সীভনল কোন কলাগুচ্ছের অংশ

Created: 2 years ago | Updated: 7 months ago
Updated: 7 months ago

পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ (Vascular bundle): 
উদ্ভিদদেহে যে টিস্যু খাদ্যের কাঁচামাল (পানি, খনিজ লবণ ইত্যাদি) ও তৈরিকৃত খাদ্য পরিবহন করে থাকে তাকে পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ বলে। জাইলেম টিস্যু মূল হতে পাতা ও অন্যান্য সবুজ অংশে পানি ও খনিজ লবণ পরিবহন করে, আবার পাতা ও অন্যান্য সবুজ অংশে প্রস্তুতকৃত খাদ্যদ্রব্য উদ্ভিদদেহের অন্যান্য সজীব অংশে পরিবহন করে ফ্লোয়েম টিস্যু। তাই জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুর গুচ্ছকেই একত্রে পরিবহন টিস্যু (Vascular bundle) বলে।


(১) সংযুক্ত (Conjoint) : জাইলেম এবং ফ্লোয়েম একই ব্যাসার্ধের উপর একই গুচ্ছে যুক্তভাবে অবস্থান করলে তাকে সংযুক্ত ভাস্কুলার বান্ডল বলে। ফ্লোয়েমের সংখ্যা ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে সংযুক্ত ভাস্কুলার বান্ডলকে আবার দুইভাগে ভাগ করা হয়; যথা : (i) সমপার্শ্বীয় (Collateral) এবং (ii) সমদ্বিপার্শ্বীয় (Bicollateral)।

ক.সমপার্শ্বীয় (Collateral) : এক খণ্ড ফ্লোয়েম টিস্যু এবং এক খণ্ড জাইলেম টিস্যু একই ব্যাসার্ধে পাশাপাশি (ফ্লোয়েম পরিধির তথা বাইরের দিকে এবং জাইলেম কেন্দ্রের তথা ভেতরের দিকে) অবস্থান করলে তাকে সমপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে। পুষ্পক উদ্ভিদের কাণ্ডে এ ধরনের বান্ডল দেখা যায়। ক্যাম্বিয়ামের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করে এই ভাস্কুলার বান্ডলকে আবার নিম্নলিখিত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

• মুক্ত সমপার্শ্বীয় (Open collateral) : একই ব্যাসার্ধে পাশাপাশি অবস্থিত জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝখানে ক্যাম্বিয়াম (জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝখানে কয়েক স্তরবিশিষ্ট আয়তাকার ভাজক কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুকে ক্যাম্বিয়াম বলে) থাকলে তাকে মুক্ত সমপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে; যেমন— দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ (কুমড়া জাতীয় উদ্ভিদের কান্ড ব্যাতীত) ও নগ্নবীজী উদ্ভিদের কাণ্ডের ভাস্কুলার বান্ডল।


• বদ্ধ সমপার্শ্বীয় (Closed collateral) : সমপার্শ্বীয় বান্ডলের জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মধ্যখানে ক্যাম্বিয়াম না থাকলে তাকে বন্ধ সমপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে; যেমন- একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের ভাস্কুলার বান্ডল।


খ. সমদ্বিপার্শ্বীয় (Bicollateral) : যে ভাস্কুলার বান্ডলের মাঝখানে জাইলেম এবং তার উপর ও নিচ উভয় পাশে দুই খন্ড ফ্লোয়েম টিস্যু থাকে তাকে সমদ্বিপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে। সমদ্বিপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডলে জাইলেমের উভয় পাশেই ক্যাম্বিয়াম থাকে, তাই সমদ্বিপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল সব সময়ই মুক্ত। জাইলেমের বাইরের দিকের (পরিধির দিকের) ক্লোয়েমকে বাহিঃফ্লোয়েম এবং ভেতরের দিকের (কেন্দ্রের দিকের) ফ্লোয়েমকে অস্তঃফ্লোয়েম বলে। লাউ, কুমড়া, শশা ইত্যাদি উদ্ভিদের কাণ্ডে সমদ্বিপার্শ্বীয় ভাস্কুলার বান্ডল থাকে।


(২) অরীয় (Radial) : যে  ভাস্কুলার বান্ডলে জাইলেম এবং ফ্লোয়েম একত্রে একটি বান্ডলের সৃষ্টি না করে পৃথক পৃথকভাবে ভিন্ন ভিন্ন বান্ডলের সৃষ্টি করে এবং পাশাপাশি অবস্থান করে তাকে অরীয় ভাস্কুলার বান্ডল বলে। পুষ্পক উদ্ভিদের মূলে এ ধরনের ভাস্কুলার বান্ডল দেখা যায়। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের মুলে জাইলেম অথবা ফ্লোয়েম বান্ডল-এর সংখ্যা সাধারণত পাঁচ এর কম থাকে কিন্তু একবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলে এদের প্রত্যেকের সংখ্যা সাধারণত ছয়-এর অধিক।


