Academy

যে কোনো একটি বিষয় অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা কর:

মেট্রোরেল: নগরজীবনের নতুন দিগন্ত। (প্রবন্ধ রচনা কর)

Created: 3 months ago | Updated: 3 months ago
Updated: 3 months ago

মেট্রোরেল: নগরজীবনের নতুন দিগন্ত

মেট্রোরেল কী:

মেট্রোপলিটন রেল-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো মেট্রোরেল। মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো স্পর্শ করে গণপরিবহনের জন্য প্রতিষ্ঠিত রেলব্যবস্থাই মেট্রোরেল। এটি একটি বিদ্যুৎচালিত পরিবহন। ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থার প্রকল্পটির নাম 'ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট'। এটি একটি দ্রুতগামী, স্বাচ্ছান্দময়, সুবিধাজনক ও নিরাপদ নগরকেন্দ্রিক রেলব্যবস্থা।

মেট্রোরেলের গুরুত্ব:

জনবহুল রাজধানী শহর ঢাকা যানজটের শহর হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। এই শহরে সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। এখানে বাস, ট্রাক, কার, অটোরিকশা, বাইক আর রিকশা মিলিয়ে কয়েক লাখ যান প্রতিদিন চলাচল করে। দুতিন ঘণ্টা আগে রওয়ানা হয়েও সঠিক সময়ে কখনো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। রাস্তায় যানজটে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেতে হয় যাত্রীদের। ইতোমধ্যে সরকার বেশ কয়েকটি উড়াল সেতু, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, লিংকরোড ইত্যাদি নির্মাণ করেছে। কিন্তু যানজট খুব একটা নিরসন হয়নি। এ কারণে যাত্রীদের সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাসের অপেক্ষায়। সিএনজি বা রিকশা চালকদের হাতেও জিম্মি হতে হয় কখনো কখনো। ঝড়, বৃষ্টি বা হরতালের সময় মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এমতাবস্থায় মেট্রোরেল চালু হলে সময়ের অপচয় যেমন হ্রাস পাবে তেমনই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হয়ে যাবে।

মেট্রোরেলের সুযোগ-সুবিধা:

সাধারণ ট্রেন সার্ভিসের চেয়ে মেট্রোরেলের ট্রেনে অধিকতর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • উড়াল সড়ক:

মূল সড়কের মাঝ বরাবর উড়াল সড়ক নির্মিত হবে। উড়াল সড়কের উপর স্থাপিত রেললাইনের উপর দিয়ে চলবে ট্রেন। যানজট যাতে না হয়, সেভাবেই উড়াল সড়ক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

 

  • মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য:

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ২০ দশমিক ০১ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ রুটে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এগুলোর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত থাকবে ৯টি স্টেশন।

এগুলো হচ্ছে উত্তরা নর্থ, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা সাউথ, পল্লবী, মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকবে ৭টি স্টেশন। এগুলো হচ্ছে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (টিএসসি), বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল শাপলা চত্বর।

  • বগি ও কামরা:

প্রতিটি ট্রেনে ৬টি করে বগি থাকবে। প্রতিটি কামরা হবে সুপরিসর। সেখানে যাত্রীদের জন্য থাকবে আরামদায়ক আসন। এছাড়া প্রতিটি কামরা হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

  • ট্রেন সংখ্যা ও সময়:

উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলাচল করবে ১৪টি ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে এবং ৭৫৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবে। প্রতি ০৪ মিনিট পর পর ট্রেন ছেড়ে যাবে। ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। শেষ গন্তব্যে পৌঁছতে ট্রেনের সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। প্রতি স্টেশনে ট্রেন অবস্থান করবে ৪০ সেকেন্ড।উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলাচল করবে ১৪টি ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে এবং ৭৫৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবে। প্রতি ০৪ মিনিট পর পর ট্রেন ছেড়ে যাবে। ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। শেষ গন্তব্যে পৌঁছতে ট্রেনের সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। প্রতি স্টেশনে ট্রেন অবস্থান করবে ৪০ সেকেন্ড।

  • যাত্রী বহন ক্ষমতা ও ভাড়া আদায়:

মেট্রোরেলে ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে দুই প্রান্তের ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম হবে। মেট্রোরেলের ভাড়া জনপ্রতি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৫টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ২০ টাকা। মেট্রোরেল ব্যবস্থায় যাত্রীদের সুবিধার্থে স্টেশনে প্রবেশের সময় মেশিনে ভাড়া সংগ্রহ করা হবে। স্বয়ংক্রিয় কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করবেন যাত্রীরা।

প্রকল্প ব্যয় ও অর্থায়ন:

পুরো ২০ দশমিক ০১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা প্রকল্পের ৮৫ শতাংশের ব্যয় বাবদ ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেবে কয়েক ধাপে। বাকি ৫ হাজার ৪ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।

মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ১.১৬ কি.মি. বাড়ানোর কারণে প্রকল্প ব্যয় ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

নির্মাণকাজের অগ্রগতি:

সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং ২০২৪ সালের মধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত শেষ করার লক্ষমাত্রা নিয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে চলছে।

গতিশীল অর্থনীতি ও সহজ যাতায়াত:

বিপুল জনসংখ্যার রাজধানী শহরে যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা তথা স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান নিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ডিটিসিএ-এর তত্ত্বাবধানেই বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যথাসময়ে প্রকল্পের সমাপ্তিতে যাত্রী পরিবহন শুরু হলে মেট্রোরেল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সরকার এ প্রকল্প থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবে এবং জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ অভিমত বাস্তবসম্মত ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাছাড়া মেট্রোরেলের স্বস্তিদায়ক সেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু, প্রতিবন্ধী ও নারীরা দুর্বিষহ কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে। উল্লেখ্য যে, যাত্রীরা নির্ধারিত স্থান থেকে ওঠানামা করার ফলে গড়ে উঠবে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর ঢাকা মহানগরী।

উপসংহার:

অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের প্রথম এবং প্রধান শর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। ২০২৪ সালের মধ্যে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি হবে একটি মাইলফলক। এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের অর্থ আর সময়ের অপচয় বন্ধ হবে। যানজটমুক্তভাবে মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।

3 months ago

বাংলা

Please, contribute to add content.
Content
Promotion