একটা দেশের জন্য তার সংবিধানের আইনগত মর্যাদা যেমন একটা কোম্পানির জন্য তার সংঘস্মারকের মর্যাদাও ঠিক অনুরূপ বললেও অত্যুক্তি হয় না। সংঘস্মারকের গুরুত্ব বা আইনগত তাৎপর্যকে নিম্নোক্তভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে :
১. ক্ষমতার নির্দেশ (Indication of power): স্মারকলিপি কোম্পানির কার্যক্ষমতার সীমা নির্দেশ করে। এরূপ দলিলের উদ্দেশ্য ধারায় বর্ণিত কাজ বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কাজ কোম্পানি করতে পারে। এর বাইরে কোনো কাজ করা হলে তা ক্ষমতা বহির্ভুত কাজ বিবেচিত হয়।
২. সম্পর্ক নির্দেশ (Indication of relationship): সংঘস্মারকের শর্তগুলি দ্বারা কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে একটি চুক্তি বা আইনগত বন্ধনের সৃষ্টি হয় । অর্থাৎ কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যকার সম্পর্ক এর দ্বারা নির্ণীত হয়ে থাকে । কোম্পানিতে তাদের অধিকার এবং দায়ও এর মাধ্যমে নিরূপিত হয় ।
৩. যথানিয়মে পরিবর্তন আবশ্যক (Necessary to change at law): আইনে উল্লেখিত কারণ ব্যতিরেকে এবং আইন মাফিক আনুষ্ঠানিকতা পালন না করে শেয়ারহোল্ডারদের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তের দ্বারা সংঘস্মারক পরিবর্তন করা যায় না । অর্থাৎ এরূপ দলিল যথানিয়মে পরিবর্তন আবশ্যক ।
৪. ক্ষমতা বহির্ভূত কাজের দায় (Liability for ultra vires activites): কোম্পানির পরিচালকরা যদি স্মারকলিপির ক্ষমতা বহির্ভুত কোনো কার্য করে তবে তার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে তারা কোম্পানির বা তৃতীয় পক্ষের নিকট দায়ী থাকে।
৫. সংঘস্মারকের অগ্রগণ্যতা (Primacy of memorandum of asociation): সংঘস্মারক ও সংঘবিধির মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে শেয়ারহোল্ডাররা সংঘবিধি সংশোধন করে উক্ত কার্য অনুমোদন করতে পারে। কিন্তু সংঘস্মারক বহাল থাকে। অর্থাৎ এরূপ দলিল সবসময়ই মুখ্য বিবেচিত হয়।
৬. প্রকাশ্য দলিল (Exressed document): সংঘস্মারক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ্য দলিল। সুতরাং কোম্পানির সাথে লেনদেনে সকল পক্ষ তা অবগত আছে বলে ধরা হয়। এরূপ দলিল সম্পর্কে জানা ছিল না এই অজুহাত কখনই আদালতে গ্রাহ্য হয় না ।
উপসংহারে বলা যায় যে, স্মারকলিপি কোম্পানির মুখ্য দলিল, সনদ বা সংবিধান। প্রত্যেক কোম্পানির জন্য এ ধরণের দলিল তৈরি অপরিহার্য। প্রথম পরিচালক ও উদ্যোক্তাদের নাম এবং স্বাক্ষর এতে থাকায় তা কোম্পানির ঐতিহ্যের প্রকাশ করে ।
কোম্পানির স্মারকলিপি পরিবর্তন বেশ আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ ও জটিল কাজ। স্মারকলিপির প্রত্যেকটি বিষয়বস্তু পরিবর্তনের ভিন্ন নিয়ম কোম্পানি আইনে বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলো—
১. নাম ধারার পরিবর্তন (Change of name clause): এই ধারার পরিবর্তনের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ সভায় বিশেষ প্রস্তাব পাস করতে হয় এবং এ বিষয়ে সরকারের অনুমতি সংগ্রহ করতে হয়। অতঃপর বিশেষ প্রস্তাব পাসের ও সরকারের অনুমতির অনুলিপি কোম্পানি নিবন্ধকের নিকট দাখিল করতে হয়।
আইনগত সমস্যা দেখা না দিলে নিবন্ধক, বইতে পুরাতন নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করেন এবং এ মর্মে সার্টিফিকেট প্রদান করেন । অতঃপর নাম পরিবর্তন কাজ সমাপ্ত হয় ।
২. উদ্দেশ্য ধারার পরিবর্তন (Change of objects clause): এই ধারার পরিবর্তনে শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ সভায় এই মর্মে বিশেষ প্রস্তাব পাস করে আদালতের অনুমোদন লাভ করতে হয়। আদালতের অনুমোদন লাভের পর নব্বই দিনের মধ্যে সংশোধিত স্মারকলিপির মুদ্রিত কপি ও অনুমোদন লাভের প্রতিলিপি নিবন্ধকের নিকট দাখিল করতে হয়। নিবন্ধক সংশোধিত স্মারকলিপি অনুমোদন করলে উদ্দেশ্য ধারার পরিবর্তন সম্পূর্ণ হয়।
অবশ্য নিম্নলিখিত যে কোনো একটি কারণেই শুধুমাত্র এই ধারায় পরিবর্তন করা যায়—
ক. অধিকতর ব্যয় সংকোচ ও ব্যবসায় পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য;
খ. নতুন অথবা উন্নততর উপায়ে কোম্পানির প্রধান উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য;
গ. স্থানীয় কার্যক্ষেত্র পরিবর্তন করার জন্য:
ঘ. এমন কোনো নতুন ব্যবসায় আরম্ভ করার জন্য যা কোম্পানির বর্তমান ব্যবসায়ের সাথে লাভজনকভাবে যুক্ত করা যায়;
ঙ. স্মারকলিপিতে উল্লেখিত কোনো উদ্দেশ্য সংকোচন বা পরিত্যাগ করার জন্য;
চ. কোম্পানির যাবতীয় ব্যবসায় অথবা ব্যবসায়ের অংশবিশেষ অথবা একাধিক ব্যবসায়ের কোনো একটি বিক্রয় কিংবা হস্তান্তর করার জন্য;
ছ. অন্য কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তিবর্গের সাথে একত্রীভূত হওয়ার জন্য ।
৩. অবস্থান ও ঠিকানা ধারার পরিবর্তন (Change of situation and address clause) : এ ক্ষেত্রেও উদ্দেশ্য ধারা পরিবর্তনের অনুরূপ সাধারণ সভায় বিশেষ প্রস্তাব পাস এবং আদালতের অনুমোদন লাভ করতে হয় এবং তা নিবন্ধককে জানাতে হয়। উদ্দেশ্য ধারার পরিবর্তনের নায় যেকোনো একটি কারণ এরূপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তবে একই শহরের মধ্যে বা স্থানীয় এলাকার মধ্যে ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঠিকানা স্থানান্তরের ২৮ দিনের মধ্যে এই সম্পর্কে কোম্পানি নিবন্ধককে বিজ্ঞপ্তি দিলেই চলে ।
৪. মূলধন ধারার পরিবর্তন (Change of capital clause): কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলীতে মূলধন পরিবর্তন সম্পর্কে বিধান থাকলে কোম্পানির মূলধন হ্রাস বা বৃদ্ধি করা যায়। মূলধন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাধারণ সভায় সাধারণ প্রস্তাব পাস করলেই চলে। কিন্তু মূলধনের পরিমাণ হ্রাস করতে হলে শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ সভায় বিশেষ প্রস্তাব পাস করে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। অতঃপর কোম্পানির স্মারকলিপিতে নতুন মূলধনের পরিমাণ উল্লেখ করে প্রস্তাব গ্রহণের পর ১৫ দিনের মধ্যে মূলধন পরিবর্তনের ঘোষণা নিবন্ধকের নিকট দাখিল করতে হয়।
পরিমেল নিয়মাবলি দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে শেয়ার মূল্য দ্বারা দায় সীমাবদ্ধ কোনো কোম্পানি নিম্নলিখিত যেকোনো উপায়ে মূলধন পরিবর্তন বা হ্রাস বৃদ্ধি করতে পারে—
ক. নতুন শেয়ার বিলি;
খ. বর্তমান শেয়ারের মূল্যমান বৃদ্ধি;
গ. শেয়ারগুলোকে পুনরায় বিভক্ত করে অল্প মূল্যের শেয়ারে পরিবর্তনকরণ;
ঘ. বণ্টন করা হয়নি বা বাতিল করা হয়েছে এমন শেয়ার হিসাব হতে বাদ দিয়ে শেয়ার মূলধন হ্রাস ।