চতুর্থ অধ্যায়

সূত্র ও নীতিগাথা

সূত্র ও নীতিগাথা হলো ভগবান বুদ্ধের মুখনিঃসৃত বাণী। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উপলক্ষে বুদ্ধ তাঁর শিষ্য ও উপাসক-উপাসিকাদের এগুলো দেশনা করেছিলেন। এগুলো ত্রিপিটকের অন্তর্গত সুত্তপিটকের বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়। সূত্র ও নীতিগাথাসমূহ বুদ্ধের শিক্ষা বা দর্শনের মর্মবাণী ধারণ করে আছে। এগুলো নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতি সাধনের পাশাপাশি ইহলৌকিক মঙ্গলও সাধন করে। এগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়। সাধারণত বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, বিপদ, রোগ, শোক এবং ভূত, প্রেত, যক্ষ জাতীয় অশুভ শক্তির কুপ্রভাব প্রভৃতি হতে সুরক্ষা এবং সর্বপ্রকার মঙ্গল কামনা করে পাঠ করা হয় । তবে একেক সূত্র একেক রকম উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়। যেমন, রতন সূত্র দুর্ভিক্ষ ও মহামারি হতে রক্ষা পেতে, করণীয় মৈত্রী সূত্র ভূত, যক্ষ প্রভৃতির উপদ্রব হতে রক্ষা পেতে, সু-পুর্ব্বগৃহ সূত্র অশুভ গ্রহের প্রভাব হতে রক্ষা পেতে, ভোজ্বঙ্গ সূত্র সকল প্রকার রোগ-শোক হতে রক্ষা পেতে, অঙ্গুলিমাল সূত্র গর্ভযন্ত্রণা হতে মুক্তি পেতে পাঠ করা হয়। ত্রিপিটকে এরূপ আরও অনেক সূত্র আছে যেগুলো পাঠ করলে নানারকম বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং বহুরকম মঙ্গল সাধিত হয়। এ অধ্যায়ে আমরা রতন সূত্র ও করণীয় মৈত্রী সূত্র অধ্যয়ন করব ।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

* রতন সূত্র ও করণীয় মৈত্রী সুত্রের পটভূমি বর্ণনা করতে পারব ;

 

 

 

 

 

পাঠ : ১ রতন সূত্রের পটভূমি

বৈশালী ভারতের লিচ্ছবিদের গণরাজ্য ছিল। এটি বর্তমানে বেসার নামে পরিচিত। তথাগত বুদ্ধের সময় বৈশালী অত্যন্ত সমৃদ্ধ নগরী ছিল। সেখানে রাজা, যুবরাজ, শ্রেষ্ঠি, সেনাপতি, কৃষক, বণিক প্ৰভৃতি নানা শ্রেণি ও জাতের লোক বসবাস করত। নানাপ্রকার খাদ্য সম্ভারে বৈশালী পরিপূর্ণ ছিল। অধিবাসীগণ পরম সুখে বসবাস করছিল।

একসময় বৈশালী নগরীতে প্রচণ্ড অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। মাঠ-ঘাট-ক্ষেত সব শুকিয়ে যায়। চাষবাস ও শস্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নগরীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অনাহারে প্রচুর লোক মৃত্যুবরণ করল । শবদেহ নগরের বাইরে নিক্ষিপ্ত করা হলো। পচাগন্ধে অনেক অমনুষ্য-পিশাচাদি নগরে প্রবেশ করল। অমনুষ্যের উপদ্রবে আরও অনেক লোক মারা গেল। বায়ু দূষণের কারণে শুরু হয় মহামারি। এতেও প্রচুর মানুষ ও জীবজন্তুর প্রাণহানি ঘটতে লাগল ।

অবশেষে বৈশালীবাসী দুর্ভিক্ষ, অমনুষ্য ও মহামারি - এ তিন উপদ্রবে ব্যতিব্যস্ত হয়ে রাজার কাছে গিয়ে নিবেদন করল, “মহারাজ ! নগরে ত্রিবিধ ভয় উৎপন্ন হয়েছে। পূর্বের সপ্ত রাজবংশের রাজত্বকালে এরূপ দুর্দশা কখনো উৎপন্ন হয়নি।” রাজার অধার্মিকতার কারণে এই দুর্দশা সৃষ্টি হয়েছে কি না তা জানার জন্য রাজজ্যোতিষীকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। জ্যোতিষী গণনা করে দেখলেন, এতে রাজার কোনো দোষ নেই । তারপর কীভাবে দুর্দশা দূর করা যায় তা নিয়ে সকলে চিন্তা করতে লাগলেন। চিন্তা করে সকলে স্থির করলেন যে, একমাত্র সর্বলোকহিতানুকম্পী, মহাঋদ্ধি ও মহানুভবতাসম্পন্ন ভগবান বুদ্ধের আগমনেই এ-দুর্দশা দূর হবে। অতঃপর প্রজাদের মঙ্গলের কথা ভেবে রাজা ঠিক করলেন, ভগবান বুদ্ধকে বৈশালীতে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসবেন । রাজা ভাবলেন, বুদ্ধ এলে বৈশালীর মানুষদের দুর্দশা কেটে যাবে, প্রাণ রক্ষা পাবে, মনোবল ফিরে পাবে এবং সমস্ত ভয় ও অমঙ্গল কেটে যাবে।

