SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য (Occupational Safety and Health - OSH) হলো বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কল্যাণের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বহু বিভাগীয় ক্ষেত্র। স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র প্রতিটি কর্মীর নৈতিক ও আইনগত অধিকার। কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি কমাতে সবাই এটি মেনে চলতে বাধ্য। OSH মানদন্ডের লক্ষ্য হলো কর্মীদের ন্যূনতম সুরক্ষা প্রদান করা। ক্ষত, অসুস্থতা বা মৃত্যুর মতো বিপদ থেকে রক্ষা পেতে প্রত্যেক কর্মী অবশ্যই এটি মেনে চলবেন। এর উদ্দেশ্য হলো কর্মীদের জীবনমান উন্নয়ন। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ, কর্মক্ষেত্রে নৈতিক বিষয়সমূহ, কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকি শনাক্ত, জরুরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, আইসিটি কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরি করে হেলথ, সেফটি এবং ইথিকস বজায় রেখে কাজ করা জরুরি।

Content added By

কর্মক্ষেত্রে নিজস্ব স্বাস্থ্য বলতে ব্যক্তির স্বাস্থ্যকেই বোঝানো হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি যা ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঐসব নিয়মের অনুশীলনকে বোঝায়, যেগুলো করলে ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজায় থাকে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির লক্ষ্য হলো অসুস্থতা কমিয়ে আনা, রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি লাভ, সর্বোত্তম স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ধরে রাখা, সমাজে রোগ-ব্যাধির বিস্তার রোধ করা।

কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সকল বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম। যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সকলের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণের নিমিত্তে কাজ করে থাকে। উল্লেখ্য, এখানে স্বাস্থ্য বলতে শুধু রোগ-বালাইকে বোঝানো হয় না, বরং দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যকে বোঝানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়টির প্রধান কাজ হলো কর্মক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের ঝুঁকি বা সম্ভাব্য বিপদ প্রতিরোধ করা।

নিরাপত্তার মৌলিক নির্দেশনা

• পাওয়ার চালিত যন্ত্র দ্বারা কাজের সময়ে একা কাজ না করে অন্তত দুইজন থাকতে হবে।

• ক্লান্ত বা দুর্বল অবস্থায় কাজ না করা। মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করা যাবে না, অর্থাৎ তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার চাপ নেয়া যাবে না। 

• নিরাপদে কাজ করতে না পারলে তা না করাই ভালো। মানুষ কতটুকু পারবে তার একটি সীমা আছে।

• সবসময় নিরাপদ জুতা পরিধান করা। টুল, কাটিং চিপস, অন্যান্য পার্টস অনেক সময় চোখা, ধারালো ও উত্তপ্ত থাকে; তখন নিরাপদ জুতা পাকে সুরক্ষিত রাখবে।

• চোখের নিরাপত্তা খুব দরকার। কাজের সময় সেফটি গ্লাস পরতে হবে। 

• ঢিলা পোশাক, অলংকার, লম্বা চুল ইত্যাদি চলমান যন্ত্রে জড়িয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই মেশিন চালানোর সময় আঁটোসাটো পোশাক পরে ও চুল বেঁধে রাখতে হবে।

• ধারালো টুলস ব্যবহারের সময় গ্লোভস পরিধান করতে হবে।

• ধুলা, রাসায়নিক বস্তু এবং ধোঁয়া খুব বিপদজনক। তাই ভালো ভেন্টিলেটেড জায়গায় কাজ করতে হবে।

• যদি কোনো যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির সাহায্য নিতে হবে।

• কাজ শেষে চলে যাওয়ার পূর্বে টুলসগুলো টুলসবক্সে রাখা এবং মেশিন ও ফ্লোর পরিষ্কার করতে হবে। 

পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং এর প্রয়োজনীয়তা

• কর্মক্ষেত্রে জীবনহানির সম্ভাবনা কম।

• কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

• আঘাতজনিত কষ্ট এড়িয়ে চলা যায়।

• অঙ্গহানির সম্ভাবনা কম ।

• স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুতরাং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।

• উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হয় না।

• কর্মঘন্টা নষ্ট হয় না।

• আর্থিক স্বচ্ছলতা ব্যাহত হয় না বরং অধিক আয়, উন্নতমানের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন নিশ্চিত হয় । কাজে মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। সম্পদের ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়া যায়। 

• চিকিৎসার সময় ব্যাপ্তি (আঘাত পরবর্তী ব্যথা ও সমস্যা) ও খরচ কমানো।

• প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না, ফলে মালিক ও শ্রমিক লাভবান হয়।

• সংক্রমণ প্রতিরোধ করা।

• সমাজ এজন্য কর্মঠ কর্মী পায়, যা সমাজের জন্য বড় সম্পদ।

• দেশের সার্বিক উন্নতি সাধিত হয়।

Content added || updated By

স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যেসব নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয় সেগুলোকেই স্বাস্থ্যবিধি হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র মতে, স্বাস্থ্যবিধি বলা হয় সেসব নিয়মাবলি ও অনুশীলনকে যেগুলো সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা ও ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই দুই বিষয়ের একটিকে অপরটির স্থলে অনেক সময় ব্যবহার করা হয় বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তাই বলে রাখা ভালো, স্বাস্থ্যবিধি হলো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিস্তার রোধ করার অনুশীলন। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হলো সংক্রামক জীবাণুর পাশাপাশি ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি দূর করা। এছাড়াও দৈহিক স্বাস্থ্যবিধি, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি, মানসিক স্বাস্থ্যবিধি, দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি এবং বৃত্তিগত স্বাস্থ্যবিধির জাতীয় বিষয়গুলো মূলত গণস্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। স্বাস্থ্যবিধি বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা সুস্বাস্থ্য রক্ষা ও উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।

জেনে রাখো :

