SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - স্বাস্থ্য সুরক্ষা - Wellbeing - NCTB BOOK

আপন আলোয় হই আলোকিত

কৈশোর আমাদের স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্নের জাল বুনতে সাহায্য করে। এ বয়সে মনের সব ইচ্ছে ও রঙিন স্বপ্নগুলো ডালপালা ছড়াতে থাকে। ইচ্ছাগুলো নানা বর্ণের ঘুড়ি হয়ে ভেসে বেড়ায় কল্পনার আকাশে। আমাদের সেই ইচ্ছাগুলো যখন পূরণ হয়, তখন আমরা অনাবিল আনন্দে মেতে উঠি। কৈশোরের কাঁধে সওয়ার হয়ে স্বপ্নের ডানা মেলে দিয়ে বিচরণ করি আকাশে। আবার অনেক সময় আমাদের ইচ্ছাগুলো নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন আমরা হতাশ হয়ে পড়ি, হতোদ্যম হয়ে যাই। আমরা হোঁচট খাই কিন্তু থেমে যাই না। কৈশোরের অপার শক্তিই আবার আমাদের উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে। কৈশোরই আমাদের পথ দেখায় কীভাবে আমরা এ সময়ের বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষতার সাহায্যে মোকাবিলা করব। কৈশোরের দেখানো পথেই আমরা জয় করি আমাদের সব বাধা বিপত্তিকে ও সব প্রতিকূলতাকে। কৈশোরের হাত ধরে আমরা জয়ের মুকুট মাথায় পরি।

আমরা ইতোপূর্বে কৈশোরের বিভিন্ন সমস্যা এবং তা মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে জেনেছি। এবার আমরা কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এবং এগুলো ব্যবস্থাপনার কৌশল খুঁজে বের করব। তাহলে শুরু করা যাক আমাদের এবারের জয়যাত্রা। প্রথমেই আমরা নিচের ঘটনা দুটি মনোযোগ দিয়ে পড়ব

ঘটনা-১ 

গ্রামের এক স্কুলে ফ্রিংচি নামের এক শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে পড়ে। সে নিয়মিত স্কুলে আসে, নিজের সম্পর্কে সে খুবই সচেতন। পড়ালেখায়ও ভালো। স্কুল থেকে তার বাড়ির দুরত্ব আড়াই কিলোমিটারের মতো। প্রতিদিন সে হেঁটেই স্কুলে আসা-যাওয়া করে। প্রাত্যহিক সমাবেশে সে প্রতিদিন উপস্থিত থাকে। একসময় দেখা গেল, প্রায় সময়ই তার স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। আর তার স্কুলে দেরি করে পৌঁছানোর ব্যাপারটা শিক্ষকদের নজরে পড়ে যায়। একদিন ফ্রিংচির শ্রেণিশিক্ষক তাকে জিজ্ঞাসা করে তার দেরি করে স্কুলে পৌঁছার কারণ জানতে পারেন। তার এলাকার এক বখাটে ছেলে তাকে স্কুলে আসার পথে উত্তক্ত করে, কথা বলতে চায়, বিভিন্নভাবে ভয় দেখায়, এজন্য সে ঘুরপথে আসে। কথাগুলো বলে সে কাঁদতে থাকে এবং শ্রেণিশিক্ষকের সাহায্য প্রার্থনা করে।

ঘটনা-২

 রূপক একজন মেধাবী ছাত্র। সে যে স্কুলে পড়ালেখা করে, শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবাই তাকে এক নামে চেনে। তবে কিছুদিন ধরে তাকে অন্যমনস্ক দেখা যায়। বিদ্যালয়েও অনিয়মিত থাকছে। শ্রেণি কার্যক্রমের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। রূপকের শ্রেণিশিক্ষকের মনে একটু খটকা লাগল। তিনি রূপককে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, রূপক তেমন ভালো কোনো উত্তর দিল না। শেষে বাধ্য হয়ে শ্রেণিশিক্ষক তার মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারলেন, রূপক বাড়িতে তার মায়ের মোবাইল ফোন দিয়ে সারাক্ষণ গেম খেলে। মোবাইল ফোনে গেম খেলার আসক্তি থেকে কোনোভাবেই তার মা-বাবা তাকে বিরত রাখতে পারছেন না। আর এ ব্যাপার নিয়ে বাড়িতে অনেক অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