(৩) কেন্দ্রিক (Concentrie) : জাইলেম অথবা ফ্লোয়েম টিস্যুর যে কোনো একটি কেন্দ্রে থাকে এবং অন্যটি তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখলে তাকে কেন্দ্রিক ভাস্কুলার বান্ডল বলে। কেন্দ্রিক ভাঙ্গুলার বান্ডল সব সময়ই বদ্ধ হয় অর্থাৎ জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মধ্যখানে কোনো ক্যাম্বিয়াম থাকে না। সাধারণত টেরিডোফাইটে এ ধরনের বান্ডল অধিক দেখা যায়। জাইলেম ও ফ্লোয়েমের তুলনামূলক অবস্থানের উপর নির্ভর করে কেন্দ্রিক ভাস্কুলার বান্ডলকে নিম্নলিখিত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে; যথা :

(i) হ্যাড্রোসেন্ট্রিক বা জাইলেম কেন্দ্রিক (Hadrocentric) : এ ক্ষেত্রে জাইলেম কেন্দ্রে থাকে এবং ফ্লোয়েম তাকে সম্পূর্ণরূপে ঘিরে রাখে; যেমন- Pteris, Lycopodium, selaginella ইত্যাদি উদ্ভিদের ভাস্কুলার বান্ডল।


(ii) লেপ্টোসেন্ট্রিক বা ফ্লোয়েম কেন্দ্রিক (Leptocentric) : এ ক্ষেত্রে ফ্লোয়েম কেন্দ্রে থাকে এবং জাইলেম তাকে ঘিরে রাখে; যেমন- Dracaena, Yucca উদ্ভিদের ভাস্কুলার বান্ডল।


ভাস্কুলার বান্ডল-এর কাজ (The function of the vascular bundle):
ভাস্কুলার বান্ডল তথা পরিবহন টিস্যুতন্ত্র নিম্নলিখিত কাজ করে থাকে, যথা :-

(i) জাইলেম টিস্যু উদ্ভিদের মূল হতে কাণ্ড ও পাতায় পানি এবং দ্রবীভূত খনিজ লবণ আয়ন হিসেবে পরিবহন করা

(ii) ফ্লোয়েম টিস্যু পাতায় প্রস্তুতকৃত খাদ্য উদ্ভিদের মূল হতে কচি মুকুল পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করা এবং

(iii) জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যু সম্মিলিতভাবে উদ্ভিদকে দৃঢ়তা এবং যান্ত্রিক ফ্লোয়েম টিস্যু শক্তি প্রদান করা।

একবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলের প্রস্থচ্ছেদঃ
একবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলের প্রস্থচ্ছেদ করে অণুবীক্ষণযন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করলে বাইরে থেকে ভেতরের দিকে টিস্যুগুলো নিম্নলিখিতভাবে বিন্যস্ত থাকতে দেখা যাবে।

১. মূলত্বক বা এপিব্লেমা (Epiblema) : একস্তর বিশিষ্ট প্যারেনকাইমা কোষ সমন্বয়ে এটি গঠিত। এর কতকগুলো কোষ লম্বা হয়ে এককোষী মূলরোম গঠন করেছে।

২. কর্টেক্স (Cortex) : মূলত্বকের নিচ থেকে শুরু করে অন্তঃত্বক পর্যন্ত বিস্তৃত বহুস্তরযুক্ত গোলাকার বা ডিম্বাকার প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে এটি গঠিত। এতে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে।

৩. অন্তঃত্বক (Endodermis) : কর্টেক্সের নিচে V চক্রাকারে অবস্থিত পিপাকৃতির একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে এ স্তর গঠিত।

৪. পরিচক্র বা পেরিসাইকল (Pericycle) : অন্তঃত্বকের ঠিক নিচে একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে এটি গঠিত।

৫. ভাস্কুলার বান্ডল ( Vascular bundle) : ভাস্কুলার বান্ডল বা পরিবহন টিস্যুগুচ্ছের সংখ্যা ৬-এর অধিক প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং মেটাজাইলেম ভেতরের দিকে অবস্থান করে। জাইলেমগুচ্ছের সংখ্যা ফ্লোয়েম গুচ্ছের সংখ্যার সমান এবং এরা ব্যাসার্ধের উপর পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে।

৬. মজ্জা রশ্মি (Medullary) : জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুর মধ্যবর্তী প্যারেনকাইমা কোষের স্তরকে মজ্জা রশ্মি বলে।

৭. মজ্জা (Pith) : কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বৃহৎ মজ্জা প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষ সমন্বয়ে গঠিত।

একবীজপত্রী মূলের অন্তর্গঠনগত শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যঃ

১. কিউটিকল-বিহীন মূলত্বকে এককোষী মূলরোম থাকে।

২. কর্টেক্স বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত নয়

৩. পেরিসাইকল একস্তর-বিশিষ্ট।

৪. ভাস্কুলার বান্ডল অরীয়।

৫. প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং মেটাজাইলেম কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত।