বুদ্ধ সেসময় রাজগৃহে অবস্থান করছিলেন । বৈশালীর রাজা তখন ভগবান বুদ্ধকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠালেন। দুইজন লিচ্ছবি কুমার সৈন্যবাহিনী ও উপঢৌকনসহ বুদ্ধকে আনতে যাত্রা করলেন। লিচ্ছবি কুমারগণ বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হয়ে অভিবাদনপূর্বক জানালেন, “ভন্তে ! আমাদের নগরে ত্রিবিধ ভয় উৎপন্ন হয়েছে। যদি করুণার আধার ভগবান করুণাবশত বৈশালীতে একবার পদার্পণ করেন, তা হলে আমাদের অশেষ কল্যাণ সাধিত হবে।” বৈশালীবাসীর প্রতি অনুকম্পাবশত ভগবান বুদ্ধ নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন এবং বৈশালীতে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। বৈশালীবাসীসহ রাজা ও রাজঅমাত্যগণ অতি সমারোহে পূজা ও সৎকার করতে করতে ভগবান বুদ্ধকে স্বরাজ্যে নিয়ে যান। ভগবান বুদ্ধ বৈশালী পৌঁছলে দেবরাজ ইন্দ্রদেবতা পরিবেষ্টিত হয়ে ভগবানকে অভ্যর্থনা করতে আসলেন। দেবগণের আগমনে অমনুষ্যগণ পালিয়ে গেল ।

অতঃপর ভগবান বুদ্ধ আনন্দ স্থবিরকে ডেকে বললেন, “আনন্দ, এই রতন সূত্র শিখে লিচ্ছবিদের নিয়ে বৈশালী নগর ঘুরে ঘুরে আবৃত্তি কর। এই সূত্রের প্রভাবে বৈশালীর দুর্ভিক্ষ, মহামারি ও ভয় দূর হয়ে যাবে।” বুদ্ধের নির্দেশে আনন্দ স্থবির রতন সূত্র আবৃত্তি শুরু করলেন এবং বুদ্ধের ব্যবহৃত পাত্রে জল নিয়ে সিঞ্চন করতে লাগলেন। সর্বার্থসাধক রতনসূত্র পাঠে রোগভয়, অমনুষ্য ভয় এবং দুর্ভিক্ষ ভয় – এই ত্রিবিধ

 

 

 

 

ভয় দূর হয়ে যায় । মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। আবার মাঠে মাঠে শস্যের সমারোহ ঘটে। বৈশালীবাসীর জীবনে শান্তি ফিরে এল। নগরের মানুষ আনন্দে উৎফুল্ল। সবাই ভগবান বুদ্ধের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সবাই করজোড়ে বুদ্ধের সম্মুখে এসে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন। এ হলো রতন সূত্রের পটভূমি। সূত্রটি সুত্তপিটকের অন্তর্গত খুদ্দকনিকায়ের খুদ্দক পাঠ গ্রন্থে পাওয়া যায় ।

 

 

 

 

অনুশীলনমূলক কাজ

দলগতভাবে শুদ্ধ উচ্চারণে রতন সূত্র পাঠ কর

পাঠ : ৩ রতন সূত্র (বাংলা)

১. ভূমিবাসী ও আকাশবাসী যেসব প্রাণী এখানে সমবেত হয়েছ, সকলে আনন্দিত হও। তারপর আমার বাক্য শ্রবণ কর।

২. হে ভূতগণ ! সেইহেতু আমার উপদেশ তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর । মানুষের প্রতি মৈত্রীভাবাপন্ন হয়ে তাদের হিত চিন্তা কর। তারা দিনরাত তোমাদের পূজা করে। এ কারণে অপ্রমত্তভাবে তাদের রক্ষা কর।

৩. ইহলোক বা পরলোকে যা কিছু বিত্ত (রত্ন) আছে, অথবা স্বর্গলোকে যা কিছু উত্তম রত্ন আছে, তাদের

কোনোটিই তথাগতের সমান নয়। এ সকল রত্ন হতে বুদ্ধ রত্ন শ্রেষ্ঠ। এ সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল)

হোক ।

৪. ধ্যানপরায়ণ শাক্যমুনি যে লোভ, দ্বেষ ও মোহ ক্ষয়কর, বিরাগ ও উত্তম অমত (নির্বাণ) ধর্ম অবগত হয়েছেন, সেই ধর্মের সমান কিছুই নেই। সকল রত্ন হতে এ ধর্মরত্ন শ্রেষ্ঠ। এ সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

৫. বুদ্ধশ্রেষ্ঠ যে শুচি (পবিত্র) সমাধির প্রশংসা করেছেন, যার ফল অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় তার