উপরের ঘটনাগুলো পড়ে কী মনে হলো, এমন হয়রানি, সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের ঘটনা আমাদের নিজেদের পরিবারে কিংবা আশেপাশে ঘটে। আবার পত্রিকা, টেলিভিশন, ফেসবুক প্রভৃতি মাধ্যমেও এ ধরনের অনেক ঘটনার কথা জেনে থাকি। এই ঘটনাগুলো যখন কাছের মানুষ- যেমন: বন্ধু, প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের বেলায় ঘটে, তখন আমরা বুঝতে পারি, কতটা অসহনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়।

 আসলে এ ধরনের ঘটনাগুলো সবার জন্য অনেক কষ্টের। এমন কষ্ট কেউ পাবে, আমরা নিশ্চয়ই তা চাই না। তাদের কষ্টে আমরা ব্যথিত হই। তাদের কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ খুঁজি। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কিন্তু আমরা নিজেদের জন্য এই সুযোগটিই তৈরি করব। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা আমাদের ও অন্যদের জীবনে যেন না ঘটে, তার উপায়ও খুঁজে বের করব।শুরুতেই আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করব আমাদের চারপাশের মানুষের জীবনে কী ধরনের যৌন হয়রানি, নিপীড়ন, সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের ঘটনা ঘটেছে। কীভাবে সে তথ্য পেতে পারি? আমরা নিজেদের বা পরিচিত কারো জীবনে ঘটেছে অথবা যেকোনোভাবে জেনেছি, শুনেছি এমন ঘটনার কথা মনে করতে পারি। এই ঘটনাগুলোই খুব ছোট করে লিখে শিক্ষকের কাছে জমা দেব। আমরা যেকোনো ব্যক্তির ঘটনা লিখতে পারি। তবে আমরা কারো নাম উল্লেখ করব না। এমনকি নাম জানা থাকলেও কোনো বন্ধুর সঙ্গে তা শেয়ার করব না।

আমরা সবাই মিলে যে ঘটনাগুলো লিখেছিলাম, সেগুলো একসঙ্গে করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে দলগতভাবে পড়েছি ও আলোচনা করেছি। আমাদের জানা ঘটনাগুলো থেকেই কিন্তু আমাদের চারপাশের মানুষ কী ধরনের যৌন হয়রানি, নিপীড়ন, সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের শিকার হয়েছে তা জানলাম। ঘটনাগুলোর ধরন, সাধারণত কারা ভুক্তভোগী এবং এর প্রভাব ও ফলাফল সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝতে পারলাম

এবার দলে বসে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। এরপর প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে পোস্টার তৈরি ও প্রদর্শন করব। পোস্টার প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কিংবা শোনা বিভিন্ন যৌন হয়রানি ও সহিংসতামূলক আচরণ এবং তার প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পেলাম, তা অপর পৃষ্ঠার ছকে লিখে রাখব। কারণ, পরবর্তী সময়ে আমরা যখন এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে বা ঘটে গেলে আমরা কী ব্যবস্থা নিতে পারি তা নিয়ে কাজ করব, তখন এ তথ্যগুলোর প্রয়োজন হবে।

যৌন হয়রানি, নিপীড়ন, সহিংসতা ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এবং এর প্রভাব ও ফলাফল

যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণপ্রভাবফলাফল

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

  

পোস্টার প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের চারপাশে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন, সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ সংঘটিত হয় বলে জানি, তা বের করলাম। এর প্রভাব ও ফলাফল সম্পর্কেও ধারণা পেলাম। আমরা কি খেয়াল করেছি এ ধরনের আচরণগুলোর প্রভাব ও ফলাফল সব সময় খারাপ হয়? এসব ঘটনা বন্ধ করতে আমরা কী করতে পারি আর এর থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার উপায় কী তা কি সবাই জানি? তাহলে বুঝতে পারছি, এগুলোর প্রভাব থেকে নিজেদের ও অন্যদের মুক্ত রাখতে এ বিষয়ে আরও জানা প্রয়োজন। তাহলে চলো প্রথমে আমরা 'যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতামূলক আচরণ' বন্ধ করতে কী করতে পারি তা বোঝার চেষ্টা করি।

                                                                                         যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ

• অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক স্পর্শ; 

• অশোভন কথা, অঙ্গভঙ্গি, আচরণ, ছবি বা ভিডিও দেখানো; 

• অশালীন ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষা/ অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে ঠাট্টা, বিদ্রূপ করা এবং চিঠি/ টেলিফোন/ মোবাইল ফোন/ এসএমএসর এর মাধ্যমে এ ধরনের আচরণ প্রকাশ করা; 

• ভয় দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক করতে, ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে বাধ্য করা; 

• শারীরিক ও মানসিক আঘাত করে উপরোক্ত বিষয়গুলোতে বাধ্য করা;

আমরা মনে রাখব, কোনো ব্যক্তির সঙ্গে, কোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে এই আচরণগুলো হওয়া মানে তার সঙ্গে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা হলো। তাই আমরা নিজেরাও কারো সঙ্গে এমন আচরণ করব না। শুরুতে আমরা বলেছিলাম, এমন আচরণ যাতে কারও সঙ্গে না হয়, তার উপায় খুঁজে বের করব।

এবার আমরা যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা ও এর শিকার হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য কী করা যেতে পারে তা খুঁজে বের করব। আগে তো বুঝতে হবে এ বিষয়ে আমাদের কোন কোন প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন। তাহলে চলো, আমরা কোন কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাই তার একটি তালিকা তৈরি করে ফেলি। তাহলে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেরাই খুঁজতে পারব। আর যে প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেরা খুঁজে না পাব, তার কী হবে? এখন তো আমরা জানি, তথ্য পাবার জন্য বিভিন্ন তথ্যসূত্র ব্যবহার করা যায়। সেভাবেই আমরা এর উত্তরগুলো খুঁজে বের করব। আর শিক্ষক এবং অন্যদের সহযোগিতা তো সবসময় অবশ্যই চাইতে পারি। এরপর আমরা আর একটা কাজ করতে পারি। তা হলো- আমাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে আমরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে যদি এটি যাচাই করে নিই তাহলে আরও ভালো হয়।

হ্যাঁ, এমন একজন বিশেষজ্ঞ অতিথির সঙ্গে মতবিনিময় করে আমরা যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণগুলো কী কী হতে পারে তা জানব। আর এই ধরনের আচরণের ফলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, এগুলো থেকে রক্ষা পেতে আমরা কী করতে পারি, তা জেনে নেব। এছাড়া এ সকল ঘটনার শিকার ব্যক্তির জন্য আমাদের দেশের আইনে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে এবং এর ফলে মানসিক বিপর্যস্ততায় কী করণীয় এসব বিষয়েও আমরা জানতে পারব। বিশেষজ্ঞ অতিথির কাছ থেকে এ বিষয়ে আমরা নিজেদের প্রশ্নগুলো সঠিক উত্তর মিলিয়ে নেব এবং আমাদের ভাবনা বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করব। তাহলে চলো, এবার আমরা যৌন হয়রানি ও সহিংসতামূলক আচরণ থেকে নিজেকে সুরক্ষায় আমাদের ভাবনাগুলো গুছিয়ে নিচের 'যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে নিজেকে সুরক্ষায় আমাদের ভাবনা' ছকটায় লিখি।

যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে নিজেকে সুরক্ষায় আমাদের ভাবনা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এবার আমাদের বিশেষজ্ঞ অতিথির কাছ থেকে এ বিষয়ে শোনার পালা। যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়ার এটাই সুযোগ। যৌন হয়রানি নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে নিজেকে সুরক্ষায় আমাদের ভাবনাগুলো মিলিয়ে নেব। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাইনি তা-ও জেনে নেব। অতিথির কথা শুনতে শুনতে যদি মাথায় আরও কোনো প্রশ্ন আসে, সংকোচ না করে তার উত্তরও জেনে নেব।

আমাদের যত প্রশ্ন ছিল, বিশেষজ্ঞ অতিথির কাছ থেকে সেসবের উত্তর জানতে পারলাম। এবার নিশ্চয়ই আমরা নিজেদের সুরক্ষায় দায়িত্ব নিতে পারব। নিজের সুরক্ষায় নিজে দায়িত্ব নিতে পারা; এ কিন্তু সত্যিই বড় হয়ে ওঠা। এই বড় হয়ে ওঠায় আমরা যেভাবে সচেতন, দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠছি, এর জন্য আমরা কিন্তু নিজেদের অভিনন্দন জানাব। আর এভাবে ভালো কাজগুলো অব্যাহত রাখব। এবার তাহলে নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজের সুরক্ষায় যে কৌশলগুলো ব্যবহার করতে পারি তা লিখে নিই।

আমাদের প্রশ্নের উত্তরগুলো মিলিয়ে নিলাম। তার কাছ থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলাম। যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতামূলক আচরণ বিষয়ে নিচের বক্সের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ অতিথির কাছ থেকে জানা এবং এ বিষয়ে আরও যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা ও মনে রাখা প্রয়োজন তা যুক্ত করি।

যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি:

  • ছেলে কিংবা মেয়ে যে কেউ যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হতে পারে। 
  •  বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 
  • ১০৯, ৯৯৯, ৩৩৩ হেল্পলাইনগুলোতে কল করলে জরুরি সেবা পাওয়া যায়।
  •  
  •  
  •   
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

 

নিজেদের সুরক্ষার জন্য সবার আগে নিজেদের সচেতনতা প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাই। সব সময় অন্যদের পক্ষে আমাদের সঙ্গে থাকা বা আমাদের সুরক্ষায় কাজ করা কি সম্ভব? আর সব পরিস্থিতিতে অন্যরা আমাদের দায়িত্ব নিলে আমরাও তো বড় হতে পারব না। নিজের দায়িত্ব নিজে নেওয়ার জন্য দক্ষতাও তৈরি হবে না। তাই কোন পরিস্থিতিতে আমাদের সুরক্ষার জন্য কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কিন্তু সচেতন থাকা চাই। তাহলেই আমরা উপরের কৌশলগুলো ব্যবহার করে সুরক্ষিত থাকতে পারব। আর যখন প্রয়োজন হবে, তখন নির্ভরযোগ্য কারও সহযোগিতা চাইব।

যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতামূলক আচরণ আছে যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সমস্যা তৈরির পাশাপাশি আইনগত জটিলতাও তৈরি করে। অনেক সময় অন্যদের প্রতি আমাদের নিজেদের অসচেতন আচরণ যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। যেভাবেই সংঘটিত হোক, এ ধরনের আচরণগুলো আমাদের মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক জীবনের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

এই অভিজ্ঞতার শুরুতেই আমরা ভেবেছিলাম যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধ এবং কেউ এমন ঘটনার শিকার হলে তাকে সহযোগিতায় আমরা কাজ করব; মনে আছে তো? এর জন্য আমাদের কী কী সুযোগ রয়েছে তা বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আমরা জানলাম। এই সুযোগগুলো আমাদের মতো অন্যরাও যাতে গ্রহণ করতে পারে, তার জন্য কী করতে চাই- এখন তা নিয়ে ভাবব। তবে তার আগে আমরা সাদাত রহমানের অনুপ্রেরণামূলক গল্পটি পড়ে নিই।

'সাদাত রহমান নামের নড়াইলের একজন কিশোর তার এলাকায় যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা বন্ধের জন্য সাইবার টিনস (Cyber Teens) একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে। এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে এই অ্যাপের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে অনেকে অভিযোগ করতে পেরেছে, ফলে অপরাধীকে আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এই অবদানের জন্য ২০২০ সালে তাকে International Children's Peace Prize দেওয়া হয়।'

সাদাত রহমানের মতো আমরাও কিন্তু বিভিন্ন সৃজনশীল চিন্তা ও কাজের মাধ্যমে সমাজের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় কাজ করতে পারি। আমরা নিজেদের চেষ্টায় যে যার অবস্থান থেকে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে এ লক্ষ্যে কাজ করতে পারি।

আমাদের সচেতনতা, কৌশল ব্যবহারের দক্ষতা আমাদের এ ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে। তাহলে চলো, এবার আমরা যে বিষয়গুলো শিখলাম তার আলোকে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতামূলক প্রতিরোধ করতে কী করব এবং এ ধরনের অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনার শিকার হলে যা করতে চাই তার একটি - পরিকল্পনা করে নিই, এরপর তা 'সুরক্ষায় আমার কাজ-১' ছকটিতে লিখে ফেলি যাতে প্রয়োজনে এ কৌশগুলো ব্যবহার করতে পারি।

সুরক্ষায় আমার কাজ-১

নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধে আমার কৌশল

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কেউ যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হলে যা করব

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই অভিজ্ঞতার শুরুতে আমরা বয়ঃসন্ধিকালের আরও কিছু ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের কথা বলেছিলাম। যেগুলোতে জড়িয়ে গিয়ে আমরা অনেক সময় নষ্ট করি, যার প্রতি এক ধরনের আসক্তি জন্মে। কখনো কখনো আমরা এই আচরণগুলোর শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হই। আবার কখনো নিজেরাই না বুঝে এই আচরণগুলো করি, আবার অন্যদের প্রভাবে করতে বাধ্য হই।

এবার তাহলে দেখে নিই কোন ধরনের আচরণ সবচেয়ে বেশি দেখতে বা শুনতে পাই, যার সঙ্গে আমরা জড়িয়ে পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হই। এর মধ্যে যে চারটিতে কিশোর-কিশোরীরা জড়িয়ে পড়ছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়, নিচের 'ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ' ছকে তা উল্লেখ করি।

ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ

যে আচরণগুলো আমাদের স্বাস্থ্যকর দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সচেতন হয়ে তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব না নিলে ধীরে ধীরে আসক্তিতে পরিণত হতে পারে। এরফলে -

  • দৈনন্দিন জীবন যাপন অর্থাৎ দৈনন্দিন কাজ, পড়াশোনা, খেলাধুলা এমনকি ঘুমের সময় ব্যাহত হয়।
  • ধীরে ধীরে এর ওপর নির্ভরতা এবং সময় দেওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। অনেক সময় দেখতে পাই, বুঝতে পারি অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তারপরও সরে আসতে ইচ্ছা করে না, কেউ সরে আসতে বললে তার ওপর রাগ হয়, অনেক সময় খারাপ আচরণ করি ও যা নিয়ে পরে আবার নিজের ওপর মন খারাপ হয়, রাগ হয়।
  • যে বিষয়ে নির্ভরশীল হয়ে পরি তা থেকে বিরত থাকতে গেলে কিছু শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তিবোধ হয়, কখনো কখনো সমস্যা এমনকি রোগ দেখা দেয়।
  • শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এর থেকে পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। ফলে সামগ্রিকভাবে ভালো থাকা ও সুস্বাস্থ্য ব্যাহত হয়।

এ ধরনের আচরণে জড়িয়ে পড়ে আমাদের কত বন্ধু, আপনজন ও আত্মীয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এ ধরনের সমস্যা হলে আমাদের করণীয় কী তা জানা থাকলে কিন্তু আমরাও এসব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি, তেমনি অন্যদের সহযোগিতা করতে পারি। তবে এটা ঠিক, আমাদের জানতে হবে কীভাবে তা সম্ভব। আর জানার জন্য এবারও এ বিষয়ে ভালো জানেন আমরা এমন একজন বিশেষজ্ঞ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাব।

বিশেষজ্ঞ অতিথির কাছ থেকে আমরা জেনেছিলাম যে অতিরিক্ত যেকোনো আচরণই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বয়ঃসন্ধিকালে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে নির্ভরশীলতা ও আসক্তি তৈরি হতে পারে বলে মনে হয়েছে তা আমরা নিচের 'যেসব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে নির্ভরশীলতা ও আসক্তি তৈরি হতে পারে' ছকে লিখে নিই।

যেসব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে নির্ভরশীলতা ও আসক্তি তৈরি হতে পারে

  •  

 

  •  

 

 

  •  

 

  •   

 

এবার তাহলে সুরক্ষিত থাকতে বিশেষজ্ঞ অতিথির কাছ থেকে জানা তথ্য কীভাবে কাজে লাগাতে পারি তার ধারনা কাজে লাগিয়ে 'সুরক্ষায় আমার কাজ-২' ছকটি পূরণ করে নিই।

সুরক্ষায় আমার কাজ-২

নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে যে পদক্ষেপ নিতে চাই।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সহপাঠী/বন্ধু/অন্য কেউ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করলে যে পদক্ষেপ নিতে পারি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের সুরক্ষা টিম

নিজেদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহারের পরিকল্পনা করলাম। আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে এখন আমাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিতজনকে এ বিষয়ে সাহায্য করব।