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) জাতিসংঘের একটি সহযোগী সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত । সংস্থার প্রধান হিসেবে রয়েছেন একজন মহাপরিচালক, যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন থেকে মনোনীত হয়ে থাকেন। প্রাথমিকভাবে ৯০টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৪টি এবং জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য।

Content added By

দুর্ঘটনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে সকল সাবধানতা মেনে চলা হয় তাকে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বলে। আর যে সকল সরঞ্জাম কার্যক্ষেত্রে অপারেটরদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই হলো ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম (Personal Protective Equipment - PPE)। নিম্নে উল্লেখ্য করা হলো বিভিন্ন প্রকার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামের (Personal Protective Equipment -PPE) নাম ও এদের ব্যবহার-

নামছবিকী কাজে ব্যবহৃত হয়
১. সেফটি এ্যাপ্রোন
কারখানায় ধুলা, বালি, লুব্রিকেন্ট, ধাতব চিপস, আগুনের স্ফুলিঙ্গ ও তাপ ইত্যাদি থেকে জামা কাপড় ও শরীর রক্ষা করার জন্য সেফটি এ্যাপ্রোন ব্যবহার করতে হবে।
২. সেফটি হ্যান্ড গ্লাভস
কারখানায় কাজ করার সময় বিভিন্ন প্রকার গরম ধাতু, ভারি যন্ত্রপাতি উঠানামার সময় হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৩. সেফটি মাস্ক বা গ্যাস মাস্ক
কারখানায় বা যেকোনো স্থানে কাজ করার সময় বিষাক্ত গ্যাস ও ধুলাবালি থেকে রক্ষার জন্য সেফটি মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৪. সেফটি সু (জুতা)
এটি সাধারণ সু নয়, এর উপরিভাগে এক প্রকার মেটালের প্রলেপ দেওয়া থাকে। পায়ের নিরাপত্তার জন্য সেফটি সু ব্যবহার করতে হবে।
৫. সেফটি বেল্ট
৭-৮ ফিট উপরে কাজ করার সময় নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এটি পরিধান করতে হয়।

এ প্রসঙ্গে নিম্নে কারখানাসহ অন্যান্য কর্মস্থলের কর্মীদের শারীরিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য ব্যবহার্য সরঞ্জাম ও পোশাক-পরিচ্ছদের বিবরণ দেয়া হলো ।

১. চোখের নিরাপত্তা সরঞ্জাম (Eye Protecting Equipment) : চক্ষু বা চোখ মানবদেহের এমন একটি ইন্দ্রিয়, যার অভাবে একজন মানুষ কর্মে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়ে এবং তার মুখাকৃতির বিকৃতি ঘটে। নিম্নোক্ত কারণে দৈনন্দিন কাজকর্মসহ কলকারখানায় যান্ত্রিক পরিবেশে কর্মরত কর্মীগণ চক্ষু দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। যথা—

• ক্ষতিকারক আলোকরশ্মি।

• যন্ত্রপাতি হতে বিচ্ছুরিত পাথর কণা, ধাতব কণা, অ্যাব্রাসিভ গ্রিট, ধুলাবালি ইত্যাদি ।

• ক্ষতিকারক ধোঁয়া, গ্যাস, ফেনা ইত্যাদি।

• দ্রুতগতির উড়ন্ত বস্তু ।

• ছিটকে পড়া ক্ষতিকারক তরল পদার্থ ।

• উত্তপ্ত গলিত ধাতু।

চোখের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মপরিবেশে নিম্নোক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা প্রয়োজন—

• প্রোটেকটিভ স্পেকট্যাকলস (Protective Spectacles)

• কভার গগলস (Cover Goggles ) ।

• ডাস্ট গগলস (Dust Goggles ) ।

• মাইনারস গগলস (Miners Goggles)। 

• স্পেকট্যাকলস্ উইথ সাইড শিল্ড (Spectacles with side shields ) ।

•কাপ গগলস (Cup Goggles ) ।

•মেন্টারস্ গগলস (Melter's Goggles)।

•ওয়েল্ডারস্ গগলস (Welder's Goggles ) । 

• কেমিক্যাল গগলস (Chemical Goggles ) ।

চিত্র: চোখের নিরাপত্তা সরঞ্জাম

২. মুখমণ্ডলের নিরাপত্তা (Face Protection) :- কারখানাতে কর্মস্থলের বিকিরিত তাপ, ক্ষতিকর রশ্মি, গলিত ধাতু, রাসায়নিক পদার্থ, উত্তপ্ত তরলসহ অন্যান্য পদার্থের ক্ষতিকর সংস্পর্শ হতে রক্ষার জন্য মুখমন্ডলে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রের কাজ ও সম্ভাব্য বিপদের ধরনের ভিত্তিতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম নির্বাচন করতে হয়। নিম্নে কয়েকটি সরঞ্জামের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হলো—

হ্যান্ড হেল্ড শিল্ড (Hand held shield) : হ্যান্ড হেল্ড শিল্ড ওয়েল্ডিং কাজ পরিদর্শন, ট্যাক ওয়েল্ডিং এবং ছোটখাটো ওয়েল্ডিং কাজের জন্য ব্যবহার করা যায়।

ওয়েন্ডিং হেলমেট (Welding helmet) : আর্ক ওয়েল্ডিং এর সময় উৎপন্ন অতিবেগুনি রশ্মি, গলিত ধাতুর বিচ্ছুরণ, উড়ন্ত বস্তু ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব হতে মুখমণ্ডলকে রক্ষার জন্য ওয়েল্ডিং হেলমেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ফেস শিল্ড (Face shield) : রাসায়নিক পদার্থ স্থানান্তর, হালকা গ্রাইন্ডিং অপারেশন করাতকল বা করাত দিয়ে কাটা ব্লাস্ট ফরনেসসহ অন্যান্য তাপীয় উৎস হতে মুখমণ্ডলকে রক্ষার জন্য ফেস শিল্ড ব্যবহৃত হয়।