সমান অন্য কোনো সমাধি নেই। সকল রত্ন হতে ধর্মরত্ন (বুদ্ধ-প্রশংসিত সমাধি) শ্রেষ্ঠ। এ-সত্য

বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

৬. যে আট পুগ্গল (পুরুষ) বুদ্ধাদি সাধুগণ কর্তৃক প্রশংসিত, যাঁরা মার্গ ও ফল ভেদে চার জোড়, তাঁরা সুগতের শ্রাবক এবং দক্ষিণার উপযুক্ত পাত্র। সকল রত্ন হতে এই সঙ্ঘরত্ন (ভিক্ষুসঙ্ঘ) শ্রেষ্ঠ। এ-সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

৭. যাঁরা নিষ্কাম এবং গৌতমের শাসনে (ধর্মে) স্থিরচিত্তে নিবিষ্ট, তাঁরা অমৃতে ডুব দিয়ে বিনামূল্যে লব্ধ নির্বাণ ভোগ করছেন এবং প্রাপ্তব্য প্রাপ্ত (যা লাভ করতে হয় তা লাভী) নামে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। সকল রত্ন হতে এই সঙ্ঘরত্ন শ্রেষ্ঠ। এ সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

৮. ভূমিতে দৃঢ়রূপে প্রোথিত ইন্দ্রখীল (স্তম্ভ) চারদিকের প্রবল বায়ুতেও কাঁপে না। যিনি চতুরার্য সত্য সম্যকরূপে দর্শন করেছেন সেই সৎ পুরুষকেও আমি ইন্দ্রখীলের সঙ্গে তুলনা করি। সকল রত্ন হতে এই সঙ্ঘরত্ন শ্রেষ্ঠ। এ সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

 

 

 

 

৯. গভীর প্রজ্ঞাবান (বুদ্ধ) কর্তৃক সুন্দরভাবে দেশিত চতুরার্য সত্য যাঁরা (নিজে উত্তমরূপে অবগত হয়ে) বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করেন, তাঁরা অত্যন্ত প্রমত্ত হলেও আটবারের বেশি ভবে জন্মগ্রহণ করেন না। সকল রত্ন হতে এই সঙ্ঘরত্ন (যিনি চতুরার্য সম্যকভাবে জ্ঞাত ও প্রকাশ করেন) শ্রেষ্ঠ। এ-সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

১০. স্রোতাপন্ন ব্যক্তির দর্শন সম্পদ (সম্যক দৃষ্টি) লাভের সঙ্গে সঙ্গে যা কিছু সৎকায় দৃষ্টি, সন্দেহ ত্রিরত্নে অশ্রদ্ধা—এই তিন ধর্ম (ভ্রান্ত ধারণা) থাকে, তা দূরীভূত হয়। তিনি চার প্রকারের অপায় (নরক) হতে বিমুক্ত এবং ছয় প্রকার মহাপাপ (মাতৃহত্যা, পিতৃহত্যা, অহহত্যা, বুদ্ধের রক্তপাত, বুদ্ধ ব্যতীত অন্য শরণ গ্রহণ, সঙ্ঘভেদ) করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় না। সকল রত্ন হতে এই সঙ্ঘরত্ন শ্রেষ্ঠ এ-সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

১১. তিনি (স্রোতাপন্ন ব্যক্তি) কায়, বাক্য ও মনে কোনো পাপ করে গোপন করতে পারেন না। কারণ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে পাপ গোপন করা সম্ভব নয়। সকল রত্ন হতে এই সঙ্ঘরত্ন শ্রেষ্ঠ। এ-সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

১২. গ্রীষ্ম ঋতুর প্রথম মাসে (চৈত্র মাসে) বনের তরুলতায় ফুল ফুটলে বনভূমি যেমন মনোহর হয় তেমনি

নির্বাণগামী উত্তমধর্ম পরম হিতের জন্য (তথাগত বুদ্ধ) দেশনা করেছেন। সকল রত্ন হতে এই বুদ্ধরত্ন

শ্রেষ্ঠ। এ-সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

১৩. শ্রেষ্ঠ (বর), নির্বাণজ্ঞ (বরজ্ঞ), বিমুক্তি সুখদাতা (বরদ), উত্তম প্রতিপদ আহরণকারী (বরাহরো, অনুত্তর (বুদ্ধ) উত্তম বা শ্রেষ্ঠ ধর্ম দেশনা করেছেন। সকল রত্ন হতে এই বুদ্ধরত্ব শ্রেষ্ঠ। এ সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

১৪. (যাঁরা নির্বাণপ্রাপ্ত হয়েছেন তাঁদের) পুরাতন কর্ম ক্ষীণ, নতুন কর্ম উৎপত্তির সম্ভাবনা নেই, পুনর্জন্মে আসক্তিহীন, (পুনর্জন্মের) বীজ ক্ষীণ (নষ্ট), বৃদ্ধির ইচ্ছা নেই সেই সকল পণ্ডিত ব্যক্তি প্রদীপের মতো নির্বাণ প্রাপ্ত হন । সকল রত্ন হতে এই সঙ্ঘরত্ন শ্রেষ্ঠ। এ সত্য বাক্য দ্বারা শুভ (মঙ্গল) হোক ।

