যে কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল জনশক্তি ও উপায়-উপকরণকে লক্ষ্যপানে পরিচালিত করেন বা নেতৃত্ব দেন। তাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা বা ভূমিকা প্রতিষ্ঠানকে সবসময় গতিশীল রাখে । পরিকল্পনা তৈরি ও তা বাস্তবায়নের জন্য সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্যে ব্যবস্থাপকগণ সবসময় ব্যাপৃত থাকেন। সীমিত সময়, শক্তি ও অর্থ ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানবীয় ও বস্তুগত উপকরণাদিকে কাজে লাগানোর জন্য একজন ব্যবস্থাপক সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালান । তাই একজন আদর্শ ব্যবস্থাপকের ভূমিকা বা প্রাত্যহিক কাজ প্রতিষ্ঠানে কি হওয়া উচিত এ নিয়ে বিভিন্ন মনীষী গবেষণা চালিয়েছেন । এতে একজন ব্যবস্থাপকের প্রতিদিন তিন ধরনের ভূমিকা মুখ্য বিবেচিত হয়েছে । নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
১. আন্তঃব্যক্তিক ভূমিকা (Interpersonal roles): অন্যের সাথে কথা বলা ও আলাপ-আলোচনা করার কাজকে একজন ব্যবস্থাপকের আন্তঃব্যক্তিক ভূমিকা বলে। একজন ব্যবস্থাপককে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে অফিসে যাওয়া বা ঢোকা থেকে শুরু করে বেরিয়ে আসা এমনকি ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ভিতরের ও বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলতে হয় । নির্দেশ-উপদেশ ও পরামর্শ দিতে হয়,তাদের স্বমতে নিয়ে আসতে হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয় । মাঝে মধ্যেই অধস্তনদের নিয়ে সভা করতে হয় । সমস্যা নিয়ে আলোচনা, পরামর্শ ও সমাধান দেয়ার প্রয়োজন পড়ে । বাইরের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষের কথা শুনতে হয়, প্রয়োজনে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হয় । এর সবই একজন দক্ষ ব্যবস্থাপকের আন্তঃব্যক্তিক ভূমিকা হিসেবে গণ্য । এরূপ ভূমিকা ব্যবস্থাপকের মানবীয় দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে । যদি একজন ব্যবস্থাপক মানুষের সাথে কথা বলতে বিরক্তবোধ করেন, কারও সাথে যোগাযোগ রক্ষায় অনীহায় ভোগেন, বিভিন্ন জনের মোবাইল নম্বর, ই-মেইল নম্বর সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও যোগাযোগে নিরুৎসাহী হন তবে তার পক্ষে এ ধরনের ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয় না ।
২. তথ্য সংশ্লিষ্ট ভূমিকা (Informational roles): প্রতিদিন তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য প্রদান সংক্রান্ত ব্যবস্থাপকের কাজকেই তথ্য সংশ্লিষ্ট ভূমিকা বলে । বর্তমান যুগকে তথ্যের যুগ বলা হয় । কারণ যার কাছে যত তথ্য থাকে ততই তিনি সমৃদ্ধ বিবেচিত হন । প্রতিষ্ঠানে সমপদে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যিনি যত তথ্যসমৃদ্ধ কার্যক্ষেত্রে তার পক্ষেই তত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব । সাধারণ একজন ব্যবস্থাপকের কথাই যদি ধরা যায় তবে দেখা যাবে তাকে সকালে প্রতিষ্ঠানে ঢুকেই সকল কর্মী প্রতিষ্ঠানে এসেছে কি না সে বিষয়ে তথ্য নিতে হয় । কাঁচামাল আসলো কি না, উৎপাদন ঠিকমত হচ্ছে কি না, সমস্যা থাকলে সমস্যার কারণ কী, মাল বিক্রয় হচ্ছে কি না, মজুত কী রয়েছে, গ্রাহকদের প্রত্যাশা কী, তারা কেমন আচরণ করছে, প্রতিযোগীরা কী ধরনের ভূমিকা নিচ্ছে ইত্যাদি নানান তথ্য তার কাছে থাকতে হয় । এরপর ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ বা মালিককে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিতে হয় । বাইরের বিভিন্ন পক্ষও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চায় । তাদেরকেও প্রয়োজনে তথ্য সরবরাহের প্রয়োজন পড়ে । এভাবে তথ্য সংগ্রাহক, সংরক্ষক ও প্রচারক হিসেবে একটা প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপকের প্রাত্যহিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।
৩. সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা (Decisional role) : প্রাত্যহিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণের কাজকেই ব্যবস্থাপকের সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা বলে । একজন ব্যবস্থাপককে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা করণীয় নির্ধারণ করতে হয়, সিদ্ধান্ত দিতে হয়, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখতে হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে সহযোগিতা করতে হয়, সম্পৃক্ত থাকতে হয়— যার সব কিছুই ব্যবস্থাপকের প্রাত্যহিক সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকার মধ্যে পড়ে । একজন উৎপাদন ব্যবস্থাপক সকালে অফিসে যেয়েই শুনলেন তাদের একটা মেশিন কাজ করছে না । মেরামত বিভাগকে জানিয়ে দ্রুত টেকনিশিয়ান আনতে হবে । কাঁচামাল যেটা সরবরাহ করা হয়েছে তা মানসম্পন্ন না হওয়ায় উৎপাদনের মান খারাপ হচ্ছে । করণীয় কী তাকেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে। প্রয়োজনে সাধারণ ব্যবস্থাপক থেকে সিদ্ধান্ত জেনে নিতে হবে । বিভাগীয় একজন ফোরম্যান অসদাচরণ করেছে তার বিষয়েও সিদ্ধান্ত দেয়া দরকার । ঊর্ধ্বতনদের দেয়া সিদ্ধান্ত অধস্তনদের জানানো ছাড়াও প্রতিদিন প্রতিনিয়ত একজন ব্যবস্থাপককে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নমূলক নানান কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। তাই দ্রুত ও যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারার সামর্থ্য একজন ব্যবস্থাপকের অন্যতম গুণ বিবেচিত হয়ে থাকে ।