যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তবায়ন যে কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না বা নেয়া যায় না। আবার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও যথাসময়ে ও যথনিয়মে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরবর্তীতে ঐ সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা থাকে না । ক্ষেত্রবিশেষে তা বাস্তবায়নকালে নতুন নতুন বিপত্তি দেখা দেয় । তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নকালে যে সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে- তা কিভাবে সমাধা করা যায় সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী পক্ষের পূর্বধারণা থাকা আবশ্যক । নিম্নে এরূপ সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায়সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ (Collecting necessary informations): সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানের ভিতর ও বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা গেলে তার ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেমনি সহজ হয় তেমনি বাস্তবায়নকালে যে সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে তাও আগাম অনুধাবন করা যায় । ফলে সমস্যাগুলো সমাধানে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব হয় ।
২. সঠিক বিকল্প নির্বাচন (Selecting proper alternatives): সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সঠিক বিকল্পই সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচ্য। তাই কার্যকর বিকল্পগুলো যদি সঠিকভাবে দাঁড় করানো যায় এবং বাস্তবতা বিবেচনায় সেগুলো যথার্থভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় তবে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়ে থাকে । এভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া গেলে তার বাস্তবায়নও সহজ হয় । তাই কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে সঠিক বিকল্প নির্বাচন করা উচিত ।
৩. যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Taking decision in time): সিদ্ধান্তের কার্যকর বাস্তবায়ন যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর নির্ভরশীল । সময় পরিবর্তনের সাথে অবস্থা বদলায় । যে পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার ছিল বিলম্ব হলে সেই পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে। ফলে সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে পড়ে। ধরা যাক, প্রতিষ্ঠানের একটা মেশিনে কিছুটা ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দ্রুত মেরামত প্রয়োজন । সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ায় মেরামতে যেয়ে দেখা গেল মেশিনটি আর মেরামতের অবস্থায় নেই, বদলাতে হবে ।
৪. প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ গ্রহণ (Consulting with concerned persons if necessary): যথার্থ সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা উত্তম ফল দেয় । সিদ্ধান্ত যদি কোনো পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয় তবে তাদের সাথে আলোচনা করলে ক্ষেত্রবিশেষে অনেক ভালো ফল পাওয়া সম্ভব । সিদ্ধান্ত যারা বাস্তবায়ন করবে তাদের সাথে পরামর্শ করলে তাতে যেমনি সিদ্ধান্তের মান বাড়ে সেই সাথে বাস্তবায়নে তাদের কার্যকর সহযোগিতা লাভও সম্ভব হয়ে থাকে ।
৫. যথাসময়ে সিদ্ধান্ত অবহিতকরণ (Informing decision in time): যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেই চলে না যারা ঐ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে তাদেরকে যথাসময়ে ও যথানিয়মে সিদ্ধান্ত অবহিত করাও আবশ্যক । অনেক সময় দেখা যায় তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা নিচের পর্যায়ে ঠিক সময় পৌছুলো কি না সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয় না । অনেক সময় সিদ্ধান্ত যে প্রক্রিয়ায় জানালে উত্তম ফললাভ সম্ভব তা না করে শুধুমাত্র একটা সার্কুলার দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয় । ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয় ।
৬. প্রয়োজনীয় সহায়তা দান (Providing necessary assistance): সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকালে বাস্তবায়নকারী পক্ষের বিভিন্ন উপকরণগত সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে । তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে প্রয়োজনীয় উপকরণগত সহায়তা কখন, কতটা লাগবে এবং তা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে তাও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পক্ষকে ভাবতে হয় এবং সে অনুযায়ী তা সরবরাহের প্রয়োজন পড়ে । বাস্তবায়নকালে সংশ্লিষ্টদের যদি প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি, অর্থ, মালামাল ইত্যাদির জন্য ঊর্ধ্বতনের মুখ চেয়ে বসে থাকতে হয় তবে নিশ্চিতভাবেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না ।
৭. কার্যকর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ (Effective supervision and control): সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইলে কার্যকর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ । সিদ্ধান্ত জানানোর পর উর্ধ্বতন যদি তার বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজ-খবর না নেয়, বাস্তবায়নকালে কোনো ভুল হচ্ছে কি না তা না দেখে- তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টায় ঘাটতি লক্ষ করা যায়। যে সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ সেখানে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়কাল নির্ধারণপূর্বক প্রতিটা পর্যায় শেষে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা উচিত।