১৫. (তারপর দেবরাজ ইন্দ্র বললেন) ভূমিবাসী ও আকাশবাসী যে সমস্ত প্রাণী এখানে সমবেত হয়েছে, এসো সকলে মিলে দেবমানব পূজিত তথাগত বুদ্ধকে নমস্কার করি। এই নমস্কারের প্রভাবে সকলের শুভ (মঙ্গল) হোক ।

১৬. ভূমিবাসী ও আকাশবাসী যে সমস্ত প্রাণী এখানে সমবেত হয়েছে, এসো সকলে মিলে দেবমানব পূজিত ধর্মকে নমস্কার করি। এই নমস্কারের প্রভাবে সকলের শুভ (মঙ্গল) হোক ।

১৭. ভূমিবাসী ও আকাশবাসী যে সমস্ত প্রাণী এখানে সমবেত হয়েছে, এসো সকলে মিলে দেবমানব পূজিত সঙ্ঘকে নমস্কার করি । এই নমস্কারের প্রভাবে সকলের শুভ (মঙ্গল) হোক ।

 

 

 

 

শব্দার্থ

সমাগতানি-সমবেত; ভূম্মানি-ভূমিবাসী; অন্তলিখে-আকাশে; সুমনা-সুখী, সক্কচ্চং-মনোনিবেশসহকারে; নিসামেথ-শুনুন; মানুসিয়া পজায়- মানবগণের জন্য; হুরং-পরলোক; অমতং-অমৃত; পরিবণুযী-বর্ণনা করা হয়েছে; সমাধিমানন্ত রিকঞমাহু- যে সমাধির ফল সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়; পসখা-প্ৰশংসা দখিণেয্যা-দক্ষিণার যোগ্য; সুপযুত্তা-উত্তমরূপে কাজে নিযুক্ত; দহন-দৃঢ়ভাবে; নিক্কামিনো-নিষ্কাম; পত্তিপত্তা-সর্বশ্রেষ্ঠ পাওনা; যথিন্দখীলো- যেরূপ ইন্দ্রখীল বা স্তম্ভ, অরিযসচ্চানি-আর্যসত্যসমূহ; ভূসপ্পমত্তা-পৃথিবীতে সপ্রমত্ত থাকা (প্রমাদবহুল); আদিযন্তি-অধিক জন্মগ্রহণ করেন না; দসসনসম্পদায- অন্ত দৃষ্টি বা সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন ; বিচিকিচ্ছিতঞ্চ-সংশয়; বিপ্লমুত্তো-বিমুক্ত; দিট্ঠপদস-সত্যদৃষ্টি সম্পন্ন; বরঞ-নির্বাণজ্ঞ; বরদো-বিমুক্তি সুখদাতা; বরাহরো-উত্তম প্রতিপদ আহরণকারী বা নির্বাণরূপ শ্রেষ্ঠ মার্গ আহরণ করেছেন যিনি ।

 

 

 

পাঠ : ৪

করণীয় মৈত্রী সূত্রের পটভূমি

একদা ভগবান বুদ্ধ শ্রাবস্তীতে বাস করছিলেন। তখন বর্ষা সমাগত। বর্ষাবাসের জন্য ভিক্ষুরা পর্বতের গুহা বা বনের মধ্যে সুবিধামতো কোনো স্থান বসবাসের জন্য বেছে নিতেন। হিমালয় পর্বতের পাশে বনের মধ্যে সেরূপ স্থান ঠিক করে পাঁচশত ভিক্ষু বর্ষাবাস শুরু করলেন। কাছাকাছি গ্রাম থেকে তাঁরা ভিক্ষান্ন সংগ্রহ ও ভোজন করে পরম সুখে কর্মস্থান ভাবনা করতেন। নির্মল জলবায়ু সেবন এবং সুখাদ্যে তাঁদের শরীর-মন বেশ ভালো হলো ।

সেই বনের মধ্যে ছিল বহু বৃক্ষদেবতা। তারা ভিক্ষুদের ধর্মজীবন ও শীলতেজের প্রভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। শীলের তেজ সহ্য করতে না পেরে বৃক্ষদেবতারা গাছ ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে যত্রতত্র পালিয়ে বেড়াতে লাগল । তারা কেবল ভাবছিল, কবে ভিক্ষুরা এই স্থান ত্যাগ করবে। যত তাড়াতাড়ি ভিক্ষুরা এই স্থান ত্যাগ করবে তত তাড়াতাড়ি তাঁরা আবার তাদের নিজের আবাসে ফিরে যেতে পারবে। কিন্তু বৃক্ষদেবতারা দেখল, ভিক্ষুরা বর্ষাবাস শেষ না করে স্থান ত্যাগ করবে না ।

