SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) - Science (Exercise Book) - NCTB BOOK

 

 

মানুষ যখন ঘড়ি আবিষ্কার করেনি তখন সময়ের হিসাব কী করে রাখত বলো তো? সূর্য ও চাঁদের গতিপথ, আকাশের তারা এই তো ছিল সম্বল! এখন তোমরা জানো, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে, সেজন্য আমরা নিয়মিত সূর্যের উদয় আর অস্ত দেখি। এখন পৃথিবীর এই গতিপথ সারা বছর কি একই রকম? সুর্যের অবস্থানের উপর নির্ভর করে যে আলো-ছায়া আমরা দেখি, তা দিয়ে কি সত্যিই নির্ভুলভাবে সময় বোঝা সম্ভব? চলো দেখা যাক!

প্রথম সেশন

  • সূর্যঘড়ি' শিরোনাম শুনেই বুঝতে পারছ, এই শিখন অভিজ্ঞতায় তোমাদের কাজ হবে সূর্যকে কাজে লাগিয়ে সময়ের হিসাব করা। কিন্তু সূর্যকে কাজে লাগানোর উপায় কী? সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর কক্ষপথ আমরা কীভাবে বুঝতে পারি? যেহেতু পৃথিবী পুরো এক বছর ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, কাজেই পৃথিবীর কক্ষপথ বুঝতে চাইলে তোমাদেরকেও বছর জুড়ে কিছু পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তবে শুরুতেই এই জটিল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটু দেখে নেয়া যাক, সূর্যের আলো পৃথিবীতে কীভাবে এসে পড়ে।
  • তোমরা নিজেরা সহজ একটা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিষয়টা খতিয়ে দেখতে পারো। তোমাদের বিদ্যালয়ে পতাকা স্ট্যান্ড আছে নিশ্চয়ই? সারাদিনে এই পতাকা স্ট্যান্ডের ছায়ার কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে তা তোমরা খেয়াল করে দেখতে পারো (পতাকা স্ট্যান্ডের বদলে যে কোনো লম্বা লাঠি বা খুঁটির ছায়া দেখলেও চলে)। তবে পতাকা স্ট্যান্ডের দৈর্ঘ্য ও অবস্থানের কারণে এর ছায়া ঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা বেশ কঠিন। সেক্ষেত্রে একটা লম্বা কাঠি, খুঁটি বা লাঠি খাড়াভাবে এক জায়গায় স্থাপন করে তার ছায়া খেয়াল করতে পারো। তবে এই পর্যবেক্ষণের জন্য খুঁটিটি দিনভর একই জায়গায় স্থির রাখা জরুরি।
  • শিক্ষকের সহযোগিতায় ৫/৬ জনের দলে ভাগ হয়ে যাও। বিদ্যালয় শুরুর পর প্রতি ঘণ্টায় পতাকা স্ট্যান্ডের ছায়ার কী পরিবর্তন হয়? তা পর্যবেক্ষণ করে ছক-১-এ লিখে রাখো।

দলের সদস্যদের নাম:

পর্যবেক্ষণের ক্রমিকসময় (পূর্ণ ঘণ্টায়)খুঁটির ছায়ার অবস্থানখুঁটির ছায়ার দৈর্ঘ্য (ফুট)
   
   
   
   
   
   
    
  • বিজ্ঞান ক্লাসে/প্রথম ক্লাসে প্রত্যেক দল পর্যায়ক্রমে খুঁটির ছায়ার পরিবর্তনের প্রথমবারের তথ্য সংগ্রহ করতে পারো। পরের প্রতি ক্লাশে শেষে দলের একজন খুঁটির ছায়ার পরিবর্তনের তথ্য ঐ ছকে সংগ্রহ করো। এভাবে ৫/৬টি পর্যবেক্ষণের তথ্য সংগ্রহ করলেই চলবে। পাশের ছবির মতো একটা কাঠি বা খুঁটি ব্যবহার করেও এর ছায়ার তথ্য রেকর্ড রাখতে পারো। পরের সেশনে এই পর্যবেক্ষণের তথ্য পর্যালোচনা করতে পারবে।

