SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ - NCTB BOOK

এই অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে—

  • পদার্থ ও পদার্থের ধর্ম
  •  তর এবং আয়তনের জ্ঞান
  •  শুরু এবং ওজনের পার্থতা
  • ঘনত্ব, বিভিন্ন তরলের ঘনত্বের তুলনা
  •  ভাসা এবং ডোনা
  •  পদার্থের অবস্থাসমূহ: পদার্থের তিনটি সংস্থা ( ল য়া) এবং তাদের বৈশিষ্ট্য 
  • আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনে পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার বৈশিষ্ট সমুহের ব্যবহার
  • পদার্থের ভৌত এবং রাসায়নিক পরিবর্তন 

 

পদার্থ

 

পদার্থ কী?

তুমি যা কিছু দেখতে পাও এবং স্পর্শ করতে পারো তার সবকিছুই পদার্থ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িত আছে শুধু সেই জিনিসগুলোকে আমরা সাধারণত বস্তু বা পদার্থ বলে থাকি, কিন্তু আসলে মহাবিশ্বে যা কিছু আছে সমস্তকিছুই পদার্থ। পরিচিত পদার্থের কিছু উদাহরণ হলো কলম, পানি, বাতাস কিংবা দুধ। শুধু যে জিনিসগুলো পদার্থ নয় সেগুলো হচ্ছে শক্তির বিভিন্ন রূপ, যেমন— আলো, তাপ, কিংবা শব্দ। পদার্থের ভর এবং আয়তন আছে। তোমাদের মনে হতে পারে বাতাসের বুঝি ভর কিংবা আয়তন নেই, কিন্তু তোমরা দেখবে আসলে বাতাসেরও ভর এবং আয়তন আছে।

 

ভর (Mass):

ভর হলো একটি বস্তুতে পদার্থের মোট পরিমাণ। ছবিতে দেখানো দাড়িপাল্লাটি দেখে তোমরা ভর কী তা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাবে। যদি এই দাড়িপাল্লার দুই দিক একই উচ্চতায় থাকে তবে এর অর্থ হবে যে ডান পাল্লায় থাকা টমেটোতে বাম পাল্লাতে থাকা বাটখারার সমান ভর রয়েছে। যদি বাটখারাটি ১ কেজি ভরের সমান হয়ে থাকে তাহলে টমেটোর ভরত হবে ১ কেজি। তোমরা আগের অধ্যায়েই পড়ে এসেছ যে, ভারের আন্তর্জাতিক একক হলো কিলোগ্রাম (kg)।

 

আয়তন (Volume):

একটি বস্তু যে পরিমাণ জায়গা দখল করে তার পরিমাপ হচ্ছে আয়তন। কোনো বস্তুর আয়তন কীভাবে পরিমাপ করা হবে তা সাধারণত ঐ পদার্থের অবস্থার উপর নির্ভর করে। তোমরা এর মধ্যে জেনে গেছ, যে, আয়তনের আন্তর্জাতিক একক হলো ঘনমিটার (m), কিন্তু ক্ষুদ্র আয়তন ঘন সে. মি. (cm’ বা (cc) দিয়ে পরিমাপ করা যেতে পারে। তরল পদার্থের আয়তন সাধারণত লিটারে (L.) মাপা হয়। কম আয়তন হলে মিলিলিটারে (ml) পরিমাপ করা যেতে পারে। এক লিটার আসলে ১ হাজার ঘন সে.মি. আয়তনের সমান।

 

ঘনত্ব  (Density):

ঘনত্ব বলতে মূলত একক আয়তনের মধ্যে কতটুকু ভর আছে তা বোঝায়। ভর সম্পর্কে তোমরা ইতোমধ্যেই জেনে গেছ। একটা উদাহরণ চিন্তা করা যাক। ধরো, একটা বাক্স বা স্যুটকেসে তুমি একদম ঠাসাঠাসি করে জামাকাপড় রাখলে। এখন এই বাক্সের তো একটা নির্দিষ্ট ঘনত্ব আছে। বাক্সের ভর হিসাব করে এর আয়তন দিয়ে ভরকে ভাগ করলে যা আসবে সেটাই হলো এই বাক্সের ঘনত্ব। এখন যদি বাক্স থেকে দু-তিনটা জামা বের করে নাও, বাক্সের ভর তো একটু কমে যাবে, তাই না? কিন্তু বাক্সের আয়তন তো আর পাল্টাচ্ছে না। কাজেই এখন যদি আবার এর আয়তন দিয়ে ভরকে ভাগ করা হয় ঘনত্ব আগের হিসেবের চেয়ে কম আসবে। অর্থাৎ, বাক্সের ঘনত্ব আগের চেয়ে কম। 

