বিলোপসাধন বলতে গুটিয়ে ফেলা বা বিলুপ্ত করা বা বন্ধ করে দেয়াকে বোঝায়। আর কোম্পানির বিলোপসাধন বলতে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়াকে বোঝায়। যে পদ্ধতিতে কোম্পানির কার্যক্ষমতার অবসান ঘটে তাকে কোম্পানির বিলোপসাধন বলে ।
কোম্পানি আইন-সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী একটি স্বেচ্ছা সংগঠন। আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট বলে এর পরিসমাপ্তিও আইনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে ।
১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের নিয়ম মোতাবেক কোম্পানির কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলাকে ই কোম্পানির বিলোপসাধন বলে । আইনের বিধান পালনের মাধ্যমে কোম্পানির কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া যায়। আর এর মাধ্যমেই কোম্পানি হারায় তার অস্তিত্ব।
কোম্পানি আইনের বিধান অনুযায়ী কোনো কোম্পানির কাজকর্ম গুটিয়ে নেয়ার পদ্ধতিকে কোম্পানির বিলোপসাধন বলে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২৩৪(১) ধারায় কোম্পানির বিলোপসাধনের তিনটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।
কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার, পাওনাদার বা কোম্পানির নিবন্ধকের আবেদনের প্রেক্ষিতে যে সব কারণে আদালত কর্তৃক বাধ্যতামূলক বিলোপসাধন হতে পারে, সেগুলো হলো-
১. বিশেষ সভায় শেয়ারহোল্ডারগণ কর্তৃক বিলোপ সাধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ;
২. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিধিবদ্ধ সভা অনুষ্ঠান ও নিবন্ধকের নিকট বিধিবদ্ধ বিবরণী পেশে ব্যর্থতা;
৩. নিবন্ধনের এক বছর সময়ের মধ্যে কার্যারম্ভে ব্যর্থতা;
৪. যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত এক বছর সময়ের বেশি কার্যক্রম বন্ধ থাকা;
৫. আইন মোতাবেক কোম্পানিতে ন্যূনতম সংখ্যক সদস্য না থাকা;
৬. কোম্পানির পাঁচ হাজার টাকা বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা ;
উল্লেখিত যেকোনো কারণে আদালত অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে একজন লিকুইডিটর নিয়োগ করতে পারেন, যিনি কোম্পানির সব সম্পত্তি হতে প্রথমে তৃতীয় পক্ষের দেনা পরিশোধ করে কিছু থাকলে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন করেন।
কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার বা পাওনাদারগণ ইচ্ছে করলে নিজেরাই কোম্পানির অবসায়ন ঘটাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার ও পাওনাদারগণ পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে আদালতের সাহায্য ছাড়াই স্বেচ্ছায় বিলোপসাধন ঘটাতে পারেন।
যেসব কারণে কোম্পানির স্বেচ্ছায় বিলোপসাধন ঘটাতে পারে তা হলো [২৯০(১) ধারা] :
i. বিশেষ সভায় শেয়ারহোল্ডারগণ ও পাওনাদারবৃন্দের বিলোপসাধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ;
ii. কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে ও সময়ের জন্য কোম্পানি গঠিত হয়ে তা সম্পন্ন হলে;
iii. কোম্পানি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে এবং পরিশোধে অক্ষম হলে;
iv. কোম্পানি পরিচালনা অলাভজনক হলে ইত্যাদি।
কোম্পানির স্বেচ্ছামূলক বিলোপসাধনের ক্ষেত্রে যেকোনো পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের তত্ত্বাবধানে বিলোপসাধন ঘটতে পারে। যেসব কারণে এরূপ বিলোপসাধন ঘটে। সেসব হলো :
i. শেয়ার মালিক বা পাওনাদারদের প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিলোপ সাধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে;
ii. কোম্পানির সম্পদ সংগ্রহ ও বিক্রয়ে অনিয়ম হলে; ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন পন্থায় কোম্পানির অবসান ঘটানো যায়। এগুলো ছাড়া যেকোনো যৌক্তিক কারণে আদালত যেকোনো কোম্পানির বিলোপ সাধন ঘটাতে পারে ।