দ্বিতীয় সেশন

  • আগের সেশনের পর্যবেক্ষণের তথ্য নিয়ে আলোচনা করে দেখো। সারা দিনে পতাকা স্ট্যান্ড বা খুঁটির ছায়া কীভাবে পড়ে? ছায়া কি একই জায়গায় ছিল নাকি বেলা বাড়ার সঙ্গে সরে গিয়েছে? ছায়ার দৈর্ঘ্যের কোনো পরিবর্তন দেখেছ? কেন এমনটি ঘটছে? দলে আলাপ করে দেখো। আলোচনার ভিত্তিতে তোমার উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • দেখতেই পাচ্ছ, সারাদিন সূর্যের আলো একইভাবে পড়ে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ছায়ার অবস্থান কাজে লাগিয়ে কতটা নিখুঁতভাবে সময় বের করা সম্ভব?
  • সূর্যঘড়ির কথা তোমরা কি আগে শুনেছ? আমরা এখন যে আধুনিক ঘড়ি ব্যবহার করি তা আবিষ্কারের আগে সূর্যঘড়িই ছিল মানুষের ভরসা। সূর্যের ছায়ার অবস্থান কাজে লাগিয়ে নিখুঁতভাবে স্থানীয় সময় বের করা সম্ভব, এ কথা মানুষ আবিষ্কার করেছিল বহু আগে। সবচেয়ে প্রাচীন সূর্যঘড়ির অস্তিত্বের কথা জানা যায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় (পাশের ছবিতে এর ধ্বংসাবশেষ দেখো)। এর পর বিভিন্ন সময়ে ইউরোপ, এশিয়ার বিভিন্ন সভ্যতায় সূর্যঘড়ি ব্যবহারের কথা জানা যায়।
  • বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে আমরা একদিক দিয়ে খুবই ভাগ্যবান, কারণ বলতে গেলে সারা বছরই আমাদের এখানে রোদ পাওয়া যায়, ফলে একান্তই মেঘলা আবহাওয়া না থাকলে দিনের বেলা সূর্যের আলো কাজে লাগিয়ে সময় বের করা এখানে অনেক সহজ। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে একটা সূর্যঘড়ি তৈরি করার চেষ্টা করা যাক, চলো।
  • অনেকভাবে এই সূর্যঘড়ি বানানো যায়, এখানে নমুনা আকারে একটা সহজ মডেল দেয়া হলো। তোমরা দলে ভাগ হয়ে নিজেদের সুবিধা মতো একটা মডেল বানিয়ে নিতে পারো।
  • ছবির মতো একটা গোল করে কাটা কাগজ শক্ত হার্ডবোর্ড বা পুরোনো কার্টনের অংশের উপরে আটকে নাও। এবার এর কেন্দ্র বরাবর একটা কাঠি বা এমনকি পেন্সিল খাড়া দাঁড় করিয়ে নিতে পারো। সময়ের হিসাব রাখতে হবে যেহেতু ছায়ার অবস্থান ঠিকমতো দেখা দরকার, কাজেই এই সূর্যঘড়ি সূর্যের আলোতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। ভালো হয় এই পর্যবেক্ষণ যদি ঠিক ১২টায় শুরু করতে পারো। দুপুর ১২টায় পেন্সিলের ছায়া যেখানে পড়েছে সেখানে ১২ লিখে চিহ্নিত করে নাও। এবার এক ঘণ্টা পরপর ছায়ার অবস্থান অনুযায়ী সময় বসিয়ে নিলেই হলো।
  • একটু ভেবে দেখো তো, সূর্যঘড়ি ব্যবহার করে কি রাতের সময় দেখা সম্ভব?
  • এবার অন্য একটা বিষয় আলোচনা করা যাক। ছায়ার অবস্থান নিয়ে তো আলোচনা হলো, কিন্তু ছায়ার দৈর্ঘ্য কি সারাদিন একই থাকে?
  • আগের সেশনে সংগৃহীত পতাকা স্ট্যান্ড বা খুঁটির ছায়ার পরিবর্তনের ৫/৬টি পর্যবেক্ষণের তথ্য অনুশীলন বইয়ের সংশ্লিষ্ট গ্রাফ কাগজের X অক্ষে সময় (ঘণ্টা) এবং Y অক্ষে ছায়ার দৈর্ঘ্য (ফুট) ধরে তথ্যগুলো স্থাপন করে দেখো। প্রাপ্ত বিন্দুগুলো সংযুক্ত করে রেখাচিত্র এঁকে নাও।
  • রেখচিত্রের আকার কেমন দাঁড়িয়েছে? ছায়ার দৈর্ঘ্যের এই পার্থক্যের কারণ কী হতে পারে? দলে আলোচনা করে নিচে তোমাদের উত্তর লিখে রাখো।
  • দলের রেখচিত্র এবং তার ব্যাখ্যা ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করো। দেখো অন্যরা কী লিখেছে।
  • প্রয়োজন হলে খাতায় সূর্য ও পৃথিবীর অবস্থান এঁকে নিজেদের যুক্তিগুলো যাচাই করে দেখো।

তৃতীয় ও চতুর্থ সেশন

  • আগের সেশনে সূর্য ও পৃথিবীর অবস্থানের ফলে আলো-ছায়া নিয়ে তো হাতে-কলমে কাজ করলে। ছায়া ব্যবহার করে কীভাবে সময় নিরূপণ করা যায় সূর্যঘড়ি তৈরির মাধ্যমে তাও জানলে। এই ছায়া ব্যবহার করে আরও বিস্ময়কর আবিষ্কার মানুষ করেছে, তেমন একটি ঘটনা আজ জেনে নেয়া যাক:'

