SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

আমাদের শরীরকে একটি কাঠামো প্রদান করে শরীরের শক্ত ও কোমল হাড়গুলো। তোমরা অনেকেই হয়তো জানবে ‘হাড়' শব্দটির আরেকটি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘অস্থি'। কঙ্কালতন্ত্রের আলোচনায় আমরা অস্থি শব্দটিই ব্যবহার করব।

অস্থি (হাড়) ও তরুণস্থি (কোমল হাড়) দ্বারা গঠিত যে তন্ত্র দেহের মূল কাঠামো গঠন করে এবং অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ ও কোমল অঙ্গসমূহকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে তাকে কঙ্কালতন্ত্র বলে। মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্র বহিঃকঙ্কাল ও অন্তঃকঙ্কাল নিয়ে গঠিত। নাম শুনেই বুঝতে পারছ, অন্তঃকঙ্কাল আমাদের শরীরের ভেতরে থাকে। তাই একে বাইরে থেকে দেখা যায় না। অপরদিকে, বহিঃকঙ্কাল বলতে শরীরের দৃশ্যমান শক্ত অঙ্গগুলো যেমন নখ, দাঁত, লোম, চুল প্রভৃতিকে বুঝায় ।

অস্থি বা হাড়

তুমি তোমার নিজের হাত-পায়ে একটু জোরে চাপ দিলেই চামড়ার নিচে শক্ত অস্থি বা হাড়ের উপস্থিতি টের পাবে। অস্থিকে সাধারণভাবে শরীরের কঠিন ও প্রাণহীন অংশ মনে হতে পারে। আসলে তা নয়, অস্থি হলো এক ধরনের জীবন্ত টিস্যু। এ টিস্যু শক্ত ও স্পঞ্জ-জাতীয় উভয় পদার্থে গঠিত। অস্থির বাইরের অংশটি শক্ত, কিন্তু ভিতরের অংশে স্পঞ্জ-জাতীয় পদার্থ থাকে, যাকে অস্থিমজ্জা বলা হয়। অস্থিমজ্জার শতকরা ৪০ ভাগ জৈব পদার্থ ও বাকি ৬০ ভাগ অজৈব পদার্থ। অজৈব অংশ ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট দ্বারা গঠিত। স্বাভাবিক অবস্থায় অস্থিতে শতকরা ৪০-৫০ ভাগ পানি থাকে। অন্যান্য অঙ্গের মতো প্রতিটি অস্থিতে রক্ত ও স্নায়ুর সরবরাহ থাকে। খেয়াল করো যে স্নায়ুর মাধ্যমে আমরা এবং সকল প্রাণী যেকোনো উদ্দীপনা বা উত্তেজনা গ্রহণ করা এবং তাতে সাড়া দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং শরীরের অন্য অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারি।

অস্থির বিভিন্ন অংশসমূহ

তরুণাস্থি: অস্থির তুলনায় তুলনামূলকভাবে নমনীয় এবং সজীব হচ্ছে তরুণাস্থি। সাধারণত অস্থির প্রান্তভাগে নীলাভ আবরণের মতো তরুণাস্থি অবস্থান করে। তরুণাস্থি অস্থি নড়াচড়াকে সহজ করে এবং দুই বা ততোধিক অস্থির সংযোগস্থলে থাকে, যাকে অস্থিসন্ধি বলা হয়। তরুণাস্থির উপরিভাগ সাধারণত মসৃণ থাকে। তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছ যে, নতুন যে শিশু জন্ম নেয়, তার শরীর অনেক নমনীয় থাকে। এর কারণ তার শরীর মূলত তরুণাস্থি দিয়ে গঠিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব তরুণাস্থি ধীরে ধীরে শক্ত অস্থিতে পরিণত হয়।