তার মানে কী দাঁড়াচ্ছে? যত কম জায়গায় বস্তুর যত বেশি পরিমাণ ভর থাকবে সেটি তত বেশি ঘন। কাজেই বলা যায়, ঘনত্ব বস্তুর একটি ভৌত ধর্ম যেটা তার ভর এবং আয়তনের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে। যেহেতু প্রত্যেক বস্তুরই আলাদা আলাদা ঘনত্ব রয়েছে, সেজন্য ঘনত্বের মাধ্যমে অনেক বস্তুকে শনাক্ত করা যায়। তুমি এক টুকরা লোহা হাতে নিলে সেটা বেশ ভারী মনে হবে, কিন্তু সমান আয়তনের এক টুকরা কাঠ হাতে নিলে সেটাকে এত ভারী মনে হবে না। তার কারণ লোহার ঘনত্ব বেশি এবং কাঠের ঘনত্ব কম।

সাধারণভাবে, কঠিন পদার্থ তরল পদার্থ থেকে বেশি ঘন এবং তরল পদার্থ গ্যাসীয় পদার্থের চেয়ে বেশি দেন। এর কারণ হলো কঠিন পদার্থের কণাগুলো একে অপরের অনেক কাছাকাছি থাকে, অপরদিকে তরল পদার্থের কণাগুলি একে অপরের চারপাশে চলাচল করতে পারে, আবার গ্যাসীয় পদার্থের ক্ষেত্রে কণাগুলি যত বড় জায়গাই দেয়া হোক, পুরো জায়গা জুড়েই চলাচলের জন্য মুক্ত থাকে।

তুমি যদি কোনো বস্তুর ভর এবং তার আয়তন জানো তাহলে ভরকে আয়তন দিয়ে ভাগ দিয়ে বস্তুর ঘনত্ব বের করতে পারবে। অন্যভাবে বলা যায় বস্তুর ঘনত্ব হচ্ছে এক ঘন সেন্টিমিটার (cm বা cc ) আয়তনের ভরের সমান। ঘনত্বের একক হলো গ্রাম প্রতি ঘন সেন্টিমিটার, যা g/cm কিংবা g / cc আকারেও লেখা হয়। লোহার

ঘনত্ব ৭.৮ গ্রাম/ ঘন সে.মি. (g/cm’)। এর অর্থ হলো প্রতি ঘন সেন্টিমিটার লোহার জন ৭.৮ গ্রাম (g)। তোমরা যদি কোনো বস্তুর ভর (m) ও আয়তন (v) জেনে থাকো, তাহলে নিচের সমীকরণের সাহায্যে বস্তুর ঘনত্ব (p) বের করতে পারবে।

P=m/V

বস্তুর ভর m, গ্রামে (g) এবং বস্তুর আয়তন V ঘন সেন্টিমিটারে (cm) লেখা হলে বস্তুর ঘনত্ব p বের হবে g/cm’ এককে।

যদি একটি আম গাছের গুড়ির আয়তন হয় ২৫০০ ঘন সে.মি. (cm) এবং ভর ১৫০০ গ্রাম (8) তাহলে, আম গাছের কাঠের ঘনত্ব হবে = ১৫০০ গ্রাম (g) / ২৫০০ ঘন সে.মি. (cm} = ০.৬ গ্রাম / ঘন সে.মি. (g/cm)।

 

কোনো বস্তুর ঘনত্ব দুইটি বস্তুটি যে পরমাণু বা এ দিয়ে তৈরি বিষয়ের উপর নির্ভর করে

বস্তুটি যে পরিমান অনু বা পরমানু দিয়ে তৈরি তার ভর 

বস্তু কতটা ঘনভাবে সন্নিবেশিত তার উপর

 

উদাহরণস্বরূপ, সোনার পরমাণুর ভর অনেক বেশি এবং ঘনভাবে সন্নিবেশিত পরমাণু দিয়ে গঠিত, তাই সোনার ঘনত্ব বেশি। আবার আমরা জানি গ্যাসের অণুগুলো, পুরো আয়তন দখলের জন্য চারিদিকে। ছড়িয়ে পড়ে, এতে অনুগুলোর মধ্যে প্রচুর খালি জায়গা থাকে, তাই গ্যাসের ঘনত্ব কম।

 

অনুশীলনী 

১। কোনো বস্তুর ঘনত্ব ১ গ্রাম / ঘন সে.মি. (g/cm) বলতে কী বোঝ?

