SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বাংলা - Bangla - প্রমিত বলি প্রমিত লিখি | NCTB BOOK

ধ্বনির উচ্চারণ

 

উচ্চারণ ঠিক রেখে কবিতা পড়ি

 

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (১৯৩৪-২০০১) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বইয়ের নাম 'সাত নরী হার', 'আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি' ইত্যাদি। নিচের কবিতাটি ভাষা-আন্দোলন বিষয়ক একটি বহুল পঠিত কবিতা। এটি কবির 'সাত নরী হার' কাব্য থেকে নেওয়া।

কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো; এরপর সরবে পাঠ করো। সরবে পাঠ করার সময়ে ধ্বনির উচ্চারণে সতর্ক থাকতে হবে।

 

 

মাগো, ওরা বলে

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

 

কুমড়ো ফুলে-ফুলে

নুয়ে পড়েছে লতাটা,

সজনে ডাঁটায়

ভরে গেছে গাছটা

আর, আমি ডালের বড়ি

শুকিয়ে রেখেছি-

খোকা তুই কবে আসবি!

কবে ছুটি?

 

চিঠিটা তার পকেটে ছিল,

ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা

 

মাগো, ওরা বলে,

সবার কথা কেড়ে নেবে

তোমার কোলে শুয়ে

গল্প শুনতে দেবে না। 

বলো, মা, তাই কি হয়?

 

তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।

তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে

তবেই না বাড়ি ফিরব।

লক্ষ্মী মা রাগ কোরো না,

মাত্র তো আর কটা দিন।

 

 

'পাগল ছেলে',

মা পড়ে আর হাসে,

'তোর ওপরে রাগ করতে পারি!

 

 

নারকেলের চিড়ে কোটে,

উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে

এটা সেটা আরো কত কী!

তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে!

ক্লান্ত খোকা!

 

কুমড়ো ফুল

শুকিয়ে গেছে,

ঝরে পড়েছে ডাঁটা;

পুঁই লতাটা নেতানো,

'খোকা এলি?' -

ঝাপসা চোখে মা তাকায়

উঠোনে, উঠোনে

যেখানে খোকার শব

শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে।

 

এখন,

মার চোখে চৈত্রের রোদ

পুড়িয়ে দেয় শকুনিদের।

তারপর

দাওয়ায় বসে

মা আবার ধান ভানে,

বিন্নি ধানের খই ভাজে

 

 

খোকা তার কখন আসে!

কখন আসে!

 

এখন,

মার চোখে শিশির ভোর,

স্নেহের রোদে

ভিটে ভরেছে।

 

শব্দের অর্থ

উড়কি ধান: এক রকম ধান। 

কথার ঝুড়ি: অনেক কথা। 

ঝাপসা চোখে: অস্পষ্ট দৃষ্টিতে। 

ডালের বড়ি: ডাল দিয়ে বানানো ছোটো বড়া।

দাওয়া: ঘরের বারান্দা। 

নারকেলের চিড়ে: চিড়ার মতো করে বানানো নারকেলের টুকরা

নুয়ে পড়া: ঝুলে পড়া। 

বিন্নি ধান: এক রকম ধান। 

ব্যবচ্ছেদ: কাটা-ছেঁড়া। 

ভিটে: বাসভূমি। 

মুড়কি: গুড় দিয়ে মাখানো খই। 

শব: মৃতদেহ।

 

ধ্বনির কম্পনমাত্রা ও বায়ুর প্রবাহ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনি

 

ধ্বনির কম্পনমাত্রা অনুযায়ী বিভাজন

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে স্বরযন্ত্রে বায়ুর কম্পন কমবেশি হওয়ার ভিত্তিতে ব্যঞ্জনধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: ঘোষ ও অঘোষ।

ঘোষ ব্যঞ্জন: যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে স্বরযন্ত্রে কম্পন অপেক্ষাকৃত বেশি হয়, সেসব ধ্বনিকে বলে ঘোষধ্বনি।

যেমন: গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, ড়, ঢ়, দ, ধ, ন, ব, ভ, ম, র, ল।

অঘোষ ব্যঞ্জন: যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে স্বরযন্ত্রে কম্পন অপেক্ষাকৃত কম হয়, সেসব ধ্বনিকে বলে অঘোষধ্বনি।

যেমন: ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ, শ, স, হ।

ধ্বনি সৃষ্টিতে বায়ুর প্রবাহ অনুযায়ী বিভাজন

 

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বায়ুপ্রবাহের বেগ কমবেশি হওয়ার ভিত্তিতে ব্যঞ্জনধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ।

 

অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জন: সেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ুপ্রবাহের মাত্রা অপেক্ষাকৃত কম, সেগুলোকে বলা হয় অল্পপ্রাণ ধ্বনি।

যেমন: ক. গ, চ, জ, ট.ড. ড়, ত, দ, প, ব, শ, স।

 

মহাপ্রাণ ব্যঞ্জন: সেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ুপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত বেশি, সেগুলোকে বলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি।

যেমন: খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, ঢ়, থ, ধ, ফ, ভ, হ।

Content added || updated By

'মাগো, ওরা বলে' কবিতা থেকে কিছু শব্দ নিচের তালিকায় দেওয়া হলো। লালচিহ্নিত বর্ণগুলো উচ্চারণ করে এগুলোর বৈশিষ্ট্য যাচাই করো এবং ছকে লেখো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে নিজের উত্তর মেলাও, আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। নিচে দুটি নমুনা-উত্তর করে দেওয়া হলো।

 

বাকপ্রত্যঙ্গ

 

ধ্বনি উচ্চারণে যেসব প্রত্যঙ্গ সরাসরি কাজ করে সেগুলোকে বাকপ্রত্যঙ্গ বলে। এখানে বাকপ্রত্যঙ্গের ছবি দেওয়া হলো।

Content added || updated By

২.১.২ ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে বাকপ্রত্যঙ্গের সক্রিয়তা

 

নিচের ছকের লালচিহ্নিত বর্ণগুলো উচ্চারণ করো। উচ্চারণের সময়ে কোন বাকপ্রত্যঙ্গ ব্যবহৃত হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করো এবং ছকের নির্দিষ্ট জায়গায় লেখো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে নিজের উত্তর মেলাও, আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা-উত্তর করে দেওয়া হলো।

 

 

 

উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনি

 

বাকপ্রত্যঙ্গের যে জায়গায় বায়ু বাধা পেয়ে ব্যঞ্জনধ্বনি সৃষ্টি করে, সেই জায়গাটি হলো ঐ ব্যঞ্জনের উচ্চারণস্থান। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়: ১. কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন, ২. তালব্য ব্যঞ্জন, ৩. মূর্ধন্য ব্যঞ্জন, ৪. দন্ত্য ব্যঞ্জন, ৫. ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন।

 

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে কোন বাকপ্রত্যঙ্গের অংশগ্রহণ মুখ্য এবং কোন বাকপ্রত্যঙ্গের অংশগ্রহণ গৌণ, নিচের ছকে তা দেখানো হলো

ধ্বনি

মুখ্য বাকপ্রত্যঙ্গ

গৌণ বাকপ্রত্যঙ্গ

কণ্ঠ্য ব্যঞ্জনজিভের পিছনের অংশনরম তালু
তালব্য ব্যঞ্জনজিভের সামনের অংশশক্ত তালু
মূর্ধন্য ব্যঞ্জনজিভের ডগামূর্ধা
দন্ত্য ব্যঞ্জনজিভের ডগাউপরের পাটির দাঁত।
ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জননিচের ঠোঁটউপরের ঠোঁট

 

 

কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের পিছনের অংশ উঁচু হয়ে আলজিভের কাছাকাছি নরম তালুর কাছে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে। কাকা, খালু, গাছ, ঘাস, কাঙাল প্রভৃতি শব্দের ক, খ, গ, ঘ, ও কণ্ঠ্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

তালব্য ব্যঞ্জন: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা খানিকটা প্রসারিত হয়ে শক্ত তালুর কাছে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে তালব্য ব্যঞ্জন বলে। চাচা, ছাতা, জাল, ঝড়, শসা প্রভৃতি শব্দের চ, ছ, জ, ঝ, শ তালব্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

মূর্ধন্য ব্যঞ্জন: দন্তমূল এবং তালুর মাঝখানে যে উঁচু অংশ থাকে তার নাম মূর্ধা। যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা মূর্ধার সঙ্গে লেগে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে মূর্ধন্য ব্যঞ্জন বলে। টাকা, ঠেলাগাড়ি, ডাকাত, ঢোল, গাড়ি, মূঢ় প্রভৃতি শব্দের ট, ঠ, ড, ঢ, ড়, ঢ় মূর্ধন্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

দন্ত্য ব্যঞ্জন: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা উপরের পাটির দাঁতে লেগে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে দন্ত্য ব্যঞ্জন বলে। তাল, খালা, দাদা, ধান প্রভৃতি শব্দের ত, থ, দ, ধ দন্ত্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট দুটি কাছাকাছি এসে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে। পাকা, ফল, বাবা, ভাই, মা প্রভৃতি শব্দের প, ফ, ব, ভ, ম ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

Content added By

'মাগো, ওরা বলে' কবিতা থেকে কিছু শব্দ নিচে দেওয়া হলো। শব্দগুলোতে যেসব বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর উচ্চারণস্থান বোঝার চেষ্টা করো। এরপর উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ধ্বনিগুলোর প্রকার লেখো। একটি নমুনা উত্তর করে দেখানো হলো।

Content added || updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.