ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র - ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান

বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জন সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে ব্যবসায় পরিবেশের উপর । পরিবেশের উপাদানগুলো মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। নিম্নে ব্যবসায় পরিবেশের উপাদানগুলো তুলে ধরা হলো: 

১। প্রাকৃতিক উপাদান (Natural element) : প্রকৃতিগত কারণে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। কোনো দেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, অবস্থান, আয়তন, জনসংখ্যা, নদ- নদী, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান ।
এ উপাদানসমূহের উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতির দ্বারা ব্যবসায় কার্যকলাপ প্রভাবিত হয়। সে কারণেই এসব উপাদানের অনুকূল ক্ষেত্রে ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-করখানা অধিক পরিমাণে গড়ে ওঠে। 

২। অর্থনৈতিক উপাদান (Economic element): “অর্থনৈতিক পরিবেশ কতকগুলো উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত যা ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা ও ব্যয়ের ধরনকে প্রভাবিত করে।” এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, মূলধন ইত্যাদি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর একটি দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। একটি দেশের জাতীয় আয়, ভোগের পরিমাণ, উৎপাদন ও বণ্টন, গড় মাথাপিছু আয় ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে কোনো দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ। কাজেই উপরিউক্ত উপাদানসমূহ অনকূল হলে ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সহজতর হয়।

৩। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান (Social and cultural element):

মানুষ সমাজবদ্ধ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। এ সমাজবদ্ধ মানুষের ধ্যান-ধারণা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, মনোভাব ও বিশ্বাস, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, ধর্মীয় চেতনা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে সামাজিক পরিবেশ। ব্যবসায়-বাণিজ্যের উপর এ সামাজিক উপাদানগুলোর প্রভাব অসীম। সামাজিক পরিবেশ সহজ, সুন্দর ও অনুকূল হলে ব্যবসায় বাণিজ্য তার কাম্য লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয় ।

৪। রাজনৈতিক ও আইনগত উপাদান (Political and legal element): একটি দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত উপাদানসমূহ ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কোনো দেশের সরকারি নিয়ম-কানুন, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুকূল হলে ব্যবসায়ও দ্রুতগতিতে বিকশিত হতে পারে। ঠিক তেমনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, বাণিজ্য নীতি, রাজস্ব নীতি, বিনিয়োগ নীতি ইত্যাদির আনুকূল্য এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

চিত্র: ব্যবসায় পরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তারকারি উপাদানসমূহ

৫। তথ্য ও প্রযুক্তিগত উপাদান (Information and technological element): বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনে এনেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, বর্তমান কম্পিউটারভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থাও তেমনি মানুষের জীবনধারাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের দ্বারা গবেষণা ও উদ্ভাবনের ফলে বিশ্ব পাচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কার, ক্রেতা ও ভোক্তারা পাচ্ছে নতুন নতুন পণ্য ও সেবাসামগ্রী। আবার তথ্য ব্যবস্থার অবাধ প্রবাহ ব্যবসায়-বাণিজ্য গতি সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ব্যতীত আজকের বিশ্বায়নের (Globalisation) যুগে ব্যবসায়-বাণিজ্যে অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রত্যাশা দুরাশামাত্র ।

৬। আন্তর্জাতিক উপাদান (International element): বর্তমান ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্র আজ আর কেবল সীমিত গণ্ডিতে আবদ্ধ নেই। ব্যবসায় আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী তার সকল ডালপালা প্রসারিত করতে সমর্থ হয়েছে। সুতরাং ব্যবসায়ের আন্তর্জাতিক দিককে অবহেলা করার সুযোগ নেই । একটি দেশের সাথে অপর দেশের সম্পর্ক, বিশেষ করে উন্নত দেশের সাথে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশের সম্পর্ক ব্যবসায়কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক চুক্তি, বিশ্ব বাণিজ্য নীতি ও বিশ্ববাজার ব্যবস্থা, প্রতিবেশি দেশসমূহের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি যেকোনো দেশের ব্যবসায়- বাণিজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায় পরিবেশের উপরোক্ত প্রতিটি উপাদানই ব্যবসায়কে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করছে।

Content added By
Promotion