SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ধারণা | NCTB BOOK

প্রতিষ্ঠানকে সফলতার দিকে ধাবিত করতে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এমন অনেক বিষয় আছে, যা একে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে সহায়তা বা বাধার সৃষ্টি করে। এগুলো হলো-

(ক) অভ্যন্তরীণ উপাদান (Internal factors) : প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভ্যন্তরীণ উপাদানসমূহ সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে । এগুলো হলো—

= প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য (Organizational goals): হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার ওপর প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে হিউম্যান রিসোর্সের চাহিদা নির্ধারণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা সহ নির্বাচন, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ প্রভৃতি পরিচালিত হয়। আর এ কারণেই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অনুযায়ী হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি নির্ধারণ করতে হয়।

■ কাৰ্যসমূহ (Tasks): একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদিত হয়। কাজের এরূপ বিভিন্নতার কারণে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা প্রভাবিত হতে পারে। এজন্য প্রতিষ্ঠানের কার্য প্রকৃতি বিবেচনা করে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার ধরন নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বর্তমানে জনশক্তিকে সামাজিক পুঁজি বা মানব পুঁজি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এতে শ্রমজীবী জনগণের ক্ষমতায়নের প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে। এজন্য সৃজনশীল ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে চলেছে।

■ সংগঠন কাঠামো (Organizational structure): প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো এবং সংগঠনের প্রকৃতি হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। এ কাঠামো যত জটিল হবে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে তত বেশি সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা সংগঠন কাঠামোর ভিত্তিতে হয়ে থাকে। এ কাঠামোর ভিত্তিতে সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক সময়ে সংগ্রহ ও সঠিক কাজে নিয়োগ করার ওপর হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার সফলতা নির্ভর করে।

চিত্র : সংগঠন কাঠামো

■ কর্মীদের ভিন্নতা (Diversification of employees): কর্মীদের জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বয়স, সম্প্রদায়, মূল্যবোধ প্রভৃতিতে ভিন্নতা থাকে। অর্ধশতাব্দী পূর্বে শ্রম শক্তিতে এত বৈচিত্র্য ছিল না। কিন্তু যোগাযোগ ও প্রযুক্তির সুবাদে বিশ্ব ছোট হয়ে এসব পার্থক্য স্পষ্ট হচ্ছে। মহিলা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরাও বর্তমানে শ্রম বাজারে বিশেষ স্থান দখল করছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এগুলোও বিবেচনায় নিতে হয়।

■ অভ্যন্তরীণ চাহিদা (Internal demand): প্রতিষ্ঠানের ভিতরে হিউম্যান রিসোর্সের চাহিদা ও সরবরাহ হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্সের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা নির্ধারণ করে চাহিদা অনুযায়ী হিউম্যান রিসোর্স প্রাপ্তির সম্ভাব্য ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে হয়।

■ পুরস্কৃতকরণ পদ্ধতি ( Reward system): কর্মীরা শ্রমের বিনিময়ে যে আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধা পেয়ে থাকে তাকে পুরস্কার বলে। বেতন, মজুরি, বোনাস, চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতা প্রভৃতি পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত। এটি হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে ন্যায্য ও নিরপেক্ষভাবে এবং সমতার ভিত্তিতে এ পুরস্কৃতকরণ কার্যক্রম চালাতে হয়। শ্রমিকদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিরূপণ, কাজ ও দায়িত্বের প্রকৃতি প্রভৃতি এ পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে।

 ■ হিউম্যান রিসোর্স নীতি (Human resource policy): হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার হাতিয়ার হিসেবে হিউম্যান রিসোর্স নীতির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এ নীতির কার্যকর প্রয়োগ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। হিউম্যান রিসোর্সের কাম্য ব্যবহারের হিউম্যান রিসোর্স নীতির প্রভাব রয়েছে।

(খ) বাহ্যিক উপাদান (External factors): প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক পরিবেশের অনেক উপাদান হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। এ ধরনের উপাদানগুলো—

■ সরকারি প্রভাব (Government influence): সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। এক সময় সরকারি নিয়ন্ত্রণে দেশীয় শিল্প বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে দেশীয় শিল্প ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। দেশের রাজস্বনীতি, মুদ্রানীতি, ঋণনীতি, শিল্প ও বাণিজ্য নীতি প্রভৃতিতে পরিবর্তন আসায় এগুলোতে সরকারের প্রভাব কমে যাচ্ছে। ফলে শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। শিল্পোন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোও এখন ব্যাংক, বিমা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, বিমান পরিবহন, সড়ক পরিবহন প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক ও সেবা খাত থেকে রাষ্ট্রীয় খাতকে গুটিয়ে নিচ্ছে এবং বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারি আনুকূল্যবিহীন অবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখী হয়ে অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াই করতে হচ্ছে। ফলে টিকে থাকতে ও উন্নতির লক্ষ্যে বাড়াতে হচ্ছে দক্ষতা, সেবা ও প্রতিযোগিতার মনোভাব । CUSTOMER,

■সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান (Social and cultural factors): হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে সাংস্কৃতিক সামাজিক পরিবেশের উপাদানসমূহ যথেষ্টভাবে প্রভাবিত করে। সাধারণত মূল্যবোধ, নৈতিকতা, রীতিনীতি, রুচি, চাহিদা, ধর্মীয় প্রভাব, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি মানুষের কর্মস্পৃহাকে প্রভাবিত করে। তাই হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে হিউম্যান রিসোর্সের এসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং রীতিনীতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।

■ আইনগত উপাদান ( Legal factors ) : হিউম্যান রিসোর্স সংক্রান্ত সরকারি বিধি-বিধান ও বিভিন্ন আইন হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। দেশের শ্রম ও শিল্প সম্পর্ক আইন বিশেষ করে শিল্প বিরোধ, ট্রেড ইউনিয়ন, যৌথ দরকষাকষি সংক্রান্ত বিধি-বিধান হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সচেতন করে তোলে। এছাড়াও চুক্তি আইন, কোম্পানি আইন, কারখানা আইন, পণ্য বিক্রয় আইন, পরিবহন আইন, অংশীদারি আইন প্রভৃতি।

■ রাজনৈতিক উপাদান (Political factors): রাজনৈতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত হলো— দেশের আইন- শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক দলসমূহের অবস্থা, ধর্মঘট, হরতাল, অবরোধ, তালাবদ্ধ প্রভৃতি। এগুলো হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। আর এ কারণেই দেশের রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করেই হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

■ অর্থনৈতিক পরিবেশ (Economic factors): দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পদ্ধতি ও অবস্থা হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব ফেলে। বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার প্রভৃতি হিউম্যান রিসোর্স চাহিদা ও সরবরাহকে প্রভাবিত করে। আর এ কারণেই প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনায় দেশের আর্থিক অবস্থার পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।

■ প্ৰযুক্তিগত উপাদান (Technological factors): বিশ্বায়ন এবং প্রতিষ্ঠানে কারিগরি ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। সাম্প্রতিককালে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ ব্যবহারের নব দিগন্তের সূচনা করছে। এখন প্রয়োজন হলো যুগের চাহিদা অনুযায়ী হিউম্যান রিসোর্সকে উন্নয়ন করা। আর এ কারণেই আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা আজকের হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার জন্য অপরিহার্য। বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এবং প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠানকে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা আবশ্যক।

   উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বিশ্বায়ন এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রভাব হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপককে ব্যবস্থাপকীয় কাজ পরিচালনা করতে হবে।

Content added By
Promotion