 এবাটোস্থেনিসের পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ের গল্প

এরাটোস্থেনিসের ছিলেন একজন গ্রিক গণিতবিদ এবং আলেক্সান্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইব্রেরির প্রধান পরিচালক। তিনি কোন একটা বইয়ে পড়েছিলেন-সাইয়্যিন নগরীতে জুনের ২১ তারিখ ঠিক দুপুরবেলা নাকি সূর্য একেবারে মধ্যগগনে থাকে, এবং খাড়াভাবে পুঁতে রাখা খুঁটির কোনো ছায়া পড়েনা। তিনি খেয়াল করে দেখলেন, আলেক্সান্দ্রিয়ায় ঠিকই ওই দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ছায়া পড়ছে। এখন একেক জায়গায় একেকরকম ছায়া পড়ার অর্থ একটাই হতে পারে-পৃথিবী গোল! এখন এটা শুনতে খুব স্বাভাবিক লাগলেও ঐ সময়ে, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে এই কথা বললে খুব কম মানুষই বিশ্বাস করত। এরাটোস্থেনিস তার এই চিন্তা প্রমাণ করতে একটা অদ্ভুত পরিকল্পনা করলেন। এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলেন যার কাজ হবে আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে সাইয়্যিন নগরে সোজা পায়ে হেঁটে যাওয়া ও এই দুই শহরের দূরত্ব পরিমাপ করা। যথাসময়ে, তার নিয়োগ দেয়া ব্যক্তি হাঁটা শুরু করলেন, এবং সাইয়্যিন শহরে পৌঁছানোর পর তার দেয়া হিসাব অনুযায়ী এই দুই স্থানের দূরত্ব পাওয়া গেলো ৮০০ কিলোমিটার। এখন পরের ২১শে জুন তিনি খোঁজ নিয়ে জানলেন আদতেই সাইয়্যিন নগরে ঠিক দুপুরে ছায়া পড়ছে না, অর্থাৎ সূর্য একেবারে খাড়া আলো দিচ্ছে। এদিকে একইসময়ে আলেক্সান্দ্রিয়ায় যে ছায়া পড়ছে তার কোণ হল ৭.২ ডিগ্রী। এখন এরাটোস্থেনিস হিসাব করে দেখলেন, যদি পৃথিবী গোল হয়, তাহলে পৃথিবীর কেন্দ্রে এই দুই নগরের মধ্যকার কৌণিক দূরত্বও হবে ৭.২ ডিগ্রী, যা কিনা ৩৬০ ডিগ্রির ৫০ ভাগের এক ভাগ। কাজেই ভূপৃষ্ঠে এই দুই নগরের দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার হলে, পুরো পৃথিবীর পরিধি হবে এর ৫০ গুণ!

এভাবে হিসাব করে তিনি পৃথিবীর পরিধি নিরূপণ করেছিলেন ৮০০ কিমি x ৫০ = ৪০,০০০ কিমি। অনেক অনেক বছর পরে প্রযুক্তির কল্যাণে যখন সত্যি সত্যি পৃথিবীর পরিধি পরিমাপ করা হল, দেখা গেলো এরাটোস্থেনিস বিস্ময়কর ভাবে বলতে গেলে কোনো প্রযুক্তি ছাড়াই, শুধুমাত্র সূর্যের আলোর ছায়া ব্যবহার করে প্রায় নির্ভুলভাবে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেছিলেন! আধুনিক হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর পরিধি ৪০,০৭৫ কিমি!

  • এরাটস্থেসিনের ঘটনা তো জানলে। তিনি একই দিনে পৃথিবীর দুটি বিন্দুতে সূর্যের আলো কীভাবে পড়ে তা থেকে প্রায় নির্ভুলভাবে পৃথিবীর পরিধি হিসাব করে বলেছিলেন। একইভাবে তোমরা কি পৃথিবীর পরিধি পরিমাপ করতে পারবে? দলে আলোচনা করো।
  • এখন একটু ভেবে দেখো, একই স্থানে সারাবছর সূর্যের আলো কি একইভাবে পড়ে? নিজেরা ভেবে দেখো। তবে অনুমান থেকে আসলে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রায় বছরজুড়ে সূর্যের আলো কীভাবে পড়ে তা নিজেরা পরীক্ষা করে দেখা যায়। সেজন্য তোমরা একটা সহজ কৌশল নিতে পারো।
  • সূর্যের আলো ঠিক কোন জায়গায় পড়ছে তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটা বিন্দু বা ছোটো কোনো ছিদ্র দিয়ে আলোকরশ্মি প্রবেশের ব্যবস্থা করে বছরের বিভিন্ন সময়ে সেই আলোকবিন্দু কোথায় পড়ছে তার অবস্থান দেখা।
  • শুরুতেই একটা বাক্স জোগাড় করা দরকার। এই কাজের জন্য তোমরা কোনো ছোটো সাইজের কার্টন, বড়ো সাইজের খালি টিস্যু বক্স/কাগজের বক্স ব্যবহার করতে পারো। এর বাইরে তোমাদের যা যা লাগতে পারে তা হলো: এন্টিকাটার, স্কেল, পেরেক, আঠা ইত্যাদি।
  • পরের পৃষ্ঠার নমুনা ছবির মতো শুরুতে কাগজের বক্সের চারপাশে কাগজ ও আঠা দিয়ে মুড়ে নাও।
  • এখন একটি পেরেক বা সরু তীক্ষ্ণ কিছু দিয়ে বক্সের উপরতলে ছোটো ছিদ্র করে নাও। মূলত এ ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলোকরশ্মি বক্সের ভিতরে রাখা কাগজের উপর পড়বে।
  • এবার এন্টিকাটার দিয়ে বক্সের একপাশ আয়তাকারভাবে কেটে একটা বড়ো ফাঁকা করতে হবে। এই ফাঁকা অংশ দিয়ে সহজেই দেখা যাবে সূর্যের আলো উপরের ছিদ্র দিয়ে ঠিক কোন বিন্দুতে পড়ছে।
  • এবার একটা সাদা কাগজে অল্প আঠা দিয়ে বক্সের নিচের তলে আলতোভাবে লাগাতে হবে যাতে সূর্যের আলো কোথায় পড়ছে তা চিহ্ন দিয়ে রাখা যায়। বছরব্যাপী পর্যবেক্ষণ শেষে সাদা কাগজটি খুলে ফেলতে হবে, কাজেই আঠা একদম হালকা করে লাগালে ভালো।
  • এবার স্কুলে একটা নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করো যেখানে সারা বছর নির্দিষ্ট সময়ে এই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। অর্থাৎ, বলতে গেলে সারা বছরই যেখানে কম-বেশি রোদ পড়ে।
  • এবার দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নাও, যেই সময়টায় তোমাদের ঠিক করে রাখা জায়গায় রোদ পড়ে। মনে রেখো, সূর্যের আলো বাক্সের ছিদ্র দিয়ে লম্বালম্বি নিচের সাদা কাগজের উপরে ফেলতে হবে, যাতে পর্যবেক্ষণের নোট রাখা যায়। দুপুর বারোটার দিকে যেহেতু সূর্যের আলো মোটামুটি খাড়াভাবে পড়ে, এর কাছাকাছি একটা সময় ঠিক করে নাও।
  • এখন তোমাদের কাজ হলো, একদম নির্দিষ্ট একই জায়গায় দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বাক্সটা রেখে সূর্যের আলো বাক্সের ভেতরে রাখা কাগজের উপরে ঠিক কোন বিন্দুতে পড়ছে তা পর্যবেক্ষণ করা এবং বিন্দুটা কলম বা মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা।
  • এই পর্যবেক্ষণ করতে হবে বছর জুড়ে, কাজেই তোমাদের বেছে নেয়া জায়গাটা ভালোভাবে চিহ্নিত করে রাখো, চাইলে বাক্সটা কোথায় রাখবে সেখানটা চক বা অন্য কিছু দিয়ে দাগ দিয়েও রাখতে পারো। সব সময় বাক্সটি একই  জায়গায় একইভাবে রেখে পর্যবেক্ষণ করো। শিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নাও।
  • বছরে প্রতিদিন এই কাজ করা কঠিন, কাজেই সপ্তাহে একটা দিন ঠিক করে নাও যেদিন তোমরা এই পর্যবেক্ষণ করবে। পর্যবেক্ষণের পর বাক্সের মধ্যে রাখা কাগজে আলোকবিন্দুর অবস্থান চিহ্নিত করে রাখতে ভুলো না।
  • ক্লাসে মোট যতগুলো দল, প্রত্যেক দল সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এক এক করে পর্যবেক্ষণ সেরে নিতে পারো। তবে আবারও মনে রেখো, বাক্সটা ঠিক একই নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে এই পর্যবেক্ষণ করতে হবে, নাহলে সূর্যরশ্মি আগের দিন ঠিক কোন বিন্দুতে পড়েছিল তার সঙ্গে তুলনা করতে পারবে না।'
  • একই পর্যবেক্ষণ তোমরা চাইলে নিজের বাসাতেও করতে পারো।
  • এই শিখন অভিজ্ঞতার বাকি কাজগুলো আপাতত তোলা থাকুক। বছরের অন্যান্য শিখন অভিজ্ঞতার কাজগুলো তোমরা এগিয়ে নাও। বছর শেষে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে তোমাদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল দেখে এই অভিজ্ঞতার বাকি অংশটুকু শেষ করা যাবে।

পঞ্চম সেশন (নভেম্বর)

