SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান - ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বই | NCTB BOOK

আমাদের প্রথম পড়া দাঁতটি আমরা কী করেছি?

রুপা আজ ক্লাসে এসেছে কাগজে মোড়ানো একদম ছোট্ট একটা কিছু নিয়ে। সবাই বলল, “কী এর ভেতরে? খুলে দেখাও। ” রুপা মোড়ানো কাগজ খুলতেই বেরিয়ে এলো সাদা ছোট্ট একটি দাঁত। রুপা বলল, “আমার ছোট বোনের দাঁত পড়েছে। এটি সে ঘুমানোর সময় তার বালিশের নিচে রেখেছে। সে ভাবছে একটি পরি এসে তার দাঁত নিয়ে যাবে আর তাকে একটি উপহার দিয়ে যাবে। এটি সে বিদেশি কার্টুনে দেখেছে”। আনুচিং বলল, “আসলেই কি পরি আসবে?” রুপা বলল, “আরে না, আমার মা-ই উপহার কিনে বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে। ” সবাই হেসে উঠল।

এবারে ক্লাসের সবাই তাদের প্রথম পড়া দাঁতটি কী করেছিল তা বন্ধুদের বলল। তুমি তোমার প্রথম পড়া দাঁতটি কী করেছিলে? ছবি এঁকে তোমার বন্ধুদের সেই গল্পটি বলতে পারো।

 

আমার প্রথম পড়া দাঁতটির গল্প

ছবিসহ আমার প্রথম পড়া দাঁতটির গল্প লিখি

আমার প্রথম পড়া দাঁতটি আমি ...

 

 

ছবি আঁকি…..

 

 

খুশি আপা ক্লাসে ঢুকতেই সবার প্রশ্ন- “আপা, সত্যিই কি দাঁত নেওয়ার জন্য পরী আসে? আপা, ইঁদুর এসে কি সত্যিই আমাদের দাঁত নিতে পারে?”

খুশি আপা বলল, “তোমাদের কী মনে হয়? চলো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি। সাথে এই দাঁত পড়া নিয়ে বাড়িতে, এলাকায়, বন্ধু, প্রতিবেশী, আর আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কী কী গল্প, কথা, প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে তাও জানার চেষ্টা করি। চলো নিচের সারণি থেকে একনজরে অনুসন্ধানের ধাপগুলো দেখে নিই।

 

একনজরে অনুসন্ধানের ধাপ

ধাপধাপটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনাউদাহরণ
অনুসন্ধানের জন্য বিষয়বস্তু (Topic) নির্ধারণ করাযে বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে

যেমন- “আমাদের এলাকায় পরিবর্তন”

অনুসন্ধানের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন (Inquiry | Question) উত্থাপন করাআগের ধাপে নির্ধারিত বিষয়বস্তু সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন আমরা চিন্তা করে লিখব বা তৈরি করব। এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই আমরা অনুসন্ধানী ধাপগুলোর মাধ্যমে খুঁজে বের করব।

যেমন- “আমাদের এলাকায় পরিবর্তন” বিষয়ের জন্য অনুসন্ধানী প্রশ্ন হতে পারে :

প্রশ্ন-১. আমাদের এলাকায় আগে রাস্তাঘাট কী রকম ছিল?

প্রশ্ন-২ আগে আমাদের এলাকার মানুষের কী কী পেশা ছিল?

প্রশ্ন-৩ আগে এলাকায় কী কী উৎসব পালন হতো?

প্রশ্ন থেকে মূল ধারণা (key concept) খুঁজে বের করাপ্রতিটি অনুসন্ধানের প্রশ্নের মধ্যে এক বা একাধিক মূল ধারণা রয়েছে। সেগুলো চিহ্নিত করতে পারলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে কোথা থেকে আর কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করা দরকার।যেমন- প্রশ্ন-১. আমাদের এলাকায় আগে রাস্তাঘাট কী রকম ছিল? এই প্রশ্নে তিনটি মূল ধারণা রয়েছে:
তথ্যের উৎস (Data Source) নির্বাচন করাযে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি সেটি জানার জন্য কার কাছে বা কোথায় যেতে হবে? যেমন- হতে পারে কোনো জাদুঘর বা সংগ্রহশালা, কোনো বই বা ম্যাগাজিন, কোনো মানুষ যে এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন, কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, ইন্টারনেট, ভিডিও ইত্যাদি।

যেমন- প্রশ্ন-১. আমাদের এলাকায় আগে রাস্তাঘাট কী রকম ছিল?

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমরা এলাকার বয়োজেষ্ঠ্য মানুষের কাছে যেতে পারি, আগের কোনো মানচিত্র দেখতে পারি, বা এ বিষয়ে কোনো লেখা পড়তে পারি। এগুলো আমাদের তথ্য উৎস।

তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি (Data collection | method) নির্ধারণতথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি হলো যে উপায়ে আমরা তথ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্ৰহ করব- যেমন- প্রশ্নমালা, সাক্ষাৎকার, পর্যবেক্ষণ, দলীয় আলোচনা ইত্যাদি।প্রশ্ন-১. আমাদের এলাকায় আগে রাস্তাঘাট কী রকম ছিল? এর জন্য আমরা এলাকার বয়োজেষ্ঠ্য মানুষদের একসাথে করে দলীয় আলোচনা করতে পারি। তাদের আলোচনা থেকে আমরা আমাদের প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পারি। অথবা প্রত্যেকের সাক্ষাৎকার নিতে পারি।
তথ্য সংগ্রহ করা (Data Collection)এই ধাপে নির্বাচিত পদ্ধতিতে নির্বাচিত মানুষের কাছ থেকে বা স্থান থেকে তথ্য সংগ্ৰহ করা হবে।যেমন- প্রশ্ন-১. আমাদের এলাকায় আগে রাস্তাঘাট কী রকম ছিল? এটি জানার জন্য আমরা ৪/৫ জন বয়সে বড় এমন মানুষ, অর্থাৎ বয়োজেষ্ঠ্য মানুষ নির্বাচন করে তাদের কাছে গিয়ে তাদের অনুমতি নিয়ে তাদের সাথে দলীয় আলোচনা করতে পারি। তাদের দেওয়া উত্তরগুলো লিখে রাখব অথবা রেকর্ডও করতে পারি।
তথ্য বিশ্লেষণ করা (Data Analysis)আমরা যে তথ্য সংগ্রহ করি সেগুলো থেকে সরাসরি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না। সেগুলো পড়তে হয়, সাজাতে হয়, অথবা কিছু হিসাব নিকাশ করতে হয়। এর ফলে তথ্য হয়ে ওঠে অর্থপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াকে বলে তথ্য বিশ্লেষণ।

সংগ্রহ করা তথ্য ব্যবহার করে আমরা আগের সময়ের রাস্তাঘাট চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র তৈরি করতে পারি।

আবার ৩ জনের তথ্য কে একত্রিত করে এলাকার প্রধান প্রধান সড়কপথগুলো সম্পর্কে বর্ণনা লিখতে পারি।

ফলাফল বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Results/ Findings)তথ্য বিশ্লেষণের পর আমরা আমাদের অনুসন্ধানী প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই। এটিই আমাদের ফলাফল। অর্থাৎ আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম।যেমন- ওপরের উদাহরণের ক্ষেত্রে আমাদের ফলাফল হতে পারে: আগে আমাদের এলাকায় উত্তর পশ্চিম পাশে কোনো সড়ক ছিল না। এখন সেখানে অনেক বড় একটা সড়ক তৈরি হয়েছে। এর ফলে এখন উত্তর আর দক্ষিণের মধ্যে যাতায়াত সহজ হয়েছে। তবে আগে অনেক ছোট ছোট মেঠো পথ ছিল। এখন সেগুলো নেই। মানুষ এখন পায়ে হেঁটে চলাচল কম করে।
ফলাফলটি অন্যদের কাছে উপস্থাপন বা শেয়ার করা (Communicating the result)নানা উপায়ে আমরা আমদের অনুসন্ধানী প্রক্রিয়ায় পাওয়া ফলাফল অন্যদের সামনে তুলে ধরতে পারি। যেমন- | গ্রাফ, সারণি, ছবি, ভিডিও, লিখিত প্রতিবেদন, নাটক ইত্যাদি।যেমন ওপরের উদাহরণের ক্ষেত্রে:

দাঁত পড়া নিয়ে মজার মজার রীতি-নীতি অনুসন্ধান

আজ সবাই দলে ভাগ হয়ে দাঁত পড়া নিয়ে মজার মজার রীতি-নীতি অনুসন্ধান করবে। রূপা বলল, “সব পরিবারেই একই রীতি-নীতি। দাঁত বালিশের নিচে রেখে পরীর জন্য অপেক্ষা করা”। সাব্বির বলল, “আহা রূপা অনুসন্ধানের ফলাফল আগেই কি অনুমান করা যায়?” রূপা বলল, “কিন্তু আমার মাথায় এই চিন্তাটি এলো, তাই বললাম”। আনুচিং বলল, আচ্ছা ঠিক আছে,ঠিক আছে, থামো। আমরা বরং অনুসন্ধানে নেমে পরি। অনুসন্ধান শেষেই বোঝা যাবে রূপার অনুমান কি সঠিক ছিল কি না”।

 

অনুসন্ধানী কাজ-১

 

বিষয়বস্তু :  দাঁত পড়া নিয়ে রীতি-নীতি

অনুসন্ধানের প্রশ্ন:- দাঁত পড়া নিয়ে আমাদের পরিবার বা এলাকা বা সমাজে কী ধরনের রীতি-নীতি আর গল্প প্রচলিত আছে?

প্রশ্নে যে মূল বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:-

         * আমাদের পরিবার, এলাকা ও সমাজ 

         * প্রথম দাঁত পড়লে রীতি-নীতি বা নিয়ম-কানুন 

         * দাঁত নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন গল্প বা চিন্তা-ভাবনা

কার কাছে বা কোথায় গেলে জানতে পারব? (তথ্যের উৎস):

কী উপায়ে জানবো ও তথ্য সংগ্রহ করব? (তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি):

তথ্য সংগ্ৰহ: এ জন্য আমরা নিচে দেওয়া ছকটি ব্যবহার করতে পারি। দলের সবাই মিলে বিভিন্ন এলাকার ও বিভিন্ন সময়ের মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করল।

তথ্য বিশ্লেষণ: একই রকম তথ্যগুলোকে একসাথে করল, যেমন- এলাকাভিত্তিক তথ্য, বিভিন্ন সময়ের তথ্য (বিভিন্ন বয়সী মানুষের কাছ থেকে নেওয়া)।

ফলাফল বা সিদ্ধান্ত:

উপস্থাপন: রবিন আর তার দল তাদের অনুসন্ধানী কাজ ও তার ফলাফল ছবি এঁকে উপস্থাপন করল- | কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন এলাকার মানুষ প্রথম দাঁত পড়লে কী কী করে। ভিন্ন এলাকার দাঁত নিয়ে মজার মজার | গল্প বলল। অন্যরাও নানা উপায়ে উপস্থাপন করল তাদের অনুসন্ধানী কাজ।

তথ্য সংগ্রহের ছক:

কার কাছ থেকে তথ্য নিলাম?প্রথম দাঁত পড়লে কী করে?দাঁত নিয়ে মজার কোনো চিন্তা/প্রচলিত গল্প
সাবিহা খাতুন (ফাতেমার দাদি), রাজশাহী  
   
   
   
   

সবার উপস্থাপনা শেষে রূপা বলল, “নাহ, যা ভেবেছিলাম তা ঠিক না। আমার অনুমানটি সঠিক নয়। দাঁত পড়ার রীতি-নীতি সব এলাকা বা সমাজে একই নয়, ভিন্ন ভিন্ন। সাব্বির বলল, “অনেক বিষয়েই আমাদের এ রকম কিছু অনুমান থাকে, এগুলো আমাদের ব্যক্তিগত ধারণা বা চিন্তা। অনুসন্ধানী কাজের মাধ্যমে আমরা সেটি যাচাই করতে পারি, আমাদের ধারণাও পাল্টাতে পারি”।

 

বন্ধুর দলের কাজের মূল্যায়ন করি

বন্ধুদের উপস্থাপনা মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি। নিচের ছকে অনুসন্ধানের প্রতি ধাপে অনুসন্ধানকারীর কাছ থেকে যে প্রত্যাশা বা আদর্শ কাজ তা দেওয়া আছে। সেগুলো বিবেচনা করে প্রতি দলের অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াকে কীভাবে আরও উন্নয়ন করা যায়, কী করলে বা না করলে আরও ভালো হতো এবং কেন, এগুলো বুঝিয়ে বলি, আর খুব ছোট ও সংক্ষেপ করে নিচের চার্টে লিখি। বন্ধুদের ভালো কাজের প্রশংসা করতেও ভুলবোনা আমরা। এঁকে বলে ফিডব্যাক (Feedback) দেওয়া। প্রতি ধাপে তাদের কাজটি সঠিকভাবে করতে পেরেছে/আংশিক পেরেছে/আর অনেক সাহায্যের দরকার- এই ৩টির কোনো একটি লিখব তাদের কাজটি আদর্শের সাথে তুলনা করে।

আদর্শ/ প্ৰত্যাশাঅনুসন্ধানের প্ৰশ্ন (প্রশ্নটি বা প্রশ্নগুলো সুনির্দিষ্ট, আকর্ষণীয় ও অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে সমাধান যোগ্য)প্রশ্নের মূল বিষয়বস্তু (প্রশ্নে যে মূল বিষয় আছে সেগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছে)তথ্য উৎস (প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্য এক বা একাধিক উপযুক্ত তথ্য উৎস উল্লেখ করতে পেরেছে) তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি (তথ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করতে পেরেছে)তথ্য সংগ্রহ (পরিকল্পনা অনুযায়ী তথ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে ও রেকর্ড করতে পেরেছে।তথ্য বিশ্লেষণ (সঠিক উপায়ে তথ্য সাজিয়ে/ হিসাব নিকাশ করে অনুসন্ধানী প্রশ্নের উত্তর/ সমাধানে পৌঁছাতে পেরেছে।)ফলাফল উপস্থাপন (স্পষ্টভাবে ও আকর্ষণীয় ও অনুসন্ধানী প্রক্রিয়া আর ফলাফল উপস্থাপন করেছে)মন্তব্য/ফিডব্যাক
দল-১        
দল-২        
দল-৩        
দল-৪        
দল-৫        

 

নিজ দলের সদস্যদের মূল্যায়ন

পুরোপুরি করেছে, কিছুটা করেছে, আরও অনেক উন্নতি করতে হবে- এই কথাগুলো ব্যবহার করে ফিডব্যাক দিতে পারি আমরা আমাদের নিজ দলের বন্ধুদের।

দলের সদস্যদের নামআংশগ্রহণ (পুরো অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে)অন্য সদস্যদের সাহায্য করা (যখন যেই সদস্যর সাহায্য প্রয়োজন, নিজেই আগ্রহ নিয়ে সাহায্য করেছে)অন্যের মতামতের প্ৰতি শ্ৰদ্ধা (সব সময় বন্ধুদের মতামত শ্রদ্ধা করেছে, নিজের মতের সাথে না মিললেও)মতামত বা ফিডব্যাক
আনাই    
সুমন    
রূপা    
ফাতেমা    

 

ব্যক্তিগত ধারণা ও তার যাচাই: যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো

আনুচিং আজ ক্লাসে এসে বলল, “খুশি আপা, কাল রূপা যা অনুমান করেছিল তাকে বলে হাইপথেসিস বা পূর্বের অনুমান, আমি বইয়ে পড়েছি”। রূপা বলল, “কী? হিপোপটেমাস না কি বললে এটা তুমি?” সবাই হেসে উঠল। খুশি আপা বললেন, “তাহলে আজ আনুচিং এ বিষয়ে একটা ছোট্ট ক্লাস পরিচালনা করুক। আনুচিং যা বলল তার সারমর্ম এ রকম:

পূর্বানুমান বা অনুমিত সিদ্ধান্ত (Hypothesis):

অনেক সময় আমরা আমাদের অনুসন্ধানী কাজের জন্য তথ্য সংগ্রহের আগেই আমাদের এই অনুসন্ধানের | ফলাফল সম্পর্কে একটা অনুমান করি। একে বলে পূর্বানুমান বা অনুমিত সিদ্ধান্ত (Hypothesis)। সাধারণত আমাদের ব্যক্তিগত ধারণা বা সাধারণ বুদ্ধি (Common sense) থেকে আমরা এ রকমটি মনে করে থাকি। আমাদের এই অনুমান ভুল বা সঠিক হতে পারে। আমরা অনুসন্ধনের জন্য যে তথ্য সংগ্রহ করি তার বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারি আমাদের এই পূর্বানুমান সঠিক নাকি ভুল ছিল। তখন আমরা প্রয়োজনে আমাদের ধারণাটি শুধরে নিই। এভাবেই আমরা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি। তাহলে কেউ আমার ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সেটি যে ব্যক্তিগত ধারণা নয় বরং বৈজ্ঞানিক ধাপ অনুসরণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে তা আমরা বুঝিয়ে বলতে পারব।

এসো আমরা আনুচিং এর কথা থেকে ব্যক্তিগত ধারণা আর যৌক্তিক সিদ্ধান্তের মধ্যে তুলনা করার চেষ্টা করি :

ব্যক্তিগত ধারণা বা অনুমানযৌক্তিক সিদ্ধান্ত
  
  
  
  
  

এখন খুশি আপার ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা তাদের বিভিন্ন অনুমান বা ব্যক্তিগত ধারণাকে যখনই সম্ভব অনুসন্ধানী কাজের মাধ্যমে যাচাই করে নেয়। তোমরাও তা করতে পার। নিচে রবিনের করা একটি উদাহরণ দেখতে পার।

বিষয়বস্তুআগের ধারণা বা অনুমানঅনুসন্ধানী কাজের বর্ণনাপরের ধারণা বা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত
আমাদের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পরিবারের ধরন।বেশির ভাগ শিক্ষার্থী একক পরিবারে বাস করছে।ক্লাসের সবার কাছ থেকে তাদের পরিবারের সদস্য সম্পর্কে তথ্য নিলাম।বেশির ভাগ শিক্ষার্থী একক পরিবারে বাস করছে (৭৫%)। এ ক্ষেত্রে অনুমিত সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল।
    
    

অনুসন্ধানী ধাপগুলোর বিশ্লেষণ বা প্রতিফলন:

নীলা আর গণেশ ক্লাসে তার নিজের তৈরি প্রতিফলন ডায়েরি নিয়ে এসেছে। প্রতিফলন মানে নিজের কাজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা, ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা। তারা দেখাল কী কী লিখেছে তারা সেই ডায়েরিতে। চাইলে তোমরাও এ রকম বানাতে পার। তাদের ডায়েরির একটি অংশ দেখো। এভাবে তারা প্রতি ধাপ নিয়েই লিখেছে...

তোমাদের প্রতিটি অনুসন্ধানী কাজের সময় ধাপগুলোতে প্রতিফলন করে তা লিখবে। বছর শেষে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে তোমরা অনুসন্ধানী ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করবে।

অন্য দেশের শিশুরা দাঁত পড়লে কী করে সেই দাঁত?

আজ ক্লাসে খুশি আপা বললেন, “আচ্ছা, আমাদের দেশে তো দেখলাম দাঁত পড়লে আমরা কী কী করি। তোমাদের কী মনে হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাচ্চাদের যখন দাঁত পড়ে যায় তখন তারা কী করে সেই দাঁত? আমাদের মতোই, নাকি ভিন্ন কিছু করে?”

সুমন বলল, “মনে হয় এগুলোই করে।”

সাদিয়া বলল, “বাংলাদেশ থেকে আফ্রিকা মহাদেশ কত দূরে! সেই মহাদেশের মানুষরা ভিন্ন কিছুও করতে পারে। ” মুনিয়া কাগজ দিয়ে চোঙ্গার মতো মাইক বানিয়ে ঘোষণা দিল, “বন্ধুরা এসবই তোমাদের ... সবাই চিৎকার করে বলে উঠল “হাইপোথিসিস”। “এগুলো যাচাই করে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আমাদের লাগবে...” সবাই কথা শেষ হবার আগেই বলল- “অনুসন্ধান” ।

খুশি আপা এবার কয়েকটি দেশে দাঁত পড়লে কী করার রীতি তা বললেন:

মিশর (Egypt) এর কথা মনে আছে? বলো তো মিশর কিসের জন্য বিখ্যাত? মিশরের শিশুরা তাদের প্রথম পড়ে যাওয়া দাঁতগুলো ছুড়ে দেয় সূর্যের দিকে আর সূর্য মামাকে বলে উজ্জ্বল সাদা নতুন দাঁত দিতে তাদের।

আনাই বলল, “আর কোন কোন দেশের বাচ্চারা কী কী করে দাঁত নিয়ে। ” খুশি আপা বললেন, “তোমরাই খুঁজে বের কর না। বিদেশে থাকা আত্মীয়, বন্ধু, ইন্টারনেট, বই, পত্রিকা খুঁজে দেখো।”

 

অনুসন্ধানী কাজ-২

বিষয়বস্তু: বিভিন্ন দেশের দাঁত পড়া নিয়ে প্রচলিত রীতি-নীতি ও গল্প

অনুসন্ধানের প্রশ্ন:- বিভিন্ন দেশে শিশুদের প্রথম দাঁত পড়লে তারা কী করে?

বিভিন্ন দেশে দাঁত পড়া নিয়ে কী কী গল্প প্রচলিত আছে?

প্রশ্নে যে মূল বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:-

        * তথ্য উৎস: 

        * তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি: 

        * তথ্য সংগ্রহ: এ জন্য আমরা নিচে দেওয়া ছকটি ব্যবহার করতে পারি 

        * তথ্য বিশ্লেষণ: ফলাফল বা সিদ্ধান্ত : 

        * উপস্থাপন:

মহাদেশ/দেশ/এলাকার নামদাঁত পড়লে রীতি-নীতিরীতি-নীতি সংক্রান্ত ধারণা
১/মিশর ও অন্যান্য কিছু মধ্যপ্রাচ্যের দেশশিশুরা সজোরে দাঁত সূর্যের দিকে ছুড়ে দেয়সূর্যের মতো উজ্জ্বল সাদা দাঁত উঠবে
২/অস্ট্রেলিয়া  
৩/ভারত  
৪/তাজিকিস্তান  

একটি এলাকার একাধিক রীতি-নীতিও থাকতে পারে।

সবাই অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে প্রশ্নের উত্তর খুঁজল। এবার তারা নানা উপায়ে তাদের এই তথ্য উপস্থাপন করল। সাদিয়াদের দল তো একটি মজার গান বানালো আর গেয়ে শোনাল বিভিন্ন দেশের নাম ও তাদের দাঁত সংক্রান্ত রীতি-নীতি। তোমরাও নানা উপায়ে তোমাদের ফলাফল উপস্থাপন করতে পার।

                        দুধদাঁত পড়ে

কেউ ছুড়ে দেয় দাঁতটি নিজের ইঁদুর ভায়ার গর্তে, 

বিনিময়ে ছোট্ট নতুন দাঁতকে পাবার শর্তে, 

কেউবা আবার দাঁতখানিকে বাড়ির ছাদে রাখে,

টিকটিকিতে দাঁতটি নিয়ে নতুন দেবে তাকে।

কিন্তু যদি দাঁতটি তোমার বাতসকে দাও ছুড়ে ,

দেখতে পাবে, একটি পাখি আসছে নিতে উড়ে।

সূর্যকে দেয় অনেক শিশু; উপায় আছে আরও

নতুন যে প্রশ্ন মাথায় এলো: কিছু কিছু এলাকায় আবার এই রীতি-নীতি গল্পগুলো একই কেনো? তোমাদের প্রশ্নগুলো প্রতিফলন ডায়েরিতে লিখে রেখো। এগুলো নিয়ে চিন্তা কর, অনুসন্ধান করো।


সমাজে প্রচলিত এসব নিয়ম-কানুন আসলে কী?

           চিন্তা করি বন্ধুর সাথে জোড়া গঠন করি ভাবনার আদান-প্রদান করি

খুশি আপা বললেন, “এই যে নিজ দেশ ও ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন দাঁত পড়ার রীতি-নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করলে, তোমাদের মনে আর কোনো প্রশ্ন আছে?” ওমা! সবার কত কত প্ৰশ্ন:-

* বিভিন্ন এলাকায় দাঁত পড়ার পর প্রচলিত যেই কাজগুলো, এগুলোকে কী বলে? এগুলোর কোনো নাম আছে?

* দাঁত পড়া ছাড়া অন্য বিষয়ে কি এ রকম প্রচলিত নিয়ম-কানুন আছে? থাকলে কী কী বিষয়ে আছে?

* এসব নিয়ম-কানুন কেন ও কীভাবে একটি এলাকায় তৈরি হয়?

* এসব নিয়ম-কানুনগুলো কি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়?

তোমরাও চিন্তা করে দেখো তোমাদের আরও কোনো প্রশ্ন আছে কি না এই সংক্রান্ত।

দীর্ঘদিন ধরে কোনো এলাকার মানুষ বা কোনো সমাজের মানুষ যে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, আচার-আচরণ মেনে চলে তাকে আমরা বলি প্রচলিত রীতি-নীতি। এগুলোর পিছনে প্রায়ই সেই এলাকার ও সেই সময়ের মানুষের বিভিন্ন বিশ্বাস জড়িত থাকে।

বিভিন্ন প্রচলিত রীতি-নীতি অনুসন্ধান

দাঁত পড়া নিয়ে আমরা বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন প্রচলিত রীতি-নীতি অনুসন্ধান করেছি। এছাড়া অন্যান্য বিষয়েও বিভিন্ন সমাজে নানা ধরনের রীতি-নীতি প্রচলিত আছে। আমরা সেগুলোও অনসন্ধান করতে পারি। দেখতে পারি -কোনো একটি সময়কালে, নির্দিষ্ট সমাজে এগুলো কেন তৈরি হয়েছে? অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে আমরা প্রশ্ন তৈরি করি ও উত্তর খুঁজি। বয়সে যারা বড় তারা হয়তো এগুলো অনুসন্ধানে তথ্য দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে।

 

অনুসন্ধানী কাজ-৩

 

বিষয়বস্তু: বাংলাদেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলিত রীতি-নীতি

কিছু অনুসন্ধানের প্রশ্ন (উদাহরণ):

        * শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক প্রবেশ করলে আমরা কেন দাঁড়াই? 

        * কবে থেকে এই প্রচলন এসেছে? 

        * কেন এই রীতির প্রচলন হলো? 

        * আর কোন কোন দেশে এ ধরনের প্রচলন আছে? কোন কোন দেশে নেই?

প্রশ্নে যে মূল বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:-

        * তথ্য উৎস : 

        * তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি: 

        * তথ্য সংগ্ৰহ: 

        * তথ্য বিশ্লেষণ: 

        * ফলাফল বা সিদ্ধান্ত : 

        * উপস্থাপন:

সমাজে প্রচলিত রীতি-নীতি ও সামাজিক কাঠামো কি সময়ের সাথে সাথে বদলায়?

# প্রাচীন কালের চীনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রচলিত গল্প থেকে জানা যায় যে চীনের কোন একটি এলাকায় একসময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের দিকে পিছন ফিরে বসে ক্লাস করতো। এখন আর করে না। আগের রীতিনীতি পরিবর্তিত হয়েছে। কারণ, আগে তারা বিশ্বাস করতো শিক্ষকের মুখোমুখি হযে বসা বেয়াদবি। এখন সময়ের সাথে সাথে তাদের এ বিশ্বাসে পরিবর্তন হয়েছে, রীতিনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে।

এসো খুশি আপার শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও দলে ভাগ হয়ে নিজ বা অন্য সমাজের কোনো নির্দিষ্ট রীতি-নীতির বা অন্য কোনো সামাজিক কাঠামো যেমন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইন, পরিবার ইত্যাদির পরিবর্তন অনুসন্ধান কৃত । আগের মতোই ধাপে ধাপে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আগাও ।

 

অনুসন্ধানী কাজ-৪

একটি অনুসন্ধানের প্রশ্ন নিয়ে অনুসন্ধান কাজ শুরু করি। এটি হতে পারে আমার নিজের সমাজের কোনো রীতি-নীতির পরিবর্তন অনুসন্ধান অথবা অন্য কোনো দেশ বা সমাজের।

বিষয়বস্তু: বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রীতি-নীতির পরিবর্তন

কিছু অনুসন্ধানের প্রশ্ন (উদাহরণ):

      * আমার নিজ সমাজের _________________ রীতি-নীতি কীভাবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে?

     * _______সমাজের ______  রীতি-নীতি সময়ের সাথে সাথে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?

     * আমাদের এলাকার পেশার পরিবর্তন হয়েছে কীভাবে?

     * বিভিন্ন সময় আমাদের রাষ্ট্রের পরিবর্তন হয়েছে কীভাবে? (৬ষ্ঠ শ্রেণির অনুসন্ধানী পাঠ এর সাহায্য নিতে পারো)।

     * বিভিন্ন সময় আমাদের সমাজে পরিবারের কাঠামোতে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে?

প্রশ্নে যে মূল বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:-

১) তথ্য উৎস ২) তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ৩) তথ্য সংগ্ৰহ ৪) তথ্য বিশ্লেষণ ৫) ফলাফল/সিদ্ধান্ত: ৬)উপস্থাপন:

 

মিলির স্বপ্ন

কয়েক দিন ধরেই ক্লাসে খুব গণ্ডগোল বেধে গেছে। ক্লাসের মধ্যে চলছে গুনগুন ফিসফিস। সবাইকে বেশ বিরক্ত মনে হয়। খুশি আপা আজ ক্লাসে ঢুকে বলল, “কি হয়েছে তোমাদের বলো তো?, সারা দিন তোমরা এত ঝগড়াঝাঁটি করছ, ক্লাসে সবাই মনে হচ্ছে এ ওর প্রতি রেগে আছ। তোমরাতো এ রকম কর না, মিলে মিশেই থাকো। কী হলো তোমাদের?” সবাই একসাথে হইচই করে উঠল।

আনাই বলল, “আপা, রূপা প্রতিদিন কারো না কারো জিনিস না বলে নিয়ে যাচ্ছে। আজ ও আমার টিফিন খেয়ে ফেলেছে”। গণেশ বলল, আমার স্কেল না বলে নিয়ে গেছে...”। আদনান বলল,, “আমার কলম নিয়ে গেছে”. রূপা কিছুই বলে না চুপ করে থাকে।

