প্লাবন ও গ্রেস দুই বন্ধু একই সাথে স্কুলে যায়, খেলাধুলা করে। হঠাৎ প্লাবন অসুস্থ হয়ে পড়লে সহপাঠিরা দেখা করতে যায়। গ্রেসের কথা জিজ্ঞাসা করলে সহপাঠিরা বলে ওঠে, "ও আমাদের শত্রু, ও সকলের সাথে মিথ্যা কথা বলে, মাঝে মাঝে না বলে আমাদের ব্যাগ থেকে টাকা নেয়, আবার জিজ্ঞাসা করলে মারে। আমরা ওকে ঘৃণা করি।" প্লাবন ওদের কথা বুঝতে পেরে বলে, "ছাড় না পুরানো কথা। আমি তবুও ওর সাথে চলাফেরা করি। যীশু শত্রুকে ভালোবাসার কথা কী বলেছে? সেদিন যে ধর্ম শিক্ষক খুব ভালো করে বুঝালেন, তোদের মনে নেই?"
গ্রেসের মত এ ধরনের শত্রুকে ভালোবাসার বিষয়ে প্লাবন শ্রেণি শিক্ষকের কাছে যে শিক্ষা পেয়েছে তা তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বর্ণনা কর।
প্লাবন গ্রেসের মতো শত্রুকে ভালোবাসার বিষয়ে যে শিক্ষা পেয়েছে, তা খ্রিস্টীয় ধর্মীয় শিক্ষার একটি মৌলিক অংশ। এটি যীশুর শিক্ষার মূল ভিত্তি, যা আমাদের শেখায় কিভাবে অসীম ভালোবাসা, দয়া এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হয়। প্লাবনের মন্তব্যে আমরা দেখতে পাই, সে তার বন্ধুকে (গ্রেস) ভালোবাসার জন্য প্রস্তুত, যদিও অন্যরা তাকে ঘৃণা করছে। এটি পরিষ্কার করে যে, প্লাবন শত্রুকে ভালোবাসার নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
যীশু বলেন, "তুমি তোমার শত্রুকে ভালোবাসো এবং তোমার বিরোধীদের জন্য প্রার্থনা করো" (মথি ৫:৪৪)। এটি দেখায় যে, ভালোবাসা শুধুমাত্র বন্ধুদের জন্য নয়, বরং শত্রুদের জন্যও প্রযোজ্য। এটি ব্যক্তিকে অসীম দয়া ও সহানুভূতির সঙ্গে জীবন যাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে।
শ্রেণি শিক্ষকের পাঠে হয়তো বলা হয়েছিল যে, ক্ষমা শত্রুদের প্রতি ভালোবাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যখন কেউ কাউকে ক্ষমা করে, তখন সে নিজের মনে বিদ্যমান ক্রোধ ও ক্ষোভকে মুক্তি দেয়। এটি ব্যক্তিগত শান্তি এবং সম্পর্কের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্লাবন বুঝতে পারে যে, গ্রেসের বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগগুলো তাকে এগিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে, এবং সে ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলতে চায়।
শিক্ষা থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে, শত্রুকে ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষের মনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। রাগ, বিদ্বেষ এবং ক্রোধ মানুষের আত্মাকে বিষাক্ত করে। প্লাবন যখন গ্রেসের জন্য ভালোবাসা এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করে, তখন সে নিজেই মানসিক শান্তি এবং সুখ অনুভব করে।
শ্রেণি শিক্ষকের পাঠের আলোকে, শত্রুকে ভালোবাসা সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। যখন একজন ব্যক্তি শত্রুর প্রতি ভালোবাসা এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করে, তখন এটি সামাজিক সম্পর্ককে মজবুত করে এবং অন্যদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্লাবন তার সহপাঠীদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ভালোবাসা সামাজিক সংহতি সৃষ্টি করে এবং সমাজে সংঘর্ষের স্থলে শান্তি আনে।
প্লাবন যেহেতু গ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়, এটি বোঝায় যে সে নতুন সম্ভাবনার জন্য উন্মুক্ত। যীশুর শিক্ষা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যেকোনো সময় নতুন শুরু করতে পারে এবং পুরনো ভুলের জন্য আরেকজনের প্রতি ঘৃণা না করাই ভালো। প্লাবন গ্রেসের প্রতি তার বন্ধুত্বকে অটুট রাখতে চায় এবং তার সঙ্গে সময় কাটাতে চায়, যদিও অন্যরা তাকে ঘৃণা করে।
প্লাবন তার ধর্মশিক্ষকের কাছ থেকে শিখেছে যে, শত্রুকে ভালোবাসা এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা শুধুমাত্র একটি নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি মহান মানবিক গুণ। তার সিদ্ধান্ত গ্রেসের সঙ্গে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে সেই শিক্ষারই প্রতিফলন, যা তাকে একটি সদা প্রফুল্ল ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে সাহায্য করে। এই শিক্ষা মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তি, শ্রদ্ধা এবং সহানুভূতি স্থাপন করে, যা সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে।