স্বল্পবিত্ত সম্পদ বা বিত্তহীন ব্যক্তিদের পক্ষে সীমিত সামর্থ্য ব্যবহার করে এককভাবে বড় কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না। সমিতি গঠনের মাধ্যমে এরূপ সীমিত সামর্থ্যের মানুষ নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে পারে। তাই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষ পারস্পারিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতি গঠন করে ।
নিম্নে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির অবদান বর্ণনা করা হলো—
১. অর্থনৈতিক সুবিধা (Economic Advantages): সমবায় সংগঠন মূলত সদস্যদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে নানাভাবে কাজ করে। যেমন- কৃষক বা কম আয়ের সদস্যদের আর্থিক সুবিধা প্রদান, পণ্য বা সেবা উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বা বিভিন্ন প্রয়োজনে স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দান প্রভৃতি । ফলে সমিতির সদস্যরা মহাজনের দৌরাত্ম্য হতে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
২. সামাজিক সুবিধা (Social Advantages): সমবায় গঠনের মাধ্যমে বঞ্চিত জনগণ আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি সামাজিক সুবিধা ভোগ করে থাকে। সামাজিক সুবিধার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, গণতন্ত্রের চর্চা, অর্থনৈতিক শক্তির বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সদস্যদের মর্যাদা বৃদ্ধি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
৩. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন (Improving Standard of Living): সমবায় সমিতি সমাজের নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনদের সংগঠন। সমিতিতে যোগদানের মাধ্যমে সদস্যদের আয় বৃদ্ধি, ন্যায্য মূল্যে পণ্য প্রাপ্তি, ঋণ সহায়তা প্রাপ্তি কর্মসংস্থানের সুযোগ, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্ৰত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।
৪. কম ব্যবস্থাপনা ব্যয় (Low Management Cost) : সদস্যদের স্বেচ্ছামূলক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের ফলে ব্যবস্থাপনা খরচ বহুলাংশে হ্রাস পায়। ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণকারীদের কোনো প্রকার বেতন-ভাতা প্রদান করতে হয় না। তারা সমিতি পরিচালনায় খুব আগ্রহের সাথেই বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে ।
৫. বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধা (Advantage of Large scale Business) : সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় সমবায় সমিতি অধিক সঞ্চয় সংগ্রহ ও পুঁজি গঠন করতে পারে। যা দিয়ে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের বিভিন্ন সুবিধা যেমন- বৃহদায়তন ক্রয়, উৎপাদন ও বিপণন সুবিধা পাওয়া যায়। এতে সমিতির আয় বৃদ্ধি পায় ।
৬. সেবার উদ্দেশ্য (Service Motive) : এরূপ সংগঠন মূলত সদস্যদের সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি হয়, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে নয়। সদস্যদেরকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা ও ন্যায্যমূল্যে পণ্য বা সেবা প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়। সমিতির সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাব কাজ করে।
৭. করের অব্যাহতি (Tax Relief): সমবায় সমিতি গঠনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এরূপ সংগঠনের আয়ের ওপর কর ধার্য করা হয় না। ফলে সদস্যদের অধিক আর্থিক কল্যাণ নিশ্চিত করা যায় ।
৮. সরকারি সহায়তা (Government Help): দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সমবায় সংগঠনগুলো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। আর এ ভূমিকাকে আরো বেশি উৎসাহিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সমবায়ীদের বা সমিতিকে আর্থিক ও অনার্থিক বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয় ।
৯. মনোবল উন্নয়ন (Moral Development): সমবায় সমিতি কতিপয় আদর্শের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। যেমন-পারস্পরিক সহযোগিতা, আত্মসহযোগিতা, কঠোর পরিশ্রম, শিক্ষা, আত্মনির্ভরশীলতা, সঞ্চয় সংগ্রহ প্রভৃতি। এসব আদর্শ অনুশীলনের ফলে সদস্যদের মধ্যে যেকোনো কঠিন কাজ খুব সহজে সম্পন্ন করার মনোবল ও মানসিকতা তৈরি হয়।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত সুবিধার কারণে সমবায় সংগঠন সাধারণত বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক ও আকর্ষণীয় সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। মোটকথা, ব্যক্তিক, সামাজিক ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ।