SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

আমরা আমাদের সামনের বিভিন্ন বস্তু থেকে শুরু করে আকাশের চাঁদ- তারা প্রভৃতি নিজের চোখে দেখতে পারি। কিন্তু পৃথিবীর অভ্যন্তরের গঠন আমরা সরাসরি দেখতে পাই না। এ জন্য ভূতাত্ত্বিকরা ভূমিকম্পের সময় সিসমিক ওয়েভ (Seismic wave) নামে যে বিশেষ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়, সেটি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। এই তরঙ্গ ভূমিকম্পের কেন্দ্রে তৈরি হয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরের বিভিন্ন ধরনের বস্তু থেকে বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয় এবং বিভিন্ন গতিতে চলাচল করে। চিকিৎসকেরা যেমন রোগীর শরীরের অভ্যন্তরের অবস্থা বোঝার জন্য ECG, X-Ray কিংবা CT Scan ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে থাকেন, সেভাবে ভূতাত্ত্বিকরা সিসমিক ওয়েভের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের ধারণা পেয়ে থাকেন।

পৃথিবীর গঠনের সঙ্গে ডিমের মিল
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন

পৃথিবীর গঠনের সঙ্গে ডিমের গঠনের এক ধরনের মিল রয়েছে। ডিমের যে রকম বাইরে খুবই পাতলা একটি শক্ত খোসা, পৃথিবীরও সেরকম বাইরে রয়েছে ভূত্বক। খোসার পরে ডিমের যে রকম রয়েছে ভেতরের সাদা অংশ, পৃথিবীর অভ্যন্তরেও সেরকম রয়েছে ভূ-আচ্ছাদন বা ম্যান্টল। ডিমের যেরকম মাঝখানের রয়েছে কুসুম, ঠিক সে রকম পৃথিবীর কেন্দ্রেও রয়েছে তার মজ্জা বা কোর। অর্থাৎ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনকে ভূত্বক, ম্যান্টেল এবং কোর এই তিনটি মূল ভাগে ভাগ করা যায়।

ভূত্বক (Crust): পৃথিবীর সবচেয়ে উপরের স্তরকে ভূত্বক বা ক্রাস্ট (Crust) বলা হয়। আমরা এই স্তরের উপরে থাকি এবং স্বাভাবিকভাবেই এই ত্বক সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানি। এই স্তরটি অন্যান্য স্তরের তুলনায় পাতলা ও ভঙ্গুর। পুরুত্ব সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার। এই ত্বককে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, (১) তুলনামূলকভাবে পুরু এবং কম ঘনত্বের মহাদেশীয় ভূত্বক এবং (২) তুলনামূলকভাবে সরু কিন্তু বেশি ঘনত্বের মহাসাগরীয় ভূত্বক হিসেবে। এই দুই প্রকার ভূত্বকই নানান ধরনের পাথর দ্বারা নির্মিত।

ম্যান্টল (Mantle): ভূত্বকের পরের স্তরটির নাম ম্যান্টল। ভূত্বকের সঙ্গে লাগানো ম্যান্টেলের স্তরটি কঠিন এবং ভঙ্গুর। উপরের ভূত্বক এবং নিচের এই স্তর নিয়ে তৈরি কঠিন অংশকে লিথোমণ্ডল (Lithosphere) বলে। এই লিথোমণ্ডল এই স্তরটি বড় বড় বেশ কয়েকটি টুকরায় বিভক্ত এবং সেগুলোকে টেকটোনিক প্লেট বলে। লিথোমণ্ডলের পরের স্তরে বেশি তাপমাত্রার কারণে পাথর গলিত অবস্থায় থাকে বলে সেটি পুরোপুরি কঠিন নয়। তাই তার উপর ভাসমান টেকটোনিক প্লেট মোটেও স্থির নয়, সেগুলো বিভিন্ন দিকে বছরে ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার সরে যেতে থাকে। টেকটোনিক প্লেটের এই গতিবিধি আমাদের ভূমণ্ডলের গঠনে খুব বড় একটি ভূমিকা পালন করে, টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধির কারণেই পর্বতমালা এবং গভীর সমুদ্রে খাদের সৃষ্টি হয়েছে, এর কারণেই পৃথিবীতে ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাত হয়ে থাকে।

ম্যান্টেলের বাকি অংশটুকু পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের সবচেয়ে পুরু স্তর। এটি প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পুরু এবং পৃথিবীর প্রায় ৮৫ শতাংশই এই ম্যান্টেল দিয়ে গঠিত। এই স্তরে তাপ এবং চাপ অত্যন্ত বেশি। ম্যান্টেলের ভেতরের স্তর কোর থেকে আগত তাপের পরিচলন ম্যান্টলের উপরে ভাসমান লিথোমণ্ডলকে স্থানান্তর করার প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।

মজ্জা বা কোর (Core): ম্যান্টলের নিচে রয়েছে মজ্জা বা কোর। পৃথিবী সৃষ্টির সময় যখন এটি অনেক উত্তপ্ত এবং তরল অবস্থায় ছিল, তখন লোহা, নিকেল এবং অন্যান্য ভারী মৌল মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে পৃথিবীর কেন্দ্রে এসে জমা হয়। কাজেই এই স্তরে লোহা ও নিকেল ধাতুর প্রাধান্য রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য ভারী ধাতু। মজ্জা বা কোর দুই অংশে বিভক্ত, উপরের অংশটি বা বহিঃস্থ মজ্জা তরল এবং সেটি প্রবাহিত হতে পারে। এই স্তরের উপরের ম্যান্টল ও অন্যান্য স্তরের ভরের কারণে এখানে চাপও বেশি। লোহা এবং নিকেলের প্রবাহের কারণে এখানে বিদ্যুৎ প্রবাহ হয় এবং সেই বিদ্যুতের কারণে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়ে থাকে। তোমরা সবাই জানো, এই চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্য পৃথিবীতে কোনো চুম্বক ঝুলিয়ে দিলে সেটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ঝুলে থাকে। এই চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে সূর্যের ক্ষতিকর সৌর ঝড় থেকে রক্ষা করে বলে পৃথিবীর বিভিন্ন জীবের বেঁচে থাকার জন্য এই চৌম্বক ক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পৃথিবীর একেবারে অভ্যন্তরে রয়েছে অন্তঃস্থ মজ্জা। এই স্তরের বৈশিষ্ট্য বহিঃস্থ মজ্জার মতোই তবে তাপ এবং চাপ আরও বেশি। অধিক চাপের কারণে এই স্তর কঠিন। ধারণা করা হয় যে অন্তঃস্থ ও বহিঃস্থ মজ্জার গঠনকারী উপাদানের মধ্যে যেসব মৌল তেজস্ক্রিয়, সেগুলোর তেজস্ক্রিয়তা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ উত্তাপের উৎস।

Content added By