  • সারা বছর ধরে তোমাদের বাক্সের ভেতরে রাখা কাগজে সূর্যরশ্মির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করেছ নিশ্চয়ই। এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনার আগে একটা ছোট্ট বিষয় জেনে নেয়া যাক।
  • সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে জেনেছ, গ্যালাক্সি কীভাবে সৃষ্টি হয়, নক্ষত্রের জন্ম মৃত্যু সবই তোমরা জেনেছ। কিন্তু মহাকাশের এই অসংখ্য বস্তুর মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের যে বস্তু, আমাদের অতিপরিচিত চাঁদ-তার জন্ম কীভাবে হয়েছিল তা কি জানো?
  • অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে 'সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ' অধ্যায়ের 'চাঁদের সৃষ্টি' অংশটুকু একবার পড়ে নাও। দলে বসে আলোচনা করো।
  • চাঁদের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে সবচেয়ে স্বীকৃত মতবাদ সম্পর্কে তোমরা তো জানলে। এখন এই মতবাদ অনুযায়ী চাঁদের উৎপত্তির ঘটনাপ্রবাহকে তিনটি ধাপে সাজিয়ে নিচের ফ্লোচার্টে দেখাও:
  • এবার একটু ভেবে দেখো, সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের অবস্থানের কারণে কী কী ঘটনা ঘটে? এরকম কিছু ঘটনা তোমরা চট করেই বলতে পারো, যেমন- দিন-রাতের পরিবর্তন, পূর্ণিমা-অমাবস্যা ও চন্দ্রকলা, ঋতু পরিবর্তন, চন্দ্রগ্রহণ-সূর্যগ্রহণ ইত্যাদি। কিন্তু এই ঘটনাগুলো আসলে কী কারণে ঘটে তা কি বলতে পারো?
  • সামনের সেশনগুলোতে চলো একে একে দেখে নেয়া যাক; পৃথিবী-সূর্য-চাঁদের এই বিশাল সিস্টেমটা কীভাবে কাজ করে, সময়ের সঙ্গে এদের অবস্থানের পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে কী কী ঘটনা আমরা দেখি, আর এই সিস্টেম কীভাবে একটা ভারসাম্যের মধ্যে থাকে।'
  • প্রথমেই ভালো হয় সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের একটা মডেল বানিয়ে নিলে। তাহলে সেই মডেল পর্যবেক্ষণ করে সহজেই এই বিভিন্ন ঘটনা বুঝতে পারবে। পৃথিবী ও চাঁদ বানানোর জন্য গোল যে কোনো কিছু বেছে নিতে পারো, পুরোনো ফেলে দেয়া উপকরণ ব্যবহার করা গেলে সবচেয়ে ভালো। সূর্যের জায়গায় যে কোনো আলোর উৎস ব্যবহার করতে পারো। এর আগে তোমরা 'যাযাবর পাখিদের সন্ধানে' শিখন অভিজ্ঞতার জন্য সূর্য আর পৃথিবীর মডেল বানিয়েছিলে মনে আছে? চাইলে সেই একই উপকরণ এখানেও ব্যবহার করতে পারো। আর পুরো মডেলকে জোড়া দেয়ার জন্য, এবং ঘূর্ণন অক্ষ দেখানোর জন্য অন্য কী কী ব্যবহার করা যেতে পারে? পৃথিবী ও চাঁদের বিভিন্ন অবস্থান যাতে এদের কক্ষপথে বিভিন্ন অবস্থানে ঘুরিয়ে দেখানো যায় সেজন্য কক্ষপথ তৈরিতে পাতলা স্টিলের তার বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারো যা নিচের একটা বেইজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কিংবা উপরে একটা তারের ফ্রেম থেকে সুতা দিয়ে ঝুলিয়েও একই কাজ করতে পারো। আনুষঙ্গিক অন্য কী কী লাগতে পারে তাও ভেবে বের করো।'
  • মডেল বানানোর আগে একটা বিষয় আলোচনা করে নেয়া যাক। সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর কক্ষপথ, কিংবা পৃথিবীকে ঘিরে চাঁদের কক্ষপথ পুরোপুরি বৃত্তাকার নয়, বরং কিছুটা চ্যাপ্টা বা উপবৃত্তাকার; এই তথ্য তোমরা অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে জেনেছ। কিন্তু এই চ্যাপ্টা উপবৃত্তাকার কক্ষপথের কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত? অর্থাৎ পৃথিবীর কক্ষপথ যদি উপবৃত্তাকার হয়, তাহলে সূর্য ঠিক কোথায় অবস্থিত বলতে পারো? বৃত্তাকার পথ হলে চোখ বন্ধ করে হয়তো বলে দিতে পারতে বৃত্তের কেন্দ্রে সূর্য অবস্থিত, কিন্তু উপবৃত্তের ক্ষেত্রে এর অবস্থান কোথায় হবে? নিচের ছোট্ট কাজটা করে এই বিষয়টা বুঝে নিতে পারো।
  • একটা কাগজের উপর এক টুকরো সুতার দু প্রান্ত ঢিলেঢালাভাবে আলপিন গেঁথে বা স্কচটেপ দিয়ে আটকে নাও।
  • একটা কলম দিয়ে সুতাটা টানটান করে যে সীমা পর্যন্ত নেয়া যায় সেভাবে টেনে নাও। কাগজে ঘুরিয়ে সুতার সীমা বরাবর দাগ কাটো। পুরো সীমা ঘুরে এলে দেখবে কাগজের উপর একটা উপবৃত্ত আঁকা হয়ে গেছে। এই উপবৃত্তাকার পথের দুটি উপকেন্দ্র হলো সুতার প্রান্ত ঠিক যেই দুটি বিন্দুতে আটকানো সেই দুটি বিন্দু।
  • এখন ভেবে দেখো, উপবৃত্তের দুটি উপকেন্দ্র যদি কাছাকাছি হয়, তাহলে এর আকার কেমন হবে? আবার দু প্রান্ত যদি আরও দূরে সরিয়ে দাও তাহলে কি উপবৃত্ত আরও চ্যাপ্টা হবে নাকি প্রায় গোলাকার হবে? সুতার দুপ্রান্ত বিভিন্ন দূরত্বে আটকে এঁকে দেখো।'
  • বুঝতেই পারছ, সুতার দু প্রান্ত, অর্থাৎ উপকেন্দ্র দুটি যত বেশি কাছাকাছি হবে, তোমার কলমে আঁকা পথটা তত গোলাকার বা বৃত্তাকার হবে। যদি কাছাকাছি আনতে আনতে সুতার প্রান্ত দুটিকে একদম একই বিন্দুতে নিয়ে আসা হয়, তাহলে এই পথ হবে পুরোপুরি বৃত্তাকার।
  • যেহেতু সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর কক্ষপথ কিছুটা উপবৃত্তাকার, কাজেই পৃথিবীর কক্ষপথে সূর্যের অবস্থান ঠিক মাঝ বরাবর নয়, বরং উপবৃত্তাকার কক্ষপথের দুটি উপকেন্দ্রের মধ্যে কোনো একটিতে। তার মানে, সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবসময় একই থাকে না। একই কথা পৃথিবীকে ঘিরে চাঁদের কক্ষপথের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তোমাদের মডেল বানানোর সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।'
  • মডেল তৈরিতে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে তা তোমার দলের অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও। উপকরণগুলোর নাম নিচে লিখে রাখো। উপকরণ বাছাই করার কারণ কী সেই যুক্তিও লিখে রাখতে ভুলো না।
  • অন্যান্য দলের সঙ্গে মতবিনিময় করে দেখো তাদের পরিকল্পনা কী। শিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করো। পরের সেশনে আসার আগে উপকরণগুলো জোগাড় করে আনা চাই।

ষষ্ঠ সেশন

  • এই সেশনে তোমাদের কাজ হলো নিজ নিজ দলের সঙ্গে মডেল তৈরি করা। আগের অভিজ্ঞতার ('যাযাবর পাখিদের সন্ধানে' শিখন অভিজ্ঞতা) মডেল কাজে লাগিয়েও সেটা করতে পারো। তবে একটা বিষয় মনে রেখো, পৃথিবীসহ মহাকাশের বিভিন্ন বস্তুর আকার এতই বড়ো, এবং এদের মধ্যকার দূরত্ব এতই বেশি যে হাতে বানানো মডেলে এদের তুলনামূলক অবস্থান বা আকার বোঝা বলতে গেলে অসম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর তুলনায় সূর্যের ব্যাস প্রায় ১০৯ গুণ বেশি। আবার চাঁদের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের মাত্র ২৭%। অর্থাৎ চাঁদের তুলনায় সূর্যের ব্যাস প্রায় ৪০০ গুণ বেশি। অপরদিকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে যে গড় দূরত্ব (১,৫০০ লক্ষ কিলোমিটার) সেটি পৃথিবী ও চাঁদের মাঝে গড় দূরত্ব (৩.৮৪ লক্ষ কিলোমিটার) থেকে ৪০০ গুণ বেশি। কাজেই এদের তুলনামূলক অবস্থান ও আকারের ধারেকাছে কোনো মডেল বানানোও সত্যি বলতে অসম্ভব। আমাদের করণীয় হলো নিজেদের বানানো মডেলে যতটা সম্ভব সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের অবস্থান যৌক্তিকভাবে সাজিয়ে বোঝার চেষ্টা করা যে সত্যিকারে ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটছে।'
  • তোমাদের দলের মডেল তৈরি হয়ে গেলে অন্য দলের মডেলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখো। মডেলে সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের অবস্থান যেভাবে দেখানো হয়েছে তা ঠিক আছে কি না কীভাবে বুঝবে? সবচেয়ে ভালো হয় এদের অবস্থানের কারণে আমরা যেসব প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটতে দেখি সেগুলো এই মডেলে পরীক্ষা করে দেখা।
  • সেশন শেষে মডেল বানানো হয়ে গেলে তোমাদের মডেলগুলো সাজিয়ে রাখো, পরের সেশন থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু।

