(৫টি প্রশ্নের ৩টির উত্তর দিতে হবে।)
শত্রুকে ভালোবাসার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা খ্রিস্টীয় নৈতিকতার একটি কেন্দ্রবিন্দু এবং তিনি এর মাধ্যমে মানবসমাজে শান্তি ও সমানুভূতির একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। যীশু ক্রোধ, প্রতিশোধ, এবং বিদ্বেষের পরিবর্তে প্রেম, ক্ষমা, এবং সহানুভূতি প্রদর্শনের উপর জোর দিয়েছেন। শত্রুর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি এবং সমাজে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।
নতুন নিয়মের এই নীতি যীশুর "পাহাড়ের উপর প্রচার" (Sermon on the Mount) নামে বিখ্যাত বক্তব্যে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। এতে তিনি বলেন:
মথি ৫:৪৩-৪৪-এ যীশু বলেন:
এখানে যীশু একটি বিপ্লবী ধারণা উপস্থাপন করেছেন—শত্রুদের ঘৃণা না করে তাদের জন্য ভালোবাসা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা। এটি বিদ্বেষের বদলে সহানুভূতির চর্চা করতে শেখায়, যা মানুষের হৃদয় পরিবর্তন করতে পারে এবং সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে পারে।
যীশু প্রতিশোধের পরিবর্তে ক্ষমার পরামর্শ দিয়েছেন। মথি ৫:৩৯-এ তিনি বলেন:
এটি প্রতিশোধের পরিবর্তে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার গুরুত্বের শিক্ষা দেয়। শত্রুর প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ করার পরিবর্তে ধৈর্য ও ক্ষমার মাধ্যমে সম্পর্কের উত্তেজনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
যীশু পরামর্শ দিয়েছেন শত্রুর জন্য প্রার্থনা করার, যাতে তাদের হৃদয় পরিবর্তিত হয় এবং তারা সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। লূক ৬:২৭-২৮-এ তিনি বলেন:
শত্রুর জন্য প্রার্থনা করা মানে তাদের প্রতি মঙ্গলকামনা করা এবং তাদের উপর শান্তি কামনা করা। এটি প্রতিহিংসা বা বিদ্বেষকে দূর করে, এবং ভালোবাসার দ্বারা তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে।
যীশু এই শিক্ষা দেন যে ঈশ্বর তার সৃষ্টির সকলকে সমানভাবে ভালোবাসেন, এমনকি যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরও। মথি ৫:৪৫-এ তিনি বলেন:
এই নীতিটি অনুসরণ করলে, খ্রিস্টানদের উচিত শত্রুদের প্রতিও ঈশ্বরের নিঃশর্ত প্রেমের প্রতিফলন ঘটানো, কারণ ঈশ্বর সকলকেই ভালোবাসেন এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করেন।
যীশুর শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল মানুষের নৈতিক পরিপূর্ণতা অর্জন করা। তিনি বলেন, "তোমরা যেন তোমাদের স্বর্গীয় পিতার মতো সম্পূর্ণ হও" (মথি ৫:৪৮)। শত্রুকে ভালোবাসা এবং ক্ষমা করার মাধ্যমে মানুষ নৈতিকভাবে পরিপূর্ণ হওয়ার পথে এগিয়ে যায় এবং আত্মিক উন্নতি লাভ করে।
শত্রুকে ভালোবাসার যীশুর শিক্ষা শান্তি, ক্ষমা, এবং মানবিক সম্পর্ককে উন্নত করার এক অসাধারণ পথ নির্দেশ করে। এর মাধ্যমে তিনি প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের চক্র থেকে মানুষকে মুক্ত করে সহানুভূতি, করুণা, এবং মানবতার চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। যীশুর এই শিক্ষা সমাজে শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখতে এবং মানুষের মধ্যে প্রকৃত ভালোবাসার বন্ধন গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।