সাধারণভাবে দুটি আলাদা আলোক উৎসকে সুসঙ্গত উৎস হিসেবে গণ্য করা যায় না, কেননা যে কোনো একটি উৎসের পরমাণু কর্তৃক নিঃসৃত আলোক তরঙ্গ অন্য উৎসের ওপর কোনোভাবেই নির্ভর করে না। তাই দুটি ভিন্ন উৎস থেকে নির্গত দুটি আলাদা আলোক তরঙ্গ একটি নির্দিষ্ট দশা সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না। আলোর ব্যতিচার সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষায় সাধারণত একটি উৎস থেকে নির্গত আলোকে দুটি অংশে এমনভাবে বিভক্ত করা হয় যেন প্রতিটি বিভক্ত অংশকেই একটি স্বতন্ত্র উৎস হিসেবে গণ্য করা যায়। ফলে এই দুটি বিভক্ত অংশকে দুটি সুসঙ্গত উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আলোক তরঙ্গকে দুটি সরু পথে বা চিরের (slit) মধ্য দিয়ে যেতে দিয়ে একটি উৎস থেকে দুটি সুসঙ্গত উৎস তৈরি করা যায়।
কোনো স্থানে দুই বা ততোধিক আলোক তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে আলোর তীব্রতা তথা আলোক শক্তির পরিবর্তনের ঘটনাকে আলোর ব্যতিচার বলা হয়। দুটি উৎস থেকে নির্গত অভিন্ন দুটি তরঙ্গ (অর্থাৎ একই তরঙ্গদৈর্ঘ্য তথা কম্পাঙ্ক ও বিস্তারবিশিষ্ট দুটি তরঙ্গ) কোনো বিন্দুতে একে অপরের ওপর আপতিত হলে ঐ বিন্দুতে লব্ধি তীব্রতা যে কোনো একটি তরঙ্গের তীব্রতার চেয়ে বেশি বা কম হতে পারে। এই ঘটনাই তরঙ্গের ব্যতিচার । যখন লব্ধি তীব্রতা আলাদা আলাদা তরঙ্গের তীব্রতার চেয়ে বেশি হয় তখন তাকে গঠনমূলক ব্যতিচার আর যদি লব্ধি তীব্রতা আলাদা আলাদা তীব্রতার চেয়ে কম হয় তাকে ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার বলে ।
ধরা যাক, একই বিস্তার ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য তথা কম্পাঙ্কবিশিষ্ট দুটি আলোক তরঙ্গ একই রেখা বরাবর কোনো স্থানে অগ্রসর হচ্ছে। কোনো বিন্দুতে তরঙ্গদ্বয় একই দশায় পৌঁছালে (অর্থাৎ ঐ বিন্দুতে উভয় তরঙ্গের তরঙ্গ চূড়া বা তরঙ্গ খাঁজ আপতিত হলে) ঐ বিন্দুতে লব্ধি বিস্তার তরঙ্গদ্বয়ের বিস্তারের সমষ্টির সমান হবে। অপরপক্ষে, কোনো বিন্দুতে তরঙ্গদ্বয় যদি বিপরীত দশায় মিলিত হয় (অর্থাৎ ঐ বিন্দুতে একটি তরঙ্গের তরঙ্গ চূড়া অপর তরঙ্গের তরঙ্গ খাঁজের সাথে মিলিত হয়) তবে ঐ বিন্দুর লব্ধি বিস্তার শূন্য হবে। যেহেতু আলোর তীব্রতা বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক সেহেতু প্রথমোক্ত বিন্দুতে তীব্রতার মান বেড়ে যাবে এবং শেষোক্ত বিন্দুতে এই মান শূন্য হবে। এর ফলে ঐ স্থানের কোনো তলে পরপর আলোকোজ্জ্বল ও অন্ধকার অবস্থার সৃষ্টি হয় অর্থাৎ ব্যতিচার হয়।
১। আলোর উৎস দুটি সুসঙ্গত হতে হবে।
২। যে দুটি তরঙ্গ ব্যতিচার ঘটাবে তাদের বিস্তার সমান বা প্রায় সমান হতে হবে।
৩। উৎসগুলো খুব কাছাকাছি অবস্থিত হতে হবে।
৪। উৎসগুলো খুব সূক্ষ্ম হতে হবে।
কোনো তলের বা পর্দার ওপর আলোর ব্যতিচার ঘটানো হলে সেখানে অনেকগুলো পরপর সমান্তরাল উজ্জ্বল আলোক রেখা বা পট্টি (band) এবং অন্ধকার রেখা বা পট্টি পাওয়া যায় । এই আলোকিত ও অন্ধকার ডোরাগুলোকে (fringe) ব্যতিচার ঝালর বলে ।
আরও দেখুন...