SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - খাদ্য ও পুষ্টি | NCTB BOOK

একে শক্তি উৎপাদনকারী উপাদান বলা হয়। স্নেহ পদার্থে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে। কার্বনের দহন ক্ষমতা বেশি থাকার স্নেহ পদার্থের অণু থেকে বেশি তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। স্নেহ পদার্থ ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগ। স্নেহ পদার্থ পরিপাক হয়ে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়। ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিনাইয়ের ভিতরে অবস্থিত লসিকা নালির মাধ্যমে শোষিত হয়। স্নেহ পদার্থে ২০ প্রকার চর্বি জাতীয় এসিড পাওয়া যায়। চর্বি জাতীয় এসিড দুই প্রকার। যথা- ১. অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড ও ২. সম্পৃক্ত চর্বি জাতীর এসিড।

দেহে যকৃতের মধ্যে চর্বি জাতীর এসিড তৈরি হয়। তবে স্বকৃতের চর্বি জাতীয় এসিড তৈরির ক্ষমতা অত্যন্ত কম। অন্যদিকে কিছু কিছু চর্বি জাতীয় এসিড আছে যা দেহের জন্য অত্যাবশ্যক। এগুলো প্রধানত উদ্ভিজ্জ তেলে পাওয়া যায়। খাদ্যে স্নেহ পদার্থের পরিমাণ দ্বারা এর উপকারিতা যাচাই করা যায় না। যে স্নেহ জাতীয় খাদ্যে অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড বেশি থাকে তা বেশি উপকারী। যেমন- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, তিলের তেল, ভুট্টার তেল ইত্যাদি। এসব তেল দিয়ে তৈরি খাবার উৎকৃষ্টতর স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। যেমন— মেরনিজ, সালাদ ড্রেসিং, কাসুন্দি, তেলের আচার ইত্যাদি উৎকৃষ্টতর স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। যেসব খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড বেশি থাকে সে সকল খাদ্যগুলোকে স্নেহবহুল খাদ্য বলা হয় । যেমন- মাংস, মাখন, পনির, ভালডা, চকলেট, বাদাম ইত্যাদি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে দৈনিক মোট শক্তির ২০%-৩০% শক্তি স্নেহ থেকে পাওয়া যায়। দৈনিক আহার্যে এমন স্লেযুক্ত খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা অত্যাবশ্যকীয় চর্বি জাতীয় এসিড যোগাতে পারে এবং ভিটামিন দ্রবণে সক্ষম হয়।

চিত্র ১৩.৩ : চর্বি জাতীয় খাদ্য

খাদ্যে স্নেহ পদার্থের অভাব ঘটলে দেহের চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের অভাব পরিলক্ষিত হয় ফলে ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ দেখা দেয়। যেমন- ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে দেহের সৌন্দর্য নষ্ট করে, অত্যাবশ্যকীর চর্বি জাতীয় এসিডের অভাবে শিশুদের একজিমা রোগ হয় ও বয়স্কদের চর্মরোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়।

কাজ : স্নেহ পদার্থের উপস্থিতি নির্ণয়

প্রয়োজনীয় উপকরণ : সয়াবিন তেল, ইথানল ও পানি 

পদ্ধতি : একটি টেস্টটিউবে কয়েক ফোঁটা সয়াবিন তেল নাও। এর ভিতর সামান্য ইথানল মিশাও। : এবার টেস্টটিউবটিকে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নাও। এবার দ্রবণটিতে সামান্য পানি মিশিয়ে টেস্টটিউবটি আবার ঝাঁকিয়ে নাও। কী ঘটে লক্ষ করো। তেলের দ্রবণটি ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করবে। এভাবে সরিষা, নারিকেল ও তিলের তেলের সাহায্যে উক্ত পরীক্ষাটি করো এবং কী ঘটে তা বর্ণনা করো।

 

খাদ্যের ক্যালরি ও কর্মশক্তি

শর্করা, আমিষ ও স্নেহ পদার্থ খাদ্যের এ তিনটি উপাদান থেকে দেহে তাপ উৎপন্ন হয়। এ তাপ আমাদের দেহে কাজ করার শক্তি যোগায়। কোনো খাদ্যে পুষ্টি উপাদান ও তার পরিমাণ জানার জন্য শর্করা, আমিষ ও চর্বির ক্যালরিমূল্য বের করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির ক্যালরিমূল্য শূন্য ধরে হিসেব করতে হবে।