দুটো হাড়ের সংযোগস্থলে নমনীয় তরুণাস্থি।

অস্থি আবরণী: অস্থির বাইরে যে মজবুত ও পাতলা আবরণ শক্তভাবে আটকে থাকে, তাকে বহিরাবরণ (Periosteum) বলে। বহিরাবরণের ভিতর দিয়ে রক্তনালি ও স্নায়ু যাতায়াত করতে পারে। তাছাড়া অস্থির নড়াচড়া বা সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজনীয় মাংসপেশি ও পেশিবন্ধনী এর উপর এসে আটকায়। এখানে তোমাদের সংক্ষেপে জানিয়ে রাখি যে, দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন ঘটানোর জন্য শরীরের মাংসপেশি কাজ করে। আর পেশিবন্ধনী বা টেন্ডন (Tendon) হলো একটি সংযোগকারী টিস্যু যা হাড়ের সঙ্গে পেশিকে সংযুক্ত করে। এসব বিষয়ে উপরের শ্রেণিতে আরো জানতে পারবে।

অস্থিসন্ধি

মানবদেহের অস্থিগুলো বিভিন্নভাবে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে অন্তঃকঙ্কাল তৈরি করেছে। দুই বা ততোধিক অস্থির সংযোগস্থলকে অস্থিসন্ধি বলে। প্রতিটি সন্ধির অস্থিপ্রান্তগুলো এক রকম নমনীয় রজ্জুর মতো বন্ধনী দিয়ে শক্তভাবে আটকানো থাকে, ফলে অস্থিগুলো সহজে সন্ধিস্থল থেকে সরে যেতে পারে না। কোনো কোনো অস্থিসন্ধি একেবারে অনড়, যেমন মাথার খুলির অস্থিসন্ধি ও কোমরের দিকের শ্রেণিচক্রের সন্ধি। কিছু অস্থিসন্ধি আবার সামান্য নড়াচড়া করতে পারে, ফলে আমরা দেহকে সামনে, পিছনে ও পাশে বাঁকাতে পারি, যেমন- মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধি । এগুলো ছাড়া দেহে প্রায় ৭০টিরও বেশি সহজে নড়াচড়া করা যায় এ রকম অস্থিসন্ধি রয়েছে। এদেরকে সাইনোভিয়াল সন্ধি বলে। সাইনোভিয়াল সন্ধিস্থলে একটি অস্থির একদিকের বলের মতো গোল অংশটি অন্য অস্থির কোটরে এমনভাবে স্থাপিত হয় যে, অস্থির সকল দিকে চলাচল সম্ভব হয়। এ ধরনের সন্ধিতে সাইনোভিয়াল (Synovial) রস নামক এক প্রকার তৈলাক্ত পদার্থ থাকায় অস্থি দুটি সহজে নড়াচড়া করতে পারে। হাতের কনুই, হাঁটু ও কাঁধের সন্ধি সাইনোভিয়াল সন্ধির অন্তর্ভুক্ত।

আমাদের হাঁটুর সন্ধি সাইনোভিয়াল সন্ধির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

কঙ্কালতন্ত্রের কাজ

  • কঙ্কাল দেহকে নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদানে সহায়তা করে এবং দেহের মজবুত কাঠামো গঠন করে। 
  • অস্থিসন্ধি গঠনের মাধ্যমে এটি চলাচলে সাহায্য করে।
  • কঙ্কাল দেহকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সহায়তা করে। 
  • ভ্রূণ অবস্থা থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত কঙ্কালের মজ্জা বিভিন্ন প্রকার রক্তকণিকা তৈরি করে। এ কারণে অস্থিসমূহকে রক্ত উৎপাদনের কারখানা বলা হয়। 
  • দেহের অভ্যন্তরীণ সকল চাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 
  • আমাদের দেহের অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং নরম অঙ্গসমূহ যেমন মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী ইত্যাদিকে বাইরের যেকোনো রকম ক্ষয়ক্ষতি থেকে প্রাথমিক সুরক্ষা দেয় আমাদের কঙ্কালতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট অংশ।
Content added By

Promotion