কেলাসন পদ্ধতি

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - রসায়ন - রসায়ন- প্রথম পত্র | | NCTB BOOK
5

কেল্যাশন কী?

কেলাশন হল একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া যেখানে একটি কেন্দ্রীয় ধাতব আয়নকে এক বা একাধিক বহুদন্তুক যৌগ দ্বারা ঘিরে রাখা হয়। এই বহুদন্তুক যৌগগুলোকে কেল্যাটিং এজেন্ট বা কেল্যাট বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একটি স্থিতিশীল চক্রাকার কাঠামো তৈরি হয়, যাকে কেল্যাট বলা হয়।

কেল্যাটিং এজেন্ট কী?

কেলাটিং এজেন্ট হল এমন যৌগ যারা একাধিক দাতা পরমাণু ধারণ করে। এই দাতা পরমাণুগুলো একটি ধাতব আয়নের সাথে একাধিক সমযোজী বন্ধন গঠন করে। এভাবে একটি চক্রাকার কাঠামো তৈরি হয়।

উদাহরণ: EDTA (Ethylenediaminetetraacetic acid) একটি সাধারণ কেল্যাটিং এজেন্ট। এতে চারটি কার্বক্সিল গ্রুপ এবং দুটি নাইট্রোজেন পরমাণু রয়েছে, যা একটি ধাতব আয়নের সাথে ছয়টি সমযোজী বন্ধন গঠন করতে পারে।

কেলাসন পদ্ধতি (Chelation method) হলো একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া যেখানে একটি কেলেটিং এজেন্ট ব্যবহার করে ধাতব আয়নকে জটিল যৌগে পরিণত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায়, কেলেটিং এজেন্ট ধাতব আয়নকে কয়েকটি লিগান্ড দিয়ে ঘিরে ধরে এবং একটি স্থিতিশীল জটিল যৌগ (complex) তৈরি করে।

কেলাসন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ "chele" থেকে, যার অর্থ "কাঁকড়ার নখর", কারণ কেলেটিং এজেন্ট ধাতব আয়নকে নখরের মতো আটকে রাখে।

কেলাসন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য:

  1. লিগান্ডের ব্যবহার: কেলেটিং এজেন্ট, যা একটি বহুদন্ত (multidentate) লিগান্ড, একাধিক পয়েন্ট দিয়ে ধাতব আয়নের সাথে বন্ড গঠন করে।
  2. ধাতব আয়ন স্থিরকরণ: কেলেটিং এজেন্ট ধাতব আয়নকে আটকে রাখে এবং তা অনির্দিষ্টভাবে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা কমায়।
  3. জলীয় দ্রবণে সমাধানযোগ্যতা বৃদ্ধি: ধাতব আয়নের সমাধানযোগ্যতা কেলাসনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়, ফলে ধাতব আয়ন সহজে নিষ্কাশন বা অপসারণ করা যায়।
  4. প্রতিক্রিয়াশীলতা হ্রাস: কেলাসন প্রক্রিয়া ধাতব আয়নকে কম প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে, যা বিশেষ করে বিষাক্ত ধাতব আয়নের বিষক্রিয়া কমাতে সহায়ক হয়।

কেলাসন পদ্ধতির উদাহরণ:

EDTA (Ethylene Diamine Tetra acetic Acid) হল সবচেয়ে সাধারণ কেলেটিং এজেন্ট যা বিভিন্ন ধাতব আয়ন যেমন ক্যালসিয়াম (Ca²⁺), ম্যাগনেসিয়াম (Mg²⁺), এবং আয়রন (Fe³⁺) এর সাথে জটিল যৌগ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি জল পরিশোধন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, এবং ঔষধে ব্যবহৃত হয়।

ডাইমারকাপ্টোল (Dimercaprol) বা BAL (British Anti-Lewisite) হলো এক ধরনের কেলেটিং এজেন্ট, যা আর্সেনিক, পারদ, এবং সীসা বিষক্রিয়া দূর করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ধাতব আয়নগুলিকে জটিল যৌগে পরিণত করে শরীর থেকে বের করে দেয়।

ডেসফেরিয়ক্সামিন: এটি এক ধরনের কেলেটিং ওষুধ যা আয়রন ও অ্যালুমিনিয়াম বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহৃত হয়।

 

কেল্যাশন পদ্ধতির ব্যবহার

  • ধাতব আয়ন শনাক্তকরণ: বিভিন্ন ধাতব আয়নকে শনাক্ত করতে কেল্যাশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  • জলের কঠিনতা পরিমাপ: জলে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম আয়নকে শনাক্ত করতে কেল্যাশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  • ধাতব আয়ন অপসারণ: দ্রবণ থেকে ধাতব আয়ন অপসারণে কেল্যাশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  • ঔষধ শিল্পে: অনেক ধরনের ওষুধ তৈরিতে কেল্যাটিং এজেন্ট ব্যবহৃত হয়।
  • খাদ্য শিল্পে: খাদ্যের রঙ এবং স্বাদ বজায় রাখতে কেল্যাটিং এজেন্ট ব্যবহৃত হয়।

কেল্যাশন পদ্ধতির সুবিধা

  • উচ্চ স্পষ্টতা: কেল্যাশন পদ্ধতি দ্বারা খুব কম পরিমাণে ধাতব আয়নও শনাক্ত করা যায়।
  • সহজ: এই পদ্ধতিটি পরিচালনা করতে খুব সহজ।
  • দ্রুত: এই পদ্ধতি দ্বারা খুব দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
  • বহুমুখী: বিভিন্ন ধরনের ধাতব আয়ন শনাক্ত করতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।

কেল্যাশন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা

  • ব্যয়বহুল: কেল্যাটিং এজেন্টগুলো সাধারণত ব্যয়বহুল হয়।
  • বিষাক্ততা: কিছু কেল্যাটিং এজেন্ট বিষাক্ত হতে পারে।

কেল্যাশন পদ্ধতির একটি উদাহরণ

  • জলের কঠিনতা পরিমাপ: EDTA (Ethylene diamine tetraacetic acid) ব্যবহার করে জলে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম আয়নকে শনাক্ত করা হয়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জলে EDTA যোগ করা হয় এবং একটি সূচক ব্যবহার করে শেষ বিন্দু নির্ণয় করা হয়। শেষ বিন্দু থেকে জলে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম আয়নের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।
Content added By
Promotion