নাজিফা বলল, “খুশি আপা, শিহান আজ আপনি ক্লাসে ঢুকেছেন সেটা দেখেও উঠে দাঁড়ায়নি”। নন্দিনী উত্তেজিত হয়ে বলল, “কোনো শিক্ষক এলে শিহান উঠে দাঁড়াচ্ছে না। “শিহান ফিক ফিক করে হাসে। সবাই খুবি রেগে যায় তার ওপর।

এবার গণেশ বলল, “আপা রনি, একটু আগে ক্লাসে ঘোষণা দিল যে আপনি নাকি আজ ক্লাস নিবেন না”। শিহান বলল, “আরে, রনি তো প্রতিদিনই সবাইকে নানা মিথ্যা কথা বলছে। রনি তার ঝাঁকরা চুল চুলকায় এমনভাবে যেন সে কিছুই করেনি।

এ রকম অভিযোগ নানাজনের বিরুদ্ধে চলতেই থাকে। খুশি আপা বললেন, “আচ্ছা চলো এক এক জন করে সবার ঘটনাগুলো দেখি। আপা জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা বলো তো রনি কী করেছে? সবাই হই হই করে বলে উঠল, ও সারা দিন মিথ্যে কথা বলছে। আপা জিজ্ঞাসা করলেন, “তাতে কী হয়েছে?” সবাই তো খুশি আপার প্রশ্ন শুনে অবাক। সবাই বলল আপা মিথ্যা বলা খুবই খারাপ। আপা জিজ্ঞাসা করল, “কে বলেছে, কবে বলেছে মিথ্যা বলা খুবি খারাপ?” সবাই তো এবার ভাবলো খুশি আপা মনে হয় পাগল হয়ে গেছে। এগুলো কি প্রশ্ন! কিন্তু সবাই চিন্তায় পড়ল, আসলেই তো আমরা মিথ্যা কথা কেন পছন্দ করি না? মিথ্যা বলাকে কেন আমরা খারাপ মনে করি?

----------------ধড় ফড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠল মিলি। সে বলল, “উফ কি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম”

পরদিন মিলি ক্লাসে তার মজার স্বপ্নটির কথা খুশি আপা আর তার বন্ধুদের বলল। খুশি আপা বললেন, স্বপ্নের খুশি আপার মতো আমারও কিছু প্রশ্ন আছে তোমাদের জন্য:

 

মুক্ত আলোচনা:

কেন আমরা মিথ্যা বলাকে খারাপ মনে করি? 

মিথ্যা বলা খারাপ এটা আমরা কীভাবে, কার কাছ থেকে, কবে জানলাম? 

এ রকম আর কী কী বিষয় আছে যেগুলো সাধারণত আমরা সবাই পছন্দ বা অপছন্দ করি? 

এগুলোকে আমরা কী বলতে পারি?

যেসব বৈশিষ্ট্য আমরা সাধারণত পছন্দ করিযেসব বৈশিষ্ট্য আমরা সাধারণত অপছন্দ করি
১। সত্য কথা বলা১। বড়দের অসম্মান করা
২। সময়ানুবর্তীতা 
  
  

নন্দিনী বলল, সমাজে এ রকম কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা আমরা মানুষের মধ্য থাকলে ভালো বলি। আবার এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা আমরা মানুষের মধ্য থাকলো খারাপ বলি। এগুলো হলো আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত মূল্যবোধ বা ভেলুজ (Values)। সমাজে যেমন রয়েছে রীতি- নীতি, তেমনি রয়েছে কিছু মূল্যবোধ।

 

অনুসন্ধানী কাজ-৫

বিষয়বস্তু: 

কিছু অনুসন্ধানের প্রশ্ন (উদাহরণ):

* বর্তমানকালে বাংলাদেশের মানুষ বড়দেরকে সম্মান করা নিয়ে কী ধরনের মূল্যবোধ ধারণ করে আর আগে বাংলাদেশের মানুষ বড়দেরকে সম্মান করা নিয়ে কি ধরনের মূল্যবোধ ধারণ করত?

* বাংলাদেশের মানুষ বড়দেরকে সম্মান করা নিয়ে যে মূল্যবোধ ধারণ করে অন্য দেশের মানুষ ও কী একই রকম মূল্যবোধ ধারণ করে নাকি ভিন্ন রকম?

প্রশ্নে যে মূল বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:

     * তথ্য উৎস: 

     * তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি : 

     * তথ্য সংগ্ৰহ: 

     * তথ্য বিশ্লেষণ: 

     * ফলাফল/সিদ্ধান্ত: 

     * উপস্থাপন:

 

বন্ধুর দলের কাজের মূল্যায়ন করি

আদর্শ/ প্ৰত্যাশাঅনুসন্ধানের প্ৰশ্ন (প্রশ্নটি বা প্রশ্নগুলো সুনির্দিষ্ট, আকর্ষণীয় ও অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে সমাধান যোগ্য)প্রশ্নের মূল বিষয়বস্তু (প্রশ্নে যে মূল বিষয় আছে সেগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছে)তথ্য উৎস (প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্য এক বা একাধিক উপযুক্ত তথ্য উৎস উল্লেখ করতে পেরেছে) তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি (তথ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করতে পেরেছে)তথ্য সংগ্রহ (পরিকল্পনা অনুযায়ী তথ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে ও রেকর্ড করতে পেরেছে।তথ্য বিশ্লেষণ (সঠিক উপায়ে তথ্য সাজিয়ে/ হিসাব নিকাশ করে অনুসন্ধানী প্রশ্নের উত্তর/ সমাধানে পৌঁছাতে পেরেছে।)ফলাফল উপস্থাপন (স্পষ্টভাবে ও আকর্ষণীয় ও অনুসন্ধানী প্রক্রিয়া আর ফলাফল উপস্থাপন করেছে)মন্তব্য/ফিডব্যাক
দল-১        
দল-২        
দল-৩        
দল-৪        
দল-৫        

 

নিজ দলের সদস্যদের মূল্যায়ন

পুরোপুরি করেছে, কিছুটা করেছে, আরও অনেক উন্নতি করতে হবে- এই কথাগুলো ব্যবহার করে ফিডব্যাক দিতে পারব আমরা।

দলের সদস্যদের নামআংশগ্রহণ (পুরো অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে)অন্য সদস্যদের সাহায্য করা (যখন যেই সদস্যর সাহায্য প্রয়োজন, নিজেই আগ্রহ নিয়ে সাহায্য করেছে)অন্যের মতামতের প্ৰতি শ্ৰদ্ধা (সব সময় বন্ধুদের মতামত শ্রদ্ধা করেছে, নিজের মতের সাথে না মিললেও)মতামত বা ফিডব্যাক
আনাই    
কাকন    
নাহিদ    
গণেশ    

সব দল নানা উপায়ে তাদের সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তনশীলতার অনুসন্ধান উপস্থাপন করল নানা উপায়ে। তারা সবাই একমত হলো যে :

কিছু কিছু সামাজিক মূল্যবোধ আছে যেগুলো সাধারণত পৃথিবীর সব দেশেই একই রকম যেমন মিথ্যা বলা বা চুরি করাকে খারাপ মনে করা আর সবার সাথে মিলে মিশে থাকাকে ভালো মনে করা হয়। আবার কিছু কিছু মূল্যবোধ আছে যেগুলো সমাজ বা দেশ ভেদে ভিন্ন হতে পারে। সময়ের সাথে সাথেও আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়। এগুলো কোনোটাই অপরিবর্তনশীল বা ধ্রুব নয়।

আমাদের জীবনে সামাজিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধের চর্চা

এবারে বন্ধুরা দলে বসে কিছু সামাজিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধের তালিকা তৈরি করল, যা তারা চর্চা করতে চায়। সেখান থেকে বাছাই করে তারা ১০ টি সামাজিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধ নির্ধারণ করল, যা তারা দৈনন্দিন জীবনে চর্চা করতে চায়। এ জন্য তারা কাগজের গাছ বানাল- রঙ্গিন কাগজে গাছ এঁকে তা কাটল। এবার তা লাগাল ক্লাসের দেওয়ালে। গাছগুলোর শাখা-প্রশাখা আছে কিন্তু কোনো পাতা নেই। তারা যখন ই কেউ এই নির্দিষ্ট সামাজিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধ সংক্রান্ত কোনো কাজ করে তখনই সেটি একটি রঙ্গিন কাগজের পাতায় লিখে সেই নির্দিষ্ট গাছটিতে জুড়ে দেয় তাদের নামসহ। বছর শেষে গাছটি পাতায় পাতায় ভরে ওঠে। একটি গাছের ছবি নিচে দেখানো হলো।

বছর শেষে আমরা গাছ গুলো ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করি। নিচের বক্সে তোমাদের এই গাছ নিয়ে চিন্তার জন্য কিছু প্রশ্ন দেয়া আছে। বছর শেষে প্রশ্নগুলো অনুসারে গাছগুলো নিয়ে আমরা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করব।

চিন্তা করি

       * কোন গাছে বেশি পাতা হল? 

      * আমি কোন গাছে বেশি পাতা যোগ করেছি? 

      * কোন গাছে সবচেয়ে কম পাতা যোগ করেছি? 

      * কোন ধরনের চর্চা আমি বেশি করছি? কোন গুলোতে আমার আরও চর্চার প্রয়োজন? কিভাবে তা করতে পারি?

প্রাকৃতিক উপাদানও কি সময়ের সাথে সাথে বদলায়?

আমরা দেখলাম সময়ের সাথে সাথে সমাজের মানুষের চিন্তা-ভাবনা, বিশ্বাস, রীতি-নীতি পরিবর্তিত হতে পারে। আচ্ছা, সামাজিক এই উপাদান ছাড়া প্রকৃতির উপাদানও কি পরিবর্তিত হতে পারে? মিলি বলল, “প্রকৃতির পরিবর্তন? এই যে, বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়, শীতকালে হয় না বললেই চলে। শীতকালে অনেক গাছের পাতা ঝড়ে যায়”। খুশি আপা বললেন, “হ্যাঁ, তাই তো। আর কী কী পরিবর্তন হয় ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে?” সুমন বলল, “একটা বুদ্ধি এসেছে।

 

অনুসন্ধানী কাজ-৬

আমরা প্রত্যেকে দলে ভাগ হয়ে কাগজ একসাথে আটকে মলাট দিয়ে একটি বই বানাই। বিভিন্ন ঋতুতে আমাদের আশপাশের আবহাওয়া, গাছপালা, পাতা, মাটি, আকাশ ইত্যাদির যে পরিবর্তন তা আমরা এখানে লিপিবদ্ধ করব বছরব্যাপী। বছর শেষে আমরা একে অন্যেরটি দেখব। প্রতি পৃষ্ঠায় এক মাসের মধ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তনগুলো নানাভাবে সংরক্ষণ করি লিখে, ছবি এঁকে, আর পরিবর্তিত বিভিন্ন উপাদানগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে। ” সুমনের আইডিয়াটা সবার খুব পছন্দ হলো। এরপর ওরা একেক দল একেক ধরনের আবহাওয়া ও প্রকৃতির উপাদান বেছে নিল। খুশি আপা বললেন, দল তৈরির ক্ষেত্রে আমরা এমনভাবে দল তৈরি করব যেন আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় হয়। তাহলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গার প্রকৃতির পরিবর্তন লক্ষ করতে পারব।

     * বিষয়বস্তু: 

     * অনুসন্ধানের প্রশ্ন: 

    * তথ্য উৎস : 

     * তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি: 

    * তথ্য সংগ্ৰহ: 

    * তথ্য বিশ্লেষণ: 

    * ফলাফল/সিদ্ধান্ত: 

    * উপস্থাপন:

পদ্ম দল: এই দল অনুসন্ধান করবে গাছের পাতা। তারা প্রতি ১ মাস পর পর নির্দিষ্ট একটি গাছের পাতা পর্যবেক্ষণ করবে, তার রঙিন ছবি আঁকবে, ছবি তুলে প্রিন্ট করে সংগ্রহ খাতায় লাগাবে, পাতার নমুনা | সংগ্রহ করবে। বছর শেষে পাতার ধারাবাহিক পরিবর্তন বন্ধুদের কাছে ছবিসহ তুলে ধরবে। এ ধরনের, কিন্তু | গাছের পাতার নাম আর ৬টি ঋতুতে তার পরিবর্তন থাকবে।

শাপলা দল: এই দল অনুসন্ধান করবে বৃষ্টি। তারা বৃষ্টির পানি জমানোর জন্য কয়েকটি একই রকম দাগ কাটা বোতল তৈরি করবে। এরপর প্রতি মাসে তারা বৃষ্টির পরিমাণ হিসাব করবে। বছর শেষে কোন ঋতুতে কীরকম বৃষ্টি হয় তা সবার সামনে গ্রাফসহ তুলে ধরবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টিপাতের তুলনাও সম্ভব হবে। সাথে পরিমাপের দাগ কাটা পাত্রে পানি পর পর সাজিয়ে দেখাবে।

 

মিলির এলাকায় ঋতুভেদে বৃষ্টিপাতের পরিমান

 

ঋতুভেদে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ (মিলিমিটার)

গ্রীষ্ম ৩০০

বর্ষা ৮৫০ 

শরৎ ৪০০ 

হেমন্ত ৮০ 

শীত ৪০ 

বসন্ত ৫৫

রনির এলাকায় ঋতুভেদে বৃষ্টিপাতের পরিমান

গ্রীষ্ম ২৫০ 

বর্ষা ৮০০ 

শরৎ ৩৮০ 

হেমন্ত ৭০ 

শীত ৩৫ 

বসন্ত ৫০

গোলাপ দল: এই দল অনুসন্ধান করবে মাটি। তারা প্রতি ২ মাস পর পর ভিন্ন ভিন্ন এলাকার মাটি পর্যবেক্ষণ করবে, মাটির নমুনা সংগ্রহ করবে এবং মাটির অবস্থার বর্ণনা লিখবে।

সময়ের সাথে সাথে ভূমিরূপও কি বদলায়?

পরের দিন খুশি আপা ক্লাসে এলে মিলি বলল, “আপা, আমরা তো সময়ের সাথে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের কী কী পরিবর্তন হয় তা অনুসন্ধান করছি। এবার আমরা দেখি যে আমাদের চারপাশে অনেক ধরনের ভূমিরূপ আছে, এগুলোরও কি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটে?” খুশি আপা বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ মিলি, সময়ের সাথে সাথে ভূমিরূপেরও পরিবর্তন হয়। চলো আমরা আগে পৃথিবীর পরিবর্তনের কিছু ছবি দেখি”।

ছবি দেখা শেষ হলে নীলা বলল আপা ছবিতে আমরা দেখলাম মহাদেশগুলো ক্রমান্বয়ে সরে সরে যাচ্ছে।

খুশি আপা বললেন, হ্যাঁ নীলা, আর আমাদের প্রত্যেকটি মহাদেশ আছে একেকটি প্লেট বা পাতের ওপর। এই পাতগুলো যেহেতু ভেসে থাকে, তাই কখনও ভেসে একে অপরের কাছে আসে আবার কখনও একে অন্যের থেকে দূরে চলে যায়।

মিলি বলল, কিন্তু আপা, প্লেটগুলো ভেসে থাকে কেন?

খুশি আপা বললেন, খুব ভালো প্রশ্ন মিলি। এটা জানার জন্য চলো আমরা একটা মজার কাজ করি।

তখন খুশি আপা একটি তরমুজ নিয়ে আসলেন। তা দেখে কাঁকন বলল, আপা, আজ কি আমরা সবাই মিলে তরমুজ খাব!

কাঁকনের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।

খুশি আপা বললেন, হ্যাঁ কাঁকন অবশ্যই খাবো তবে তার আগে আমরা তরমুজ নিয়ে একটি মজার জিনিস দেখব।

তখন খুশি আপা তরমুজটি কাটলেন। কাটার পর তরমুজের একটি ফালি দেখিয়ে বললেন দেখো তো এটা দেখতে কিসের মতো লাগছে?

সবাই চিন্তায় পড়ে গেল।

খুশি আপা তখন বললেন, আচ্ছা চিন্তা সঠিকভাবে করার জন্য আমরা একটি ছবি দেখি চলো।

ছবি দেখার পর মিলি বলল, আপা, এটা দেখতে একদম পৃথিবীর মতো লাগছে। 

খুশি আপা বললেন, ঠিক বলেছ মিলি। 

রনি বলল, আপা তরমুজের ভেতরে যেমন নরম অংশ আছে পৃথিবীরও একই রকম নরম অংশ আছে? 

ওমেরা বলল আপা, আমি বই পড়া ক্লাব থেকে একটি বই পড়ে জেনেছিলাম পৃথিবীর ভেতরে গলিত লাভা আছে। 

খুশি আপা বললেন, একদম ঠিক বলেছ ওমেরা। 

রনি বলল, কিন্তু আপা আমরা তো জানি লাভা হচ্ছে তরল জিনিস, তাহলে পৃথিবীর উপরি ভাগের তো সব সময় নড়াচড়া করা উচিত তাই না? 

খুশি আপা বললেন, নড়ছে তো কিন্তু আমরা সব সময় সেটা টের পাই না। 

কাঁকন বলল, তাহলে কখন কখন টের পাব? 

মিলি বলল, আমার মনে হয় যখন ভূমিকম্প হয় তখন! 

খুশি আপা বললেন, একদম ঠিক বলেছ মিলি। আবার এই প্লেটগুলোর বিভিন্ন রকম চলাচলের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর নানা ভূমিরূপের । 

সুমন বলল, কিন্তু সেটা কীভাবে আপা? 

খুশি আপা বললেন, চলো, আমরা একটা মজার পরীক্ষণের মাধ্যমে সেটা দেখি।

 

উপকরণ: 

৬টি বিস্কুট (প্লেট কে প্রতিনিধিত্ব করে)

শেভিং ফোম/জেলি/কাদামাটি (এগুলো ম্যাগমাকে প্রতিনিধিত্ব করে)

চামচ

টিস্যু (এটি ভূত্বককে প্রতিনিধিত্ব করে)

ছোট ৩টি ট্রে/থালা

 

         ১. প্রথমে ট্রের মধ্যে শেভিং ফোম স্প্রে করে/জেলি/কাদামাটি দিয়ে ম্যাগমার একটি স্তর তৈরি করব।

         ২. চামচ দিয়ে ম্যাগমা টি সমতল করব যাতে এটি সবদিকে সমান হয়।

         ৩. ম্যাগমার উপরে একটি টিস্যু আলতো করে পেতে দেব।

 

কর্মপদ্ধতি-ক: ১নং ট্রে

১. এরপর ম্যাগমার উপরে আমরা প্রথমে দুটি বিস্কুটকে আলতো করে একসাথে রাখব যাতে তারা একটি আয়তক্ষেত্র তৈরি করে। (বিস্কুটগুলো একটি করে প্লেটকে প্রতিনিধিত্ব করে)

২. এবার আমরা আলতো করে প্লেট দুটিকে পরস্পর থেকে টেনে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবো। এরপর একটি গ্লোবের সাহায্যে দেখব দুটি প্লেট একে অন্যের থেকে দূরে সরে গেলে সেই স্থানে কোন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়েছে।

 

কর্মপদ্ধতি-খ: ২ নং ট্রে

১.এরপর ম্যাগমার উপরে আমরা আবার দুটি বিস্কুটকে একটু দূরত্বে রাখব

২. এরপর দুটি বিস্কুটকে একে অন্যের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ করাব এবং সেই স্থানে কোন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়েছে তা দেখব।

 

কর্মপদ্ধতি-গ: ৩ নং ট্রে

১. এবারো ম্যাগমার ওপরে আমরা আবার দুটি বিস্কুটকে একটু দূরত্বে রাখব

২ . এবার দুটি বিস্কুটকে একে অন্যের পাশ দিয়ে নিয়ে যাব, কোনো সংঘর্ষ ছাড়া এবং সেই স্থানে কোন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়েছে      তা দেখব।

 

ছক: বিস্কুটের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ

ট্রেসংঘর্ষের ফলে ম্যাগমা ও প্লেটের অবস্থার চিত্র
১ নং ট্রে 
২ নং ট্রে 
৩ নং ট্রে 

ছবি আঁকা শেষ হলে রনি বলল, আপা আমরা তো দেখলাম প্লেটের চলাচলের কারণে কখনও তৈরি হচ্ছে পাহাড়ের মতো ভূমিরূপ আবার কখনও হচ্ছে মহাসাগরের সৃষ্টি। বাংলাদেশেও তো বিভিন্ন ধরনের ভুমিরূপ আছে, সেগুলোও তো এ রকম কোনো না কোনো ঘটনার দ্বারাই সৃষ্টি হয়েছে তাই না!

খুশি আপা বললেন, একদম ঠিক বলেছ রনি।

বাংলাদেশের ভূমিরূপ:

সুমন বলল, আমরা তো মানচিত্রে দেখেছি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগে আছে পাহাড়ি অঞ্চল। আর কোথায় কী কী ধরনের ভূমিরূপ আছে? 

মিলি বলল, আপা আমরা তো এটা একটা অনুসন্ধানমূলক কাজের সাহায্যে দেখতে পারি তাই না! 

খুশি আপা বললেন, চমৎকার, তাহলে চলো আমরা অনুসন্ধান করে বের করি বাংলাদেশের কোথায় কোথায় কোন কোন ধরনের ভূমিরূপ আছে। 

আমরা এই অনুসন্ধান কাজে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান- অনুসন্ধানী পাঠ্য বইয়ের সাহায্য নিতে পারি আবার ইন্টারনেট ও অন্যান্য বই থেকেও তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। 

সুমন বলল, আপা, আমরা আমাদের এই অনুসন্ধানী কাজের ফলাফল বাংলাদেশের একটি মানচিত্রে বিভিন্ন রংয়ের মাধ্যমে স্থানগুলো চিহ্নিত করে উপস্থাপন করতে পারি। খুশি আপা বললেন, চমৎকার প্রস্তাব। 

তখন ওরা সবাই প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশের একটি মানচিত্রে সময়ের সাথে সাথে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ভূমিরূপ চিহ্নিত করল এবং লিজেন্ড বা সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে কোন রং কোন ভূমিরূপকে নির্দেশ করে সেটি চিহ্নিত করল।

 

অনুসন্ধানী কাজ-৭

* বিষয়বস্তু : 

* অনুসন্ধানের প্রশ্ন 

* তথ্য উৎস: 

* তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি : 

* তথ্য সংগ্ৰহ: 

* তথ্য বিশ্লেষণ: 

* ফলাফল বা সিদ্ধান্ত : 

* উপস্থাপন: মানচিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করতে পারি আমরা

প্লেটের চলাচল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আজ অন্বেষা ক্লাসে মন খারাপ করে বসে আছে। সুমন এসে ওর মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে অন্বেষা জানাল তার মামার বাড়ি সিলেটে, ওখানে বেশ কিছুদিন ধরে ঘনঘন ভূমিকম্প হচ্ছে এ জন্য ওরা সবাই খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। মিলি বলল, আমরা তো দেখলাম প্লেটের নড়াচড়ার কারণে ভূমিকম্প হয়, তাহলে আমাদের বাংলাদেশেও নিশ্চয় প্লেটগুলো নড়ছে। ওরা ঠিক করল আজ খুশি আপা ক্লাসে এলে ওরা জানতে চাইবে সিলেট অঞ্চলে এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ার সাথে মহাদেশীয় পাত বা প্লেটের কোনো সম্পর্ক আছে কি না!