একদিন ভিক্ষুদের বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে বৃক্ষদেবতারা এক রাতে ভয়ংকর আকৃতির মূর্তি ধারণপূর্বক ভিক্ষুদের সামনে ভীষণ চিৎকার করে ভয় দেখাতে লাগল। এতে ভিক্ষুরা খুব ভয় পেলেন। ফলে তাঁরা ধ্যান-সমাধিতে চিত্ত নিবিষ্ট করতে পারলেন না। ক্রমে তাঁরা অত্যন্ত কৃশ ও দুর্বল হয়ে পড়লেন। তারপর বৃক্ষদেবতাগণ ভয়ানক দুর্গন্ধ ছড়াতে লাগল। এতে ভিক্ষুদের ভয়ানক শিরঃপীড়া উৎপন্ন হলো। একদিন তাঁরা পরস্পর আলোচনা করে বর্ষবাসব্রত ত্যাগ করে শ্রাবস্তীতে ভগবান বুদ্ধের কাছে চলে এলেন। ভিক্ষুদের দেখে বুদ্ধ তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, তিনি বর্ষাবাসের সময় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন ভিক্ষুরা বুদ্ধের কাছে বর্ষাবাসের স্থান ছেড়ে আসার সব ঘটনা খুলে বললেন।

 

 

সব শুনে বুদ্ধ বললেন, “ভিক্ষুগণ, তোমরা আবার সে-স্থানে ফিরে যাও। আমি তোমাদের বৃক্ষদেবতাদের ভয় থেকে পরিত্রাণের উপায় বলে দিচ্ছি। বৃক্ষদেবতা বা যক্ষদের সাথে শত্রুভাব পোষণ না করে মৈত্রীভাব পোষণ কর। তোমরা ধৈর্য ধরে তাদের প্রতি মৈত্রী ও করুণা প্রদর্শন কর।” এই বলে বুদ্ধ তাঁদের করণীয় মৈত্রী সূত্র দেশনা করলেন এবং বললেন, “এই সূত্র শিক্ষা করে বনে ফিরে যাও। প্রতিমাসে অষ্টধর্ম শ্রবণ দিবসে (আটটি উপোসথ দিবসে) এই সূত্র উচ্চস্বরে পাঠ করবে। এ বিষয়ে ধর্মকথা বলবে, প্রশ্নোত্তর করবে, অনুমোদন করবে। সেই অমনুষ্যগণ আর ভয় দেখাবে না । তোমাদের উপকারী ও হিতৈষী হবে।”

বুদ্ধের উপদেশমতো ভিক্ষুরা সেই স্থানে ফিরে গিয়ে করণীয় মৈত্রী সূত্র পাঠ ও মৈত্রী-ভাবনায় রত হলেন। করণীয় মৈত্রী সূত্র পাঠের প্রভাবে বৃক্ষদেবতাদের উপদ্রব বন্ধ হলো। মৈত্রী ও করুণার প্রভাবে বৃক্ষদেবতারা আর ভিক্ষুদের কোনো উৎপাত করল না, অধিকন্তু অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তে তাঁদের সেবায় রত হলো। অবশেষে ভিক্ষুরা সেখানে বর্ষাবাস শেষ করতে সক্ষম হন। এই সূত্রে নির্বাণ লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিগণের করণীয় মৈত্রী ভাবনার নির্দেশনা আছে, তাই সূত্রটির নাম ‘করণীয় মৈত্রী সূত্র'। পালিতে এই সূত্রের নাম ‘করণীয় মেত্তসুত্তং'।

অনুশীলনমূলক কাজ

বৃক্ষ দেবতারা কেন আতঙ্কিত হয়েছিলেন? ভিক্ষুরা কেন বর্ষাবাসব্রত ত্যাগ করেছিলেন? 

ভিক্ষুদের কথা শুনে বুদ্ধ কী বলেছিলেন?

পাঠ : ৫

করণীয় মেত্তসুত্তং (পালি)

করণীযমখকুসলেন যন্তং সন্তং পদং অভিসমেচ্চ, সক্কো উজু চ সুজু চ বচো চ মুদু অনতিমানী ।

২. সন্তুসকো চ সুডরো চ অল্পকিচ্চো চ সল্লহুকবুত্তি, সন্তিন্দ্ৰিয়ো চ নিপকো চ অপগব্‌ভো কুলেসু অননুগিদ্ধো

৩. ন চ খুদ্দং সমাচরে কিঞ্চি যেন বিষ্ণু পরে উপবদেযং, সুখিনো বা খেমিনো হোন্তু সব্বে সত্তা ভবন্তু সুখিতত্তা

8. যে কেচি পানাভূতখি তসা বা থাবরা বা অনবসেসা, দীঘা বা যে মহন্তা বা মক্কিমা রসকাণুকা ধূলা ।

৫. দিঠা বা যেবা অদিট্ঠা যে চ দূরে বসন্তি অবিদূরে, ভূতা বা সম্ভবেসী বা সব্বে সত্তা ভবন্তু সুখিতত্তা।