৬. জাইলেম এবং ফ্লোয়েম গুচ্ছের সংখ্যা ৬-এর অধিক (দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলে এই সংখ্যা সাধারণত ২-৪টি)।

৭. মজ্জা বেশ বড় ।

৮. অধঃত্বক নেই।একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের অন্তর্গঠন

একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের প্রস্থচ্ছেদ অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করলে পরিধি থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যে টিস্যুবিন্যাস দেখা যায় তা নিম্নরূপঃ

১. এপিডার্মিস বা ত্বক : মাত্র একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে ত্বক গঠিত। ত্বকের কোষগুলোর বাইরের প্রাচীরে কিউটিনের উপস্থিতির কারণেই ত্বকের বাইরে স্কুল কিউটিকল বিদ্যমান। ত্বকে আন্তঃকোষীয় অবকাশ ও কাণ্ডরোম অনুপস্থিত । কচি কান্ডের ত্বকে পত্ররন্ধ্র থাকে। তবে বাণ্ডল বয়স বেশি হলে রন্ধ্র নাও থাকতে পারে।

২. হাইপোডার্মিস (Hypodermis বা অধঃত্বক : ত্বকের নিচে কয়েক সারি স্কুল প্রাচীর বিশিষ্ট স্ক্লেরেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত অঞ্চলটির নাম অধঃত্বক। এ স্তরে কোন আন্তঃকোষীয় অবকাশ থাকে না।

৩. ভিত্তি টিস্যু (Ground tissue) : অধঃত্বকের নিচ থেকে কাণ্ডের কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত পাতলা প্রাচীর বিশিষ্ট প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত অঞ্চলটির নাম গ্রাউন্ড টিস্যু। এ টিস্যুতে আন্তঃকোষীয় অবকাশ বিদ্যমান।

৪. ভাস্কুলার বান্ডল : ভাস্কুলার বান্ডল এর সংখ্যা অনেক এবং এরা ভিত্তিতে টিস্যুতে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়ানো। বাইরের দিকের ভাস্কুলার বান্ডলগুলো আকারে ছোট এবং তাদের সংখ্যা বেশি। ভেতরের দিকের ভাস্কুলার বান্ডলগুলো আকারে বড় এবং তাদের সংখ্যা কম। ভাস্কুলার বান্ডল সংযুক্ত, সমপার্শ্বীয় ও বদ্ধ। এখানে কোন ক্যাম্বিয়াম থাকে না। প্রতিটি ভাস্কুলার বান্ডল এর চারপাশে স্কেরেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত একটি আবরণী আছে । এ আবরণীটির নাম বান্ডলআবরণী (bundle sheath)।

ভাস্কুলার বান্ডল এর উপাদানগুলো নিম্নরূপ-

ক. জাইলেম : ট্রাকিড, জাইলেম প্যারেনকাইমা নিয়ে জাইলেম টিস্যু গঠিত। জাইলেম
এন্ডার্ক অর্থাৎ মেটাজাইলেম পরিধির দিকে ও প্রোটোজাইলেম কেন্দ্রের দিকে থাকে। মেটাজাইলেম ও প্রোটোজাইলেম এর অবস্থান অনেকটা Y অথবা V অক্ষরের মত। পরিণত বান্ডল এর সবচেয়ে নিচের প্রোটোজাইলেম নষ্ট হয়ে একটি পত্রীর কাঙ্গেহবরের সৃষ্টি করে। গহ্বরটির নাম লাইসিজেনাস গহ্বর। মেটাজাইলেম এর প্রাচীরের স্থুলীকরণ কৃপাঙ্কিত; কিন্তু প্রোটোজাইলেম এর প্রাচীরের বলয়াকার অথবা স্থূলীকরণ সুর্পিলাকার।

খ. ফ্লোয়েম : সিভনল ও সঙ্গী কোষের সমন্বয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত।  এতে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা থাকেনা ফ্লোয়েম টিস্যুর অবস্থান মেটাজাইলেম এর দুই বাহুর মাঝখানে।

একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের অন্তর্গঠনগত শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যঃ
নিম্নবর্ণিত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থেকে একবীজপত্রী কান্ডের প্রস্থচ্ছেদকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।

১.কান্ডরোম সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।

২. দুএকটি ব্যতিক্রম ছাড়া হাইপোডার্মিস সাধারণত স্ক্লেরেনকাইমা দিয়ে গঠিত।

৩. ভাস্কুলার বান্ডল সংযুক্ত, সমপার্শ্বীয় ও বদ্ধ (জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝে ক্যাম্বিয়াম নেই)।

৪. ভাস্কুলার বান্ডলগুলো ভিত্তি টিস্যুতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো ।

৫. পরিধির দিকের ভাস্কুলার বান্ডলগুলো আকারে ছোট এবং কেন্দ্রের দিকের ভাস্কুলার বান্ডল আকারে বড়।

৬. জাইলেম Y অথবা V আকৃতির। 

Content added By
Promotion