সন্তানদের চেহারার মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাবা মার গঠন ও বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়।
বাবা-মার চরিত্রের মিশ্রণ গঠনকারী মূল অঙ্গাণু হলো ক্রোমোজোম, যা কোষের নিউক্লিয়াসে থাকে এবং জিন বহন করে। যৌন প্রজননের সময় এই ক্রোমোজোমের মাধ্যমে জিনের বিনিময় ও পুনর্গঠন ঘটে। ফলে সন্তানেরা বাবা-মার উভয়ের বৈশিষ্ট্য পায়।
ক্রোমোজোম হলো নিউক্লিয়াসের ভেতরে পাওয়া ডিএনএ-এর সুসংগঠিত রূপ, যা প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে প্রত্যেক মানুষের কোষে ২৩ জোড়া (মোট ৪৬টি) ক্রোমোজোম থাকে। এর মধ্যে এক জোড়া লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোজোম (XX বা XY), এবং বাকি ২২ জোড়া অটোসম ক্রোমোজোম। ক্রোমোজোমের মধ্যে অবস্থিত ডিএনএ-তে থাকে জিন, যা বংশগত বৈশিষ্ট্যের মূল বাহক। প্রতিটি জিন একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন চোখের রং, ত্বকের রং ইত্যাদি।জিনের মাধ্যমে সন্তানেরা বাবা ও মায়ের উভয়ের বৈশিষ্ট্য পায়, কারণ সন্তানদের মধ্যে প্রত্যেকটি ক্রোমোজোমের একটি অংশ বাবার থেকে এবং অন্যটি মায়ের থেকে আসে।মেইওসিস বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে এবং ক্রসিং-ওভার প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজোমের অংশ বিশেষ বিনিময় ঘটে।এই ক্রসিং-ওভার প্রক্রিয়ায় বাবা ও মায়ের ক্রোমোজোমের অংশ একে অপরের সঙ্গে বিনিময় হয়, যার ফলে জিনের পুনর্গঠন ঘটে এবং নতুন বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয়।মেয়োসিস বিভাজনের সময় গ্যামেটগুলো (স্পার্ম ও ডিম্বাণু) তৈরি হয় এবং প্রতিটি গ্যামেটে থাকে ২৩টি ক্রোমোজোম।যখন স্পার্ম ও ডিম্বাণু একত্রিত হয়, তখন ক্রোমোজোম সংখ্যা পূর্ণ হয় (৪৬টি) এবং বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্য মিশ্রিত হয়ে সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পায়।
সুতরাং, ক্রোমোজোমের মাধ্যমে জিনের বিনিময় ও পুনর্গঠনের কারণে সন্তানদের মধ্যে বাবা-মার চরিত্রের মিশ্রণ ঘটে।