চলো তাহলে আমরা বিদ্যালয়কে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি টিম গঠন করি। আমাদের বিদ্যালয়ে যদি এ সংশ্লিষ্ট টিম থেকে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে কথা বলব। তাদের সঙ্গে আমাদের পরিকল্পনার কথা শেয়ার করব। আর যদি বিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো টিম না থাকে, তাহলে আমাদের প্রথম কাজ হবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ের শিক্ষককে উপদেষ্টা করে 'সুরক্ষা টিম' নামে একটা টিম গঠন করা। এই টিমের কাজ হবে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ও আসক্তি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করায় কাজ করা। তাহলে এর জন্য আমরা নিজেদের বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করার জন্য কী কী কাজ করতে চাই এবং কে কোন কাজের দায়িত্ব নিতে চাই, এর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করি।

সুরক্ষা টিমের কর্মপরিকল্পনা

বিষয়বিষয়-সংশ্লিষ্ট দলগত কাজআমার দায়িত্ব

যৌন হয়রানি, নীপিড়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শিক্ষার্থীদের জন্য

 

 

 

 

অভিভাবকদের জন্য

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ১৪ মে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক একটি নীতিমালা প্রণীত হয়। যত দিন পর্যন্ত এ বিষয়ে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা না হবে, তত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল সরকারি, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুসরণ ও পালন করা বাধ্যতামূলক। নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে-

• যৌন হয়রানি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা; 

• যৌন হয়রানির নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা; 

• যৌন হয়রানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

 

এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং (Bullying) ও র‍্যাগিং (Ragging)-এর মতো সামাজিক অপরাধসূমহ প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং অবসানের লক্ষ্যে ২ মে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকার কর্তৃক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালাটি ২৯ জুন, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছি নীতিমালা যে জন্য প্রণীত হয়েছে, তা জেনেই কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে পরিকল্পনা করে নিয়েছি। আমরা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে সচেতনতা তৈরি করে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কাজ করছি।

কেউ যদি যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা সংক্রান্ত কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তাহলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সে সরাসরি বিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিকে জানাতে পারবে। যদি কেউ জানাতে ভয় পায় বা তার মধ্যে দ্বিধা কাজ করে, সেক্ষেত্রে সে উপদেষ্টা/টিমের প্রধান/অন্য কোনো শিক্ষক বা নির্ভরশীল ও বিশ্বস্ত যেকোনো ব্যক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিকে জানাতে পারবে। ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ও আসক্তিতে কেউ জড়িয়ে পড়েছে জানলেও তাকে সহযোগিতা করার জন্য সুরক্ষা টিমের উপদেষ্টা ও প্রধান অথবা অন্য কোনো শিক্ষক বা নির্ভরশীল, বিশ্বস্ত ও যিনি এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন, এমন ব্যক্তিকে জানাতে হবে।

আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো সারা বছর ধরে চর্চা করব ও অপর পৃষ্ঠার 'ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ থেকে সুরক্ষা পেতে আমার কাজ' ছকে লিখে রাখব। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর নিজে থেকে শিক্ষককে দেখিয়ে নেব।

আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন

নিচের ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমি আমার অগ্রগতি সম্পর্কে জানব, কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। দলগত কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার অংশগ্রহণের বিষয়ে সহপাঠীদের মতামত জেনে নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অংশে লিখে নেব। আমার অভিভাবক বইয়ে সম্পাদিত কাজ দেখে মন্তব্য লিখবেন। সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দেবেন। কী ভালো করেছি, কীভাবে আরও ভালো করতে পারি, সে উপায় জানাবেন।

মূল্যায়ন ছক ১: আমার অংশগ্রহণ ও পাঠ্যপুস্তকে করা কাজ

 

নিজের 

মন্তব্য

সহপাঠীর

 মন্তব্য

অভিভাবকের 

মন্তব্য

শিক্ষকের 

মন্তব্য

স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ গ্রহণ

 

    

শ্রদ্ধাশীল আচরণ

 

    

সহযোগিতামূলক

 মনোভাব

 

    

পাঠ্যপুস্তকে সম্পাদিত

 কাজের মান

 

    

মূল্যায়ন ছক ২: বয়ঃসন্ধিকালীন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এবং ব্যবস্থাপনা ও উদ্বুদ্ধকরণ

মন্তব্যবয়ঃসন্ধিকালীন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ খুঁজে বের করার সচেতনতাবয়ঃসন্ধিকালীন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ব্যবস্থাপনার দক্ষতাঅন্যকে বয়ঃসন্ধিকালীন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার দক্ষতা

নিজের

 

   

অভিভাবকের

 

   

শিক্ষকের

 

   

 

Content added By