সপ্তম, অষ্টম ও নবম সেশন

  • এবার অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের 'সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ' অধ্যায় খোলো। এই অধ্যায়ে পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদের অবস্থানের কারণে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়া আছে।'
  • দলে বসে উপছায়া ও প্রচ্ছায়া, আংশিক, পূর্ণগ্রাস ও বলয় সূর্যগ্রহণ, সূর্যগ্রহণের প্রভাব ও গুরুত্ব, সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের উপায় ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা, ইত্যাদি সম্পর্কে পড়ে নাও। শিক্ষকের সঞ্চালনায় এই বিষয়গুলো নিয়ে ক্লাসে সবাই মিলে আলোচনা করো।
  • এবার তোমাদের বানানো মডেলে সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করে এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করে দেখো। কোন কোন ঘটনাগুলো তোমাদের মডেলে দেখাতে পারছ? কোনগুলো দেখানো সম্ভব নয়? কেন? দলে আলোচনা করে তোমাদের উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • তোমাদের মডেলে প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়া কি পর্যবেক্ষণ করতে পারছ? কোনো সমস্যা কি হয়েছে? শ্রেণিকক্ষে দিনের বেলা প্রচ্ছায়া পর্যবেক্ষণ করতে কেন অসুবিধা হয় বলতে পারো?
  • একটা ছোটো পরীক্ষা করে দেখো। তোমার একটা হাত সূর্যের আলোর বিপরীতে একটা দেয়াল বা মেঝের একদম কাছাকাছি রেখে দেখো, গাঢ় একটা ছায়া পড়বে। আস্তে আস্তে যদি হাতটা দেয়াল বা মেঝে থেকে সরিয়ে নাও দেখবে ছায়ার রং ফিকে হতে শুরু করেছে। এর কারণ হলো, যতই হাতটাকে দূরে নিচ্ছ, হাতের চারধার থেকে বিভিন্ন আলোর উৎস থেকে আলো এসে ছায়ার অংশটাকে আংশিক আলোকিত করছে। ফলে ছায়া হালকা হতে থাকে। দিনের বেলা আমাদের চারপাশে বিভিন্ন মাধ্যমে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে আসতে থাকে, তাই বিভিন্ন দিকে থেকে আসা আলোর কারণে গাঢ় প্রচ্ছায়া পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে যায়। বরং, অন্ধকার ঘরে শুধু একটি আলোর উৎস থেকে আসা আলোর বিপরীতে প্রচ্ছায়া অনেক ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
  • একইভাবে বিভিন্ন ধরনের চন্দ্রগ্রহণ; যেমন- পূর্ণ এবং আংশিক চন্দ্রগ্রহণ, উপছায়া চন্দ্রগ্রহণ ইত্যাদি সম্পর্কে পড়ে নিয়ে তোমাদের বানানো মডেলের সাহায্যে বিষয়গুলো বুঝতে চেষ্টা করো। নিজেদের দলের সবাই মিলে আলোচনা করো, এরপর শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় যোগ দাও।

দশম ও একাদশ সেশন

  • প্রায় পুরো বছর জুড়েই তো তোমরা নিজেদের বানানো যন্ত্রের সাহায্যে সূর্যের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করেছ। এবার একটু দেখার পালা যে বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের অবস্থান কোথায় ছিল।
  • কার্ডবোর্ডের বাক্সের ভেতর থেকে আটকে রাখা কাগজটা সাবধানে বের করে নাও। আগে দেখো সারা বছর সূর্যের আলো কি একই বিন্দুতে পড়েছে? যদি তা না হয়ে থাকে, একটু খেয়াল করে দেখো তো, সূর্যের অবস্থান যে বিন্দুগুলো দিয়ে চিহ্নিত করেছ, সেগুলো একসঙ্গে মিলে কেমন আকৃতি দেখাচ্ছে?
  • পরের পৃষ্ঠার ফাঁকা জায়গায় আকৃতিটাকে এঁকে রাখো।
  • এবার একটু অন্যান্য গ্রুপের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখো। তাদের যন্ত্রের ভেতরে রাখা কাগজে কী ধরনের আকৃতি ফুটে উঠেছে?
  • তোমাদের বিভিন্ন দলের কাগজে ফুটে ওঠা আকৃতি কি কিছুটা ৪ -এর মতো দেখাচ্ছে? এই যে বছর জুড়ে সূর্যের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে তার প্যাটার্নকে বলা হয় অ্যানালেমা। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের 'সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ' অধ্যায় থেকে অ্যানালেমা অংশটা দলে বসে পড়ে নাও।
  • পড়া হয়ে গেলে আলোচনা করে দেখো, অবস্থানের এই পরিবর্তনের কারণটা বুঝতে পারছ কি না। ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করো, শিক্ষকের সহায়তা নাও।
  • এবার তোমাদের মডেলে বছরের বিভিন্ন দিনে পৃথিবী ও সূর্যের অবস্থান কেমন ছিল তা খুঁজে বের করো তো? আমাদের দেশে সবচেয়ে বড়ো দিন এবং সবচেয়ে বড়ো রাত কোন তারিখে দেখা যায়? কোন কোন তারিখে দিন ও রাত সমান হয়? এই তারিখে বা কাছাকাছি সময়ে সূর্যের অবস্থান কোথায় ছিল তা অ্যানালেমার আকৃতি দেখে বের করার চেষ্টা করো। এবার তোমাদের মডেলে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীকে নির্দিষ্ট দূরত্ব ও নির্দিষ্ট কোণে হেলিয়ে বোঝার চেষ্টা করে দেখো; এদের তুলনামূলক অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করো। তবে তার আগে পৃথিবীর মডেলে আমাদের দেশের আনুমানিক অবস্থান চিহ্নিত করে নিতে ভুলো না।
  • আলোচনার ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো:'
  1. পৃথিবীর কক্ষপথ যদি পুরোপুরি বৃত্তাকার হতো তাহলে অ্যানালেমার আকৃতি কেমন হতো? কেন?
  2. পৃথিবী যদি ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে না থেকে একদম খাড়াভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরত তাহলে অ্যানালেমার আকৃতি কেমন হতো? যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করো।
  3. পৃথিবীর সব দেশ থেকে বছর জুড়ে পর্যবেক্ষণ করলে কি অ্যানালেমার আকৃতি একইরকম হবে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
  • আগেই জেনেছ, বাংলাদেশে আমরা যারা থাকি তারা একদিক দিয়ে খুবই ভাগ্যবান, কারণ বলতে গেলে সারা বছরই আমাদের এখানে রোদ পাওয়া যায়। কখনও কি ভেবে দেখেছ এর কারণ কী?
  • এর আগে তোমরা ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক সম্পর্কে জেনেছ। আর তোমরা ইতোমধ্যেই জানো বাংলাদেশের ঠিক উপর দিয়ে গেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। যেহেতু পৃথিবী ঠিক ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকে, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের আলো ঠিক খাড়াভাবে কর্কটক্রান্তির উপরে পড়ে, সেই তারিখটা হলো ২১শে জুন।'
  • এই সময়ে পৃথিবী ও সূর্যের অবস্থান কেমন থাকে তা কি তোমরা তোমাদের মডেলে দেখাতে পারবে?

দ্বাদশ সেশন

  • তোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছ, পৃথিবীর কক্ষপথ পুরোপুরি বৃত্তাকার নয়, বরং কিছুটা চ্যাপ্টা বা উপবৃত্তাকার। কাজেই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সব সময় একইরকম থাকে না। পৃথিবীর ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকার কারণে আমরা ঋতু পরিবর্তন হতে দেখি তা তোমরা ইতোমধ্যেই জানো। এখন ভেবে দেখো, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের কারণে কি পৃথিবীর জলবায়ু প্রভাবিত হতে পারে? দলে আলোচনা করে তোমাদের অনুমান জানাও।
  • এবার অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের একই অধ্যায় থেকে পৃথিবীর কক্ষপথ ও অক্ষের পরিবর্তন অংশটুকু পড়ে নাও। দলে আলোচনা করে তোমাদের ধারণা মিলিয়ে নাও। শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা স্পষ্ট করার চেষ্টা করো। এবার তোমাদের আগের অনুমান মিলিয়ে নাও।
  • এই শিখন অভিজ্ঞতায় যা যা নতুন জানলে তার আলোকে এবার নিজেদের বানানো মডেলটিকে ভালোভাবে যাচাই করে দেখো। পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদের অবস্থান তোমরা যেভাবে দেখিয়েছ তা কি যৌক্তিক মনে হচ্ছে? এই মডেলে কি তোমরা যেসব প্রাকৃতিক ঘটনার কথা জেনেছ (যেমন: বিভিন্ন ধরনের সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ, উপচ্ছায়া ও প্রচ্ছায়া, অনুসুর ও অপসুর, ইত্যাদি) সেগুলো দেখানো সম্ভব হয়েছে? মডেলে কোনো পরিবর্তন আনলে কি আরও যৌক্তিকভাবে এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা যেত? নিচে তোমাদের উত্তর লিখে রাখো।
  •  
Content added By

Promotion