জীবদেহ গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। জীবদেহে প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১. দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন- শ্বসন, রেচন, ইত্যাদি সম্পন্ন করার জন্য দেহের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা পূরণ করার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।
২. জীবদেহের এনজাইম জৈব-অনুঘটকরূপে কাজ করে। এনজাইম প্রোটিন দিয়ে তৈরি। দেহের রাসায়নিক ক্রিয়া অর্থাৎ বিভিন্ন জটিল যৌগের সংশ্লেষ কিংবা জটিল যৌগের ভাঙনের জন্য এনজাইম। উৎসেচক আবশ্যক। অর্থাৎ প্রোটিন পরোক্ষভাবে জীবদেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. জীবদেহের হরমোন রাসায়নিক দূত (chemical messenger) হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করেনা হরমোন, যেমন- ইনসুলিন, সোমাটোট্রফিক হরমোন (STH), লিউটিফিন হরমোন (LTH) ইত্যাদি মূল
প্রোটিনে গঠিত।
৪. দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি এক ধরনের প্রোটিন।
৫. রক্তের হিমোগ্লোবিন একধরনের যুগ্ম প্রোটিন। এটি গ্লোবিন নামক প্রোটিন ও হিম নামক রঞ্জক নিয়ে গঠিত হয়।
৬. প্রোটিন দেহে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। ১ গ্রাম প্রোটিন জারণে ৪.১ কিলোক্যালোরি শক্তি উৎপন্ন হা দেহে শর্করার অভাব হলে প্রোটিন জারণের দ্বারা শক্তি উৎপন্ন হয়। আটটি অ্যামিনো এসিড (লিউসিন, আইসোলিউসিন, লাইসিন, মিথিওনিন, ফিনাইল অ্যালানিন, ট্রিপটোফেন,থ্রিওনিন ও ভ্যালিন ছাড়া দেহ গঠিত হতে পারে না। এগুলোকে বলে অপরিহার্য অ্যামিনো এসিড। বিভিন্ন প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের মাধ্যমে অপরিহার্য অ্যামিনো এসিডগুলো দেহে সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিটি স্টা
৭. কোষের প্রোটোপ্লাজম অ্যামিনো এসিড থেকে সংশ্লেষিত হয়।
৮. কোষের প্রোটোপ্লাজম, ঝিল্লি ও অঙ্গাণুসমূহের প্রধান গাঠনিক উপাদান প্রোটিন। প্রাণিদেহের পেশি, চর
৯. চুল, শিং, নখ, আইন ও অন্যান্য অনেক গঠন প্রোটিন দিয়ে গঠিত। সাপের বিষ ও কিছু উদ্ভিদে অবস্থিত বিশেষ ধরনের প্রোটিন জীবদেহের প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
১০. কোষের প্রোটিন কোষীয় তারল্য রক্ষা করে শুক্ষতা থেকে কোষকে রক্ষা করে।
১১. ইন্টারফেরণ (Interferon) একধরনের প্রোটিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক ধরনের রা দূত। এটি শরীরে ভাইরাস প্রতিলিপনকে প্রতিরোধ করে।
১২. প্রোটিনের গাঠনিক উপাদান অ্যামিনো এসিড (যেমন- আজিনিন ও টাইরোসিন) থেকে যকৃতে
মেলানিন সংশ্লেষিত হয়।
অপরিহার্য অ্যামিনো এসিডের উপস্থিতি অনুসারে প্রোটিনের গুণগত মান বিচার করা হয়। যথা-
১. প্রথম শ্রেণির প্রোটিন (First class protein or Complete protein) : যে সব প্রোটিনে সবকটি অপরি অ্যামিনো এসিড থাকে সেগুলোকে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন বা সম্পূর্ণ প্রোটিন। যেমন-দুধ, ডিম, মাছ, মাংস সাধারণত সকল প্রাণীজ প্রোটিনই প্রথম শ্রেণির প্রোটিন। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মধ্যে বাদাম, সয়াবিন, ঘটেনিন ( ভুট্টায় থাকে) ইত্যাদি প্রথম শ্রেণির প্রোটিনের অন্তর্গত।
২. দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন (Second class protein) : যে সকল প্রোটিনে সব কয়টি অপরিহার্য অ্যামিনো থাকে না সেগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন বা অসম্পূর্ণ প্রোটিন। যেমন-কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রোটিন।