 ২। কারণ লেখো: উত্তপ্ত বাতাসের বেলুন কীভাবে কাজ করে ? (সুত্র: উত্তপ্ত বাতাসের ঘনত্ব শীতল বাতাসের চেয়ে আলাদা। যে কারণে উত্তপ্ত বেলুন উড়তে শুরু করে।)

 

পদার্থের অবস্থাসমূহ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা ধরনের পদার্থ ব্যবহার করি। যেমন শুধু রান্না করার জন্য কখনো মাটির চুলায় কাঠ ব্যবহার করা হয়, কেরোসিনের চুলায় কেরোসিন ব্যবহার করা হয়, আবার গ্যাসের চুলায় গ্যাস ব্যবহার করা হয়। তোমরা দেখতেই পাচ্ছো,

আগুন জ্বালানোর কাঠ একটি কঠিন পদারথ। 

পানি একটি তরল পদার্থ।

এল পি গ্যাস একটি গ্যাসীয় পদার্থ।

 অর্থাৎ সহজভাবে আমরা বলতে পারি পদার্থের তিনটি অবস্থা হচ্ছে, কঠিন, তরল এবং বায়বীয়।

সারা পাত্রে ছড়িয়ে পড়ে, তার আয়তন হয় পাত্রটির সমান। আবার সেই একই পরিমাণ গ্যাস একটি বড় পাত্রে রাখা হলে সেটি সাথে সাথে পুরো বড় পাত্রে ছড়িয়ে পড়বে, তার আয়তন হবে বড় পাত্রের সমান।

 

 

পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন

স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিক উপায়ে অনেক পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন হয়, আবার আমরা আমাদের প্রয়োজনে কৃত্রিম উপায়ে পদার্থের পরিবর্তন করি। পদার্থের পরিবর্তন দুই প্রকার: ভৌত পরিবর্তন এবং রাসায়নিক পরিবর্তন। নাম শুনেই বুঝতে পারছ, ভৌত পরিবর্তন একটি পদার্থের ভৌত বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে এবং একটি রাসায়নিক পরিবর্তন তার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু ভৌত পরিবর্তন উভমুখী হয় যেমন, কোনো বস্তুকে গরম করে উত্তপ্ত করে রাখা আবার শীতল করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। রাসায়নিক পরিবর্তনগুলি কোনো কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে উভমুখী হলেও সাধারণত একমুখী হয়ে থাকে।

 

ভৌত পরিবর্তন

একটি ভৌতপরিবর্তন একটি পদার্থকে মৌলিকভাবে ভিন্ন পদার্থে পরিণত করে না। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ফলের রস মিশ্রণ তৈরি করার পদ্ধতিতে দুটি বাহ্যিক পরিবর্তন জড়িত: তা হলো প্রতিটি ফলের আকৃতির পরিবর্তন এবং ফলের বিভিন্ন টুকরো একসাথে মিশ্রিত হওয়া। কারণ ফলগুলির উপাদানগুলোর মিশ্রণের সময় কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পানি এবং ফলের ভিটামিন অপরিবর্তিত থাকে। 

কাটা, ছিঁড়ে ফেলা, পিষে ফেলা এবং মিশ্রিত করা হলো ভৌত পরিবর্তন কারণ এগুলোতে আকার পরিবর্তন হয় কিন্তু কোনো উপাদানের গঠন পরিবর্তিত হয়না। উদাহরণস্বরূপ, চিনি এবং পানির মিশ্রণ একটি নতুন পদার্থ তৈরি করে এদের কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ছাড়াই।

 

রাসায়নিক পরিবর্তন

রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে একটি পদার্থ তার উপাদানগুলির গঠনের পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে নতুন একটি পদার্থে পরিবর্তিত হয়। রাসায়নিক পরিবর্তন রাসায়নিক বিক্রিয়া হিসেবেও পরিচিত।

পচানো, পোড়ানো, রান্না করা এবং মরিচা ধরা হলো আরও কিছু ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন। কারণ তারা এমন পদার্থ তৈরি করে य সম্পূর্ণ নতুন রাসায়নিক পদার্থ। উদাহরণস্বরূপ, কাঠ পোড়ালে ছাই, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানিতে পরিণত হয়।

Content added By