চিত্র: মুখমণ্ডলের নিরাপত্তা সরঞ্জাম

• ব্লাস্টিং হেলমেট (Blasting helmets) : ব্লাস্টিং হেলমেট ম্যানুয়াল ব্লাস্টিং করার সময় উচ্চ চাপে নিক্ষেপিত বালু, গার্নেটে মেটাল গ্রিট ইত্যাদির আঘাত হতে মুখমণ্ডল রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়।

• অ্যাসিড প্রুফ হুডস্ (Acid proof hoods) : অ্যাসিড প্রুফ হুডস ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের বিপদ হতে মুখমণ্ডল এবং গলাকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

নিজে করো : 

পাশের চিত্রটি লক্ষ করো। এটি কী কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে? এটি একটি ব্লাস্টিং হেলমেট। কলকারখানায় বিপজ্জনক কাজ করার সময় এটি মাথায় পরিধান করলে মাথা ও মুখমণ্ডল সুরক্ষিত থাকে। এটি উচ্চ তাপমাত্রা এবং ছিটকে আসা বিভিন্ন ধাতব কনা থেকে মুখ, চোখ রক্ষা করে। তবে এটি এমন ভাবে তৈরি করা উচিৎ যেনো এটি হালকা হয়, এর ভিতরটা শীতল থাকে এবং আরামদায়ক হয়। অন্যথায় এটি পরিধান করে কাজ করাটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

৩. পায়ের পাতার নিরাপত্তা (Protecting the Feet) : কারখানায় প্রায়ই বৈদ্যুতিক শক, পায়ের পাতার উপর ভারী বস্তুর পতন, গলিত ধাতু ও তপ্ত তরলের সংস্পর্শ, রাসায়নিক পদার্থের স্পর্শ, শক্ত বস্তুর সঙ্গে হোঁচট লাগা ইত্যাদি কারণে পায়ের আঙ্গুলসহ পায়ের পাতা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ সমস্ত দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য নিরাপদ জুতা বা সেফটি সু ( Safety Shoes) ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। কলকারখানা ও অন্যান্য কর্মস্থলের সম্ভাব্য বিপদের ধরনের উপর ভিত্তি করে সেটি সু-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

• লেদার সু উইথ উড সোলস (Leather shoes with wood soles) : উত্তপ্ত এবং স্যাঁতসেঁতে ভিজা কর্মস্থলে এ ধরনের নিরাপদ জুতা ব্যবহার উপযোগী। ডেয়ারি এবং অন্যান্য পানীয় প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানায় এ জুতা ব্যবহৃত হয়।

• মেটাল ফ্রি সু (Metal free shoe ) : অগ্নি দুর্ঘটনা, বৈদ্যুতিক শক এবং বিস্ফোরণ সংক্রান্ত ঝুঁকিতে থাকা কর্মস্থলে এ ধরনের সেফটি সু ব্যবহৃত হয়।

চিত্র : বিভিন্ন ধরনের সেফটি সু

• সেটি সুজ উইথ মেটাটারসাল গার্ডস (Safety shoes with metatarsal guards) : এ সেফটি সু ভারী মালামাল স্থানান্তরের কাজে নিয়োজিত কর্মীগণ ব্যবহার করে থাকেন।

• গেইটার টাইপ সু (Gaiter type shoe ) : ফিতাবিহীন এ ধরনের জুতা সাধারণত গলিত ধাতু ছিটকে পড়ার সম্ভাবনাপূর্ণ কর্মস্থল এবং ওয়েল্ডিং কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। 

• রিইনফোরসড সোলস্ সু (Reinforced soles shoes) : এ ধরনের নিরাপদ জুতা নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর সুচালো অংশ, যেমন— পেরেক, তারকাটা ইত্যাদির বর্ধিত সুচালো অংশের আঘাত প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়।

🚻 শ্রেণির কাজ : নিচের ছকে পায়ের পাতার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জামের নাম উল্লেখ আছে। এদের কাজ লেখো।

সরঞ্জামকাজ
মেটাল ফ্রি সু 
গেইটার টাইপ সু 
লেদার সু উইথ উড সোলস 

৪. পায়ের নিরাপত্তা (Leg Protection) : বিভিন্ন ধরনের ইনজুরি থেকে পায়ের গোছা হতে হাঁটু পর্যন্ত। অংশকে রক্ষার জন্য লেগিং (Legging) ব্যবহার করতে হয়। যে সকল কর্মী গলিত ধাতুর আশপাশে কাজ করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রয়োজনে এ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া সিমেন্ট ফিনিশিং (Cement Finishing) এবং টাইলস সেটিং (Tiles Setting) এর কাজে নিয়োজিত কর্মীগণকে নি-প্যাড (Knee pads) ব্যবহার করতে হয়। যে সকল কর্মস্থলে গলিত ধাতু, স্পার্ক, তাপ ইত্যাদি হতে বিপদের আশঙ্কা থাকে, সেখানে অ্যাসবেসটস (Asbestos ) অথবা, চামড়ার তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত। আবার অ্যাসিড (Acids), অ্যালকালিস ( Alkalis) এবং গরম পদার্থের বিপদ প্রতিহত করার জন্য প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম রাবার এবং প্লাস্টিকের তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়।

৫. মাথার নিরাপত্তা (Protecting the Head) : মাথাকে পড়ন্ত বা উড়ন্ত বস্তুর আঘাত, ধাক্কা ও ঠোকালাগা জনিত আঘাত এবং ব্যক্তির পতনজনিত আঘাত হতে রক্ষার জন্য মাথায় মজবুত হ্যাট ব্যবহার করা আবশ্যক। এছাড়া মাথাকে আঘাত, বৈদ্যুতিক শক, পানি, তৈল, আর্দ্রতা ইত্যাদির সংশ্রব ও বিপদ হতে রক্ষার জন্য হ্যাট ব্যবহার করতে হয়। হ্যাট তৈরি করার জন্য ল্যামিনেটেড প্লাস্টিক, গ্লাস ফাইবার, অ্যালুমিনিয়াম সংকর ইত্যাদি পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হ্যাট বৈদ্যুতিক শক প্রতিরোধে সক্ষম নয়। এ ধরনের হ্যাট শুধুমাত্র আঘাত প্রতিরোধে সক্ষম। বর্তমানে প্লাস্টিকের তৈরি শক্তিশালী হ্যাট ওয়েল্ডিং মাস্ক (Welding mask), মাইনারস ক্যাপ ল্যাম্প (Miner's cap lamp), হিয়ারিং এইড (Hearing aid) ইত্যাদি সংযোজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।

