SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আকাইদ | NCTB BOOK

আল্লাহর পরিচয়

জোড়ায় কাজ 

'পরিবেশিত হামদ থেকে মহান আল্লাহর পরিচয় তথা আসমাউল হুসনা সম্পর্কে কী গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে তা তোমার বন্ধুর সাথে আলোচনা করে চিহ্নিত করো'

১. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .  . . . . . .. . . . . . . . 

২.. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .  . . . . . .. . . . . . . . 

৩. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .  . . . . . .. . . . . . . . 

মহান আল্লাহর অসংখ্য গুণবাচক নাম রয়েছে। এ সকল গুণবাচক নামের মধ্যেও তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়। আসো আমরা মহান আল্লাহর কয়েকটি গুণবাচক নামের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় জানি।

আল্লাহু রাউফুন (اَللَّهُ )

 

রাউফুন অর্থ পরম-স্নেহশীল, সদয়, অতীব দয়ালু, সমবেদনা প্রকাশকারী ইত্যাদি। আল্লাহু রাউফুন অর্থ আল্লাহ অতি দয়ালু, অত্যন্ত স্নেহশীল। এটি আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। আল্লাহর এ নামটি আর-রাহমান ও আর- রাহীম নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মানুষের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও মায়া রয়েছে। তিনি বলেন-

إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ .

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৩)

মহানবি (সা.) বলেন, 'আল্লাহ তা'আলা দয়া-মায়া, স্নেহ-মমতাকে একশত ভাগ করে নিরানব্বই ভাগ নিজের জন্য রেখে দিয়েছেন, আর এক ভাগ সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন।' (বুখারি)

উপর্যুক্ত আয়াত ও হাদিস থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি কতটা দয়ালু, কতটা স্নেহশীল। তবে মহান আল্লাহ কেবল মানুষের ওপরই নন, তিনি তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতিই অতীব স্নেহপরায়ণ। হাদিসের ভাষায় সমগ্র সৃষ্টিই আল্লাহর একান্ত পরিজন। মানুষের পারিবারিক জীবনে পরিবার প্রধান যেমন তার পরিবারের সদস্যদের আদর, স্নেহ, দয়া-মায়া-মমতার বন্ধনে বেঁধে রাখেন, তেমনি জগৎসমূহের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাঁর জগৎসমূহের সকল সৃষ্টিকে পরম মমতা ও স্নেহে লালন-পালন করেন এবং রক্ষা করেন। আসলে মানুষ এবং সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর স্নেহ-মমতা অতুলনীয়।

আমাদের জীবনের অস্তিত্ব থেকে শুরু করে এমন কোনো ক্ষেত্র ও মুহূর্ত নেই, যেখানে আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর মায়া-মমতা ও দয়ার পরশ নেই। তিনিই দয়া করে অতি যত্নে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের মাতাপিতার অন্তরে দয়া-মায়া সৃষ্টি করে আমাদের পরম আদর-যত্নে লালন-পালনের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি যেমন এ প্রকৃতি ও পরিবেশকে আমাদের বসবাসের অনুকূল করে তৈরি করেছেন, তেমনি এখানে সুখে- শান্তিতে বসবাসের জন্য আবার নানা জীবনোপকরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের জন্য সামাজিক পরিবেশেরও ব্যবস্থা করেছেন। ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর মনে আমাদের প্রতি স্নেহ-মমতা সৃষ্টি করে আমাদের জন্য এক সুন্দর মায়াময় পরিবেশ তৈরি করেছেন। আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে মহান আল্লাহ যে আমাদের ওপর অত্যন্ত স্নেহশীল ও পরম দয়ালু, তার অজস্র উদাহরণ খুঁজে পাই।

মহান আল্লাহ আমাদের কাছে তাঁর দেওয়া এসব নিয়ামতের কোনো প্রতিদান চান না। আমরা যদি তাঁর ইবাদাত করি, তাহলে তিনি খুশি হন। আবার যদি তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া প্রকাশ করি, কৃতজ্ঞ হই, তাহলে তিনি তাঁর নিয়ামতকে আমাদের ওপর আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। আমাদের একটি ভালো কাজের সাওয়াব তিনি কমপক্ষে দশ গুণ বাড়িয়ে দেন কিন্তু কোনো পাপ করলে কেবল সেই পাপের পরিমাণ শাস্তিই তিনি আমাদের দেন। আর চাইলে সেটাও তিনি মাফ করে দিতে পারেন। এ থেকেই আমরা বুঝতে পারি, মহান আল্লাহ অসীম স্নেহশীল।
মহান আল্লাহর স্নেহ ও দয়ায় আমাদের জন্য কল্যাণের পথ সহজ হয়ে যায়। স্নেহ ও দয়ার মাধ্যমে তিনি আমাদের তাঁর অপছন্দনীয় পথ থেকে সতর্ক করেন। তিনি বান্দাকে অপরাধ ও ফাসাদ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকতে ভয়-ভীতি ও ধমক প্রদান করেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন, এর দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো। (সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১৬)

وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ

অর্থ: আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের সাবধান করছেন। আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩০)

মূলত আমাদের ওপর আল্লাহর স্নেহ ও মায়া-মমতার কোনো সীমা নেই। আমরা তাঁর স্নেহ-মমতার সমুদ্রে বসবাস করছি। আমরাও সকলের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ার্দ্র হব, সকলকে ভালবাসব।

মু'মিনুন অর্থ নিরাপত্তা দানকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী, জামিনদার, সত্য ঘোষণাকারী। আল্লাহু-মু'মিন অর্থ আল্লাহ নিরাপত্তা দানকারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনি আপন বান্দাদের মাঝে শান্তি ছড়িয়ে দেন এবং সৃষ্টিজগতের মাঝে নিরাপত্তা বিধান করেন। আর ওহির মাধ্যমে প্রশান্তি অবতীর্ণ করেন। তিনি প্রতিটি সৃষ্টির যথার্থ তদারককারী। সকল বিষয়ের গোপন রহস্য জানেন। মহান আল্লাহ বলেন-

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلْمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَنَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ .

অর্থ: তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত। তারা যাকে শরিক স্থির করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান। (সূরা আল-হাশর, আয়াত: ২৩)

আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির নিরাপত্তা বিধান করেন। তিনি প্রতিটি জীবের সকল কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন। তিনি কারো পুণ্য হ্রাস করেন না। কাউকে প্রাপ্যের অতিরিক্ত শাস্তি দেন না। একমাত্র তিনিই ভয়ের যোগ্য এবং ক্ষমা করার অধিকারী। মর্যাদা ও সম্মান প্রাপ্তির তিনিই অধিক হকদার। বান্দাকে কল্যাণ ও অনুগ্রহ দানের তিনিই অধিক যোগ্য।

আল্লাহ হলেন নিরাপত্তা বিধায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক। নিজ বান্দাদেরকে তিনি রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তিনি সবকিছু দেখেন এবং সবকিছু শোনেন। তিনি তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। এসব কিছুই তাঁর জন্য সহজ।

উল্লেখ্য, বান্দার সঙ্গে যখন মু'মিন শব্দ সম্পৃক্ত হয়, তখন তার অর্থ বিশ্বাস স্থাপনকারী বান্দা। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে বলে তাকে মু'মিন বলা হয়।

 আল-কুরআনে মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর গুণে গুণান্বিত হতে উৎসাহিত করেছেন। তাই আমরা তাঁর আল- মু'মিনুন নামের গুণ থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণে কাজ করব। ব্যক্তিগত, পরিবার ও সমাজ জীবনে আমরা শান্তি ও নিরাপত্তার পথ অবলম্বন করে চলব এবং অন্যের বিপদ- আপদ কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সহানুভূতি, সাহায্য-সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দিতে চেষ্টা করব।

ওয়াহহাব' অর্থ অতীব দানশীল, কোনো বিনিময় ছাড়া যিনি সব কিছু দান করে থাকেন। এটি আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। তিনি পরম দানশীল। তিনি বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক রিযিক দান করেন। তিনি তাঁর বান্দার অন্তরে কল্যাণমুখী বিষয় ও প্রজ্ঞা উন্মুক্ত করে দেন। তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন ও দোয়া কবুলের সৌভাগ্য দান করেন।

মহান আল্লাহ উত্তম অভিভাবক। আমাদের কাছে যে সব নিয়ামত আছে, তা সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনিই অন্তরের প্রশস্ততা দানকারী। তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে তাঁর রহমত ও জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টন করে রাখেন। সমস্ত সৃষ্টিই তাঁর দয়া ও দানের মুখাপেক্ষী। এ গুণবাচক নামটি তাঁর ব্যাপক রহমত ও দানের প্রকাশক। তাঁর দয়া দুই ধরনের। প্রথম প্রকারের দয়া সকলের জন্য ব্যাপক। আর অন্যটি তাঁর নির্দিষ্ট বান্দা ও সৃষ্টির জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ তা'আলা বলেন-

وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ 

অর্থ: আর আমার দয়া প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ১৫৬)

আল্লাহর বিশেষ রহমত ও নিয়ামত শুধু সৎকর্মশীলদের জন্য। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।' (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৫৬)

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে স্বীয় 'ওয়াহহাব' নাম স্মরণ করিয়ে মানব জাতিকে মোনাজাত করতে শিখিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ 

অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনে প্রবৃত্ত করবেন না এবং আপনার নিকট হতে আমাদেরকে করুণা দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা। (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮)

 

প্রকল্প (একক কাজ) 

তোমার বাস্তব জীবনে আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ চর্চা বা অনুশীলনের জন্য এক মাস মেয়াদি একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তা সফল বাস্তবায়ন শেষে নির্ধারিত ছকে প্রতিবেদন তৈরি করো।

 

 

শ্রেণি শিক্ষকের নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুযায়ী তোমার জন্য সুযোগ ও সামর্থ্যের মধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের যেমন: মাতা-পিতা/দাদা-দাদি/বড় ভাই-বোন/সহপাঠীর সহায়তা নিতে পারো।

প্রকল্পের নাম : বৃক্ষ রোপণ বা বৃক্ষের যত্ন

প্রকল্প শুরুর তারিখ :

প্রকল্প শেষের তারিখ :

সহায়তাকারী : মা-বাবা/ভাই-বোন/সহপাঠী

গৃহীত পদক্ষেপ : টব, মাটি, গাছ সংগ্রহ

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

. . . . . . . . . . . . . . . . .. . . . . . . . . . . . . . . . .. .

.. .. .. . .. .. .. . . . . . . . .. . . . .. . . . . .. . . . . .. . 

অভিভাবকের মতামত/স্বাক্ষর:

Content added By
Promotion