 

 

 

 

৬. ন পরো পরং নিকুব্বেথ নাতিমঞেথ কথচি নং কঞ্চি,

৭. ব্যারোসনা পটিঘসঞ নাঞঞমঞঞস দুক্‌খমিচ্ছেয্য। মাতা যথা নিযং পুত্তং আসা একপুত্তমনুরক্‌খে, এবম্পি সব্বভূতেসু মানসং ভাবযে অপরিমাণং।

৮. মেত্তঞ্চ সব্বলোকস্মিং মানসং ভাবযে অপরিমাণং, উদ্ধং অধো চ তিরিযঞ্চ অসম্বাধং অবেরং অসপত্তং।

৯. তিট্ঠং চরং নিসিন্নো বা সখনো বা যবতস্স বিগতমিদ্ধো, এতং সতিং অধিঠেয্য ব্রহ্মমেতং বিহারমিধমাহু।

১০. দিঠিঞ্চ অনুপগস্ম সীলবা দসনেন সম্পন্নো, কামেসু বিনেয্য গেধং নহি জাতু গৰ্ভসেয্যং পুনরেতীতি ।। 

অনুশীলনমূলক কাজ

দলগতভাবে শুদ্ধ উচ্চারণে করণীয় মৈত্রী সূত্র পাঠ কর

 

পাঠ : ৬

করণীয় মৈত্রী সূত্র (বাংলা)

. শান্তিময় নির্বাণপদ লাভে অভিলাষী, করণীয় বিষয় সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত ব্যক্তি – সক্ষম, সরল বা ঋজু, খুব সরল, সুবাধ্য, কোমলস্বভাব ও অভিমানহীন হবেন ।

২. (তিনি সর্বদা যথালাভে) সন্তুষ্ট, সুখপোষ্য, অল্পে তুষ্ট, শান্তেপ্রিয়, অভিজ্ঞ, অপ্রগল্ভ বা বিনীত এবং গৃহীদের প্রতি অনাসক্ত হবেন।

৩. এমন কোনো ক্ষুদ্র (নীচ) আচরণ করবেন না যাতে অন্য বিজ্ঞগণ নিন্দা করতে পারেন। সকল প্রাণী সুখী হোক, ভয়হীন বা নিরাপদ হোক, শান্তি ও সুখ উপভোগ করুক—এরূপ চিন্তা করতে হবে।

8. যেসব প্রাণী অস্থির বা স্থির, দীর্ঘ বা বড়, মধ্যম বা হ্রস্ব, ছোট বা স্থূল ।

৫. দেখা যায় বা দেখা যায় না, দূরে বা কাছে বাস করে, জন্মেছে বা জন্ম নেবে সেই সকল প্রাণীগণ সুখী হোক ।

৬. একে অপরকে বঞ্চনা করো না, কোথাও কাউকেও অবজ্ঞা করো না। হিংসা বা ক্রোধবশত কারো দুঃখ কামনা করো না ।

৭. মা যেমন একমাত্র পুত্রকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করেন, তেমনি সকল প্রাণীর প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব পোষণ করবে।

 

 

 

 

৮. সর্বলোকের প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব পোষণ করবে। ঊর্ধ্ব, নিম্নে ও বক্রভাবে (যত প্রাণী আছে

তাদের প্রতি) ভেদজ্ঞান-রহিত, বৈরীহীন ও শত্রুতাহীন হবে । 

৯. দাঁড়ানো অবস্থায়, চলমান অবস্থায়, বসা বা শোয়া অবস্থায় এবং না ঘুমানো পর্যন্ত এই স্মৃতি অধিষ্ঠান করবে। একে ব্রহ্মবিহার বলে । 

১০. শীলবান ও সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন স্রোতাপন্ন ব্যক্তি মিথ্যা দৃষ্টি পরিত্যাগপূর্বক কাম ও ভোগবাসনাকে দমন করে পুনর্বার গর্ভাশয়ে জন্মগ্রহণ করেন না ।

শব্দার্থ : সন্তং-শান্ত; সক্কো-সক্ষম বা সমর্থ; অভিসমোচ্চ-সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত হয়ে; উজু-ঋজু বা সরল; সুজুচ | -সুঋজু বা অতি সরল; সন্তুস্সকো-সন্তুষ্ট ব্যক্তি; সুভরো-সুখপোষ্য বা সহজে প্রতিপালন বা সাহায্য | করা যায়; অপ্পকিচ্চো-অল্পকৃত্য বা অল্প কর্তব্যযুক্ত; সল্লহু কবুত্তি-যে ব্যক্তি সহজে অভাব বোধ করে না | এবং অভাববোধ করলে তা সহজে পূর্ণ করে নিতে পারে, অল্পে তুষ্ট ; সন্তিন্দ্রিয়ো-শ্যান্তেন্দ্রিয়; নিপকো-প্রজ্ঞাবান; অল্পগভো-অপ্রগল্ভ, বিনীত, অহংকারহীন, বিবেকবান, লজ্জাশীল, শিষ্ট; অননুগিদ্ধো- | অনাসক্ত; উপবদেয্যুং-নিন্দা করা; খেমিনো-যিনি নিরাপত্তা বা শান্তি উপভোগ করেন; পাণভুতত্থি-জগতের | প্রাণিকুল; থাবরা-স্থির, অনবসেসা-সম্পূর্ণরূপে; তিরিযঞ্চ-বক্রভাবে, অসরলভাবে; অসম্বাধং-ভেদজ্ঞানরহিত; অবেং-বৈরহীন, অসপত্তং-শত্রুতাহীন; তিষ্ঠ-দাঁড়ানো; বিগতমিদ্ধো-না ঘুমানো পর্যন্ত; অধিট্ঠেয্য-অধিষ্ঠান; নিকুব্বেত্থ-বঞ্চনা; মানসং ভাবসে-মৈত্রী পোষণ করবে।