৬. কানের নিরাপত্তা (Ear Protecting) : দীর্ঘসময় কলকারখানায় যন্ত্রপাতির উচ্চ শব্দের মধ্যে অবস্থানের ফলে ক্রমাগত শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়। যে সকল কর্মস্থলে শব্দের তীব্রতা ৮৫ ডেসিবেল (Decibel) এর অধিক, সে সমস্ত কর্মস্থলে কাজ করায় সময় কানের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়। এমন কর্ম-পরিবেশে কানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার ব্যতিরেকে দীর্ঘদিন ঐ স্থানে কাজ করলে ক্রমাগত শ্রবণশক্তি হ্রাস পাবে। তাই যেকোনো কোলাহলপূর্ণ ও উচ্চশব্দযুক্ত কর্ম-পরিবেশে কাজে নিয়োজিত হওয়ার শুরু হতে, কানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত। নিম্নে কানের নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হলো

• ইনসার্ট টাইপ প্রোটেকটরস (Insert type protectors ) : এ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্লাস্টিক রাবার, ফোম, মোম এবং তুলা দিয়ে তৈরি করা হয়। এ ইয়ার প্লাগ ব্যবহারের ফলে কর্মস্থলে উচ্চমাত্রার শব্দ বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও কানের কোন প্রকার ক্ষতি হয় না।

• মাফ টাইপ (Muff types) শব্দ প্রতিরোধ সরঞ্জাম : কাপ বা মাফ টাইপ শব্দ প্রতিরোধক সরঞ্জাম এমন একটি সরঞ্জাম; যা কর্মীর কানকে সম্পূর্ণভাবে আবৃত করে রাখে। লিক প্রুফ সিলবিশিষ্ট মাফ টাইপ শব্দ প্রতিরোধী সরঞ্জামের কার্যকারিতা খুবই ভালো। কারণ বহিঃকর্ণকেও এ ধরনের শব্দ প্রতিরোধী সরঞ্জাম রক্ষা করে।

চিত্র : কানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম

৭. আঙ্গুল, হাতের তালু এবং হাতের নিরাপত্তা (Protecting Fingers Palms and Hands) : দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজকর্ম হতে শুরু করে কারখানার যন্ত্রপাতি চালানো, কোন কিছু উঠানো-নামানো, এমনকি ধরাছোঁয়া ও নাড়াচাড়া করার জন্যও হাতের স্পর্শ অপরিহার্য। তাই হাতে আঘাত পাওয়ার প্রবণতাও সর্বাধিক। হাতের উল্লেখযোগ্য বিপদগুলো  হলো— কেটে যাওয়া, আঁচড় লাগা, থেঁতলানো, অগ্নিদগ্ধ হওয়া, হাড়ে চিড় ধরা, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি। হাতকে এ ধরনের বিপদ প্রতিরোধ উপযোগী কতিপয় নিরাপত্তা সরঞ্জামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করা হলো।

• লেদার গ্লোভস (Leather gloves) : লেদার গ্লাভস বৈদ্যুতিক স্পার্ক, তাপ, বিচ্ছুরিত ধাতব কণা, খসখসে বস্তু ইত্যাদির সংঘাত হতে হাতকে নিরাপদ রাখার জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

• রাবার গ্লোভস (Rubber gloves ) : এ ধরনের গ্লাভস বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে নিয়োজিত ইলেকট্রিশিয়ানগণকে ব্যবহার করতে হয়। রাবার গ্লোভসকে সরবরাহ লাইনে কাজ করার সময় ব্যবহার করতে হলে, নির্দিষ্ট সময় পরপর গ্লোভস এর ডাই- ইলেকট্রিক শক্তি পরীক্ষা করতে হবে।

অ্যাসবেসটস গ্লোভস (Asbestos gloves) : এ ধরনের গ্লাভস ব্যবহারের ফলে হাত দগ্ধ হওয়া এবং তাপের ক্ষতিকর প্রভাব হতে রক্ষা পায়।

মেটাল মেশ গ্লোভস (Metal mesh gloves ) : মেটাল মেশ গ্লাভস ছুরি, চাকু এবং অন্যান্য ধারালো, খসখসে ও সুঁচালো জিনিসজপত্রের আঘাত থেকে হাতকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

কোটেড ফেব্রিক গ্লোভস (Coated fabric gloves ) : এই গ্লোভস গাঢ় রাসায়নিক পদার্থ নাড়াচাড়া করার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তা ছাড়া জ্যাকিং হাউজ ও খাদ্য নাড়াচাড়ার কাজেও কোটেড ফেব্রিক গ্লোভস ব্যবহার করা যায়।

চিত্র : বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লোভস

ভিনাইল গ্লোভস (Vinyl gloves) : ভিনাইল গ্লোভস রাসায়নিক এবং ক্ষয়কারী পদার্থ নাড়াচাড়া করার জন্য ব্যবহার হয়। তা ছাড়া পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ স্থানান্তরের কাজেও এই গ্লাভস খুবই উপযোগী।

কটন গ্লোভস ( Cotton gloves) : আঁচড় লাগা, ক্ষয় হওয়া, ধুলাবালি ও ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি হতে এ ধরনের গ্লাভস হাতকে রক্ষা করে। তবে অতিরিক্ত খসখসে ধারালো এবং ভারী বস্তু নাড়াচাড়া করার জন্য কটন গ্লোভস ব্যবহার উপযোগী নয়।

