hsc

জ্বালানী সম্পদের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে শিল্পায়নের সম্ভাবনা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - রসায়ন - রসায়ন - দ্বিতীয় পত্র | | NCTB BOOK
5

জ্বালানী সম্পদের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে শিল্পায়নের সম্ভাবনা

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শিল্পায়নের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। জ্বালানী সম্পদ দেশের শিল্পায়নের প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেয় এবং এর মাধ্যমে শিল্পের গতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব। বাংলাদেশে জ্বালানী সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পায়নের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

১. প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের ব্যবহার

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুত রয়েছে, যা দেশের প্রধান জ্বালানী উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্যাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সিমেন্ট, সার, পাট, ইস্পাত, এবং অন্যান্য শিল্পে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের শিল্পগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে দেশের শিল্পায়নকে শক্তিশালী করবে।

  • বৈশিষ্ট্য:
    • প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হয়।
    • গ্যাসের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থিতিশীল শিল্প পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
  • চ্যালেঞ্জ:
    • গ্যাসের মজুত সীমিত এবং এর উপর নির্ভরশীলতা দেশের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
    • দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও আরও গ্যাস অনুসন্ধানের প্রয়োজন।

২. নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার

বাংলাদেশে সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি এবং জলবিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব। বিশেষত, সৌর শক্তির সম্ভাবনা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অধিক এবং এটি দেশের শিল্পায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সৌর শক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে, যা জ্বালানী খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

  • বৈশিষ্ট্য:
    • সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তির খরচ কম এবং তা পরিবেশবান্ধব।
    • দেশের জ্বালানী নির্ভরতা কমাতে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • চ্যালেঞ্জ:
    • নবায়নযোগ্য শক্তির পরিমাণ সীমিত এবং সেগুলি নির্ভরশীল পরিবেশগত পরিস্থিতির উপর।
    • উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ ছাড়া এই শক্তির সঠিক ব্যবহার কঠিন হতে পারে।

৩. কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ

বাংলাদেশের কয়লা খনি সম্পদ রয়েছে, যা ভারী শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। কয়লার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ইস্পাত শিল্প এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের জন্য জ্বালানী সরবরাহ করা যেতে পারে। তবে, কয়লার ব্যবহার পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি করতে পারে, তাই এর বিকল্প শক্তির উৎস অনুসন্ধান অপরিহার্য।

  • বৈশিষ্ট্য:
    • কয়লা সস্তা এবং দেশের শিল্পায়নের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানী সরবরাহ করতে সক্ষম।
    • এটি ভারী শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তি উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • চ্যালেঞ্জ:
    • কয়লার ব্যবহার পরিবেশ দূষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বাড়ায়।
    • কয়লা উত্তোলন এবং এর পরিবহনকে আরও পরিবেশবান্ধব করতে প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রয়োজন।

৪. বায়ু শক্তি ও জলবিদ্যুৎ

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ু শক্তির সম্ভাবনা রয়েছে, এবং দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এই উৎসগুলো পরিবেশবান্ধব এবং দেশের জ্বালানী চাহিদা পূরণে সহায়ক হতে পারে।

  • বৈশিষ্ট্য:
    • বায়ু শক্তি এবং জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব।
    • সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।
  • চ্যালেঞ্জ:
    • এই শক্তি উৎপাদন প্রযুক্তি এখনও উন্নয়নশীল পর্যায়ে এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন।
    • নির্দিষ্ট জায়গায় স্থান সংকুলান সমস্যা হতে পারে।

সারাংশ

বাংলাদেশে জ্বালানী সম্পদের মাধ্যমে শিল্পায়নের সম্ভাবনা অনেক। প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, এবং জলবিদ্যুৎ শক্তির সঠিক ব্যবহার শিল্পায়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তবে, এসব সম্পদের ব্যবহার নিয়ে চ্যালেঞ্জ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন যাতে সেগুলোর মাধ্যমে একটি টেকসই এবং শক্তিশালী শিল্প পরিবেশ গড়ে তোলা যায়।

Content added By
Promotion