অনুশীলনমূলক কাজ

করণীয় মৈত্রী সূত্রের বাংলা অনুবাদ লেখ (দলগত কাজ)

পাঠ : ৬

রতন সূত্র ও করণীয় মৈত্রী সূত্রের গুরুত্ব

মানুষ ও দেবতাদের মধ্যে রতন সূত্রের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম। রতন সূত্রে বুদ্ধ রত্ন, ধর্ম রত্ন ও সঙ্ঘ রত্নের গুণকীর্তন করা হয়েছে। এই তিনটি রত্নকে একত্রে ত্রিরত্ন বলা হয়। ত্রিরত্নের শরণ নিলে সবরকম অকুশল কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়। চিত্তের সংযম রক্ষা করা যায়। রতন সূত্রে চতুরার্য সত্যের মধ্যে যে অন্তর্নিহিত শক্তি আছে সেই শক্তির কথা বলা হয়েছে। চতুরার্য সত্যকে যিনি জানতে পারেন তিনি সংসাররূপ মহাসাগরের সমস্ত কামনা, বাসনা, লোভ, দ্বেষ, মোহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। কামনা-বাসনা বা তৃষ্ণাহীন ব্যক্তি ইন্দ্রখীল বা প্রোথিত স্তম্ভের সাথে তুলনীয়। ইন্দ্রখীল যেমন প্রবল বায়ুর চাপেও কখনো কম্পিত হয় না, তেমনি চতুরার্য সত্য সম্যকভাবে জ্ঞাত ব্যক্তি লোভ-তৃষ্ণায় কম্পিত বা আসক্ত হন না। তিনি লক্ষ্যে অবিচল থাকেন। তাই বলা যায়, রতন সূত্র সকল প্রকার অমঙ্গল ও অকুশল কর্ম থেকে বিরত রেখে কুশলকর্ম সম্পাদনে উৎসাহী করে, স্বধর্মের পথে পরিচালিত হতে উদ্বুদ্ধ করে। স্বধর্মের পথে পরিচালিত ব্যক্তি সর্ব দুঃখের অবসান করে নির্বাণ লাভে সক্ষম হন।

 

 

 

করণীয় মৈত্রী সূত্রের নৈতিক শিক্ষা হলো, প্রত্যেক জীবের প্রতি মৈত্রীভাব পোষণ করা। কোনো জীবকে অবহেলা না করা । কারো অমঙ্গল কামনা না করা। ঘুমে, জাগরণে, ধ্যানে সর্বদা সকল জীবের প্রতি মৈত্রী-ভাবনা করা উচিত।

কারণ-মৈত্রী ভাবনা চিত্তকে সমাহিত করে। কায়-মন-বাক্য সংযত করে। বৈরিতা বা শত্রুতা দূর করে। ভালোবাসা জাগ্রত করে। নিজের জীবনের সঙ্গে তুলনা করে সকল জীবের প্রতি মৈত্রীভাবাপন্ন হতে শিক্ষা দেয়। অস্থির বা স্থির, দীর্ঘ বা বড়, মধ্যম বা হ্রস্ব, ছোট বা স্থুল; দৃশ্য-অদৃশ্য, কাছের-দূরের, জন্মগ্রহণ করেছে বা করবে-এরূপ সকল প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে এবং সর্বদা মঙ্গলকামনা করতে উদ্বুদ্ধ করে । বঞ্চনা ও অবজ্ঞা করা থেকে বিরত রাখে। হিংসা পরিত্যাগ ও ক্রোধ দমন করতে সাহায্য করে। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ যথার্থরূপে অনুসরণে প্রেরণা যোগায়। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণকারী ব্যক্তি কায়-মন-বাক্যে কোনো পাপ করেন না। ফলে তাঁর দ্বারা কোনো অকুশল কর্ম সম্পাদনও সম্ভব হয় না। ফলে তিনি নিজে এবং তাঁর সঙ্গে বসবাসকারীগণ নিরুপদ্রব বা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন। এভাবে মৈত্রীভাবনাকারী তৃষ্ণা নিরোধ করে পুনর্জন্ম রোধ করেন এবং নির্বাণ লাভ করতে সক্ষম হন। অতএব বলা যায়, স্বধর্মের পালনে বুদ্ধদেশিত রতন সূত্র ও করণীয় মৈত্রী সূত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

অনুশীলনমূলক কাজ

রতন সূত্রের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো উপস্থাপন কর (দলীয় কাজ)

করণীয় মৈত্রী সূত্রের নৈতিক শিক্ষা কী?