🚻 শ্রেণির কাজ : নিচের ছকে হাতের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জামের নাম দেয়া হলো। এদের কাজ উল্লেখ করো।

সরঞ্জামকাজ
লেদার গ্লোভস 
রাবার গ্লোভস 
ভিনাইল গ্লোভস 
মেটাল মেশ গ্লোভস 
কটন গ্লোভস 

৮. শরীরের কাঁধ হতে হাঁটু পর্যন্ত অংশের নিরাপত্তা (Safety of the Protruding Part of the knee from the Shoulden of the Body) : শরীরের এ অংশকে বিভিন্ন ধরনের বিপদ হতে রক্ষার জন্য এ্যাপ্রোন এবং কভার অল (Apron and cover all) ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ্যাপ্রোন বিভিন্ন পদার্থের তৈরি হয়ে থাকে। যেমন- চামড়া, মোটা কাপড়, ফেব্রিক, অ্যাসবেসটস ইত্যাদি। এ্যাপ্রোন শরীরকে তাপ, উত্তপ্ত ধাতব কণা, অতি উজ্জ্বল বিচ্ছুরিত আলো, যন্ত্রপাতি এবং মালামালের ধারালো ও খসখসে অংশের বিপদ হতে রক্ষা করে। এ্যাপ্রোন ব্যবহারে ক্ষতিকর ময়লা, ধুলাবালি ও অন্যান্য পদার্থ সরাসরি শরীরের সংস্পর্শে আসতে পারে না। চলমান ও ঘূর্ণায়মান যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করা, অথবা এধরনের পরিবেশে চলাফেরা করতে হলে এ্যাপ্রোনকে শরীরের সাথে আঁটোসাঁটোভাবে পরিধান করতে হবে। বিশেষ ধরনের যেমন- মোল্ডিং, ব্লাস্টিং, পেইন্টিং, ওভারহোলিং ইত্যাদি কাজ করার সময় শরীরকে সম্পূর্ণভাবে আবৃত করার প্রয়োজন। কলকারখানা ও অন্যান্য কর্মস্থলের এ প্রকৃতির কাজকর্ম করার জন্য কভার অল (Cover all) ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়।

চিত্র : শরীরের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত পোষাক

৯. পতনজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধী সরঞ্জাম (Equipment for the Prevention of all Accidents) : সংস্কার, নির্মাণ ও মেরামত কাজে নিয়োজিত কর্মীগণকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমি থেকে উচ্চতায় বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চতায় কাজ করার সময় কর্মীগণের অসতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার না করার ফলে মারাত্মক বা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। যে সমস্ত কাজকর্মে ব্যক্তি এবং বস্তুর পতনজনিত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে, সেসব ক্ষেত্রে পতন প্রতিরোধের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো উচ্চতায় উঠানামা, কাজকর্ম এবং চলাফেরা করার সময় পতন প্রতিরোধের জন্য হার্নেস (Harnes) এবং সেফটি বেল্ট (Safety belt) ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন- দুর্গম এলাকায় প্রবেশ, অগ্নিকান্ড ও ভূমিকম্পের পর উদ্ধার কাজ, সুউচ্চ স্থানে উঠানামা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য বিপদ মোকাবিলার জন্য লাইফ লাইন (Life line) ব্যবহার করাতে হবে। শরীরের সাথে পতন প্রতিরোধী সরঞ্জাম এমনভাবে আটকাতে হয়, যাতে পতনের সময় শরীরে ফাঁস না লাগে। তা ছাড়া সেফটি বেল্ট ও হার্নেস উচ্চ ঘাতবল সহ্যকারী পদার্থ দিয়ে তৈরি করতে হবে। পতন প্রতিরোধী সরঞ্জামের কার্যকারিতা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পরীক্ষা করতে হবে।

১০. শ্বাসপ্রশ্বাসের নিরাপত্তা সরঞ্জাম (Respiratory Protective Equipment) : কোনো স্থান হতে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর এমন বস্তুকে অপসারণ করতে, অথবা শ্বাসকার্যে বিপদ সৃষ্টি করে এমন পদ্ধতির বিচ্ছিন্নকরণের জন্য এ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া কোন ভেসেল বা অন্য কোনো আবদ্ধ পাত্র হতে চোয়ানো বা নির্গত ক্ষতিকর তরল, চাপপূর্ণ পাইপ লাইন, বাষ্প, ধোঁয়া, গ্যাস ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া হতে শ্বাস ক্রিয়াকে রক্ষার জন্যও নিরাপত্তা সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়।

নিম্নে বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী শ্বাসপ্রশ্বাস সরঞ্জামের নাম উল্লেখ করা হলো।

• গ্যাস মাস্ক (Gas mask) ।

• অ্যাব্রেসিভ ব্লাস্টিং হেলমেট (Abrasive blasting helmet)।

• মেকানিক্যাল ফিল্টার রেসপিরেটর (Mechanical filter respirators) | 

• কেমিক্যাল কাট্রিজ রেসপিরেটর (Chemical cartridge respirators) |

• হোজ মাস্ক (Hose mask)।

• সেল্‌ফ কনটেইনড ব্রিদিং অ্যাপারেটাস (Self contained breathing apparatus) | 

• এয়ার লাইন রেসপিরেটর ( Air line respirator)।

চিত্র: শ্বাসপ্রশ্বাসের নিরাপত্তা সরঞ্জাম।
Content added || updated By

কর্মক্ষেত্রের অনিরাপদ ও বিপদসঙ্কুল অবস্থা বা কাজ করার সময় যন্ত্রপাতি যার দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন সম্ভাব্য দুর্ঘটনার কারণকে ঝুঁকি বলে। কর্মক্ষেত্রের অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র ও সমস্যাসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো।

ক. বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র : আজকাল বসতবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ইত্যাদি সকল স্থানেই বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া সব শিল্প প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যুৎ ব্যবহার অত্যাবশ্যক। এ অত্যাবশ্যকীয় শক্তির অনিরাপদ ব্যবহারের ফলে অনেক সময়ই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে।

▪️ওয়েল্ডিং মেশিন থেকে এক ধরনের রশ্মি নির্গত হয়, যা চোখের সাময়িক ক্ষতিসহ স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে । ইহা বিকির্ণ রশ্মি বা রেডিয়েশন আপদের উদাহরণ।

▪️দৈনন্দিন জীবনে আমরা Extremely low frequency (ELF) বিকিরণের সাথে জড়িত। এটি শুধু বিদ্যুৎ এবং কম্পিউটার মনিটর থেকেই হয় না বরং সূর্যরশ্মি, আগুন এবং পৃথিবীর নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্র থেকেও হয়ে থাকে।

▪️আমরা প্রতিদিন বাসায় এবং কাজের স্থানে বিদ্যুৎ, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র, সূর্য হতে প্রাপ্ত বিকিরণে এক্সট্রিমলি লো-ফ্রিকুয়েন্সির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকি। এছাড়াও কম্পিউটার মনিটরও ELF-এর একটি উৎস। গর্ভাবস্থায় দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের স্ক্রিনের সম্মুখে বসে কাজ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

▪️অনেক সময় বিদ্যুৎ থেকে শর্টসার্কিটের ফলে আগুনের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

খ. মেশিন হ্যাজার্ড : মেশিনের গার্ডসমূহ ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখতে হয়। গিয়ার, স্প্রোকেট, চেইন, বোল্ট শ্যাফট ইত্যাদিতে অনেক সময় সঠিকভাবে গার্ড থাকে না। ফলে এগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয় ।

গ. ফায়ার হ্যাজার্ড বা অগ্নি বিষ্ফোরণ : অগ্নিকাণ্ড ঘটানো মূল ভিত্তি হলো দাহ্য বস্ত্র, অক্সিজেন, তাপ এবং এদের মধ্যকার অবিচ্ছিন্ন বিক্রিয়া। উল্লিখিত উপাদানসমূহের যেকোনো ভাবে একত্রিত হলে এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তাতে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

ঘ. ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম : ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক যন্ত্রপাতি, যেমন- এ্যাপ্রোন, গগলস, রেসপিরেটরি, নিরাপত্তা টুপি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও আংটি ও হাত ঘড়ি পরে চলন্ত মেশিনারিতে কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ঙ. যন্ত্রপাতিসমূহ : আধুনিক কারখানায় উৎপাদান কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে প্রায় প্রতিটি যন্ত্রপাতিই গতিশীল। কারখানায় ব্যবহৃত এ সব যন্ত্রপাতির গতিশীল অনিরাপদ অংশের দ্বারা প্রতিনিয়তই ছোট বড় নানা ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে।

▪️বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও মেশিনারির ঘূর্ণায়মান অংশের মাধ্যমে কর্মী আহত হতে পারে।

▪️বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি, শীটমেটাল ওয়ার্কশপ এবং কলকারখানার যন্ত্রপাতি ও মেশিন থেকে প্রচন্ড শব্দ নির্গত হয়। এ শব্দ মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্রবণশক্তি লোপ পেতে পারে। আবার মনুষ্য সৃষ্ট হৈ চৈ হঠাৎ কোনো কর্মীকে অমনোযোগী করতে পারে, যা দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে ।

চ. রাসায়নিক আপদ : রাসায়নিক পদার্থের সক্রিয় বিক্রিয়ার ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। এ সমস্ত বিক্রিয়ার কোনটির ক্ষেত্রে তাপ সংযোজন, আবার কোনটির ক্ষেত্রে তাপ বিয়োজন হয়ে থাকে। তবে এই উভয় ধরণের বিক্রিয়াস্থলই অস্বাভাবিক তাপের প্রভাবমুক্ত নয়। সে কারণে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক বিক্রিয়াস্থল দহনজনিত দুর্ঘটনার শিকার হয়।

ছ. মালামাল স্থানান্তরে : কৌশলগত অবস্থান ও সঠিক পদ্ধতি ব্যতিরেকে, যে কোনো অল্প ওজনের জিনিসপত্র উত্তোলনের সময়ও শরীরের কোনো না কোন অংশে টান বা মোচড় লাগতে পারে। যার ফলে শরীরের মাংশপেশি, শিরা অথবা অস্থিতে সাময়িক পীড়া অথবা স্থায়ী জখম হতে পারে।

জ. টুলসমূহ : প্রতিটি জবের জন্য সঠিক টুল ব্যবহৃত হচ্ছে কি না। যেমন— ফাইল, চিজেল, হাতুড়ি, রেঞ্চ, স্ক্রু-ড্রাইভার ইত্যাদি সঠিক আছে কি না এবং স্পিড সঠিকভাবে সেট করা আছে কি না তা দেখা। অনেক সময় এসব যন্ত্রপাতি ছুটে গিয়ে অনেকেই আহত হতে পারে।

১.১.৫ জরুরি অবস্থায় করণীয় ও যোগাযোগ কৌশল (Emergencies and Communication Strategies)

স্বাস্থ্য, জীবন, সম্পত্তি বা পরিবেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্ভাব্য ঝুঁকি বা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে যাওয়া অবস্থাই হলো জরুরি পরিস্থিতি। জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুতি করা কর্মস্থলের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটির আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নিম্নে সচরাচর জরুরি পরিস্থিতি, জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি ও জরুরি পরিস্থিতির বিষয় উল্লেখ্য করা হলো।

ক. সচরাচর জরুরি পরিস্থিতি—

▪️অগ্নি অথবা বিস্ফোরণ।

▪️মেডিকেল ইমার্জেন্সি ।

▪️খারাপ আবহাওয়া।

▪️মেজর পাওয়ার ফেইলিওর।

▪️ভূমিকম্প ইত্যাদি।

খ. জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি— জরুরি পরিস্থিতিতে যথাযথ ব্যবস্থা, যেমন-

▪️অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা।

▪️প্রাথমিক চিকিৎসা।

▪️জরুরি চিকিৎসা ও হ্যাজার্ড অপসারণ ইত্যাদি পদক্ষেপ নিতে হবে।

গ. একজন কর্মী হিসাবে, জরুরি পরিস্থিতিতে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানা দরকার—

▪️সচরাচর জরুরি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে হবে।

▪️কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সাড়া দেওয়া।

• জরুরি অ্যালার্ম চালু হলে সাড়া দেওয়া।

▪️জরুরি পরিস্থিতিতে বাইরে বের হওয়ার জন্য ব্যবহৃত সিম্বলসমূহ অনুসরণ করে বের হওয়া।

Content added || updated By

আধুনিক যেকোনো শিল্পকারখানায় পরিকল্পনা মোতাবেক দ্রব্য উৎপাদন করা, উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করা, শিল্প দুর্ঘটনা রোধ করা, সর্বোপরি শিল্পকারখানাকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পক্ষে সংগৃহীত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কারখানায় স্বাস্থ্যসম্মত উপযুক্ত আলোক ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন ।

🔳 প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন কী ?

ভেন্টিলেশন হলো গৃহাভ্যন্তরের বাতাস বের করে দিয়ে সতেজ বাতাস প্রবেশ করানোর প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ফলে ঘরে সব সময় বায়ু চলাচল থাকে। উপযুক্ত ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে ঘরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ু চলাচল গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ক. আলোক ব্যবস্থা (Lightening) : প্রতিটি শিল্পকারখানার জন্য আলোক ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারখানায় নিরাপত্তা ও উৎপাদনের স্বার্থে উপযুক্ত আলোক ব্যবস্থা থাকা একান্ত জরুরি। উপযুক্ত আলোক ব্যবস্থা কারখানায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সহায়তা করে, কারখানার উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায়, উৎপাদনে সঠিক মান বজায় থাকে এবং শ্রমিক কর্মচারীদের চোখের কোনো ক্ষতি হয় না।

১৯৬৫ সালের কারখানা আইন ও ১৯৭৯ সালের কারখানা বিধিমালায় আলোক ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে— 

১. শ্রমিকরা কারখানার যে সমস্ত অংশে কাজ বা যাতায়াত করে সেখানে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম বা উভয়ের সমন্বয়ে প্রচুর আলোক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

২. কর্মস্থলে ঘরের আলোর জন্য ব্যবহৃত সমস্ত চকচকে জানালা বা সূর্যের আলো আসার পথসমূহ ভেতর ও বাহির উভয় পার্শ্বেই যথাযথভাবে পরিষ্কার ও প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

৩. প্রতিটি কারখানায় সরাসরি বা চকচকে অংশে প্রতিফলিত হয়ে আসা চোখ ধাঁধানো আলো কিংবা ছায়া (যা চোখকে পীড়া দেয় বা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে) প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

এছাড়া-

১. উত্তম ইলুমিনেশন শিল্পকারখানা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।

২. অপর্যাপ্ত ইলুমিনেশন দুর্ঘটনার একটি বিশেষ কারণ।

৩. অতি উজ্জ্বল আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর, কেননা এটি উত্তম আলোকিতকরণ নীতির পরিপন্থি। 

৪. ত্রুটিপূর্ণ আলোকব্যবস্থা কর্মীগনের দৃষ্টিশক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।

৫. অপর্যাপ্ত আলোক ব্যবস্থায় কর্মী সূক্ষ্ম আকারে দ্রব্যাদি ঠিকমতো দেখতে পায় না এবং পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূক্ষ্মতার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়।

খ. বায়ু চলাচল (Ventilation) : যেকোনো খোলা স্থানে কোনো ম্যাটেরিয়াল স্থানান্তর বা প্রসেস করা হলে উক্ত ম্যাটেরিয়াল বা তাদের উপজাত থেকে দূষিত কিছু দ্রব্য। যেমন— ধুলাবালি, গ্যাস, বাষ্প, ধোঁয়া ইত্যাদি বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো বায়ুমণ্ডলকে কলুষিত করে পরিবেশকে করে অস্বাস্থ্যকর। শিল্পকারখানা থেকেও অনুরূপ দূষিত পদার্থ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, যা সরাসরি শ্রমিক-কর্মীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ভেতর প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসম্মত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে শ্বাস প্রশ্বাসজনিত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ব্যবস্থাদিও থাকতে হবে। নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণের মাধ্যমে উপযুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত শিল্প গড়ে তোলা যায় ।

১. আদর্শমানের হাউজকিপিং করে।

২. এগজাস্ট ভেন্টিলেশন লাগিয়ে।

৩. অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে।

৪. অপারেশন বা প্রসেস পরিবর্তন করে।

৫. রেসপিরেটরি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে ।

৬. বিল্ডিং বা যন্ত্রপাতির ডিজাইন পরিবর্তন করে।

Content added || updated By

কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের নিয়ামকগুলো নিম্নরূপ—

১. রাসায়নিক মাধ্যম

▪️বাষ্প : মার্কারি এবং সলভেন্ট হতে সৃষ্ট বাষ্প স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিপদসমূহের প্রধান উৎস। মার্কারি সাধারণত রাসায়নিক ল্যাবরেটরি এবং সলভেন্টসমূহ সাধারনত স্কুল শপ, গ্রাফিক আর্টস, ধাতু, কাঠ এবং বৈদ্যুতিক ইউনিটসমূহে ব্যবহৃত হয়। কার্বন টেট্রাক্লোরাইড একটি অত্যাধিক বিষাক্ত সলভেন্ট এবং এটি প্রিন্টিং প্রেসে ব্যবহৃত থিনার জাতীয় সলভেন্ট মিশ্রণের একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

