সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্য

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK
66
66

সমবায় একটি আইন সৃষ্ট, অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ব্যবসায় সংগঠন। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পেশাজীবীরা উদ্দেশ্য অর্জনে উৎসাহ বা শক্তি পায়। এটি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি সংগঠন। বাংলাদেশে সমবায় আইন-২০০১ অনুসারে সমবায় সংগঠন গঠিত ও পরিচালিত হয়। নিম্নে সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো—

  • দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির কতিপয় লোক স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এরূপ সংগঠন গঠন করতে পারে। সমবায় আইন অনুসারে নিবন্ধকের নিকট এ ধরনের সমবায় প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করতে হয়।
  • শুধুমাত্র স্বেচ্ছাকৃতভাবে কতিপয় ব্যক্তি সমবায়ের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এধরনের প্রতিষ্ঠান গঠন করে, কোনো রকম বাধ্যবাধকতার স্থান এখানে নেই ।
  • ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ধনীদের দ্বারা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিক নিষ্পেষণের শিকার হয়। সমবায় শোষক শ্রেণির হাত থেকে শোষিতদের আত্মরক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ।
  • সমবায় সমিতির প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা বা তদুর্ধ মূল্যের হতে পারে।
  • ব্যবসায়ের কোনো বিশেষ অংশে অর্থাৎ উৎপাদন, বণ্টন ইত্যাদিতে জড়িত হয়ে সম্মিলিতভাবে কার্য পরিচালনার মাধ্যমে সদস্যদের আর্থিক কল্যাণ সাধনই এরূপ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য । মুনাফা অর্জন এর মূল উদ্দেশ্য নয় । 
  • সমবায় আইনানুসারে সমবায় সমিতি অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হয়।
  • সমবায়ের অর্জিত মুনাফার সবটুকু সদস্যদের মধ্যে বণ্টন হয় না। বাধ্যতামূলকভাবে এর ন্যূনতম ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৫% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করে বাকি অংশ সাধারণ সভার সিদ্ধান্তক্রমে শেয়ার গ্রহীতাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। [৩৪ (১) ধারা]
  • বাংলাদেশে প্রচলিত ২০০১ সালের সমবায় সমিতি আইনের ৮(১ক) ধারা মোতাবেক প্রাথমিক সমবায় সমিতি গঠনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ জন ব্যক্তি সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও জাতীয় সমিতির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ টি সমবায় সমিতি সদস্য থাকতে হয় । সদস্য সংখ্যার সর্বোচ্চ সীমা আইনে বলা হয়নি । 
  • সমবায় সমিতি আইন-সৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান। এর পৃথক আইনগত সত্তা ও পরিচিতি আছে। এটি নিজ নামে পরিচালিত । 
  • সমবায় সমিতির সদস্যদের নিকট থেকে মাসিক সঞ্চয়ের মাধ্যমে অথবা সদস্যদের মধ্যে শেয়ার বিক্রয় করে সমবায়ের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করা হয় ।
  • সমবায় সমিতিতে প্রত্যেক সদস্যদের দায় তার ক্রয়কৃত শেয়ার মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে । 
  • ২০০১ সনের সমবায় আইনের ১৫(২ক) ধারা অনুযায়ী একজন সদস্য সমিতির মোট মূলধনের এক-পঞ্চমাংশের (১/৫) বেশি শেয়ার ক্রয় করতে পারে না। কেননা বেশি শেয়ার ক্রয় করলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, সমবায় সমিতি আইনের অধীন গঠিত, পরিচালিত, পৃথক সত্তা ও সীমিত দায় বিশিষ্ট একটি স্বেচ্ছা প্রণোদিত ব্যবসায় সংগঠন। এর সদস্যরা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুসরণে পরিচালিত হয় যার মূল লক্ষ্য হলো এর সদস্যদের আর্থিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।

Content added By
Promotion