খাদ্য ছাড়া জীবন বাঁচে না । সেই খাদ্যই যদি মানুষের জীবন সংহারক হয় তবে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? বিষ খেলে মানুষ মারা যায়- এটা ঠিক কিন্তু যে বিষ খেয়ে মানুষ একবারে মরে না, খাদ্যের সাথে ধীরে ধীরে মানুষের শরীরে ঢুকে নিরবে ঘাতক রোগের সৃষ্টি করে, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় - সেই খাদ্য, সেই খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার দ্রুত বন্ধ হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে। সমস্যা হলো রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার একবারে বন্ধ করার বিষয়ে কেউই হয়তোবা রাজি হতে চাইবে না । কারণ খাদ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার অত্যাবশ্যক। খাদ্য সংরক্ষণেও সীমিত মাত্রায় এর ব্যবহার বিশেষজ্ঞগণ অনুমোদন করেন। কিন্তু অধিক মাত্রায়, বেপরোয়াভাবে এর ব্যব হার অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত । উল্লেখ্য উন্নত দেশসমূহে কোনোরূপ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই 'অর্গানিক ফুড’ উৎপাদনের দিকে তারা নজর দিচ্ছে ও কৃষকদের উৎসাহিত করছে। সে সব দেশে 'অর্গানিক ফু' ড' প্রকৃতই অর্গানিক ফুড কি না তা পর্যবেক্ষণ, পরীবিক্ষণ সনদ দেয়ার জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ রয়েছে । রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার সে সকল সমাজের কৃষকদের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে । ফলে তারা বিষয়গুলোকে তাদের ম তো করে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে । আমাদের দেশে এই অশুভ রাসায়নিকের কুফল থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত পন্থ সমূহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি :
১. সরকারের করণীয় (Duty of Govt.) : যে কোনো সমাজেই সরকার হলো সবচেয়ে বড় দায়িত্বশীল সংস্থা । আইন ও নীতিমালা প্রণয় ন এবং তার বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তে। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে কেউ যেন অবাধে এ সকল জিনিস সংগ্রহ করে খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণে ব্যবহার করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধে সরকার যেভাবে ভ্রাম্যমান আদালতসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে।ছে সর্বক্ষেত্রে তার যথাযথ প্রয়োগে সরকারকেই সর্বোচ্চ আন্তরিকতাসহ এগিয়ে আসা উচিত ।
২. খাদ্য উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের করণীয় (Duty of food producers and sellers): যারা রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারের করে খাদ্য উৎপাদন করছেন তাদের সচেতনতা ও আন্তরিকতা এক্ষেত্রে ভালো ফল দিতে পারে । অনেক কৃষক বা খামারি রয়েছেন যারা এগুলোর ক্ষতিকর ব্যবহার সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নয় । জৈব সার, জৈব কীটনাশক ও নতু ন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে খরচ কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি না করেও ফসল উৎপাদন করা যায়- এ বিষয়ে তাদের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন । উৎপাদক ও বিক্রেতাদের অধিকাংশই নিজেদের সামান্য লাভের জন্য কী করছে ও কী বিক্রি করছে তা বুঝতে চান না । তাই তাদেরকে যদি এ সকল জিনিস ব্যবহার ও বিক্রয়ের বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক করা যায় তবে ক্ষতিকর এ সকল দ্রব্যের ব্যবহার কমে আসতে পারে ।
৩. গ্রাহক বা ভোক্তাদের করণীয় (Duty of customer or consumers): ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত উৎপাদিত খাদ্য যারা খাচ্ছেন বা ব্যবহার করছেন তারাই প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণি। যদিও এরূপ খাদ্য উৎপাদক ও বিক্রেতারা ও কার্যত এক পর্যায়ে এরই অন্তর্ভুক্ত । এই শ্রেণি কী কিনছেন, ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব পণ্যে বা খাদ্যে আছে কি না- এগলো যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করেন, একটু বেশি পয়সা দিয়ে হলেও অর্গানিক বা কার্যকর শানের পণ্য ক্রয় করেন তবে এরূপ ক্ষতিকর দ্রব্যের উৎপাদন ও বিক্রয় নিরুৎসাহিত হতে পারে । এছাড়া বেগুন, বরবটি, সীম ইত্যাদি তরকারি কম কিনে চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচাকলা, কচুর চলতি ইত্যাদি তরকারি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে । ফলের ক্ষেত্রেও আগেল, কলা, আঙ্গুর ইত্যাদি কমিয়ে কাঠাল, ডালিম, আমড়া, কামরাঙ্গা ইত্যাদি খেলে হয়তো ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব কমতে পারে ।
৪. গণমাধ্যমের কর্তব্য (Dutyt of mass media) : মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি এবং অন্যায় কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করতে যে কোনো সমাজেই গণমাধ্যম; যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, ইত্যাদির দায়িত্ব অনেক বেশি। প্রতিটা চ্যানেল যদি খাদ্য উৎপাদনে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কুফল মিডিয়াতে তুলে ধরে, উৎপাদকদের করণীয় এবং এগুলোর ব্যবহার ভিন্ন যারা পণ্য উৎপাদন করছে তাদের কৌশলগুলো মানুষের সামনে উপস্থাপন করে তবে উৎপাদকরা এ বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক হবে। যদি এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রাহক বা ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি; করা যায়, এর কুফল বা ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা তুলে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশ করা হয়। সরকারি উদ্যোগ 'ও আইনগত বিষয়াবলি জানানো যায় তবে প্রচারের এ যুগে তা ভালো ফল দিতে পারে ।