▪️ফিউম (ধুম) : এটি এক প্রকার কণা। যা গ্যাসীয় অবস্থা হতে কনডেনসেশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় (সাধারণ গলিত ধাতু হতে উদ্বায়ী প্রক্রিয়ার পর)। লিড এবং ক্যাডমিয়াম উচ্চ মাত্রার বিষাক্ত ফিউম। জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেশিয়াম কিছুটা কম বিষাক্ত।

▪️গ্যাস (কার্বন মনোক্সাইড) : এ গ্যাস সাধারনত অটোমেকানিক্স এবং অটোসার্ভিস শপ, জেনারেল মেটাল শপ, গলিতধাতু হিটাট্রিটিং ফার্নেস, আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট শপ, ফুড ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার শপ/ল্যাবরেটরিতে পাওয়া যায়।

• ধূলিকণা : এটি এক প্রকার কঠিন কণা। জৈব ও অজৈব পদার্থসমূহ যেমন- পাথর, আকরিক ধাতু, কয়লা, শস্য ইত্যাদি হতে পেষণ, দ্রুত আঘাত ও ডেটোনেশন মাধ্যমে ধূলিকণা উৎপন্ন হয়। ধূলিকণা ফুসফুসের প্রদাহ, চর্মরোগ, অ্যালার্জি এবং ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি করে বলে এদেরকে বিষাক্ত ধূলিকণা বলা হয় ।

• কুজটিকা : গ্যাসীয় অবস্থা হতে তরল অবস্থা আনয়নের জন্য কন্ডেসেশন প্রক্রিয়া দ্বারা বা তরল পদার্থকে ছড়ানো অবস্থায় বিষাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় (যেমন— প্লাসিং ফোসিং, অ্যাটোমাইজিং ইত্যাদি) উৎপন্ন ভাসমান তরল কণাকে মিস্ট বা কুজ্ঝটিকা বলা হয়। ইলেক্ট্রোপ্লেটিং প্রক্রিয়া ক্রোমিক এসিড মিষ্ট উৎপন্ন করে এবং ইলেকট্রিক্যাল শপের স্টোরে ব্যাটারি চার্জিং এর সময়েও এসিড মিস্ট উৎপন্ন হয়।

🚻 শ্রেণির কাজ : কর্মক্ষেত্রে ধূলিকণা ও কুঞ্ঝটিকা কী এক জিনিস? এদের সম্পর্কে লেখো ।

২. জীব মাধ্যম : জবাই এবং মাংস প্যাকিং প্লান্টের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবাণু উৎপন্ন হওয়ার ফলে, উক্ত প্লান্টে কর্মীদের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। পশমযুক্ত চামড়া, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুলের কুঁচি, হাঁস-মুরগির পরিত্যক্ত অংশ এবং পোল্ট্রি হাউজের চারিপার্শ্বের মাটির দ্বারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। নোংরা স্থান ও বাসি পচা খাবারে বসবাসকারি অণুজীব। যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যামিবা, এন্টামিবা, ভাইরাস এ সব কিছু মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটাতে পারে বিধায় এগুলো আপদ হিসাবে বিবেচিত। বিভিন্ন রোগ যেমন— ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ব্যক্তি তার কফ, হাঁচি, থুথু যেখানে সেখানে ফেললে রোগের জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পাশে বসা কোন সুস্থ মানুষের নাক বা মুখ দিয়ে এ জীবাণু শরীরে প্রবেশের ফলে রোগের বিস্তার ঘটতে পারে। এ জীবাণুগুলো কোন তলের উপর, যেমন— টেবিল, দরজার লক, যন্ত্রপাতির হাতল, টাকা প্রভৃতির উপর ২ ঘন্টা বা তার বেশি সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। তাই রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি হাত দিয়ে তার নাক পরিস্কার করে অথবা মুখে হাত দিয়ে হাঁচি দিয়ে, সেই হাতে যা স্পর্শ করবে তাতেই জীবাণু লেগে যাবে এবং সুস্থ শরীরে জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটবে।

 

🔲 সাম্প্রতিক কালে জীব মাধ্যমে ছড়ানো কোন রোগটি মহামারীর আকার ধারণ করে? 

সাম্প্রতিক কালে জীব মাধ্যমে ছড়ানো কোভিড-১৯ রোগটি মহামারীর আকার ধারন করে। কোভিড- ১৯ শ্বাসযন্ত্রের একটি সংক্রামক রোগ, যা নতুন আবিষ্কৃত করোনা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। করোনা থেকে ‘কো', ভাইরাস থেকে 'ভি', এবং 'ডিজিজ' বা 'রোগ' থেকে 'ডি' নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ কোভিড করা হয়। এই রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি এবং ক্লান্তি। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা চাপ, মাংসপেশী বা শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, বিভ্রান্তি, গলা ব্যথা, রক্তজমাট বাঁধা বা নাক দিয়ে পানি পড়া, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং বমি, পেটে ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি উঠা। সংক্রমিত ব্যক্তি যখন কাশি বা হাঁচি দেয় অথবা কথা বলে, গান করে বা শ্বাস নেয় তখন মুখ বা নাক থেকে নিঃসৃত ছোট ছোট কণার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৩. ভৌত মাধ্যম এবং অবস্থা : কিছু কিছু ভৌতমাধ্যম রয়েছে, যেগুলো শরীরের টিস্যুগুলোকে নষ্ট করে দেয়। যেমন— সূর্যের আলো বা উচ্চ তাপমাত্রায় অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অতি উচ্চ মাত্রার শব্দ, ইনফ্রারেড এবং অতিবেগুনি রশ্মি, এক্সরে ইত্যাদির কারণেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়।

নিম্নে কয়েকটি ভৌত মাধ্যম এবং অবস্থা উল্লেখ করা হলো—

• অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা।

▪️অতিরিক্ত শব্দ।

• অত্যাধিক বায়ুচাপ ।

▪️আঘাতজনিত কম্পন

• ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন।

👤একক কাজ : কর্মক্ষেত্রের অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র ও সমস্যাসমূহের একটি তালিকা প্রস্তুত করো।

Content added || updated By