এমন সময় খুশি আপা ক্লাসে এলে ওরা অন্বেষার মন খারাপের বিষয়টি তাকে বলল।

খুশি আপা বললেন, এই বিষয়টা সম্পর্কে জানতে প্রথমে আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান কোন কোন প্লেটে পড়েছে সেটা দেখতে হবে। চলো আমরা বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের একটা স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া ছবি দেখি।

 

চ্যুতি রেখা (Fault line)

ছবিটি দেখার পর নীলা বলল, আপা, ছবিতে দেখছি বাংলাদেশের অবস্থান তো ৩টি প্লেটের মাঝখানে। কিন্তু ওই লাল রেখাটি কী বোঝাচ্ছে?

কাঁকন বলল, আপা আমরা যখন পরীক্ষণটি করেছিলাম তখন দেখেছিলাম দুটি প্লেট যখন সংঘর্ষ ছাড়া পাশাপাশি চলে যায় তখন সেখানে একটা ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়। এটা কি তেমনই কিছু?

খুশি আপা বললেন, ঠিক বলেছ কাঁকন, এটার একটি ভালো নামও আছে। একে বলে চ্যুতি রেখা (Fault line)। সাধারণত এই চ্যুতি রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে ভূকম্পন হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

রনি বলল, এখন বুঝতে পারছি বাংলাদেশের সিলেট থেকে শুরু করে পার্বত্য অঞ্চল পর্যন্ত চলে গেছে এই চ্যুতি রেখা। খুশি আপা বললেন, ঠিক তাই আর এই কারণে বাংলাদেশের কিছু এলাকা হয়ে উঠেছে | ভূমিকম্পপ্রবণ। চলো মানচিত্রে সেই এলাকাগুলো দেখি।

ভূমিকম্প সংক্রান্ত কর্মশালার আয়োজন:

রনি বলল, আপা আমরা তো ষষ্ঠ শ্রেণিতে সক্রিয় নাগরিক ক্লাব গঠন করেছিলাম। যেহেতু আমাদের | কমিটির বয়স এক বছর হয়ে গেছে তাহলে আমরা আবার নতুনভাবে নির্বাচন করে আমাদের সপ্তম শ্রেণির জন্য সক্রিয় নাগরিক ক্লাবের কার্যক্রম শুরু করতে পারি।

ওরা তখন খুশি আপার সহযোগিতায় ষষ্ঠ শ্রেণির মতো করে পুনরায় সক্রিয় নাগরিক ক্লাব গঠন করল এবং | সক্রিয় নাগরিক ক্লাবের আয়োজনে একজন অগ্নিনির্বাপক অফিসার এনে ভূমিকম্প দুর্যোগ হলে এবং পরে কী করণীয় সে সম্পর্কে একটি কর্মশালার আয়োজন করল।

কর্মশালার পরে তারা ভূমিকম্প চলাকালীন এবং পরবর্তীতে যা যা করণীয় সেই বিষয়গুলোর উপর তাদের | বিদ্যালয়ের মাঠে একটি ডিসপ্লের আয়োজন করল। ডিসপ্লে শেষ হলে খুশি আপা সবাইকে অভিনন্দন জানালেন।

সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবর্তন:

এবারে সবাই একটি মজার কাজ করল। এই ক্লাসে শিক্ষার্থীরা যত ধরনের পরিবর্তন অনুসন্ধান করেছে সেগুলোর তালিকা তৈরি করল। সবাই হাত তুলে তুলে বিভিন্ন অনুসন্ধানের কথা বলল আর একজন বোর্ডে লিখলো। এবার এগুলোকে তারা শ্রেণি বিভাগ করল। কী কী ধরনের পরিবর্তন? সেগুলোর মধ্যে আবার কী কী বিষয়ের অনুসন্ধান হলো? এসো আমরাও নিচের শ্রেনিবিন্যাসটি পূরণ করি।

পরিবর্তনশীলতা নিয়ে বিতর্ক

শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন কাঠামো ও উপাদানের পরিবর্তন নিয়ে কিছু বিবৃতি লিখি এবং সেগুলোর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরি।

বিতর্কের জন্য কিছু বিবৃতির উদাহরণ-

* সামাজিক উপাদানের কোনো বৈশিষ্ট্যই ধ্রুব নয়, বরং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল।

* প্রাকৃতিক উপাদানের সব বৈশিষ্ট্যই ক্রমাগত পরিবর্তনশীল।

* সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। 

* প্রাকৃতিক উপাদানের পরিবর্তন আমাদের জন্য শুধু ক্ষতির কারণ।

 

এমন যদি হতো! পরিবর্তনহীন পৃথিবী কল্পনা করিৎ

খুশি আপা বললেন, চলো আমরা চোখ বন্ধ করে চিন্তা করি, যদি আমাদের সব জায়গায় ভূমিরূপ একই রকম হত-ধর পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো মরুভূমি নেই, নেই সাগর, মালভূমি, সমুদ্র। আছে শুধু সমতল ভূমি। তাহলে কেমন হতো? কেমন হতো আমাদের জীবন? কী কী কাজ করা যেত না? কী কী কাজ নতুনভাবে করতে হতো? এ রকম একটি ছবিও আঁকি।

এমন যদি হতো, পৃথিবীর সব ভূমিরূপ একটি-সমতলভূমি। তাহলে কেমন হতো বলো তো!

তাহলে পৃথিবী অনেক গরম হয়ে যেত। পাখিরা গাছ ছাড়া তাদের বাসা হারাত।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

ঠিক একইভাবে আমরা আমাদের আশপাশের বিভিন্ন সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিষয়গুলোতে যদি সময় ও স্থান ভেদে পরিবর্তিত না হতো, তবে কেমন হতো তা চিন্তা করে লিখি ও ছবি আঁকি। যেমন- সবার পেশা একই হলে, প্রতিদিন, সারা জীবন একই খাবার খেলে ইত্যাদি।

একেক সময়ের সমাজ ছিল একেক রকম। একেক সময়ের প্রকৃতি একেক রকম। একেক এলাকার রীতি- নীতি, মূল্যবোধ, যেমন ভিন্ন, তেমনি ভিন্ন তাদের ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া। কী চমৎকার এই বৈচিত্র্য! যদি সব সময় প্রচলিত থাকত একই রীতি-নীতি, সমাজ ও প্রকৃতির উপাদান একই রকম হতো, তবে কেমন হতো?

আমাদের অনুসন্ধান কি এত বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আনন্দময় হতো?

 

এ পর্যন্ত যা যা শিখলাম:

এ পর্যন্ত আমরা যা যা শিখেছি তার বিবেচনায়,

১। যে তিনটি বিষয় আমি একদম নতুন শিখেছি

-

-

-

২। যে তিনটি বিষয় আমার কাছে খুব আগ্রহ জাগিয়েছে বা মজা লেগেছে

-

-

-

৩। যে তিনটি বিষয় আমার নতুন করে জানার ইচ্ছা হচ্ছে, এখান থেকে জানতে পারিনি

-

-

-

৪। যে বিষয়গুলো আমার কাছে স্পষ্ট নয় বা ঠিকমত বুঝতে পারিনি

-

-

-

Content added By