অনুশীলনী

শূন্যস্থান কর

১. একসময় বৈশালী নগরীতে প্রচণ্ড--------- দেখা দেয় ।

 

২. এতেন সচ্চেন---------হোতু ।

৩. সেই বনের মধ্যে ছিল বহু ---------।

8. --------- যথা নিযং পুত্তং আসা একপুত্তমনুরকখে

৫. মানুষ ও দেবতাদের মধ্যে---------সূত্রের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. বৈশালীতে অনাবৃষ্টির সময় ভগবান বুদ্ধ কোথায় অবস্থান করছিলেন ?

২. ভগবান বুদ্ধ বৈশালীর সীমানায় পা রাখার সাথে সাথে কী ঘটলো ?

৩. বৃক্ষদেবতারা কেন পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে গেল ?

8. করণীয় মৈত্রী সূত্রের নৈতিক শিক্ষা কী ?

৫. ভিক্ষুরা কীভাবে তাঁদের বর্ষাবাস শেষ করল?

 

 

 

বর্ণনামূলক প্রশ্ন

১. রতন সূত্র ও করণীয় মৈত্রী সূত্রের পটভূমি ব্যাখ্যা কর ।

২. করণীয় মৈত্রী সূত্রের বাংলা অনুবাদ লেখ।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। কোন সূত্র পাঠের মাধ্যমে অশুভ গ্রহের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ?

ক. ভোাঙ্গ সূত্র

খ. সু-পূৰ্ব্বণহ সূত্র

গ. অঙ্গুলিমাল সূত্র

ঘ. করণীয় মৈত্রী সূত্র

২। ঘুমে, জাগরণে, ধ্যানে সর্বদা সকল জীবের প্রতি মৈত্রী-ভাবনা করা উচিত, কারণ এতে –

i কায়-মন-বাক্য সংযত হয়

ii শত্রুতা দূর হয়

iii বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i ও ii

খ. ii ও iii

গ. i ও iii

ঘ. i, ii ও iii

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও

শ্রদ্ধেয় ধর্মশ্রী ভিক্ষু একাগ্র চিত্তে নিবিষ্ট হয়ে চতুরার্য সত্য সম্যকরূপে দর্শন করেছেন। এই সম্যক জ্ঞানলাভের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সৎকায়দৃষ্টি, সন্দেহ, ত্রিরত্নের প্রতি অশ্রদ্ধা এই তিন ধরনের ভ্রান্ত ধারণা দূরীভূত হয়।

৩। শ্রদ্ধেয় ধর্মশ্রী ভিক্ষুকে কিসের সঙ্গে তুলনা করা যায় ?

ক. স্তম্ভ

খ. ধর্মরত্ন

গ. সংঘরত্ন

ঘ. সমাধি

৪। উক্ত ভিক্ষুর তিন ধরনের ভ্রান্ত ধারণা দূরীভূত হওয়ার ফলে, তিনি

i চার প্রকার নরক হতে মুক্তি পাবেন

ii মাতৃহত্যা, পিতৃহত্যা, অর্থৎ হত্যা করা থেকে বিরত হবেন iii বার বার জন্মগ্রহণ করবেন।

 

 

 

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i

খ. i ও ii

গ. ii ও iii

ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন :

১.

 

ক. করণীয় মৈত্রী সূত্রের নৈতিক শিক্ষা কী ?

খ. ভিক্ষুরা কেন বর্ষাবাস ত্যাগ করেছিলেন ? ব্যাখ্যা কর।

গ. ছকে বর্ণিত সমস্যাবলির সঙ্গে বুদ্ধের কোন সূত্রের ইঙ্গিত রয়েছে ব্যাখ্যা কর।

ঘ. বর্তিকা নগরীর সমস্যা সমাধানে উক্ত সূত্রের প্রভাব ধর্মীয় আলোকে বিশ্লেষণ কর।

২. পারমিতা বড়ুয়া দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী। সে তার পিতামাতার একমাত্র সন্তান। হঠাৎ সে

গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করার পর তাদের বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের অশুভ আভাস পরিলক্ষিত হয়।

ক. বৈশালী বর্তমানে কী নামে পরিচিত ?

খ. সূত্র পাঠ করার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর ।

গ. উল্লিখিত ঘটনার বিষয় কোন সূত্রের ইঙ্গিত বহন করে ? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উক্ত সূত্র পাঠ ব্যতিরেকে পরিস্থিতি নিরসন সম্ভব নয়”—আলোচনা কর।

Content added by
Promotion