আমাদের দেহে

   ১ গ্রাম শর্করা থেকে ৪ কিলোক্যালরি

   ১ গ্রাম আমিষ থেকে ৪ কিলোক্যালরি এবং 

   ১ গ্রাম চর্বি থেকে ৯ কিলোক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়।

আমাদের দেহের ভিতর খাদ্য পরিপাক, শ্বসন, রক্তসংবহন ইত্যাদি কার্যক্রম বিপাক ক্রিয়ার অন্তর্গত। বিপাক ক্রিয়া চালানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌলবিপাক বলে। আবার শারীরিক পরিশ্রমেও আমাদের শক্তি ব্যয় হয়। আমরা খাবার থেকে শক্তি পাই।

খাদ্য থেকে দেহের ভিতর যে তাপ উৎপন্ন হয় তা আমরা ক্যালরিতে প্রকাশ করি। ১০০০ ক্যালরিতে ১ কিলোক্যালরি। খাদ্যে তাপশক্তি মাপের একক হলো কিলোক্যালরি। দেহের শক্তির চাহিদাও কিলোক্যালরিতে নির্ণয় করা হয়।

আমার, তোমার, তোমার ছোট ভাই, তোমার বাবার দেহের ক্যালরি চাহিদা এক রকম নয়। আমাদের দেহে দুই ভাবে শক্তি ব্যয় হয় যথা- ১. দেহের অভ্যন্তরীণ কাজে অর্থাৎ মৌলবিপাকে এবং ২. পরিশ্রমের কাজে। প্রতিদিন কার কত ক্যালরি বা তাপ শক্তির প্রয়োজন তা নির্ভর করে প্রধানত বয়স, দৈহিক উচ্চতা এবং দৈহিক ওজনের উপর। এছাড়া বিভিন্ন পেশা এবং স্ত্রী-পুরুষ ভেদে দৈনিক ক্যালরি চাহিদা কম বা বেশি হয়ে থাকে।

 

নিচের সারণীতে ক্যালরির ব্যবহার ও খাদ্য চাহিদা দেখানো হলো

                                                             শিশু, নারী ও পুরুষের বিভিন্ন বয়সে দৈনিক ক্যালরির বরাদ্দ 

বয়স (বৎসর)গড় ওজন (কিলোগ্রাম)গড় শক্তি (কিলোক্যালরি)বয়স (বৎসর)গড় ওজন (কিলোগ্রাম)(কিলোক্যালরি)

বাচ্চা

০.০-০.৫ মাস

০.৬ মাস ১.০ বছর

 

শিশু

১ – ৩

৪ -৬

৭ - ১০

 

পুরুষ

১০ - ১২

১৩ – ১৫

১৬ - ১৯

২০ - ৩৯

৪০ - ৪৯

৫০ - ৫৯

৬০ – ৬৯

৭০ +

 

 

 

১৩

২০

২৮

 

 

৪০

৪৪

৬৭

৬৭

৭০

৬৮

৬৫

৬৫

 

১১৫

১০০

 

 

১৩০০

১৫০০

১৮০০

 

 

২২০০

২৫০০

৩০০০

২৭০০

২৮০০

২৩০০

২২০০

১৯০০

নারী

১০ - ১২

১৩ - ১৫

১৬ - ১৯

২০ - ৩১

৪০ - ৪৯

৫০ - ৫৯

৬০-৬১

৭০ +

 

সন্তান সম্ভবা

মাতার

অতিরিক্ত চাহিদা

প্রথম ৩ মাসে

দ্বিতীয় ৩ মাসে

তৃতীয় ৩ মাসে

প্রসূতি মাতার

অতিরিক্ত

চাহিদা

 

৩০

৪২

৫১

৫৪

৫৩

৫২

৫১

৫১

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

১৯০০

২২০০

২০০০

১৯০০

১৮০০

১৬০০

১৮০০

 

 

 

 

 

+১৫০

+২০০

+৩০০

+৪০০

 

একজন লোকের কী পরিমাণ শক্তি দরকার তা আমরা কেমন করে জানতে পারব? একজন লোকের দৈনিক কী পরিমাণ শক্তির দরকার তা প্রধানত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ১. মৌলবিপাক ২. দৈহিক পরিশ্রম ও ৩. খাদ্যের প্রভাব।

দৈনিক খাদ্য আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হওয়া উচিত। খাদ্য নির্বাচনের সময় আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যে, খাদ্য থেকে দেহ যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরি পেতে পারে এবং ভিটামিন, খনিজ লবণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো যেন এতে থাকে।

Content added || updated By

Promotion